India is developing indigenous S-400 Air Defence System in Project Kusha dgtl
Desi S-400 Air Defence
ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র-যুদ্ধবিমানের জারিজুরি খতম! রামের দ্বিতীয় পুত্রের হাত ধরে ‘সুদর্শন চক্রের’ ধার বাড়াচ্ছে ভারত
পাকিস্তানের সঙ্গে ‘যুদ্ধে’ রাশিয়ার তৈরি ‘এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ’ ব্যবহার করে শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্রকে মাঝ-আকাশেই ধ্বংস করেছে ভারতীয় ফৌজ। লড়াই থামতেই সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে এই হাতিয়ার তৈরিতে মন দিয়েছেন নয়াদিল্লির প্রতিরক্ষা গবেষকেরা।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২৫ ০৭:৫৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
‘অপারেশন সিঁদুর’কে কেন্দ্র করে চার দিনের ‘যুদ্ধে’ পর্যুদস্ত পাকিস্তান! ইসলামাবাদ বিমানবাহিনীর ১১টি ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে ভারত। ধ্বংস হয়েছে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের ন’টি গুপ্তঘাঁটি। অন্য দিকে এই লড়াইয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে খবরের শিরোনামে রয়েছে নয়াদিল্লির ‘আকাশ প্রতিরক্ষা’ ব্যবস্থা বা এয়ার ডিফেন্স। আর সেই হাতিয়ারগুলির মধ্যে অবশ্যই শীর্ষস্থানে থাকবে রাশিয়ার ‘এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ’-এর নাম।
০২১৮
মস্কোর এয়ার ডিফেন্স হাতে পাওয়ার পর তার নতুন নামকরণ করেছে ভারতীয় ফৌজ। এ দেশের বিমানবাহিনীর কাছে রুশ ‘এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ’-এর পরিচয় ‘সুদর্শন চক্র’। বিরাট এলাকা জুড়ে ভারতীয় আকাশকে দুর্ভেদ্য বর্মে ঢেকে রেখেছে এটি। বর্তমানে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে এই ধরনের একটি ‘আকাশ প্রতিরক্ষা’ ব্যবস্থা তৈরির দিকে নজর দিয়েছে নয়াদিল্লি। সেই লক্ষ্যে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে ‘ডিফেন্স রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজ়েশন’ বা ডিআরডিও।
০৩১৮
সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে ‘এস-৪০০’র মতো উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এয়ার ডিফেন্স নির্মাণে ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড বা বিইএলের সাহায্য নিয়েছেন ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। পাক আক্রমণকে প্রতিহত করে রাতারাতি নায়ক হয়ে গিয়েছে এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার তৈরি ‘আকাশতীর’। নিখুঁত নিশানায় ইসলামাবাদের ড্রোনের ঝাঁককে শূন্যেই ধ্বংস করে এই হাতিয়ার। ফলে অস্ত্রনির্মাণে বিইএলের গ্রহণযোগ্যতা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
০৪১৮
বর্তমানে ডিআরডিও ও ভারত ইলেকট্রনিক্স কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ‘প্রকল্প কুশ’-এ (পড়ুন প্রজেক্ট কুশ) কাজ করছে। এটি সফল হলে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ‘এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ’-এর সমতুল্য হাতিয়ার পাবে ভারতীয় ফৌজ। অস্ত্রটির একটি নমুনা তৈরি হতে ১২ থেকে ১৮ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। সব কিছু ঠিক থাকলে ৩৬ মাসের মাথায় গিয়ে এর প্রাথমিক পরীক্ষা চালাবে ডিআরডিও। যদিও সরকারি ভাবে এই নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি।
০৫১৮
সূত্রের খবর, ‘প্রকল্প কুশ’-এ প্রতিরক্ষা গবেষকেরা যে হাতিয়ার তৈরি করতে চলেছে তা দিয়ে শত্রুর ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র এবং যুদ্ধবিমানকে ধ্বংস করা যাবে। এতে থাকবে দূরপাল্লার ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র (লং রেঞ্জ সারফেস টু এয়ার মিসাইল)। হাতিয়ারটির একাধিক অংশ তৈরি করবে বিইএল। তার মধ্যে রেডার এবং কন্ট্রোল সিস্টেম থাকবে বলে জানা গিয়েছে।
০৬১৮
সম্প্রতি এই ইস্যুতে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলেন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিরক্ষা সংস্থাটির চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) মনোজ জৈন। তাঁর কথায়, ‘‘ডিআরডিওর সঙ্গে আমরা প্রকল্প কুশে কাজ করছি। এই স্বদেশি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একাধিক অংশ আমরা তৈরি করব। মূল অস্ত্রটির সঙ্গে সেগুলিকে জোড়া হবে। এর নকশা বেশ জটিল। সেটা মাথায় রেখে হাতিয়ারটির অংশগুলিকে নির্মাণ করতে হচ্ছে।’’
০৭১৮
সূত্রের খবর, দু’টি অংশে ‘প্রকল্প কুশ’-এর পুরো ব্যবস্থাকে তৈরি করতে চাইছে ডিআরডিও। তার পর সেটাকে একসঙ্গে জুড়ে স্বদেশি ‘এস-৪০০’ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষকদের। এই সংযোজনের কাজও বিইএলের মাধ্যমে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির এমডি জৈন বলেছেন, ‘‘এই হাতিয়ারের বিভিন্ন অংশগুলিকে জোড়া বা অ্যাসেম্বলিংয়ের কাজটি সবচেয়ে কঠিন। তবে এই ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। তাই আশা করছি, তার বরাত আমরা পাব।’’
০৮১৮
‘প্রকল্প কুশ’কে বাদ দিলে আরও একটি অস্ত্র তৈরিতে মন দিয়েছে বিইএল। সেটি হল, দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র বা কিউআরএসএএম (কুইক রিয়্যাকশন সারফেস টু এয়ার মিসাইল)। এর জন্য চলতি আর্থিক বছরেই (পড়ুন ২০২৫-’২৬) প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার বরাত মিলবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। ভারতীয় সেনা ও বিমানবাহিনীর জন্য এই এয়ার ডিফেন্স ব্যবস্থাটি তৈরি করছে বিইএল।
০৯১৮
গত বছর ভারতীয় ফৌজের হাতে ‘আকাশতীর’ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমটি তুলে দেয় ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড। জনপ্রিয় ইজ়রায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোমের আদলে এটি তৈরি করেছেন ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। মূলত স্বল্পপাল্লার ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্রকে মাঝ-আকাশে ধ্বংস করতে এর নকশা প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ছাড়া শত্রুর যুদ্ধবিমানের রিয়্যাল-টাইম তথ্য দিতে পারে ‘আকাশতীর’। বাহিনীর একক অপারেশনাল কাঠামোর মধ্যে মিশে গিয়ে কাজ করার সক্ষমতা রয়েছে এই স্বদেশি এয়ার ডিফেন্স ব্যবস্থার।
১০১৮
পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষে নিজের জাত চিনিয়েছে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি আরও একটি ‘আকাশ প্রতিরক্ষা’ ব্যবস্থা। তার নাম আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র। ডিআরডিওর তৈরি এই হাতিয়ারের পাল্লা ৭০ কিলোমিটার। ২.৫ ম্যাক, অর্থাৎ শব্দের চেয়ে আড়াই গুণ গতিতে ছুটতে পারে ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষকদের আকাশ। সূত্রের খবর, পাক বিমানবাহিনীর সাড়ে চার প্রজন্মের লড়াকু জেট জেএফ-১৭কে এর সাহায্যেই মাঝ-আকাশে ধ্বংস করে এ দেশের বাহিনী। চিনের তৈরি মোট দু’টি যুদ্ধবিমানকে হারাতে হয়েছে বলে পরে স্বীকার করে নেয় ইসলামাবাদ।
১১১৮
এ হেন আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার নির্মাণকারী সংস্থা হল ভারত ডায়নামিক্স লিমিটেড বা বিডিএল। পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সংঘর্ষবিরতি হওয়ার পর থেকে ভারত ইলেকট্রনিক্সের মতো এর শেয়ারের দরও ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক বাজারে কদর বেড়েছে ভারতের স্বদেশি এয়ার ডিফেন্স ব্যবস্থার। ইতিমধ্যেই এশিয়ার দেশ আর্মেনিয়াকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা বিক্রি করেছে নয়াদিল্লি। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় আরও অনেক দেশের সঙ্গে এই ধরনের প্রতিরক্ষা চুক্তি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
১২১৮
উল্লেখ্য ‘প্রকল্প কুশ’ যে রুশ ‘এস-৪০০’র আদলে তৈরি করা হচ্ছে, তাতে রয়েছে উন্নত রেডার, কমান্ড সেন্টার এবং ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র। একসঙ্গে মোট ৮০টি লক্ষ্যবস্তুর উপর আঘাত হানার ক্ষমতা রয়েছে মস্কোর ওই হাতিয়ারের। এক কথায় দেশের আকাশকে দুর্ভেদ্য বর্মে ঢেকে ফেলতে পারে ক্রেমলিনের ‘এস-৪০০’। গত তিন বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধেও এর বহুল ব্যবহার করেছে রুশ সৈন্যবাহিনী।
১৩১৮
বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, সব ধরনের পরিবেশে কাজ করতে পারে মস্কোর ‘এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ’। অর্থাৎ, মরুভূমির প্রবল গরম এবং হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় সমান ভাবে কার্যকর এই হাতিয়ার। ‘এস-৪০০’র রেডারের পাল্লা ৬০০ কিলোমিটার। অন্য দিকে, স্টেল্থ যুদ্ধবিমান, ক্রুজ় এবং ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে মাঝ-আকাশেই গুঁড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে ক্রেমলিনের এই ব্রহ্মাস্ত্রের।
১৪১৮
‘এস-৪০০’র নির্মাণকারী সংস্থা হল আলমাজ় সেন্ট্রাল ডিজ়াইন ব্যুরো। এটি একসঙ্গে চিহ্নিত করতে পারে ৩০০ লক্ষ্যবস্তু। রাশিয়ার থেকে এই হাতিয়ারের পাঁচটি ইউনিট আমদানি করেছে নয়াদিল্লি। তার মধ্যে তিনটি ইতিমধ্যেই সরবরাহ করেছে মস্কো। বাকি দু’টি কিছু দিনের মধ্যে ভারতীয় সেনার বহরে শামিল হওয়ার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট হাতিয়ারটিতে রয়েছে চার ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র। ‘স্টেল্থ’ শ্রেণির লড়াকু জেটকেও অনায়াসেই চিহ্নিত করতে পারে এ দেশের ‘সুদর্শন চক্র’।
১৫১৮
‘এস-৪০০’র চার ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতিটির পাল্লা আলাদা। ৪০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য রয়েছে ৪০এন৬ ক্ষেপণাস্ত্র। আবার ২৫০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুর জন্য ব্যবহার হবে ৪৮এন৬ ক্ষেপণাস্ত্র। এই দু’টি ছাড়া মাঝারি পাল্লার ৯এম৯৬ই২ এবং স্বল্পপাল্লার ৯এম৯৬ই নামের আরও দু’টি ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে ‘এস-৪০০’র লঞ্চারে। অত্যাধুনিক এই ‘সুদর্শন চক্র’ ব্যবহার করার পদ্ধতিটি বেশ জটিল।
১৬১৮
এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি পরিচালনার জন্য চারটি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। প্রথমে নজরদারি (সার্ভেল্যান্স) রেডার লক্ষ্যবস্তুকে চিহ্নিত করে। দীর্ঘপাল্লার এই রেডার ব্যবস্থা বার্তা পাঠিয়ে সতর্ক করে ‘কমান্ড ভেহিকল’কে। এই ‘কমান্ড ভেহিকল’ লক্ষ্যবস্তুকে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে নিশানা করার জন্য বার্তা পাঠায় ‘এনগেজমেন্ট রেডার’কে। ‘এনগেজমেন্ট রেডার’-এর সেই বার্তা ‘লঞ্চার ভেহিকল’-এ যায়। নিশানা ঠিক করে দেয় ‘এনগেজমেন্ট রেডার’। তার পরই ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ‘এস-৪০০’।
১৭১৮
সূত্রের খবর, ‘প্রকল্প কুশ’-এ ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষকেরা যে স্বদেশি ‘এস-৪০০’ তৈরি করতে চলেছেন, তার পরিচালন পদ্ধতি হবে অনেকটাই আলাদা। হাতিয়ারটিকে ‘সুদর্শন চক্র’র থেকে উন্নত করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। অন্য দিকে, ভারতের সঙ্গে ‘এস-৫০০’ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে চুক্তি করতে মস্কো আগ্রহ দেখিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। রাশিয়ার এই সর্বশেষ এয়ার ডিফেন্স ব্যবস্থাটি ‘এস-৪০০’রই উন্নত সংস্করণ বলে জানা গিয়েছে।
১৮১৮
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলির একাংশের দাবি, আগামী মাসেই মস্কো সফরে যাবেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বা এনএসএ (ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইসার) অজিত ডোভাল। সেখানে ‘এস-৫০০’ এবং প়ঞ্চম প্রজন্মের ‘স্টেল্থ’ লড়াকু জেট এসইউ-৫৭ ফেলনকে নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একপ্রস্ত আলোচনা হতে পারে তাঁর। কিছু দিনের মধ্যেই পুতিন ভারত সফরে আসবেন বলে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে ক্রেমলিন। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একাধিক প্রতিরক্ষা চুক্তি সেরে ফেলবেন বলে মনে করা হচ্ছে।