Elon Musk attacks US President Donald Trump due to conflicts of interest, say sources dgtl
Elon Musk-Donald Trump Breakup
১০ মাসের ‘উদ্দাম প্রেম’ ভাঙতেই কাদা ছোড়াছুড়ি! কোন স্বার্থে কোপ পড়তেই ট্রাম্পের হাত ছেড়ে উল্টো পথে মাস্ক?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ক্রমশ তিক্ত হচ্ছে আমেরিকার অন্যতম ধনকুবের শিল্পপতি ইলন মাস্কের সম্পর্ক। সমাজমাধ্যমে একে অপরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়িতে মেতেছেন তাঁরা। কেন ১০ মাসের ‘প্রেমে’ ধরল ফাটল? স্বার্থের সংঘাত?
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২৫ ০৭:৫৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
১০ মাসের ‘মাখোমাখো’ প্রেম। তার পর হঠাৎই বিচ্ছেদ! শুরু হয়েছে একে অপরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ধনকুবের শিল্পপতি ইলন মাস্কের স্বল্পমেয়াদি ‘বন্ধুত্ব’কে এ ভাবেই ব্যাখ্যা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। শুধু তা-ই নয়, দু’জনের মধ্যে সংঘাত তীব্র হওয়ায় ‘সুপার পাওয়ার’ দেশটির ঘরোয়া রাজনীতির নতুন বাঁক নেওয়ার আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা। পাশাপাশি, এর বড় প্রভাব পড়তে পারে আমেরিকার অর্থনীতিতেও।
০২১৮
ট্রাম্প ও মাস্কের ‘প্রেমে’র সূচনা হয় ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়। বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতাকে দ্বিতীয় বারের জন্য কুর্সিতে বসাতে খোলাখুলি ভাবে তাঁর হয়ে প্রচারে নামেন মার্কিন ধনকুবের শিল্পপতি। ভোটের মুখে ট্রাম্পের দলকে ২৭ কোটি ৭০ লক্ষ ডলার অনুদান দিয়েছিলেন তিনি। নির্বাচনী প্রচারে ‘মাগা’ (মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন) স্লোগানে ঝড় তোলেন ট্রাম্প। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, এর পুরোটাই ছিল মাস্কের মস্তিষ্কপ্রসূত।
০৩১৮
নির্বাচনে জেতার পর গত ডিসেম্বরে কানাডা এবং গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি তোলেন ট্রাম্প। পানামা খালের নিয়ন্ত্রণও ওয়াশিংটনের হাতে নিয়ে আসার কথা বলতে শোনা যায় তাঁকে। শপথ নেওয়ার আগেই বর্ষীয়ান রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট এ সব বলতে শুরু করায় উত্তর আমেরিকা জুড়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। তাঁর দলের একাংশ আড়ালে-আবডালে এই নিয়ে সমালোচনাও করছিলেন। কিন্তু ‘বন্ধু’ মাস্কের অটল এবং অন্ধ সমর্থন ছিল ট্রাম্পের দিকেই।
০৪১৮
এ হেন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিয়েই মাস্ককে নিজের ‘কিচেন ক্যাবিনেট’-এর সদস্য করে নেন ট্রাম্প। ধনকুবের মার্কিন শিল্পপতির জন্য একটি বিশেষ দফতর তৈরি করেন তিনি। নাম, ‘সরকারি দক্ষতা বিষয়ক দফতর’ (ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা ডিওজিই)। এর কাজ হল প্রশাসনের ‘অপ্রয়োজনীয় ব্যয়’ কাটছাঁট এবং অর্থনৈতিক সাশ্রয়। গত ২৯ মে অবশ্য ট্রাম্প প্রশাসন থেকে ইস্তফা দেন মাস্ক। তবে, তাঁর জায়গায় আলাদা করে কাউকে নিয়োগ করেনি প্রেসিডেন্টের ওভাল অফিস।
০৫১৮
সম্প্রতি ট্রাম্প ব্যয় সংক্রান্ত বিল নিয়ে এলে মাস্কের সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ধরে। চার লক্ষ কোটি ডলারের এই বিলকে ‘বড় সুন্দর’ বলে ইতিমধ্যেই উল্লেখ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু মাস্কের দাবি, সংশ্লিষ্ট বিলটি আইনে পরিণত হলে আমেরিকার দেনা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে। আর তাই নিজের এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) একে ‘ঋণের দাসত্বে’র বিল বলে খোঁচা দেন যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের শিল্পপতি। এর পরই ১০ মাসের ‘ছায়াসঙ্গী’র সঙ্গে ট্রাম্পের দূরত্ব বাড়তে শুরু করে।
০৬১৮
ট্রাম্প-মাস্ক ‘প্রেমে’ বিচ্ছেদ ঘটাতে চলা ১,১১৬ পাতার সংশ্লিষ্ট বিলে কর কাঠামোকে ঢেলে সাজানোর উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এটি আইনে পরিণত হলে জীবাশ্ম জ্বালানি-ভিত্তিক সংস্থাগুলির থেকে কম কর নেবে মার্কিন সরকার। ঐতিহ্যবাহী শিল্প প্রতিষ্ঠানের উপর থেকে উঠে যাবে বহু নিষেধাজ্ঞা। পাশাপাশি, বৈদ্যুতিন গাড়ি বা ইভির (ইলেকট্রনিক্স ভেহিকেল) ক্ষেত্রে ভর্তুকি হ্রাস করবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন।
০৭১৮
ট্রাম্পের যুক্তি, সংশ্লিষ্ট বিলটি আমেরিকামুখী এবং চিন-বিরোধী। এতে দেশ জুড়ে তৈরি হবে বিপুল কর্মসংস্থান। অন্য দিকে, এর জন্য ‘আমেরিকা দেউলিয়া’ হয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছেন মাস্ক। সমাজমাধ্যমে তিনি লিখেন, ‘‘কোনও বিল একই সঙ্গে বড় এবং সুন্দর হতে পারে না। যাঁরা এর পক্ষে ভোট দিয়েছেন, এটা তাঁদের লজ্জা। তাঁরা জানেন যে তাঁরা ভুল করেছেন।’’ পাশাপাশি, বিলটিকে ‘জঘন্য’ এবং ‘শূকরের মাংসে ভরা’ (পর্ক ফিল্ড) বলতেও পিছপা হননি ধনকুবের শিল্পপতি।
০৮১৮
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি, ট্রাম্পের ‘বড় সুন্দর’ বিল আইনে পরিণত হলে মাস্কের ব্যবসার বিরাট লোকসান হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর তাই সিঁদুরে মেঘ দেখেই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন ধনকুবের মার্কিন শিল্পপতি। বিলটিতে সরকারি ভর্তুকি হ্রাসের প্রসঙ্গ থাকায় তাঁর ব্যাটারিচালিত গাড়ি নির্মাণকারী সংস্থা ‘টেসলা’র শেয়ারে পাঁচ দিনে ২০ শতাংশ পতন দেখা গিয়েছে। ৩৬০ ডলার থেকে বর্তমানে সেটা নেমে এসেছে ২৮৫ ডলারে। এই আর্থিক ধাক্কা মাস্কের ‘ট্রাম্প প্রেম’কে রাতারাতি বদলে দিয়েছে বিদ্বেষে।
০৯১৮
বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন, স্বার্থসিদ্ধির জন্য এত দিন অন্ধ ভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সমর্থন করছিলেন ‘টেসলা’-কর্তা। কুর্সিতে বসে ট্রাম্প তাঁর কোনও ব্যবসায় হাত দেবেন না বলে একরকম নিশ্চিত ছিলেন মাস্ক। উল্টে তাঁর নির্দেশে গ্রিনল্যান্ড কব্জা হলে ওয়াশিংটনের হাতে আসবে বিরল খনিজের বিপুল ভান্ডার। সেগুলিকে বৈদ্যুতিন গাড়ি এবং মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘স্পেসএক্স’-এর নতুন নতুন প্রযুক্তি তৈরিতে ব্যবহার করবেন বলে স্বপ্ন ছিল ধনকুবের শিল্পপতির। তাঁর সেই আশায় বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতা জল ঢালায় সম্পর্কে দাঁড়ি টানছেন তিনি।
১০১৮
‘বড় সুন্দর’ বিল নিয়ে মাস্কের লাগাতার বিরোধিতার জেরে গত ৫ জুন তাঁর সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে আর্থিক অবরোধের হুঁশিয়ারি দেন ট্রাম্প। এ প্রসঙ্গে নিজের সমাজমাধ্যম সংস্থা ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ তিনি লেখেন, ‘‘আমাদের বাজেটের কোটি কোটি ডলার সাশ্রয় করার সহজ উপায় হল ইলনের সরকারি ভর্তুকি এবং চুক্তি বাতিল করা।’’ মাস্কের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘স্পেসএক্স’-এর চুক্তি বাতিলের কথাও বলতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। এর পরেই ‘টেসলা’র শেয়ারে নামে ধস। এক দিনে ১৫ হাজার কোটি ডলার হারায় মাস্কের ইভি নির্মাণকারী সংস্থা।
১১১৮
দুই মহারথীর বাগ্যুদ্ধ চরমে পৌঁছোয় ট্রাম্পের করা একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দাবি, তিনি নাকি মাস্ককে অনেক সাহায্য করেছেন। পাশাপাশি ধনকুবের শিল্পপতির তাঁর ক্যাবিনেট থেকে ইস্তফার প্রসঙ্গটি নিয়েও মুখ খুলেছেন ট্রাম্প। তাঁর কথায়, ‘‘ইলন রোগগ্রস্ত ছিল। আমি তাঁকে চলে যেতে বলেছিলাম। আর তার পরেই সে পাগল হয়ে গেল।’’ সমাজমাধ্যমে এর সমুচিত জবাব দিয়েছেন মাস্ক।
১২১৮
এক্স হ্যান্ডলে ‘টেসলা’-কর্তা লিখেছেন, ‘‘আমার সাহায্য ছাড়া ট্রাম্প এই নির্বাচনে জিততে পারতেন না।’’ যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট তা মানতে নারাজ। তিনি মনে করেন মাস্ক না থাকলেও পেনসিলভ্যানিয়াতে তাঁর বিজয়রথ থেমে থাকত না। তবে ভোটে জিততে ট্রাম্পকে তিনি কী ভাবে সাহায্য করেছিলেন, তার ব্যাখ্যা অবশ্য দেননি ‘টেসলা’ এবং ‘স্পেসএক্স’ কর্ণধার।
১৩১৮
ট্রাম্প ও মাস্কের সংঘাত যে এখানে থেমে গিয়েছে, তা নয়। প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে সুর আরও চড়িয়ে ‘বড় বোমা’ ফেলার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন ধনকুবের শিল্পপতি। বিতর্কিত ‘এপস্টাইন ফাইলে’ ট্রাম্পের নাম রয়েছে বলে দাবি করেছেন ‘টেসলা’-কর্তা। তাঁর অভিযোগ, ‘‘শুধু এই কারণেই ফাইলটি প্রকাশ্যে আনা হয়নি। ভবিষ্যতের জন্য এটাকে মাথায় রেখে দিন। সত্যি সামনে আসবে।”
১৪১৮
মাস্কের অভিযোগ, যৌন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত জেফরি এপস্টাইনের সঙ্গে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। শোনা যায়, এপস্টাইনের বিলাসবহুল বিমান ‘লোলিটা এক্সপ্রেস’-এ চেপে বেশ কয়েক বার বিভিন্ন দেশে গিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। চলতি বছরের গোড়ায় ওই ফাইলের একাংশ প্রকাশ্যে আনা হয়। কিন্তু ‘টেসলা’-কর্তা সংশ্লিষ্ট ফাইলের পুরো অংশ প্রকাশ্যে আনার দাবি জানিয়েছেন।
১৫১৮
বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে মুখ খোলেন মাস্ক। সেখানে তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ‘ইমপিচ’ (পদচ্যুত) করার দাবি পর্যন্ত তুলেছেন। তাঁর জায়গায় ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সকে বসানোর কথা বলতে শোনা গিয়েছে ‘টেসলা’-কর্তা। অন্য দিকে, যে বিলকে ঘিরে বিবাদ, মাস্ক তাঁর খুঁটিনাটি জানতেন বলে স্পষ্ট করেছেন ট্রাম্প। বিলটি নিয়ে মার্কিন ধনকুবেরের প্রথম থেকে কোনও সমস্যা ছিল না বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
১৬১৮
ট্রাম্পের ওই দাবি অবশ্য সঙ্গে সঙ্গে খারিজ করে দেন মাস্ক। তাঁর পাল্টা বক্তব্য ছিল, ‘‘এই বিল আমাকে এক বারের জন্যেও দেখানো হয়নি। গভীর রাতে লুকিয়ে এই বিল পাশ করানো হয়।’’ সংশ্লিষ্ট বিলে মার্কিন নাগরিক নন, এমন ব্যক্তিরা যদি আমেরিকায় উপার্জিত টাকা নিজের দেশে পাঠাতে চান, তবে তার উপর পাঁচ শতাংশ কর চাপানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে এইচ-১বি ভিসা এবং গ্রিনকার্ড নিয়ে বসবাসকারীরা সমস্যায় পড়বেন, যা নিয়ে প্রবল আপত্তি রয়েছে ‘টেসলা’-কর্তার।
১৭১৮
বিশ্লেষকদের দাবি, মাস্ক-ট্রাম্প দ্বৈরথের সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়তে পারে আমেরিকার ‘সিলিকন ভ্যালি’তে। সেখানকার তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলিতে বিপুল সংখ্যায় ভারতীয়েরা চাকরি করেন। ফলে এর আঁচ তাঁদের গায়ে লাগার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেউই। সম্পর্কে তিক্ততা আসার মুখে ট্রাম্পের গলায় অবশ্য ছিল আক্ষেপের সুর। তিনি বলেন, ‘‘ইলনের সঙ্গে আমার খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। জানি না আগামী দিনে আর তা থাকবে কি না। ওর আচরণে আমি খুব হতাশ।’’
১৮১৮
মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলিতে ট্রাম্প-মাস্কের ‘প্রেমে’র সম্পর্কের নাম দেওয়া হয় ‘ব্রোম্যান্স’। এই শব্দটির অর্থ হল, দুই পুরুষের মধ্যে যৌনতা ব্যতিরেকে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। বর্তমানে সেটা টকে যেতেই পৃথক রাজনৈতিক দল তৈরির ইঙ্গিত দিয়েছেন ‘টেসলা’-কর্তা। তবে রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। তাই এই সংঘাতের শেষে কী রয়েছে, তার উত্তর দেবে সময়।