মলদ্বীপের রাজধানী মালেতে গিয়ে শুক্রবার প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার নানা বিষয় নিয়ে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। প্রতিরক্ষা সহযোগিতার প্রতীক হিসেবে মলদ্বীপ সেনার হাতে ৭২টি সামরিক যান এবং কিছু প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তুলে দেন মোদী। মুইজ্জুর প্রতিরক্ষা দফতরের নতুন ভবনকে চিহ্নিত করে বলেন, ‘‘এটি শক্তিশালী অংশীদারি এবং অটল বিশ্বাসের কংক্রিট দিয়ে নির্মিত।’’
দুই রাষ্ট্রনেতার শুক্রবারের বৈঠকে একাধিক বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে বিদেশ মন্ত্রকের একটি সূত্র জানিয়েছে, সেই আলোচনার অন্যতম বিষয় ছিল ভারতের তরফে মলদ্বীপকে সাড়ে ৫৬ কোটি ডলার (প্রায় ৪৮৫০ কোটি টাকা) ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব। ভারতের থেকে নেওয়া মলদ্বীপের বার্ষিক ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতাও হ্রাস করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সেই সূত্র।
বিষয়টি নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। মলদ্বীপের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেরও অবনতি হতে শুরু করে। এর মধ্যেই মুইজ্জুর মন্ত্রিসভার তিন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী মোদীর লক্ষদ্বীপ সফরের ছবি নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের অভিযোগ ওঠে। মোদীর লক্ষদ্বীপ সফরকে কেন্দ্র করে মলদ্বীপের প্রাক্তন ওই মন্ত্রীদের মন্তব্যে বিতর্ক দানা বেঁধেছিল।
এর মধ্যেই আন্তর্জাতিক স্তরে মলদ্বীপের উপর পাহাড়প্রমাণ ঋণের বোঝা চাপে। চিনের সঙ্গে মলদ্বীপের দহরম-মহরম শুরুর পর সে দিকে নজর পড়েছিল সারা বিশ্বের। আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার (আইএমএফ) সাবধান করে, চিনের ঋণের জালে জড়িয়ে পড়তে পারে মলদ্বীপ। কারণ চিনের থেকে দু’হাতে ঋণ নিলেও তা ফেরত দেওয়ার ক্ষমতা নেই মলদ্বীপের।
গত দু’বছরে মলদ্বীপের আর্থিক পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হয়েছে। বেজিংয়ের তরফে প্রত্যাশিত সহায়তা না পাওয়ারও অভিযোগ উঠেছে ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রের অন্দরে। বার বার অনুরোধ সত্ত্বেও নাকি মলদ্বীপকে নতুন করে সাহায্যদানে খুব বেশি উৎসাহ দেখায়নি বেজিং। সৌদি আরব এবং অন্যান্য পশ্চিম এশীয় দেশও মুখ ফিরিয়েছিল মলদ্বীপের থেকে। এর পর সে দেশের অন্দরেও প্রশ্ন উঠতে শুরু করে ‘ইন্ডিয়া আউট’ নীতির কার্যকারিতা নিয়ে।
গত বছরের জুন মাসে মুইজ্জু প্রথম ভারতে আসেন। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মোদীর তৃতীয় বারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল তাঁকে। এর পর আবার অক্টোবরে সস্ত্রীক ভারতে আসেন তিনি। দু’দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও হয়। মাঝে সে দেশের এক মন্ত্রী এসেও দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতির চেষ্টা করে মলদ্বীপের পর্যটনকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করেন।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের দেওয়া অর্থসাহায্য পেয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে ঋণখেলাপি হওয়া এড়াতে সক্ষম হন মুইজ্জু। মলদ্বীপকে সে সময় ৭৫.৭ কোটি ডলারের সহায়তা প্রদান করেছিল ভারত। উত্তর মলদ্বীপে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, দক্ষিণ মলদ্বীপে একটি সেতু ও সড়ক প্রকল্প, রাজধানী মালেতে একটি বৃহৎ আবাসন উন্নয়ন প্রকল্প এবং মালেকে তার পশ্চিম শহরতলির দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে সংযুক্ত করতে নতুন সেতু নির্মাণেও সাহায্য করে মোদী সরকার।
ভারত মহাসাগরে তার ভূ-কৌশলগত অবস্থানের জেরে ও এই অঞ্চলে ভারতের উপরে চাপ বজায় রাখতে মলদ্বীপকে কোনও দিনই হাতছাড়া করতে চাইবে না বেজিং। অন্য দিকে, ভারত মহাসাগরে চিনা আধিপত্য একেবারেই চায় না ভারত। এ ছাড়াও বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কায় সাম্প্রতিক সরকার বদলের জেরে ভারত অন্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাইছে। তাই মলদ্বীপকে হাতে রাখতে মরিয়া নয়াদিল্লিও।
এর মধ্যেই স্বাধীনতা দিবসে প্রধান অতিথি হিসাবে মোদীকে আমন্ত্রণ জানান মুইজ্জু। মোদী প্রথম রাষ্ট্রনেতা যাঁকে মলদ্বীপের স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুইজ্জু। আর মোদী শুক্রবার মলদ্বীপ সফরে গিয়েই মুইজ্জুর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার নানা বিষয় নিয়ে বৈঠক করেছেন। ভারতের তরফে প্রায় ৪৮৫০ কোটি টাকা ঋণের প্রস্তাবও পেয়েছে মলদ্বীপ। এমতাবস্থায় বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, ভারতের কাছে নতিস্বীকার করে আখেরে লাভই হয়েছে মুইজ্জুর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy