Indian military will go to US after Donald Trump Vladimir Putin summit in Alaska, know its significance dgtl
Indian Army in America
ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক সেরে পুতিন দেশে ফিরতেই আলাস্কায় পা রাখছে ভারতীয় সেনা! যুক্তরাষ্ট্রে কেন ফৌজ পাঠাচ্ছেন মোদী?
ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলাস্কায় বৈঠক করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি মস্কো ফিরতেই যুক্তরাষ্ট্রের ওই এলাকায় যাচ্ছে ভারতীয় ফৌজ। কিন্তু কেন?
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২৫ ১৬:৩০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক ব্যর্থ হতে না হতেই খবরের শিরোনামে ভারতীয় সেনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওই এলাকায় এ বার পা রাখতে চলেছে এ দেশের ফৌজ। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের গোড়ায় আমেরিকার ৪৯তম রাজ্যে পৌঁছোবে তাঁরা। সরকারি ভাবে ইতিমধ্যেই তা ঘোষণা করে দিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। ওয়াশিংটনের ক্রমাগত শুল্কবাণের মধ্যে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের আলাস্কায় বাহিনী পাঠানোর সিদ্ধান্তকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা।
০২১৮
ইউক্রেন যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটাতে গত ১৫ অগস্ট আলাস্কার অ্যাঙ্কারেজ়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও সেখানে কোনও সমাধানসূত্র বার হয়নি। মজার বিষয় হল, ওই দিনই যুক্তরাষ্ট্রের ফৌজের সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়ায় ভারতীয় সেনার অংশগ্রহণের কথা ঘোষণা করে বিদেশ মন্ত্রক। আমেরিকার ‘কৌশলগত অংশীদার’ হিসাবে প্রতি বছর অন্তত দু’বার যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধাভ্যাসে অংশ নিয়ে থাকে এ দেশের সেনা।
০৩১৮
ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে গত কয়েক বছর ধরেই যৌথ সামরিক মহড়ায় যোগ দিচ্ছে দু’দেশের ফৌজ। এর মূলত দু’টি অংশ রয়েছে। একটি হয় এ দেশে, নাম ‘টাইগার ট্রায়াম্ফ’। এতে যোগ দিতে ভারতে আসে মার্কিন বাহিনী। আর দ্বিতীয়টির নাম ‘যুদ্ধাভ্যাস’। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ওই মহড়ার আয়োজন করে পেন্টাগন, যেখানে যায় এ দেশের সেনা। ‘কৌশলগত অংশীদারি’র কারণে এর মাধ্যমে দুই দেশের সৈনিকদের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লি।
০৪১৮
এ বছরের এপ্রিলের ১ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাডায় ‘টাইগার ট্রায়াম্ফ’ মহড়ার অয়োজন করে ভারতীয় সেনা। এতে যোগ দিয়ে এ দেশের তিন বাহিনীর সঙ্গে উপকূলের লড়াই সংক্রান্ত যুদ্ধাভ্যাস চালায় মার্কিন সেনা। সংশ্লিষ্ট মহড়ায় সামরিক মালবাহী বিমান এবং প্রচুর পরিমাণে হামলাকারী হেলিকপ্টার ব্যবহার করেছিল দু’পক্ষই। মহড়ার সময় দু’তরফের সৈনিক এবং অফিসারেরা একসঙ্গে থাকা এবং খাওয়াদাওয়া সেরেছিলেন।
০৫১৮
অন্ধ্রের উপকূলে যখন ‘টাইগার ট্রায়াম্ফ’ চলছে, ঠিক তখনই ‘পারস্পরিক শুল্ক’ নীতি ঘোষণা করেন ট্রাম্প। ভারতীয় পণ্যে ২৬ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে দেন তিনি। ২ এপ্রিল থেকে নতুন নিয়ম কার্যকর হয়। এর পরেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের শুল্কবাণ এড়াতে ওয়াশিংটন এবং নয়াদিল্লির মধ্যে শুরু হয় বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা। এ ব্যাপারে দ্রুত সমঝোতায় আসা যাবে বলে আশাবাদী ছিলেন ‘সুপার পাওয়ার’ আমেরিকার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। যদিও বাস্তবে তা হয়নি।
০৬১৮
গত জুলাইয়ে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে দেখা দেয় তিক্ততা। ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালীন গত সাড়ে তিন বছর ধরে রাশিয়ার থেকে সস্তা দরে খনিজ তেল আমদানি করছে ভারত। এই নিয়ে প্রবল আপত্তি জানান ট্রাম্প। তাঁর যুক্তি, এর জেরে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার যাবতীয় অর্থ পেয়ে যাচ্ছে মস্কো। আর তাই অবিলম্বে ক্রেমলিন থেকে ‘তরল সোনা’ কেনা বন্ধ করতে নয়াদিল্লিকে হুমকি দেন তিনি। যদিও তাতে আমল দেয়নি কেন্দ্রের মোদী সরকার।
০৭১৮
এর পরেই ক্ষুব্ধ ট্রাম্প এ দেশের সামগ্রীর উপরে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে দেন। ফলে মার্কিন বাজারে ভারতীয় পণ্যের উপরে করের মাত্রা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ। আগামী ২৭ অগস্ট থেকে অতিরিক্ত কর জারি হওয়ার কথা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নতুন করে শুল্ক চাপালেও বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছিল। অগস্টের মাঝামাঝি সেটাও ঠান্ডা ঘরে চলে যাওয়ায় দু’দেশের ‘মধুর সম্পর্ক’ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।
০৮১৮
প্রস্তাবিত চুক্তি নিয়ে জট কাটাতে অগস্টে মার্কিন বাণিজ্য দফতরের একটি প্রতিনিধিদলের ভারতে আসার কথা ছিল। কিন্তু, আচমকা সেই সফর বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র। এই পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে বাণিজ্যিক সমঝোতা হওয়ার আর কোনও সম্ভাবনাই নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের একাংশ। ফলে দু’দেশের সৈনিকদের যৌথ মহড়া নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল।
০৯১৮
কিন্তু যাবতীয় ধোঁয়াশা কাটিয়ে ১৫ অগস্ট বিদেশ মন্ত্রক জানিয়ে দেয়, আলাস্কায় ‘যুদ্ধাভ্যাস’ মহড়ায় অংশ নেবে ভারতীয় সেনা। প্রথামাফিক চলবে সেই প্রক্রিয়া। ওই মহড়া দুই দেশের ফৌজের ২১তম সংস্করণ বলে জানা গিয়েছে। এর পাশাপাশি অগস্টের শেষ সপ্তাহে নয়াদিল্লি সফরে আসবে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের একটি দল। অত্যাধুনিক হাতিয়ার আমদানি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসবেন কেন্দ্রের মোদী সরকারের পদস্থ কর্তারা।
১০১৮
জুলাইয়ে ভারতীয় পণ্যে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর এ দেশের অর্থনীতি নিয়ে বিষোদ্গার করেন ট্রাম্প। ভারতীয় অর্থনীতিকে ‘মৃতবৎ’ বলতেও ছাড়েননি তিনি। এর পরই আমেরিকার থেকে পঞ্চম প্রজন্মের ‘স্টেল্থ’ শ্রেণির লড়াকু জেট ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’ আমদানির বিষয়টি বাতিল করে কেন্দ্র। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রটে যায় আগামী দিনে যুক্তরাষ্ট্রের থেকে কখনওই কোনও হাতিয়ার কিনবে না মোদী সরকার।
১১১৮
গত ১ জুলাই প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ। দুই দেশের সামরিক সমঝোতা বাড়াতে রাজনাথকে আমেরিকা আসার আহ্বান জানান তিনি। কিন্তু, ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক চাপানোর পর অগস্টে ওয়াশিংটন সফর বাতিল করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তবে মার্কিন হাতিয়ার কেনা হবে না বলে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। একে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্র।
১২১৮
অগস্টে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের দল ভারত সফরে এলে কী কী অস্ত্রের ব্যাপারে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হবে, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের দাবি, দু’দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই ঘটনাগুলির আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। ট্রাম্পের শুল্কনীতির জেরে নয়াদিল্লি এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে যে টানাপড়েন চলছে, তাতে দু’পক্ষের দূরত্ব বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। আমেরিকা যে আপাতত তা চাইছে না, আলাস্কায় ‘যুদ্ধাভ্যাস’ তারই প্রমাণ, বলছেন বিশ্লেষকেরা।
১৩১৮
কূটনীতিকদের অনুমান, ব্যক্তিগত ভাবে ট্রাম্প বিশ্বাস করেন যে ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে একমাত্র রাজি করাতে পারবে ভারত। সেই কারণে আলাস্কায় নয়াদিল্লির বাহিনীর সঙ্গে যৌথ মহড়ায় মার্কিন ফৌজকে পাঠাচ্ছেন তিনি। এর মাধ্যমে বকলমে মোদী সরকারের সমর্থন তাঁর দিকে রয়েছে বলে মস্কোকে বার্তা দিতে চেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বর্ষীয়ান প্রেসিডেন্ট।
১৪১৮
পিছিয়ে নেই রাশিয়াও। ১৫ অগস্ট ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের সময় মস্কোর আরবাত স্ট্রিটের দু’টি বহুতলকে আলো দিয়ে ভারতীয় পতাকায় সাজিয়ে তোলে স্থানীয় প্রশাসন। তা ছাড়া চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে নয়াদিল্লি আসার কথা রয়েছে পুতিনের। সেখানে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে আলাদা করে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন তিনি। দুই দেশের মধ্যে একাধিক অত্যাধুনিক হাতিয়ারের চুক্তি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
১৫১৮
আলাস্কায় ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসার আগে ফোনে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে কথা বলেন পুতিন। সূত্রের খবর, সেখানে ইউক্রেন নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছিলেন তিনি। রাশিয়া অবশ্য দীর্ঘ দিন ধরেই চিন এবং ভারতের সঙ্গে মিলে ‘রিক ট্রয়িকা’ নামের একটি সংগঠন গড়ে তুলতে ইচ্ছুক। তা ছাড়া ‘ব্রিকস’-ভুক্ত দেশগুলির আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য একটি মুদ্রা চালু করার ব্যাপারেও সওয়াল করেছে মস্কো।
১৬১৮
আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন একাধিক ইউরোপীয় দেশও। সেই তালিকায় প্রথমেই আসবে ব্রিটেনের কথা। এ ছাড়া ফ্রান্স এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ (এটি ২৭টি দেশের সংগঠন) ইউক্রেন যুদ্ধের পরিসমাপ্তির ব্যাপারে নয়াদিল্লির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলেছে। এতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পেরই রক্তচাপ কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
১৭১৮
এ ছাড়া ভারতের উপরে শুল্ক চাপিয়ে সম্পর্ক খারাপ করার কারণে নিজের দেশেই কূটনীতিবিদ থেকে প্রতিরক্ষা ও গুপ্তচরবাহিনীর সাবেক পদস্থ কর্তাদের সমালোচনার মুখে পড়ছেন ট্রাম্প। তাঁদের সকলেরই বক্তব্য, এতে ভবিষ্যতে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় প্রশ্নের মুখে পড়বে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ওই এলাকায় আরও আগ্রাসী হতে পারে চিন।
১৮১৮
বিশ্লেষকদের দাবি, সেই কারণেই ভারত-মার্কিন ফৌজের যৌথ সামরিক মহড়ায় ইতি টানতে নারাজ ট্রাম্প। পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর শুল্ক নিয়েও বড় মন্তব্য করেছেন তিনি। ফক্স নিউজ়কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘মস্কোর থেকে যে দেশগুলি খনিজ তেল কিনছে, তাদের ক্ষেত্রে শুল্কের বিষয়টি দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে নতুন করে বিবেচনা করা হবে।’’ ফলে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক থেকে নয়াদিল্লি অব্যাহতি পেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।