Advertisement
০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
India Australia Organic Agreement

‘ক্যাঙারু রাষ্ট্রে’ কৃষিজাত জৈব পণ্য নিয়ে প্রবেশ করছে ভারত! অসিদের সঙ্গে চুক্তিতে কোথায় লাভ? কতটা লোকসান?

কৃষিজাত জৈব পণ্যের ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে একটি বাণিজ্যিক সমঝোতা করল নয়াদিল্লি। সংশ্লিষ্ট চুক্তিতে কতটা লাভ হবে ভারতের? এর বাস্তবায়নে কোথায় রয়েছে চ্যালেঞ্জ?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৭:২৫
Share: Save:
০১ ১৭
India ink Mutual Recognition Agreement for organic products with Australia, know the benefits

রফতানিতে জোয়ার আনতে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান চালিয়া যাচ্ছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। একই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তিও সেরে নিচ্ছে নয়াদিল্লি। সেই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন অস্ট্রেলিয়া। চলতি বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর ‘ক্যাঙারু রাষ্ট্র’-এর সঙ্গে জৈব পণ্যের ব্যাপারে একটি সমঝোতা করেছে ভারত, যা এ দেশের কৃষি এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের মোড় ঘোরাতে পারে বলে মনে করছেন আর্থিক বিশ্লেষকদের একাংশ।

০২ ১৭
India ink Mutual Recognition Agreement for organic products with Australia, know the benefits

ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে জৈব পণ্যের চুক্তিটিকে সরকারি ভাবে বলা হচ্ছে ‘পারস্পরিক স্বীকৃতি সমঝোতা’ (মিউচুয়াল রেকগনিশন এগ্রিমেন্ট বা এমআরএ)। এর মূল উদ্দেশ্য হল জৈব সামগ্রীগুলির ব্যবসা বৃদ্ধি। এতে দুই দেশের কৃষক এবং কৃষিজাত পণ্য রফতানিকারীরা যথেষ্ট সুবিধা পাবেন বলে আশাবাদী নয়াদিল্লি ও ক্যানবেরা। পাশাপাশি এর জেরে খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ শিল্পের ফুলে ফেঁপে ওঠার যথেষ্ট সুযোগ থাকছে।

০৩ ১৭
India ink Mutual Recognition Agreement for organic products with Australia, know the benefits

ঠিক কী বলা হয়েছে সদ্য সই হওয়া ‘পারস্পরিক স্বীকৃতি সমঝোতা’য়? এই চুক্তির মাধ্যমে জৈব পণ্যের ক্ষেত্রে ঘরোয়া গুণগত মানকে স্বীকৃতি দেবে নয়াদিল্লি ও ক্যানবেরা। ফলে এ দেশের মাটিতে তৈরি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য সামগ্রী অস্ট্রেলিয়ার বাজারে বিক্রি করতে পারবেন রফতানি ব্যবসায়ীরা। একই ভাবে সে দেশের খাদ্য সামগ্রীও ঢুকতে পারবে এখানকার ঘরোয়া বাজারে।

০৪ ১৭
India ink Mutual Recognition Agreement for organic products with Australia, know the benefits

একটি উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি বুঝে নেওয়া যেতে পারে। ভারতের মাটিতে তৈরি হওয়া সর্ষের তেল অনেক সময় গ্রহণ করতে অস্বীকার করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-ভুক্ত একাধিক রাষ্ট্র। তাদের অভিযোগ, ওই তেলে রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড, যা সংশ্লিষ্ট দেশগুলির ঠিক করে দেওয়া গুণগত মানের সমতুল্য নয়। এই ধরনের ক্ষেত্রে যাবতীয় জৈব পণ্য ফের ভারতে ফেরত পাঠানোর প্রবণতা রয়েছে তাদের।

০৫ ১৭
India ink Mutual Recognition Agreement for organic products with Australia, know the benefits

গত কয়েক বছর ধরেই কৃষিজাত পণ্যের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছিল নয়াদিল্লি। রফতানি সামগ্রী ফেরত এলে বিপুল লোকসানের মুখে পড়তে হয় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী বা সংস্থাকে। আর তাই অনেকেই জৈব সামগ্রী বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে আগ্রহ হারাচ্ছিলেন। এই পরিস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চুক্তিটিকে ‘মাস্টারস্ট্রোক’ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। সংশ্লিষ্ট সমঝোতা অনুযায়ী কোনও কৃষিজাত পণ্যে ভারত সরকারের দেওয়া স্বীকৃতিকেই মান্যতা দেবে অস্ট্রেলিয়া।

০৬ ১৭
India ink Mutual Recognition Agreement for organic products with Australia, know the benefits

এমআরএতে মোট তিন ধরনের জৈব পণ্যের জন্য একে অপরের দেশের বাজার খুলতে সম্মত হয়েছে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। তার মধ্যে প্রথমেই থাকছে অপ্রক্রিয়াজাত উদ্ভিজ্জ সামগ্রী। তবে এই তালিকায় সামুদ্রিক শৈবাল, জলজ উদ্ভিদ এবং গ্রিনহাউস ফসলকে বাদ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে তৃতীয় কোনও দেশ থেকে প্রাপ্ত জৈব উপাদানে তৈরি উদ্ভিজ্জ প্রক্রিয়াজাত খাদ্য সামগ্রী। আর শেষ শ্রেণিতে থাকছে আঙুর এবং অন্যান্য ফল দিয়ে তৈরি মদ।

০৭ ১৭
India ink Mutual Recognition Agreement for organic products with Australia, know the benefits

বিশ্লেষকদের দাবি, সংশ্লিষ্ট চুক্তিটির জেরে অস্ট্রেলিয়ার বাজারে খুব সহজে কৃষিপণ্য বিক্রি করতে পারবে ভারত। এতে চাল, ইসবগুলের ভূসি এবং নারকেলের রফতানির সূচক ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে বৃদ্ধি পাবে এ দেশের কৃষিজাত জৈব পণ্যের চাহিদা। ফলে সেখানে পা জমাতে সুবিধা হবে নয়াদিল্লির। সে ক্ষেত্রে আগামী দিনে আরও অনেক দেশ এই ধরনের সমঝোতায় রাজি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

০৮ ১৭
India ink Mutual Recognition Agreement for organic products with Australia, know the benefits

তবে সংশ্লিষ্ট চুক্তিটি কার্যকর করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। প্রথমত, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের বাজার ধরে রাখতে হলে উচ্চ মানের কৃষিজাত জৈব পণ্য পাঠাতে হবে সেখানে। এ দেশের কোনও সামগ্রীর জন্য সেখানে অসুস্থতা বা রোগের প্রকোপ দেখা দিলে সারা বিশ্বের সামনে মুখ পুড়বে ভারতের। শুধু তা-ই নয়, এর জেরে আগামী দিনে ভিন্‌রাষ্ট্রে কৃষিজাত পণ্য বিক্রি করা নয়াদিল্লির সামনে কঠিন হতে পারে।

০৯ ১৭
India ink Mutual Recognition Agreement for organic products with Australia, know the benefits

দ্বিতীয়ত, এ দেশের অসাধু ব্যবসায়ীদের জাল শংসাপত্র দেখিয়ে কৃষিজাত জৈব পণ্য বিক্রি করার প্রবণতা রয়েছে। অনেক সময়ে এই ধরনের চক্রে সরকারি আধিকারিকদের জড়িয়ে পড়ার ছবিও সামনে এসেছে। ফলে কোনও সামগ্রী অস্ট্রেলিয়ায় রফতানির ক্ষেত্রে প্রশাসনকে বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে। জাল শংসাপত্রের কৃষিপণ্য সেখানে গেলে নয়াদিল্লির প্রতি ক্যানবেরার বিশ্বাসে আঘাত লাগবে, যা দুই দেশের সম্পর্কে চিড় ধরাতে পারে, বলছেন বিশ্লেষকেরা।

১০ ১৭
India ink Mutual Recognition Agreement for organic products with Australia, know the benefits

আর তাই বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন এমআরএকে সফল করতে হলে কেন্দ্রকে এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের আদলে একটি শক্তিশালী নজরদারি সংস্থা গড়ে তুলতে হবে। এ দেশে কৃষিজাত জৈব পণ্যের গুণগত মান সংক্রান্ত শংসাপত্র বিলির কাজ সরাসরি ভাবে করে না সরকার। এর দায়িত্ব রয়েছে একাধিক বেসরকারি সংস্থার কাঁধে। তারা স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজটি করছে কি না, সেটা দেখতে হবে।

১১ ১৭
India ink Mutual Recognition Agreement for organic products with Australia, know the benefits

তৃতীয়ত, এ দেশের কৃষক সমাজের বড় অংশই ফসলের বাম্পার উৎপাদনের জন্য রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন। রফতানি বৃদ্ধির জন্য হঠাৎ করে তাঁদের জৈব সার ব্যবহারের দিকে ঝুঁকে পড়া সম্ভব নয়। কারণ, এতে প্রথম পাঁচ থেকে সাত বছর ফসল উৎপাদনের হার থাকবে কম। তা ছাড়া প্রথম দিকে উৎপন্ন হওয়া শস্যে রাসায়নিক মেলার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ। ধীরে ধীরে জমির চরিত্র বদল হলে বিদেশে পাঠানোর মতো ফসল ফলাতে পারবেন এখানকার চাষিরা।

১২ ১৭
India ink Mutual Recognition Agreement for organic products with Australia, know the benefits

বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই পরিমাণ সময় কৃষকদের অনেকেই দিতে চাইবেন না। তাঁদের জৈব চাষের জন্য রাজি করানোও সরকারের কাছে কঠিন চ্যালেঞ্জ। অন্য দিকে অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম থেকে এই চাষ হয়ে আসছে। ফলে ক্যানবেরার পক্ষে তাদের পণ্য ভারতের বাজারে বিক্রি করা বেশি সহজ হতে পারে। এতে বাণিজ্য ঘাটতি বৃদ্ধির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে নয়াদিল্লির।

১৩ ১৭
India ink Mutual Recognition Agreement for organic products with Australia, know the benefits

উল্লেখ্য, নয়াদিল্লির বাণিজ্য ভবনে সংশ্লিষ্ট চুক্তিতে সই হওয়ার সময়ে হাজির ছিলেন বাণিজ্য সচিব সুনীল বার্থওয়াল এবং কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্য রফতানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড প্রসেসড ফুড প্রোডাক্টস এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বা এপিইডিএ) চেয়ারম্যান অভিষেক দেব। অস্ট্রেলিয়ার তরফে এতে স্বীকৃতি দেন সেখানকার কৃষি, মৎস্য ও বন মন্ত্রকের প্রথম সহকারী সচিব টম ব্ল্যাক।

১৪ ১৭
India ink Mutual Recognition Agreement for organic products with Australia, know the benefits

এ ছাড়াও চুক্তি সই হওয়ার অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বা এফএসএসএআইয়ের উপদেষ্টা অলকা রাও ও অসি ডেপুটি হাইকমিশনার নিক ম্যাকক্যাফ্রে। সংশ্লিষ্ট সমঝোতাটির বাস্তবায়নের দায়িত্ব এপিইডিএ, বাণিজ্য মন্ত্রক এবং ক্যানবেরার কৃষি, মৎস্য ও বন দফতরের কাঁধে থাকছে বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

১৫ ১৭
India ink Mutual Recognition Agreement for organic products with Australia, know the benefits

চুক্তি সই হওয়ার পর বাণিজ্য সচিব বার্থওয়াল বলেন, ‘‘জৈব পণ্যে মান উন্নয়ন এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ‘ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ফর অর্গ্যানিক প্রোডাক্টশন’ বা এনপিওপি কর্মসূচির উপর জোর দেবে সরকার। অজৈব সামগ্রীর সঙ্গে মিশ্রণ আটকানোই হবে প্রশাসনের মূল চ্যালেঞ্জ। এর জন্য জরিমানাকে আরও কঠোর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ জৈব পণ্যের দাম ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি হলে কৃষকদের আয় উল্লেখ্যযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পাবে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

১৬ ১৭
India ink Mutual Recognition Agreement for organic products with Australia, know the benefits

অন্য দিকে ভারতে কৃষিজাত জৈব পণ্যের ফলন দিন দিন বাড়ছে বলে জানিয়েছেন অস্ট্রেলীয় শীর্ষ আধিকারিক টম ব্ল্যাক। তাঁর কথায়, ‘‘এই সমঝোতায় বিভিন্ন ধরনের শস্য, চা, মশলা, পানীয় এবং আঙুর ও ফল দিয়ে তৈরি মদের বাণিজ্যে দারুণ লাভের সুযোগ থাকছে।’’ উল্লেখ্য, বর্তমানে ৫ লক্ষ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে জৈব ফসলের চাষ করে থাকে ক্যানবেরা। এই দিক থেকে বিশ্বে এক নম্বর স্থানে রয়েছে ‘ক্যাঙারু রাষ্ট্র’।

১৭ ১৭
India ink Mutual Recognition Agreement for organic products with Australia, know the benefits

গত আর্থিক বছরে (২০২৪-’২৫) অস্ট্রেলিয়ায় ৮৯ লক্ষ ৬০ হাজার ডলারের জৈব পণ্য অস্ট্রেলিয়ায় রফতানি করে নয়াদিল্লি। এর পরিমাণ ছিল ২,৭৮১.৫৮ টন। সংশ্লিষ্ট চুক্তির ফলে সেটা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতকে ‘বিশ্বের জৈব খাদ্যের ঝুড়ি’তে পরিণত করার স্বপ্ন রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর মোদীর। তারই প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে এই সমঝোতায় কতটা সুবিধা হয়, সেটাই এখন দেখার।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy