From Hiring to Cancellation, Reappeal and Verdict, know Full Timeline of Primary teacher Recruitment Case dgtl
Bengal Teacher Recruitment Controversy
‘পরিবারের কথা ভেবে’ প্রাথমিকের ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল করল না হাই কোর্ট, একনজরে সেই মামলা
২০১৪ সালের টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন প্রায় এক লক্ষ ২৫ হাজার প্রার্থী। ওই চাকরিপ্রার্থীদের ইন্টারভিউ এবং অ্যাপটিটিউড টেস্ট হয় ২০১৬ সালে। ২০১৬ সালেই তাঁদের নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করে পর্ষদ।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৪:৪১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বহাল! প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায় খারিজ করল কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ। রায় ঘোষণার সময় আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, দুর্নীতি হয়েছে। কিন্তু এতগুলো পরিবারের দিকে তাকিয়ে চাকরি বাতিলের সিদ্ধান্ত খারিজ করা হল। বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ, ‘‘এত দিন চাকরি করেছেন ৩২ হাজার শিক্ষক। তাঁদের পরিবারের কথা ভেবে আদালত চাকরি বাতিল করছে না।’’
০২২০
বুধবার রাজ্যে প্রাথমিক নিয়োগ মামলার রায় ঘোষণা করল কলকাতা হাই কোর্ট। প্রাথমিকের ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল করে দিয়েছিলেন হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের হয়। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ সেই মামলার রায় ঘোষণা করল।
০৩২০
২০১৪ সালের টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন প্রায় এক লক্ষ ২৫ হাজার প্রার্থী। ওই চাকরিপ্রার্থীদের ইন্টারভিউ এবং অ্যাপটিটিউড টেস্ট হয় ২০১৬ সালে। ২০১৬ সালেই তাঁদের নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করে পর্ষদ।
০৪২০
২০১৪ সালের ‘টেট’-এর ভিত্তিতে ২০১৬ সালে প্রাথমিকে প্রায় ৪২৫০০ শিক্ষক নিয়োগ হয়েছিল। ওই নিয়োগপ্রক্রিয়াতেই বেনিয়মের অভিযোগ ওঠে।
০৫২০
২০১৬ সালের প্রাথমিকের নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রিয়ঙ্কা নস্কর-সহ ১৪০ জন চাকরিপ্রার্থী কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তাঁদের আইনজীবী আদালতে দাবি করেন, এই মামলাকারীদের থেকে কম নম্বর পেয়ে প্রশিক্ষণহীন অনেকেই চাকরিতে ঢুকেছেন।
০৬২০
মামলাকারী পক্ষের এ-ও অভিযোগ ছিল, ওই নিয়োগপ্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। নিয়োগপ্রক্রিয়ার নিয়ম মানা হয়নি বলেও অভিযোগ ছিল তাঁদের।
০৭২০
অন্য দিকে, রাজ্য সরকার এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের বক্তব্য ছিল, দুর্নীতির কোনও প্রমাণ নেই। কয়েকটি ক্ষেত্রে কিছু অনিয়ম হয়েছে। পরে তা সংশোধনও করে নেওয়া হয়েছে।
০৮২০
ওই মামলা চলাকালীন উঠে এসেছিল ইন্টারভিউ বিতর্কও। পর্ষদের নিয়ম অনুযায়ী, পরীক্ষার্থীদের ইন্টারভিউয়ের সময় তাঁদের ‘অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট’ নেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, বহু ক্ষেত্রেই সেই ‘অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট’ নেওয়া হয়নি। কিছু জনকে আবার বেশি নম্বর দেওয়া হয়েছে। ‘অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট’-এ কেন কয়েক জনকে বেশি বেশি নম্বর দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন উঠলেও কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি পর্ষদ।
০৯২০
অভিযোগ ওঠার পর বিভিন্ন জেলায় যাঁরা পরীক্ষার্থীদের ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন, তাঁদের তলব করে গোপন জবানবন্দি নথিবদ্ধ করেন প্রাক্তন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তার ভিত্তিতেই চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন তিনি।
১০২০
টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগও ওঠে প্রাথমিকের নিয়োগ মামলায়। সেই বিষয়ে তদন্ত শুরু করে ইডি। পাশাপাশি, এই মামলার তদন্তভার ছিল সিবিআইয়ের হাতেও। মামলায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, পর্ষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান মানিক ভট্টাচার্য এবং কয়েক জনের নাম উঠে আসে।
১১২০
রায় দেওয়ার সময় তৎকালীন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, পার্থ, মানিক, এবং কয়েক জন মিডলম্যান টাকার বিনিময়ে চাকরি বিক্রি করেছেন বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছে আদালত। সিবিআই এবং ইডির তদন্তে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘‘এই পুরো নিয়োগপ্রক্রিয়া কলুষিত। দুর্গন্ধে ভরা। প্রচুর বেকার যুবক চোখের জল ফেলছে এই দুর্নীতির কারণে, তাই সাংবিধানিক আদালত চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে না।’’
১২২০
২০২৩ সালের মে মাসের ১২ তারিখ ওই মামলার রায় ঘোষণা করেছিলেন হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে ৪২ হাজার ৫০০ জনের মধ্যে চাকরিচ্যুত হন প্রশিক্ষণহীন ৩২ হাজার শিক্ষক।
১৩২০
প্রথমে ৩৬ হাজার প্রশিক্ষণহীন প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল করার নির্দেশ দেন প্রাক্তন বিচারপতি। তবে পরে মামলাকারীদের আইনজীবী আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানিয়েছিলেন, প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের আসল সংখ্যা ৩৬ হাজার নয়, ৩০ হাজার ১৮৫। ছাপার (টাইপোগ্রাফিক্যাল এরর) ভুলের কারণে এই বিভ্রান্তি হয়েছে।
১৪২০
কলকাতা হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় রায় সংশোধন করে বলেছিলেন, ‘‘সংখ্যাটা ৩২ হাজারের কাছাকাছি হবে।’’ এর পর রায় পরিবর্তনের আর্জি জানিয়ে তাঁর দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই প্রাথমিক শিক্ষকদের একাংশ। তবে তাঁদের সঙ্গে দীর্ঘ কথোপকথনের পর প্রাক্তন বিচারপতি জানিয়ে দিয়েছিলেন, বিষয়টি আর তাঁর হাতে নেই।
১৫২০
প্রাক্তন বিচারপতির রায় ছিল, চাকরি বাতিল হলেও আগামী চার মাস ওই শিক্ষকেরা স্কুলে যাবেন। পার্শ্বশিক্ষকের সমকক্ষ বেতন পাবেন তাঁরা। তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে রাজ্যকে। সেখানে যোগ্য এবং উত্তীর্ণদের চাকরি বহাল থাকবে। নতুন কোনও চাকরিপ্রার্থীকে এই নিয়োগপ্রক্রিয়ায় নিতে দেওয়া যাবে না। এ-ও জানান, ইন্টারভিউ এবং অ্যাপটিটিউড টেস্টের ভিডিয়োগ্রাফি করতে হবে এবং তা সংরক্ষণ করে রাখতে হবে।
১৬২০
সিঙ্গল বেঞ্চের ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যায় পর্ষদ। তৎকালীন বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের চাকরি বাতিল সংক্রান্ত রায়ের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে।
১৭২০
তবে একই সঙ্গে ওই ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছিল, সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশমতো নতুন করে নিয়োগপ্রক্রিয়া পর্ষদকে শুরু করতে হবে। হাই কোর্টের ওই দুই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য এবং পর্ষদ।
১৮২০
সেখানে আবেদন জানান চাকরিহারাদের একাংশও। তাঁদের বক্তব্য ছিল, সিঙ্গল বেঞ্চ শুনানিতে সব পক্ষকে বলার সুযোগ দেয়নি। সব পক্ষের বক্তব্য শোনেনি আদালত। ওই বছর শীর্ষ আদালত হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চকে সব পক্ষের বক্তব্য শুনতে নির্দেশ দিয়েছিল।
১৯২০
এর পরে মামলা যায় বিচারপতি চক্রবর্তী এবং বিচারপতি মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চে। ১২ নভেম্বর হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি শেষ হয়। রায় স্থগিত রেখেছিল হাই কোর্ট।
২০২০
বুধবার এই মামলার কী রায় দেয় হাই কোর্ট, সে দিকেই নজর ছিল চাকরিপ্রার্থী-সহ সকলের। বুধবার সেই রায়ে হাই কোর্ট জানাল, ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বহাল থাকছে।