How Pepsico once become naval superpower by doing business with Soviet Union dgtl
Pepsico
১৭টি ডুবোজাহাজ থেকে রণতরী, সোভিয়েতকে ঘোল খাইয়ে শক্তিশালী নৌশক্তিতে পরিণত হয় নরম পানীয় সংস্থা পেপসি!
অনেকেই হয়তো জানেন না যে, একসময় অন্যতম নৌশক্তিধর হয়ে উঠেছিল নরম পানীয়ের সংস্থা পেপসিকো। এমনকি, একাধিক যুদ্ধজাহাজও ছিল তাদের হাতে। কী ভাবে?
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:০২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
১৮৯৩ সালে কোকা কোলার বিকল্প হিসাবে আর একটি ঠান্ডা পানীয় তৈরি করেছিলেন ক্যালেব ব্র্যাডহ্যাম নামে মেডিসিনের এক ছাত্র। যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যারোলিনার নিউ বার্নে একটি ওষুধের দোকান চালাতেন তিনি। সেখানেই বিক্রি হত ‘ব্র্যাডস ড্রিঙ্ক’, যা খেলে হজমের গোলমাল আর হবে না বলে প্রচার করা হয়েছিল।
০২১৯
১৮৯৮ সালে নরম পানীয়টির নাম বদলে পেপসি-কোলা রাখা হয়। ‘ব্র্যাডস ড্রিঙ্ক’-এ প্রথম থেকেই চিনি এবং ভ্যানিলা মেশানো হত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) পরবর্তী সময়ে চিনির দাম নিত্য ওঠানামা করতে থাকে। ফলে মারাত্মক আর্থিক লোকসানের মুখে পড়ে নরম পানীয়টির নির্মাণকারী সংস্থা।
০৩১৯
১৯২৩ সালে একরকম দেউলিয়া হয়ে যায় পেপসি-কোলা। ঠান্ডা পানীয়টির দফতরে যখন লালবাতি প্রায় জ্বলে গিয়েছে, ঠিক তখনই দেবদূতের মতো আবির্ভাব ঘটে চার্লস গুথের। তিনি একরকম জলের দরে কিনে নেন ওই সংস্থা। ১৯৬১ সালে নরম পানীয়টির নাম বদলে রাখা হয় পেপসি।
০৪১৯
১৯৬৫ সালে পেপসি-কোলা কোম্পানি এবং ফ্রিটো-লে ইনকর্পোরেটেড এক হয়ে তৈরি হয় পেপসিকো। তার পর থেকে পেপসিকোর বাড়বাড়ন্ত শুরু। পেপসি থেকে শুরু করে নানা রকম জনপ্রিয় খাদ্য এবং পানীয় ব্র্যান্ডের মুকুটহীন সম্রাট হয়ে উঠেছে সংস্থাটি। অন্য অনেক সংস্থা অধিগ্রহণও করেছে সংস্থাটি।
০৫১৯
কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না যে, একসময় অন্যতম নৌশক্তিধর হয়ে উঠেছিল নরম পানীয়ের সংস্থাটি। এমনকি, একাধিক যুদ্ধজাহাজও ছিল তাদের হাতে। অবিশ্বাস্য মনে হলেও ইতিহাসের অন্যতম অদ্ভুত ব্যবসায়িক চুক্তিগুলির মধ্যে অন্যতম একটির কারণে অল্প সময়ের জন্য একটি ছোটখাটো নৌবহরের মালিক হয়ে উঠেছিল পেপসিকো।
০৬১৯
তিন দশকেরও বেশি সময় আগে পেপসিকোর হাতে ছিল ১৭টি ডুবোজাহাজ, একটি ক্রুজ়ার এবং একাধিক যুদ্ধজাহাজ, যা পেপসিকোকে রাতারাতি বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম নৌশক্তিতে পরিণত করেছিল।
০৭১৯
১৯৫৯ সালের কথা। পেপসিকোর সিইও তখন আলফ্রেড স্টিল এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসা পরিচালনার দায়িত্বে ডোনাল্ড এম কেন্ডাল। সে বছরই সোভিয়েতের তরফে নিউ ইয়র্কে প্রযুক্তি এবং সংস্কৃতির একটি প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়। পরে আমেরিকার তরফেও মস্কোর সোকোলনিকি পার্কে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
০৮১৯
মস্কোর সেই প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ এবং মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন। আমেরিকার গাড়ি, রান্নাঘরের জিনিসপত্র, এমনকি একটি পূর্ণাঙ্গ রান্নাঘরের মতো পণ্য প্রদর্শিত হয়েছিল সেখানে।
০৯১৯
পেপসি-কর্তা কেন্ডালও সেই প্রদর্শনীতে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রদর্শনী চলাকালীন হঠাৎই একটি মডেল রান্নাঘরের মধ্যে পুঁজিবাদ ভাল না কমিউনিস্ট মতবাদ, তা নিয়ে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন ক্রুশ্চেভ এবং নিক্সন। সেই ঘটনা ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে ‘রান্নাঘর বিতর্ক’ নামে।
১০১৯
কিন্তু ক্রুশ্চেভ-নিক্সন বাগ্বিতণ্ডা দেখে সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন পেপসি-কর্তা কেন্ডাল। উভয় নেতার দিকে পেপসির গ্লাস তুলে দেন তিনি। তাঁদের পেপসি খাওয়ার সেই মুহূর্তের ছবিও ক্যামেরাবন্দি করেন। জনপ্রিয় হয় ছবিটি। সোভিয়েত জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমেরিকার নরম পানীয় সংস্থাটি।
১১১৯
এর কয়েক বছর পরে ১৯৬৩ সালে পেপসিকোর সিইও হন কেন্ডাল। ১৯৭২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে একটি চুক্তি করেন তিনি। সেই চুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল, প্রতিদ্বন্দ্বী কোকা কোলাকে সোভিয়েতের বাজারে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না।
১২১৯
সেই সময়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিনিময় প্রথা চালু ছিল। কারণ, নগদে লেনদেন সব সময় সম্ভব ছিল না। তাই, অর্থের বদলে পণ্যের আদানপ্রদান হত পণ্য দিয়েও।
১৩১৯
সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে পেপসিকোও সে রকমই এক বাণিজ্য সম্পর্ক তৈরি করে সে সময়। সোভিয়েত ইউনিয়নের বাইরে সোভিয়েত মুদ্রা রুবল প্রায় মূল্যহীন ছিল। ফলে সোভিয়েতের তরফে নগদ দিয়ে সংস্থাটির নরম পানীয়ের দাম পরিশোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। ঠিক হয় ‘স্টোলিচনায়া ভদকা’র বিনিময়ে সোভিয়েতে নরম পানীয় পাঠাবে পেপসিকো। হয়ও তাই।
১৪১৯
সোভিয়েতের ভদকা আমেরিকায় বিক্রি করে মোটা মুনাফা কামায় পেপসিকো। কিন্তু ধীরে ধীরে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, বিশেষ করে ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আক্রমণের ফলে আমেরিকার বাজারে সোভিয়েত ভদকা জনপ্রিয়তা হারায়।
১৫১৯
ফলে ভদকা আমদানি বন্ধ করে নরম পানীয় রফতানির জন্য সোভিয়েতের কাছে ন্যায্য পাওনা চায় পেপসিকো। কিন্তু সোভিয়েত অর্থ দিতে পারেনি। পরিবর্তে ১৯৮৯ সাল নাগাদ নরম পানীয়ের পরিবর্তে ডুবোজাহাজ এবং যুদ্ধজাহাজের একটি নৌবহর পেপসিকোর হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সোভিয়েত।
১৬১৯
সেই নৌবহরের মধ্যে ছিল দু’টি নতুন সোভিয়েত তেল ট্যাঙ্কার, ১৭টি প্রায় বাতিল ডুবোজাহাজ, একটি ফ্রিগেট রণতরী, একটি ডেস্ট্রয়ার রণতরী এবং একটি সাধারণ জাহাজ।
১৭১৯
যদিও বিবিসি অনুসারে, এই জাহাজগুলি কখনও সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়নি। নরওয়ের একটি সংস্থাকে তেল ট্যাঙ্কারগুলি লিজ় দেয় পেপসিকো। অন্য জাহাজগুলি রদ্দি হিসাবে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
১৮১৯
১৯৯০ সালের একটি চুক্তিতে পরবর্তী ১০ বছরে প্রায় ৩০০ কোটি ডলার মূল্যের ৮৫টি জাহাজ অধিগ্রহণ করতে পারত পেপসিকো। কিন্তু ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের আগে সংস্থাটি কেবল ১০টি জাহাজ অধিগ্রহণ করে।
১৯১৯
পুরো বিষয়টি নিয়ে পেপসিকোর দম্ভের অন্ত ছিল না। রুশ নৌবহর অধিগ্রহণ নিয়ে রসিকতা করতেও ছাড়তেন না কেন্ডাল। বলতেন, আমেরিকার সরকারের চেয়ে দ্রুত সোভিয়েত সামরিক বাহিনীকে দুর্বল করছে পেপসিকো। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচডব্লিউ বুশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ব্রেন্ট স্কোক্রফটকে কটাক্ষ করে কেন্ডাল এক বার বলেন, ‘‘আমরা আপনার চেয়ে দ্রুত সোভিয়েত ইউনিয়নকে নিরস্ত্র করছি।’’