French President Emmanuel Macron's Remarkable Love Story with Teacher Brigitte macron dgtl
Brigitte Macron Controversy
২৫ বছরের বড় শিক্ষিকার সঙ্গে প্রেম, বিয়ের পর সহপাঠীকে দত্তক! মাকরেঁর প্রেমকাহিনি হার মানাবে রূপকথাকেও
কয়েক দশক আগে বহু ঘাত-প্রতিঘাত সামলে শিক্ষিকা ও তাঁর ছাত্রের মধ্যে যে প্রেমের বীজ অঙ্কুরিত হয়েছিল, তা শেষ পর্যন্ত এক সাহসী বিবাহ-উপসংহারে থিতু হয়েছিল। কারণ ছাত্রকে বিয়ে করে ব্রিজেত যে সাহসটা দেখিয়েছেন সেটাই আধুনিক পৃথিবীর রূপকথা।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২৫ ১৩:৫৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
চেক বংশোদ্ভূত ফরাসি লেখক মিলান কুন্দেরার নাটক ‘জাক অ্যান্ড হিজ় মাস্টার’ মঞ্চস্থ হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের শেখানোর ভার পড়েছিল ব্রিজেতের উপর। আমিয়েন্স অঞ্চলে একটি স্কুলে ফরাসি ও লাতিন ভাষার শিক্ষিকা ব্রিজেত। তখন তিনি ব্রিজেত মারি-ক্লদ। বছর পনেরোর কিশোরটি তখন তাঁর কাছে সটান চলে এসেছিল সাহায্য চাইতে। কিশোরের মেধা দেখে উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন ৩৯ বছরের শিক্ষিকা।
০২১৭
নব্বইয়ের গোড়ার দিক। ব্রিজেত স্কুলের নাটকের অনুষ্ঠানের মহড়া করান, ছাত্রটিও সেখানে প্রতি দিনই হাজির হত। ১৫ বছরের এক কিশোর তাঁর ৪০ বছরের শিক্ষিকার প্রেমে হাবুডুবু খেতে শুরু করেন। সে দিনের সেই লাজুক মেধাবী স্কুলছাত্র আজ ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ। শিক্ষিকাকে প্রেম নিবেদন, তার পর বিয়ে, দু’জনের প্রেমকাহিনি যেন রূপকথাকেও হার মানায়।
০৩১৭
সম্প্রতি ভিয়েতনাম সফরে গিয়ে এই দম্পতির একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়। বিমান থেকে নামার সময়ে পাশের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন মাকরঁ। আচমকাই বিমানের দরজার আড়াল থেকে লাল পোশাক পরিহিত হাত ধেয়ে এল তাঁর মুখ লক্ষ্য করে। আকস্মিক এই কাণ্ডে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান মাকরঁ! কারণ ধাক্কা দিয়ে তাঁর হাত সরিয়ে দিয়েছিলেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট-পত্নীই। কয়েক সেকেন্ডের এই ভিডিয়ো ঝড় তুলেছে আন্তর্জাল দুনিয়ায়। চলছে হাসিঠাট্টাও। প্রশ্ন উঠেছিল, তবে কি স্ত্রীর চপেটাঘাত সহ্য করতে হয়েছে ফরাসি প্রেসিডেন্টকে?
০৪১৭
ফরাসি প্রেসিডেন্ট দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফর নিয়ে যত না আলোচনা, তার থেকেও বেশি আলোচনা হয় মাকরেঁর এই ভিডিয়োটি নিয়ে। এই ভিডিয়োকে কেন্দ্র করে তাঁদের দাম্পত্য বিষয়ে যা কাটাছেঁড়া চলছে তাতে স্পষ্টতই বিরক্ত ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাকরঁ। মাকরেঁর এক ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছিল, প্রেসিডেন্টের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফর শুরুর আগে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ‘ঝগড়া’ হয়েছিল। তবে তা ছিল নিতান্তই ‘দাম্পত্যকলহ’।
০৫১৭
কয়েক দশক আগে বহু ঘাত-প্রতিঘাত সামলে শিক্ষিকা ও তাঁর ছাত্রের মধ্যে প্রেমের যে বীজ অঙ্কুরিত হয়েছিল তা শেষ পযন্ত এক সাহসী বিবাহ-উপসংহারে থিতু হয়েছিল। কারণ ছাত্রকে বিয়ে করে ব্রিজেত যে সাহস দেখিয়েছেন, সেটাই আধুনিক পৃথিবীর রূপকথা। কারণ এই পৃথিবীতে চাইলেই দিদিমণিকে পাওয়া যায় না।
০৬১৭
ব্রিজেত ছিলেন এক ব্যাঙ্কারের স্ত্রী, তিন তিনটি ছেলেমেয়ে। স্বামী, সন্তান নিয়ে ঘোরতর সংসারী। প্রথম সাক্ষাতের ঠিক দু’বছর পরে প্রস্তাবটা আসে তার কাছ থেকেই। মুগ্ধতা তত দিনে প্রেমে বদলেছে। ইমানুয়েল রাখঢাক না করেই শিক্ষিকাকে বলেছিলেন, ‘‘তুমি যা-ই করো না কেন, আমি তোমাকেই বিয়ে করব।’’ প্রথমে তেমন আমল না দিলেও ইমানুয়েলের জেদের কাছে শেষমেশ হার মানতে হয়েছিল ব্রিজেতকে।
০৭১৭
সে দিন ছাত্রকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন স্কুলের দিদিমণি। কারণ তাঁর বড় মেয়ে ইমানুয়েলের সঙ্গে একই ক্লাসে পড়তেন। মেয়ে ও প্রেমিক সহপাঠী হওয়ায় প্রথমে দোলাচলে ভুগছিলেন ব্রিজেত। বহু পরে ২০০৬ সালে, ওই দাম্পত্য ভেঙে প্যারিসে এসে প্রেমমুগ্ধ ছাত্রটিকে বিয়ে করেন।
০৮১৭
ইমানুয়েলকে বিয়ের পর পত্রিকায় খোলামেলা সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন ব্রিজেত। সেখানে বলেন, ‘‘একদম প্রথমে বিষয়টাকে ছেলেমানুষি ভেবেছিলাম। স্কুল শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য প্যারিস এসেছিল ইমানুয়েল। পড়া শেষে ফিরে এসেছিল আমার কাছে। এতটাই জেদে অনড় ছিল যে আমিও আর ফেরাতে পারিনি ওকে।’’
০৯১৭
ইমানুয়েলের প্রাক্তন ক্রীড়া শিক্ষক এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, ১৫ বছর বয়সে তিনি এতটাই পরিণত ছিলেন যে ২৫ বছর বয়সি এক তরুণের মতো মনে হত। সহপাঠীদের চেয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে সময় কাটাতে বেশি পছন্দ করতেন মাকরঁ।
১০১৭
বিয়ের সময়ও পড়াশোনা শেষ করে উঠতে পারেননি অধুনা প্রেসিডেন্ট। নতুন সংসারের হাল ধরতে খোদ ব্রিজেতকেই আবার শিক্ষিকার চাকরি নিতে হয়েছিল। ব্রিজেতের পূর্ব বিবাহের তিন ছেলেমেয়ের এক জন আইনজীবী, এক জন ইঞ্জিনিয়ার, অন্য জন চিকিৎসক। মাকরঁ তাঁর সমবয়সি বা বয়সে বড় তিন জনকেই দত্তক নিয়েছেন। দত্তক পুত্র-কন্যার সুবাদে নাতি-নাতনিও রয়েছে তাঁর।
১১১৭
তামাম দুনিয়ায় ভূরি ভূরি নমুনা আছে যেখানে কমবয়সি মেয়েকেই বেশি বয়সের পুরুষ পছন্দ করে বিয়ে করেছেন। আবার তেমনি আছে তার ঠিক বিপরীত রসায়নও। এক কথায় বলতে গেলে ভালবাসা বয়সের কোনও বাধা মানে না। গ্ল্যামার দুনিয়ায় অসমবয়সিদের বিবাহ ও প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে প্রতিনিয়ত চর্চা হয়। সেখানে এক দেশের রাষ্ট্রনায়ক যদি এমন অসম সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, তবে তিনিও বা ছাড় পাবেন কী ভাবে!
১২১৭
এই অসমবয়সি প্রেম আর বিয়ে নিয়ে অবশ্য ফরাসি সংবাদমাধ্যমে এক সময় কম হাসাহাসি হয়নি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় তাঁদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কম কাটাছেঁড়া হয়নি। ‘প্রৌঢ়া’ স্ত্রীকে নিয়ে গোড়া থেকেই হাসি-মশকরা চলেছে ফরাসি সংবাদমাধ্যমে।
১৩১৭
ব্রিজেতের বক্তব্য, “বিষয়টা উল্টো হলে এত কথা হত না। ডোনাল্ড ট্রাম্প আর মেলানিয়ারও বয়সের তফাত এতটাই। কিন্তু ট্রাম্প পুরুষ বলে কোনও কথা হয় না। আমি মহিলা, তাই সব তির্যক মন্তব্য আমাকে ঘিরেই। মেলানিয়া যদি বয়সে বড় হতেন, আমি নিশ্চিত ওঁকেও কেউ ছাড়ত না।’’
১৪১৭
একের পর এক সমালোচনার ঝড় যখন আছড়ে পড়েছে তখন পরিবারকে পাশে পেয়েছিলেন মাকরঁ দম্পতি। গোটা দুনিয়া যখন ইমানুয়েল-ব্রিজেতের অসম সম্পর্ক নিয়ে কটাক্ষ করতে ব্যস্ত, তখন ব্রিজেত-কন্যা সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন কে কার শিক্ষিকা ছিলেন, বৌ বয়সে বরের চেয়ে কত বড়, এগুলি একেবারে লিঙ্গবিদ্বেষী ধারণা। আধুনিক দুনিয়ার মুখে মানায় না। ফরাসি প্রেসিডেন্টের ৩২ বছরের সৎমেয়ে তিফেইন একটি টিভি চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আমার মনে হয় এটা নিয়ে আর উদাসীন থাকাটা ঠিক হবে না। তবু ২১ শতকের ফ্রান্সে এই ধরনের মন্তব্য যাঁরা করছেন, তাঁদের বেশি গুরুত্বও দেওয়াটাও উচিত বলে মনে হয় না।’’
১৫১৭
২০০৬ সালে ব্যাঙ্কার স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে মাকরেঁর হাত ধরেন ব্রিজেত। সেই থেকে প্রতিটি পদক্ষেপেই সঙ্গে তিনি। ২০১৭ সালে দেশের কনিষ্ঠতম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন ৩৯ বছরের ইমানুয়েল। ব্রিজেত হন ফার্স্ট লেডি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী লড়াইয়ে স্বামীর প্রতিটি প্রচার পর্ব তিনি সামলান সুষ্ঠু ভাবে। কখনও বক্তৃতা ঠিক করে দিয়েছেন। কখনও প্রচারকৌশল ঠিক করে দিয়েছিলেন।
১৬১৭
আধুনিক এই রূপকথায় প্রেম, প্যাশন, আবেগের গোলাপ বিছানো পথ থাকলেও ছিল অশান্তির কাঁটাও। ২০১৪ সালে ইমানুয়েল অর্থমন্ত্রী হন। এর পর ব্রিজেত স্বামীতে কাজেকর্মে সহায়তা করার জন্য চাকরি ছেড়ে দেন। ইমানুয়েলের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রচারের সময়ও এই দম্পতির মধ্যে সম্পর্কের কিছুটা অবনতি ঘটেছিল বলে গুজব রটে।
১৭১৭
ইমানুয়েল গোপনে রেডিয়ো ফ্রান্সের কর্মকর্তার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলেন বলে কানঘুষো শুরু হয়। ইমানুয়েল যথারীতি এই গুজব অস্বীকার করেন। ব্রিজেতও স্বামীর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন।