From ice cream to cheese and paratha, which delicious foods become cheaper due to GST cut in Durga Puja dgtl
GST Cut in Food Items
পুজোয় সস্তা হচ্ছে জিভে জল আনা একগুচ্ছ খাবার! তালিকায় পাস্তা, আইসক্রিম, স্প্যাগেটি ছাড়া আর কী কী?
পুজোর মুখে ‘পণ্য ও পরিষেবা কর’ বা জিএসটিতে (গুড্স অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স) বড় বদল করেছে কেন্দ্র। ফলে একগুচ্ছ খাবারের দাম কমার মিলেছে ইঙ্গিত।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:৩৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
উৎসবের মরসুমে দেশবাসীকে মেগা উপহার দিল কেন্দ্র। ‘পণ্য ও পরিষেবা কর’ বা জিএসটিতে (গুড্স অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স) বড় বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। ফলে এ বার পুজোয় ব্যাপক সস্তায় মিলবে আইসক্রিম, ভুজিয়া থেকে পনির ও পরোটা। দাম কমছে কেক, চানাচুর, চা, কফি এবং বিস্কুটের। এ ছাড়া তেল, সাবান ও শ্যাম্পু-সহ বেশ কিছু প্রসাধন সামগ্রীর দরও সস্তা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
০২১৮
চলতি বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ‘পণ্য ও পরিষেবা কর’-এর কাঠামোগত পরিবর্তনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় জিএসটি কাউন্সিল। ওই দিনই নতুন করব্যবস্থার কথা ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। বলেন, ‘‘এ বার থেকে পাঁচ এবং ১৮ শতাংশ— এই দুই হারে কার্যকর হবে জিএসটি।’’ এ ছাড়া কিছু পণ্যকে ৪০ শতাংশ হারের বিশেষ তালিকাভুক্ত করেছে সরকার। পাশাপাশি, প্রত্যাহার করা হয়েছে ১২ এবং ২৮ শতাংশের জিএসটির দু’টি স্তরকে।
০৩১৮
আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে সমস্ত পণ্যের উপর নতুন হারে জিএসটি নেওয়া শুরু করবে কেন্দ্র। ফলে দুর্গাপুজোর ষষ্ঠীর আগেই সস্তা হচ্ছে একগুচ্ছ খাবার। সেই তালিকার একেবারে মাথায় রয়েছে ভুজিয়া, নোনতা ভাজাভুজি এবং চানাচুর। আগে এই ধরনের প্যাকেটজাত এবং লেবেলযুক্ত পণ্যে করের মাত্রা ছিল ১২ শতাংশ। নতুন নিয়মে যা কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করেছে জিএসটি কাউন্সিল। এর আওতার বাইরে রয়েছে একমাত্র ভাজা ছোলা।
০৪১৮
আর্থিক বিশ্লেষকদের দাবি, জিএসটির নতুন হার ঘোষণা হওয়ার জেরে ভুজিয়া ও চানাচুরের মতো ভাজা এবং লবণযুক্ত প্যাকেটজাত খাবারের দাম ছয় থেকে সাত শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে এগুলির নির্মাণকারী সংস্থা। উদাহরণ হিসাবে ১০০ টাকার নিমকির প্যাকেটের কথা বলা যেতে পারে। আগে এতে করবাবদ দিতে হত ১২ টাকা। পুজোর আগেই সেটা নেমে আসবে পাঁচ টাকায়। আর তাই উৎসবের মরসুমে এগুলির বিক্রি ৬-৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
০৫১৮
অন্য দিকে, এ বার পুজোয় সাত শতাংশ সস্তা হতে পারে আইসক্রিমের দাম। কারণ নতুন নিয়মে এতে মাত্র পাঁচ শতাংশ জিএসটি নেবে সরকার। আগে যেটা ছিল ১২ শতাংশ। অর্থাৎ, গ্রাহক যদি ২০০ টাকার আইসক্রিম কেনেন, তা হলে মাত্র ১০ টাকা কর দিলেই চলবে। বর্তমানে যা ২৪ টাকা। অর্থাৎ, এই হিসাবে প্রতি আইসক্রিম বারে ১৪ টাকা করে বাঁচাতে পারবেন গ্রাহক।
০৬১৮
একই হিসাব চিজ়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। দুগ্ধজাত খাদ্যদ্রব্যটিতে এত দিন পর্যন্ত ১২ শতাংশ জিএসটি ধার্য করে এসেছে সরকার। ২২ সেপ্টেম্বর থেকে সেটা কমে পাঁচ শতাংশ হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। ফলে ৪০০ টাকার চিজ়ের ব্লকে করবাবদ মাত্র ২০ টাকা দিতে হবে গ্রাহককে। বর্তমানে সমপরিমাণ চিজ় ক্রয়ে জিএসটি ধার্য হয় ৪৮ টাকা। অর্থাৎ, এই হিসাবে ২৮ টাকা সস্তা হবে সংশ্লিষ্ট দুগ্ধজাত পণ্য।
০৭১৮
বর্তমানে প্যাকেটজাত হিমায়িত পরোটায় ১২ শতাংশ জিএসটি নিচ্ছে সরকার। নতুন নিয়মে সেটা পাঁচ শতাংশ কম হচ্ছে। ফলে ১৫০ টাকার প্যাকেটে করের অঙ্ক ১৮ টাকা থেকে কমে ৭.৫ শতাংশে নেমে আসবে। সে ক্ষেত্রে প্রতি প্যাকেটে সাড়ে ১০ টাকা পর্যন্ত বাঁচাতে পারবেন গ্রাহক। চিজ় এবং হিমায়িত পরোটা সস্তা হওয়ায় হোটেল-রেস্তরাঁর কিছু খাবারের দাম কমবে বলে মনে করা হচ্ছে।
০৮১৮
এগুলির পাশাপাশি দুধ, ছানা, পনির, রুটি এবং পাউরুটির উপরে থাকা পাঁচ শতাংশ জিএসটি প্রত্যাহার করেছে সরকার। কনডেনস্ড মিল্ক, মাখন, ঘি, তেল এবং দুগ্ধজাত যাবতীয় পণ্যের উপর ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে কর পাঁচ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে পুজোর মধ্যে মিষ্টির দাম কমার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
০৯১৮
জিএসটির নতুন নিয়মে বাদাম, খেজুর, আনারস, অ্যাভোকাডো, পেয়ারা, আম এবং অন্যান্য ফলে পাঁচ শতাংশ কর নেবে সরকার। কমবে পশুচর্বি, সসেজ, সংরক্ষিত বা রান্না করা মাংস, মাছ, চিনি, পাস্তা, নুডল্স, স্প্যাগেটি এবং বিভিন্ন সব্জির দাম। ১২ থেকে এগুলিতে কর নামছে পাঁচ শতাংশে। মাশরুম, নারকেলের জল, ইস্ট, সর্ষে, সয়াবিন এবং পানীয় জলের ২০ লিটারের বোতলের উপর একেই হারে জিএসটি ধার্য করেছে কেন্দ্র।
১০১৮
অন্য দিকে নতুন জিএসটির হার ঘোষণার পর নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রীর দাম কমানোর কথা ঘোষণা করেছে বহুজাতিক ভোগ্যপণ্য সংস্থা ‘হিন্দুস্তান ইউনিলিভার লিমিটেড’। বিজ্ঞপ্তি জারি করে শ্যাম্পু, সাবান, পানীয়, জ্যাম-সহ একগুচ্ছ সামগ্রীকে সস্তায় বিক্রি করার কথা জানিয়ে দিয়েছে তারা। একই বার্তা দিয়েছে গোদরেজ কনজ়িউমার্স, ম্যারিকো, প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বেলের মতো সংস্থাও।
১১১৮
‘হিন্দুস্তান ইউনিলিভার লিমিটেড’-এর বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ৩৪০ মিলিলিটারের ডাভ শ্যাম্পুর বোতল ৪৯০ টাকার বদলে ৪৩৫ টাকায় কিনতে পারবেন গ্রাহক। ৭৫ গ্রামের লাইফবয় সাবানের চারটের দাম ৬৮ থেকে নেমে আসছে ৬০ টাকায়। বর্তমানে ২০০ গ্রামের স্বাস্থ্যকর পানীয় (পড়ুন হেলথ ড্রিংক) ‘হরলিক্স’ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। ২২ সেপ্টেম্বরের পর যা ৮০ টাকায় কিনতে পারবে আমজনতা।
১২১৮
এ ছাড়া ১৫০ গ্রামের ‘ক্লোজ়আপ’ দাঁতের মাজন, ৯ গ্রামের প্রসাধন সামগ্রী ‘ল্যাকমে’, ২০০ গ্রামের কিসান জ্যাম, ৮৫০ গ্রামের কিসান কেচাপ সস্, ৭৫ গ্রামের বিআরইউ কফি, ৬৭ গ্রামের নর টম্যাটো স্যুপ এবং ২৫০ গ্রামের হেলম্যান্স রিয়্যাল মেয়োনিজ়ের দাম যথাক্রমে ১১.০৩ শতাংশ, ১১.২৬ শতাংশ, ১১.১১ শতাংশ, ৭ শতাংশ, ১০ শতাংশ, ১৫.৩৮ শতাংশ এবং ৯.০৯ শতাংশ কমাচ্ছে ‘হিন্দুস্তান ইউনিলিভার লিমিটেড’। নতুন দামের তালিকাও প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট ভোগ্যপণ্য সংস্থা।
জিএসটির নতুন হার ঘোষণার পাশাপাশি আরও একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী সংস্থাগুলিকে অবিক্রিত মজুতের উপরে সংশোধিত সর্বোচ্চ খুচরো মূল্য বা এমআরপি (ম্যাক্সিমাম রিটেল প্রাইস) জারি করার অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্র। এ বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সেরে ফেলতে হবে সেই প্রক্রিয়া। পাশাপাশি, নতুন এমআরপি বসানোর পর গণমাধ্যমে অন্তত দু’টি বিজ্ঞাপন দিতে হবে তাদের।
১৫১৮
নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যকে বাদ দিলে পুজোর আগে ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের উপরেও কমছে জিএসটি। এর সুবিধা যাতে আমজনতা পায়, তা নিশ্চিত করতে নির্মাণকারী ও বিপণন সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা ‘ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইসিং অথরিটি’ (এনপিপিএ)। ২২ সেপ্টেম্বরের পর যাবতীয় পণ্যে সংশোধিত দামের লেবেল যাতে সাঁটা থাকে, তা দেখে নিতে বলেছে তারা। এ ছাড়া মজুত থাকা পুরনো দামের লেবেল সাঁটা ওষুধ এবং চিকিৎসা পণ্য বাজারে ছাড়লে, তার উপরে সংশোধিত দামের লেবেল দিতে হবে।
১৬১৮
এনপিপিএ-র নির্দেশিকা অনুযায়ী, ওষুধ জোগান ঠিক রেখে পর্যায়ক্রমে এই কাজগুলি করতে হবে। সংশোধিত দামের তালিকা বিক্রেতাদের দিতে বলেছে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় সংস্থা। শুধু তা-ই নয়, নতুন দর দেখাতে হবে ক্রেতাদের। এ ছাড়া রাজ্য ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং সরকারকে ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের সংশোধিত দামের তালিকা দিতে বলেছে ‘ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইসিং অথরিটি’।
১৭১৮
পুজোর মুখে জিএসটিতে বদল নিয়ে গণমাধ্যমে মুখ খুলেছেন গোদরেজ কনজ়িউমার্স প্রোডাক্টের বিপণন প্রধান কৃষ্ণ খাতওয়ানি। তাঁর কথায়, ‘‘পণ্য ও পরিষেবা করকাঠামোয় সংস্কার করে আমজনতার অনেকটাই সুবিধা করল কেন্দ্র। উৎসবের মরসুমে এক ঝটকায় অনেক জিনিসের দাম কমে যাবে। ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়তে পারে বিক্রি।’’
১৮১৮
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভোগ্যপণ্যের চাহিদা যে গতিতে কমছিল, তাতে জিএসটি না কমলে শিল্পের সমস্যা বাড়ত। তার ধাক্কা লাগত দেশের অর্থনীতিতে। সরকারের সামনেও তাই কর কমানো ছাড়া পথ ছিল না। তাঁদের মতে, দাম ৫%-৭% কমলে ব্যবহার বাড়তে পারে ৬%-৮%। এটা মাথায় রেখে সংস্থাগুলি কর কমার পুরো সুবিধা দিক ক্রেতাকে।