Elon Musk’s condition may be same like Mikhail Khodorkovsky or Jack Ma amid fight with US President Donald Trump dgtl
Donald Trump vs Elon Musk
জ্যাক মা, খোদোরকভস্কির অবস্থা হবে মাস্কের? শি-পুতিনের রাস্তা ধরে ‘ঘরশত্রু বিভীষণ’ মাস্কের কোমর ভাঙবেন ট্রাম্প?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কট্টর সমালোচনা শুরু করেছেন তাঁরই এককালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসাবে পরিচিত ধনকুবের শিল্পপতি ইলন মাস্ক। বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতাকে প্যাঁচে ফেলতে একটি নতুন রাজনৈতিক দলও তৈরি করেছেন তিনি।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৫ ০৮:০৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
মার্কিন মুলুকে ‘দুই হুজুরের লড়াই’! খোদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইয়ে নেমেছেন তাঁরই এককালের ঘনিষ্ঠ ‘বন্ধু’ তথা বিশ্বের অন্যতম ধনকুবের শিল্পপতি ইলন মাস্ক। দু’জনের ‘মল্লযুদ্ধে’ লেখা হবে আমেরিকার নয়া ইতিহাস? না কি মেঘ গর্জালেও সে ভাবে দেখা মিলবে না বৃষ্টির? এই সমস্ত প্রশ্নে এখন দ্বিধাবিভক্ত দুনিয়া। তার মধ্যেই বিশ্লেষকদের একাংশ আবার যুক্তরাষ্ট্রের দুই ‘শত্রু’ দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ট্রাম্পের আচরণের মিল খুঁজে পেয়েছেন। তাঁরা হলেন রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন এবং চিনের শি জিনপিং।
০২১৮
সালটা ২০০০। রুশ প্রেসিডেন্ট হিসাবে তখন সদ্য দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন পুতিন। কুর্সিতে বসতে না বসতেই ধূমকেতুর মতো উদয় হন মিখাইল খোদোরকভস্কি। পেশায় তেল ব্যবসায়ী মস্কোর এই ধনকুবের রাতারাতি হয়ে ওঠেন তাঁর কট্টর সমালোচক। পুতিন-বিরোধীদের গোপনে অর্থসাহায্য করতেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে অন্য কাউকে ক্ষমতায় আনার চেষ্টার কসুর করেননি মিখাইল। রুশ অভিজাত বংশোদ্ভূত হওয়ায় সব জেনেও প্রথমটায় চুপ করেছিলেন পুতিন।
০৩১৮
কিন্তু, তিন বছরের মাথায় (পড়ুন ২০০৩ সাল) হঠাৎই ঘুরে যায় খেলা। কর ফাঁকি এবং জালিয়াতির অভিযোগে মিখাইলকে গ্রেফতার করে রুশ পুলিশ। ২০০৫ সালে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে সেখানকার আদালত। জেলবন্দি হন মস্কোর এই ধনকুবের তেল ব্যবসায়ী। ২০১৩ সালে ক্ষমাভিক্ষা করলে তাঁকে মুক্তি দেন পুতিন। এর পর কালবিলম্ব না করে দেশত্যাগ করে জার্মানি চলে যান খোদোরকভস্কি।
০৪১৮
ইকমার্স সাইট ‘আলিবাবা’র প্রতিষ্ঠাতা তথা ড্রাগনভূমির অন্যতম ধনী ব্যক্তি জ্যাক মা-র সঙ্গে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের বিবাদের গল্পটাও প্রায় একই রকম। দু’জনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে উঠলে হঠাৎ করেই বেশ কয়েক মাসের জন্য ‘গায়েব’ হয়ে যান বেজিঙের এই শিল্পপতি। পরে অবশ্য ফের প্রকাশ্যে দেখা গিয়েছে তাঁকে। কিন্তু, ‘অদৃশ্য’ অবস্থা থেকে ফিরে এসে বর্তমানে খুব সাদামাঠা জীবনযাপন করছেন জ্যাক মা। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, প্রেসিডেন্ট শি বা রাজনৈতিক বিষয় থেকে নিজেকে পুরোপুরি গুটিয়ে রাখতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
০৫১৮
এ-হেন জ্যাক মা এবং খোদোরকভস্কির সঙ্গে মাস্কের ট্রাম্প বিরোধিতার যথেষ্ট মিল রয়েছে। এই দু’জনের মতোই প্রেসিডেন্টের অত্যন্ত আস্থাভাজন হিসাবে রাজনীতির আঙিনায় পা রাখেন ধনকুবের মার্কিন শিল্পপতি। নির্বাচনে তাঁর হয়ে ব্যাপক প্রচারও করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। বিনিময়ে প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিয়ে মাস্ককে নিজের ‘কিচেন ক্যাবিনেট’-এর সদস্য করেন ট্রাম্প। কিন্তু, এর পরই বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতা তথা মার্কিন প্রেসিডেন্টের কট্টর সমালোচনা শুরু করেন তিনি।
০৬১৮
দ্বিতীয়ত, জ্যাক মা ও খোদোরকভস্কির মতোই মাস্কের অর্থের কোনও অভাব নেই। তিন জনেই প্রকাশ্যে প্রেসিডেন্টের বিভিন্ন নীতির সমালোচনা করেছেন। ফলে মার্কিন ধনকুবের শিল্পপতিকে এর ফল ভোগ করতে হবে বলে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে জল্পনা। বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করেন মাস্কের কপালে লেখা আছে জেলযাত্রা। অনেকে আবার মনে করেন যাবতীয় সম্পত্তি হারিয়ে দেউলিয়া হয়ে পড়বেন তিনি। যদিও এ সবের কোনও কিছুকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন না মার্কিন ধনকুবের শিল্পপতি।
০৭১৮
তবে এর উল্টো মতও রয়েছে। মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বেশির ভাগই মনে করেন, জ্যাক মা বা খোদোরকভস্কির মতো মোটেই দুর্ভাগ্য তাড়া করে বেড়াবে না মাস্ককে। কারণ, রাশিয়া ও চিনের সঙ্গে আমেরিকার একটা মূলগত পার্থক্য রয়েছে। আটলান্টিক এবং প্রশান্ত মহাসাগরের পারের ‘সুপার পাওয়ার’ দেশটিতে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন এবং সম্ভবত সবচেয়ে বিকশিত গণতন্ত্র। ফলে সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা প্রেসিডেন্টের পক্ষে অসম্ভব।
০৮১৮
বিশেষজ্ঞদের দাবি, চিন ও রাশিয়ায় প্রেসিডেন্টের শাসনই আইন। কিন্তু, আমেরিকায় ‘আইনের শাসন’ রয়েছে। আর আছে শক্তিশালী এবং স্বাধীন গণমাধ্যম। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদসংস্থাগুলির স্বাধীনতা সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত। আমেরিকার পার্লামেন্ট ‘কংগ্রেস’ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করে কখনওই কোনও আইন তৈরি করে না। এক কথায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরোধিতা করার অধিকার আমজনতা থেকে শিল্পপতি, সকলের রয়েছে। আর তাই ক্ষমতা প্রয়োগ করে রাতারাতি মাস্ককে গায়েব করা বা জেলবন্দি করতে পারবেন না ট্রাম্প।
০৯১৮
দ্বিতীয়ত, পুতিন বা জিনপিঙের মতো আজীবন প্রেসিডেন্ট পদ আঁকড়ে থাকতে পারবেন না ট্রাম্প। মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তি সর্বাধিক দু’বার প্রেসিডেন্ট হতে পারেন। বর্তমানে দ্বিতীয় বারের জন্য দেশের দায়িত্বভার সামলাচ্ছেন ট্রাম্প। ২০২৯ সালের পর কুর্সি ছাড়তেই হবে তাঁকে। অর্থাৎ, মাস্কের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের হাতে মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় রয়েছে। সেটা জানেন বলেই আক্রমণের ঝাঁজ বাড়াচ্ছেন আমেরিকার ধনকুবের শিল্পপতি।
১০১৮
যুক্তরাষ্ট্রের মতো রাশিয়া এবং চিনেও প্রেসিডেন্টের মেয়াদের সাংবিধানিক সীমা দু’বার স্থির করা হয়েছিল। কিন্তু কুর্সিতে বসে দ্রুত সেই আইন পাল্টে ফেলেন তাঁরা। ফলে আজীবন প্রেসিডেন্ট পদ আঁকড়ে থাকার ক্ষেত্রে এই দু’জনের কোনও বাধা নেই। শি-র ক্ষেত্রে তো বিষয়টি একরকম প্রকাশ্যে ঘোষণাই করে দিয়েছে ড্রাগনভূমির ‘চিনা কমিউনিস্ট পার্টি’ বা সিসিপি। অন্য দিকে মস্কো জানিয়েছে, ২০৩৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা ভোগ করবেন পুতিন।
১১১৮
প্রেসিডেন্টের মেয়াদ সংক্রান্ত সাংবিধানিক নিয়মটি আমেরিকায় কঠোর হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে নিজের সমাজমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) খোঁচা দিতে ছাড়েননি মাস্ক। একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্পের বাকি আছে সাড়ে তিন বছর। আমি কিন্তু ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে থাকব।’’ এ ক্ষেত্রে ট্রাম্পের পক্ষে তাঁকে বাধা দেওয়া সম্ভব নয়।
১২১৮
তৃতীয়ত, প্রেসিডেন্টের বিরোধিতার সময় জ্যাক মা এবং খোদোরকভস্কি ধনী ছিলেন এ কথা সত্যি, কিন্তু মাস্কের সম্পত্তির সঙ্গে কোনও তুলনাই চলে না তাঁদের। মার্কিন গণমাধ্যম ফোর্বসের প্রকাশ করা বিশ্বের ধনকুবেরদের তালিকায় সব সময় প্রথম বা দ্বিতীয় স্থান পেয়ে এসেছেন মাস্ক। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৩৯ হাজার ৭০০ কোটি ডলার, যেটা বহু দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপির (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট) চেয়ে বেশি।
১৩১৮
২০০৩ সালে গ্রেফতারির সময় খোদোরকভস্কির মোট সম্পত্তির অঙ্ক ১৫০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছিল। তাঁর বিরুদ্ধে কর ফাঁকি ও জালিয়াতির মামলা চলাকালীন সেটা আরও কমে যায়। অন্য দিকে জ্যাক মা যখন ‘গায়েব’ হন, তখন ৩৬০০ কোটি ডলার সম্পত্তির মালিক ছিলেন তিনি। এই দু’জনের কেউই কোনও রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেননি। ফলে তাঁদের পিছনে ছিল না কোনও জনসমর্থন।
১৪১৮
চলতি বছরের ৫ জুলাই নতুন দল গঠনের কথা ঘোষণা করেন মাস্ক। এর নাম দিয়েছেন ‘আমেরিকা পার্টি’। আগামী বছরের ‘মিড টার্ম’ নির্বাচনে লড়বে তাঁর দল। বিশ্লেষকদের দাবি, সেখানে মাস্কের দলের প্রতিনিধিরা জিতলে একরকম প্রেসিডেন্টের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাবেন তিনি। আর তাই দল তৈরি করার মাধ্যমে মার্কিন ধনকুবের রাজনৈতিক রক্ষাকবচ পাচ্ছেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
১৫১৮
ব্যবসায়িক দিক থেকেও জ্যাক মা এবং খোদোরকভস্কির সঙ্গে মাস্কের যথেষ্ট অমিল রয়েছে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্র নাসার (ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) সঙ্গে বহু প্রকল্পে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে তাঁর সংস্থা স্পেসএক্স। বৈদ্যুতিন গাড়ি টেসলা বা সমাজমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্সের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে আমেরিকার এই ধনকুবেরের হাতে। কৃত্রিম মেধা বা এআই-ভিত্তিক (আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স) প্রযুক্তি তৈরির দিকেও নজর রয়েছে তাঁর।
১৬১৮
বৈদ্যুতিন গাড়ি বা ইভি (ইলেকট্রনিক ভেহিকল), মহাকাশ সংস্থা এবং সমাজমাধ্যম প্ল্যাটফর্মের মালিক হওয়ার কারণে আমেরিকা তথা বিশ্বের যুবসমাজের মধ্যে মাস্কের যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। তরুণ-তরুণীদের অনেকেই মনে করেন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এই মার্কিন ধনকুবের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে লগ্নি করতে ভালবাসেন। সবাইকে সুন্দর পৃথিবী উপহার দেওয়ার ইচ্ছে রয়েছে তাঁর। সেখানে খোদোরকভস্কি তেল ব্যবসার বাইরে কখনও কিছু করেননি। আর জ্যাক মা-র পরিচিতি শুধুমাত্র ইকমার্স সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে।
১৭১৮
এক্স হ্যান্ডলে বিশ্বব্যাপী মাস্কের প্রায় ২০ কোটি ফলোয়ার রয়েছে। এই সমাজমাধ্যম প্ল্যাটফর্মটিকে ব্যবহার করে অনায়াসেই জনমত তৈরি করতে পারবেন তিনি। তবে তার অর্থ এই নয় যে ট্রাম্প তাঁর কোনও ক্ষতি করতে পারবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের হাতেও অফুরন্ত প্রশাসনিক ক্ষমতা রয়েছে। সেগুলির প্রয়োগ করে অনায়াসেই মার্কিন ধনকুবের শিল্পপতিকে বিপদে ফেলতে পারেন তিনি।
১৮১৮
ট্রাম্প ইতিমধ্যেই মাস্ককে ইভির ভর্তুকি বন্ধ করার হুমকি দিয়েছেন। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া রাজনীতিতে তাঁর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। টেসলা কর্তার বিরুদ্ধে উদারপন্থী এবং বামপন্থীদের খেপিয়ে তুলতে পারেন তিনি। সে ক্ষেত্রে এক দিকে যেমন মাস্কের ব্যবসা মার খাবে, অন্য দিকে তেমনই রাজনৈতিক দিক থেকে ধাক্কা খেতে পারে তাঁর নতুন দল ‘আমেরিকা পার্টি’।