During inspection work What is found from Banke Bihari Temple's treasury dgtl
Banke Bihari Temple Treasury
আবির লাগানো সোনা-রুপোর লাঠি, মুদ্রা, কাঠের বাক্স! ৫৪ বছর পর বাঁকে বিহারী মন্দিরের কোষাগার খুলে কী কী মিলল?
ভারতের যে মন্দিরগুলিতে বিপুল পরিমাণে জনসমাগম হয়, তার মধ্যে অন্যতম উত্তরপ্রদেশের বৃন্দাবনের বাঁকে বিহারী মন্দির। মন্দিরটি ভগবান বাঁকে বিহারীর উদ্দেশে উৎসর্গীকৃত, যা় রাধা এবং কৃষ্ণের মিলিত রূপ বলে মনে করা হয়।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৫ ০৭:৩৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
সাড়ে পাঁচ দশক পর খোলা হয়েছে মথুরার ঊনবিংশ শতাব্দীর বাঁকে বিহারী মন্দিরের ‘তোষাখানা’ বা কোষাগার। সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির নির্দেশ অনুসারে, পরিদর্শন কাজের জন্য শনিবারের পর রবিবার আবার খোলা হয় মন্দিরের কোষাগার।
০২১৮
গর্ভগৃহ সংলগ্ন কোষাগারটি শেষ বার খোলা হয়েছিল ১৯৭১ সালে। তার পর আবার তালা পড়ে যায় সেই ভান্ডারে। এর পর থেকেই কোষাগারের ভিতরে কী আছে তা নিয়ে জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে।
০৩১৮
২০২৫ সালের অগস্টে মন্দিরের দৈনন্দিন কাজকর্ম দেখাশোনা করার জন্য ইলাহাবাদ হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক কুমারের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অন্তর্বর্তিকালীন কমিটি গঠন করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই কমিটির নির্দেশেই পরিদর্শনের জন্য গত শনিবারের পর রবিবার দ্বিতীয় দিনের জন্য মন্দিরের কোষাগার খোলা হয়।
০৪১৮
সিভিল জজ (জুনিয়র ডিভিশন) এবং জেলা জজের তত্ত্বাবধানে কোষাগারটি খোলা হয়। সঙ্গে ছিলেন মন্দিরের পরিচালনাকারী সেবায়েত গোস্বামী পুরোহিতদের চার জন এবং কমিটির অন্য সদস্যেরা।
০৫১৮
শনিবারের কার্যক্রম নিয়ে অতিরিক্ত জেলাশাসক (অর্থ ও রাজস্ব) পঙ্কজকুমার বর্মা বলেন, ‘‘চার জন গোস্বামী সদস্য-সহ অন্য সদস্যদের নিয়ে সিভিল জজ জুনিয়র ডিভিশনের তত্ত্বাবধানে কক্ষটি খোলা হয়েছিল। কক্ষটি খোলার ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধা দেখা দিয়েছিল। প্রক্রিয়াটি দুপুর ১টায় শুরু হয়। শেষ হয় বিকেল ৫টায়। এর পর কক্ষটি আবার সিল করে দেওয়া হয়। কিছু পিতলের পাত্র এবং কাঠের জিনিসপত্র পাওয়া গিয়েছে। কোনও মূল্যবান ধাতু পাওয়া যায়নি। কিছু কাঠের বাক্সও পাওয়া গিয়েছে।’’
০৬১৮
কমিটির সদস্য দীনেশ গোস্বামীর মতে, কোষাগারের ভিতরে পাওয়া জিনিসপত্রের একটি বিস্তারিত তালিকা ইতিমধ্যেই প্রস্তুত করা হয়েছে।
০৭১৮
সংবাদমাধ্যমে দীনেশ বলেছেন, ‘‘একটি বাক্স থেকে দু’টি তামার মুদ্রা এবং অন্যটিতে তিন থেকে চারটি পাথর পাওয়া গিয়েছে। তিনটি রুপোর লাঠি এবং একটি সোনার লাঠি পাওয়া গিয়েছে অন্য একটি বাক্সে। সেগুলির উপর আবির লাগানো ছিল। সম্ভবত হোলি উদ্যাপনের সময় ঠাকুরজি সেগুলি ব্যবহার করেছিলেন।’’
০৮১৮
দীনেশ জানিয়েছেন, ঘরের ভিতরে পরিদর্শন কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘খোঁজ চালানোর মতো কিছুই অবশিষ্ট নেই আর।’’ তবে সে বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন সিটি ম্যাজিস্ট্রেট রাকেশকুমার সিংহ। জানা গিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে আরও পর্যালোচনার জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দেবেন তিনি।
০৯১৮
অন্য দিকে অতিরিক্ত জেলাশাসক জানিয়েছেন, বেশির ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ শেষ করার জন্য সিভিল জজ কর্তৃক নির্ধারিত পরবর্তী তারিখে কোষাগার আবার খোলা হতে পারে।
১০১৮
মন্দিরের বিষয়াদি তত্ত্বাবধানকারী কমিটিকে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে আদালতের তত্ত্বাবধানে শনিবার ৫৪ বছর পর বাঁকে বিহারী মন্দিরের কোষাগারটি খোলা হয়েছিল।
১১১৮
২০২৫ সালের অগস্টে মন্দিরের দৈনন্দিন কার্যাবলী দেখাশোনা করার জন্য ইলাহাবাদ হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক অশোক কুমারের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অন্তর্বর্তী কমিটি গঠন করেছিল সুপ্রিম কোর্ট।
১২১৮
তবে সেই কমিটির কোষাগার খোলার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছিল গোস্বামী সম্প্রদায়। কমিটির সদস্য তথা মন্দিরের সেবায়েত শৈলেন্দ্র গোস্বামী সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘কক্ষটি কখনওই খোলা উচিত হয়নি। আমি এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছিলাম। এমনকি, চিঠিও লিখেছিলাম।’’
১৩১৮
শৈলেন্দ্র আরও বলেন, ‘‘এটি একটি অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি, স্থায়ী কমিটি নয়। সুপ্রিম কোর্ট কেবল ভক্তদের দর্শনের সুবিধার্থে এটি গঠন করেছে। কমিটির অন্য কোথাও হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। তারা অযৌক্তিক সুবিধা নিচ্ছে এবং কর্তৃত্ব দেখাচ্ছে। ওরা কেন কোষাগার খুলল এবং কী প্রমাণ করতে চায়?’’
১৪১৮
বাঁকে বিহারী মন্দিরের কোষাগার খোলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অন্যতম সেবায়েত জ্ঞানেন্দ্র গোস্বামীও। তাঁর দাবি, প্রক্রিয়াটি আরও স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হওয়া উচিত ছিল। কেন সংবাদমাধ্যমকে ঘটনাস্থলে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
১৫১৮
উল্লেখ্য, ভারতের যে মন্দিরগুলিতে বিপুল পরিমাণে জনসমাগম হয়, তার মধ্যে অন্যতম উত্তরপ্রদেশের বৃন্দাবনের বাঁকে বিহারী মন্দির।
১৬১৮
মন্দিরটি ভগবান বাঁকে বিহারীর উদ্দেশে উৎসর্গীকৃত, যা় রাধা এবং কৃষ্ণের মিলিত রূপ বলে মনে করা হয়। বাঁকে বিহারী ভগবানকে মূলত বৃন্দাবনের নিধিবনে পূজা করা হত। পরে, ১৮৬৪ সাল নাগাদ মন্দিরটি তৈরি হয়। এর পর বাঁকে বিহারীর বিগ্রহটি মন্দিরে স্থানান্তরিত করা হয়।
১৭১৮
বাঁকে বিহারী মন্দিরে রাধা এবং কৃষ্ণের মিলিত রূপের বিগ্রহটি রয়েছে ত্রিভঙ্গ ভঙ্গিতে। উত্তরপ্রদেশের বৃন্দাবনের সেই মন্দিরে প্রতি দিন ৩০ থেকে ৪০ হাজার পুণ্যার্থীর আগমন হয়। জন্মাষ্টমী বা হোলির সপ্তাহগুলিতে সেই সংখ্যা পৌঁছোয় দৈনিক পাঁচ লক্ষে।
১৮১৮
প্রতি দিন হাজার হাজার ভক্ত সমাগমের কারণে বৃন্দাবনের সরু গলিগুলি একপ্রকার থমকে যায়। তার উপর দোকানপাট, বাজার, ফল-মিষ্টি-মালার দোকান তো রয়েইছে। তবে বাঁকে বিহারী মন্দিরের আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকার অর্থনীতি এবং মানুষের আয়ের ভিত্তি এই মন্দির। বহু স্থানীয়ের রুজি-রোজগারের ভরসাও।