How much would it cost to build Taj Mahal at today’s date? The pricing will blow your mind dgtl
Taj Mahal Rebuilding Cost
২০ হাজার শ্রমিকের বানানো বিলিতি পাথরের স্মৃতিসৌধ, আজকের দিনে তাজমহল বানাতে খরচ হতে পারে কত কোটি?
তাজমহলের নির্মাণকাজ শুরু হয় আনুমানিক ১৬৩২ সালে। এটি সম্পূর্ণ হতে সময় লেগেছিল ২২ থেকে ২৫ বছর। মুঘল জমানার শাহি নথি থেকে জানতে পারা যায়, অন্তত ৩৭ জন ‘বিভাগীয় প্রধান’ আর প্রায় ২০ হাজার কারিগর ও শ্রমিকের প্রচেষ্টায় নির্মাণ করা হয়েছিল এই স্মৃতিসৌধ।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০২ মে ২০২৫ ১২:২৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির দেশ ভারত। ভারতের নানা নিদর্শন জুড়ে রয়েছে ইতিহাসের নানা গল্প। সেই রকমই একটি ইতিহাস তথা নিখাদ ভালবাসার নিদর্শন হল উত্তরপ্রদেশের আগরার বুকে দাঁড়িয়ে থাকা শ্বেতপাথরের তৈরি তাজমহল।
০২১৭
শ্বেতপাথরের তৈরি এই সমাধিটি কেবল স্মৃতিসৌধই নয়, চিরন্তন প্রেমের প্রতীকও বটে। ১৬০৭ সালে মীনাবাজারে প্রথম দর্শনেই নাকি ‘চুড়িওয়ালি’ আরজুমন্দ বানু বেগমের প্রেমে পড়েছিলেন যুবরাজ খুররম। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তিনি পারস্যের এক রাজপরিবারের কন্যাকে বিয়ে করতে বাধ্য হন।
০৩১৭
কিন্তু ‘চুড়িওয়ালি’র প্রতি যুবরাজ খুররমের ভালবাসা কোনও অংশে কমে যায়নি। পরবর্তী কালে সেই প্রেম পরিণতি পায় বিয়ের হাত ধরে। ১৬১২ সালে খুররমের দ্বিতীয় বিয়ে হয় আরজুমন্দের সঙ্গে। তিনিই ইতিহাসে মমতাজ নামে পরিচিত।
০৪১৭
১৬২৮ সালে পঞ্চম মুঘল সম্রাট হওয়ার পরে যুবরাজ খুররম নাম বদলে হন সম্রাট শাহজাহান। কিন্তু শাহজাহানের ভাগ্যে সুখ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। শাহজাহান সম্রাটের আসনে বসার বছর তিনেক পরেই চতুর্দশ সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে প্রয়াত হন মমতাজ। তাঁরই সমাধিস্থলে শাহজাহান গড়ে তোলেন তাজমহল।
০৫১৭
তাজমহলের নির্মাণকাজ শুরু হয় আনুমানিক ১৬৩২ সালে। এটি সম্পূর্ণ তৈরি হতে সময় লেগেছিল ২২ থেকে ২৫ বছর। মুঘল জমানার শাহি নথি থেকে জানতে পারা গিয়েছে অন্তত ৩৭ জন ‘বিভাগীয় প্রধান’ আর প্রায় ২০ হাজার কারিগর ও শ্রমিকের প্রচেষ্টায় নির্মাণ করা হয়েছিল এই স্মৃতিসৌধ।
০৬১৭
তাজমহল নির্মাণ নিয়ে নানা গল্প রয়েছে। কথিত রয়েছে, তাজমহল বানাতে কাঁচামাল বয়ে আনার জন্য মোতায়েন করা হয়েছিল ১০০০টিরও বেশি হাতি।
০৭১৭
এ ছাড়াও পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে নামীদামি শিল্পীরা এসেছিলেন তাজমহলকে সাজাতে। তাজের গম্বুজ তৈরি করতে তুরস্ক থেকে এসেছিলেন উস্তাদ ইসমাইল খান। গম্বুজ ও মিনারের মাথায় বসানো ধাতব অংশ তৈরির দায়িত্বে ছিলেন লাহোরের কাজ়িম খান।
০৮১৭
বিশাল সেই স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য পাথর কাটা এবং সেগুলির গায়ে নকশা করানোর উদ্দেশ্যেও আলাদা লোক আনা হয়েছিল। তাজের গায়ে বসানো দামি পাথরে ক্যালিগ্রাফি করেন ইরানের শিল্পী আমানত খান। উজ়বেকিস্তানের বুখারার মহম্মদ হানিফা ছিলেন ভিত্তি আর মূল স্থাপত্যের পাথরগুলি নিঁখুত মাপে কাটার দায়িত্বে।
০৯১৭
তৎকালীন ভারতের শ্রেষ্ঠ মোজ়াইক শিল্পী দিল্লির চিরঞ্জিলালও এই কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই আন্তর্জাতিক নিদর্শন বানানোর নেপথ্যে যা খরচ হয়েছিল, তার হিসাব রাখতেন শাহজাহানের বিশ্বস্ত ইরানি কর্মী মির আব্দুল করিম। প্রায় দু’দশক ধরে চলা এই নির্মাণকার্যের সমস্ত হিসেবনিকেশের দেখাশোনা তিনিই করতেন।
১০১৭
কেবল শিল্পীদেরই বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আনা হয়েছিল তেমনটা নয়, স্মৃতিসৌধটি বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালগুলিও আনা হয়েছিল বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে। তাজের জন্য রেড স্যান্ডস্টোন এসেছিল জয়পুর থেকে। রাজস্থানেরই মকরানা এবং বিদেশ থেকে আনা হয়েছিল শ্বেতপাথর।
১১১৭
ক্যালিগ্রাফি করতে ব্যবহৃত পাথরগুলিও আনা হয়েছিল ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চল থেকে। ক্যালিগ্রাফির জন্য চিন থেকে জেড, তুর্কিস্তান থেকে ক্রিস্টাল, তিব্বত থেকে টার্কোয়েজ, আরাকান (মায়ানমার) থেকে হলুদ অ্যাম্বার, মিশর থেকে ক্রিয়োলাইট এসেছিল। আফগানিস্তানের বদখ্শান থেকে আসে নীল লাপিস-লাজুলি।
১২১৭
চাকচিক্যপূর্ণ এই স্মৃতিসৌধ বানাতে খরচ হয়েছিল বিপুল। বহু ঐতিহাসিক নথি ঘেঁটে জানতে পারা যায়, তৎকালীন সময়ে তাজমহল বানাতে প্রায় ৩ কোটি ২০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল। এই সংখ্যা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ভারতীয় ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকার তাঁর লেখা বই ‘স্টাডিজ় ইন মুঘল ইন্ডিয়া’তে জানিয়েছেন, তাজমহল নির্মাণে প্রায় ৪ কোটি ২০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল।
১৩১৭
এ বার প্রশ্ন হল, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আপনার যদি মনে হয় যে ভালবাসার মানুষটিকে সঙ্গে নিয়ে শুধু তাজমহল দেখতে যাওয়াই নয়, তাঁর জন্য এমনই একটা কিছু বানাবেন যা পুরো দুনিয়া বিস্ময় নিয়ে দেখবে, তা কি আদৌ সম্ভব? তাজমহল পুনর্নির্মাণ করতে আজকের দিনে ঠিক কতটা খরচ হবে?
১৪১৭
বর্তমান কালের বাজারদর অনুমান করে বলা যেতে পারে, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে কেউ যদি তাজমহল নির্মাণ করতে চান, তা হলে আনুমানিক তিন হাজার থেকে সাত হাজার কোটি টাকা খরচ হতে পারে। তবে ঠিক কতটা খরচ হবে সঠিক ভাবে সেটি বলা সম্ভব নয়।
১৫১৭
তাজমহলের উন্নত মানের স্থাপত্যকার্য, কাঁচামাল এবং কায়িক শ্রমই এই বিপুল খরচের জন্য দায়ী। তৎকালীন সময়ে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করতে যে খরচ পড়েছিল, আজকের দিনে সেই খরচ যে বহু গুণ বেশি হবে সেটি বলার অবকাশ রাখে না।
১৬১৭
অপূর্ব সেই স্থাপত্য বানাতে বেহিসেবি খরচের সমালোচক হয়েও শাহজাহনের পুত্র সম্রাট ঔরঙ্গজ়েব সেই সৌন্দর্যের মোহ কাটাতে পারেননি। স্ত্রী দিনরাজ বানু বেগমের মৃত্যুর পরে তাই তিনি মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদে তাজের অনুকরণে বানিয়েছিলেন ‘বিবি কা মকবরা’। কিন্তু আজকের দিনে তাজের অনুকরণে কিছু বানানোর স্বপ্ন দেখাও ব্যয়সাপেক্ষ!
১৭১৭
তাই বলা যেতে পারে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ভালবাসার মানুষটিকে সঙ্গে নিয়ে তাজমহল দেখতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাই শ্রেয়। তাঁর জন্য তাজমহল বানানোর ‘দিবাস্বপ্ন’ দেখে চললে সেই স্বপ্ন সফল হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।