Indian-origin CEO of a US-based telecom company faces serious allegations involving a 500 million dollar loan fraud dgtl
who is Bankim Brahmbhatt
‘কালো পাথরে’ সিঁদ কাটলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিল্পপতি! ৪৪৩৫ কোটি টাকা নিয়ে গা ঢাকা দেওয়া কে এই বঙ্কিম?
লগ্নি সংস্থা ব্ল্যাকরকের হাজার হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির ঘটনায় নাম জড়িয়েছে ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিল্পপতি বঙ্কিমের। বঙ্কিম বেসরকারি-ঋণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ ডলার সংগ্রহের জন্য একাধিক আর্থিক সংস্থার এক জটিল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৫ ০৭:৫৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
মাত্র দু’বছর আগে টেলিকম শিল্পের শীর্ষ ১০০ নেতার মধ্যে স্থান করে নিয়েছিলেন আমেরিকার একটি টেলিকম সংস্থার ভারতীয় বংশোদ্ভূত সিইও বঙ্কিম ব্রহ্মভট্ট। সে দিন যতটা না সাড়া ফেলেছিলেন, আজ গোটা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমে তার চেয়েও বেশি চর্চায় উঠে এসেছে তাঁর নাম। বলা ভাল দুর্নাম।
০২১৬
লগ্নি সংস্থা ব্ল্যাকরকের হাজার হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির ঘটনায় নাম জড়াল ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিল্পপতি বঙ্কিমের। সম্প্রতি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। অভিযোগ, ভুয়ো চালান দেখিয়ে এবং অ্যাকাউন্টে জালিয়াতি করে ব্ল্যাকরক থেকে ৫০ কোটি ডলারের (প্রায় ৪৪৩৫ কোটি টাকা) বেশি ঋণ নেন বঙ্কিম।
০৩১৬
বিশ্বের সর্ববৃহৎ সম্পদ ব্যবস্থাপনা (অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট) সংস্থা ব্ল্যাকরক। ব্ল্যাকরকের ব্যবস্থাপনায় ১০ লক্ষ কোটি ডলারের বেশি সম্পদ রয়েছে, যা ভারতের মোট জিডিপির প্রায় তিন গুণ। এটি এমন আর্থিক সংস্থা যা ব্যাঙ্ক না হয়েও ব্যাঙ্কের মতোই কার্যক্রম চালায়। এরা মূলত ঋণ দেয়।
০৪১৬
তাদেরই শাখা এইচপিএস ইনভেস্টমেন্ট পার্টনার্স-সহ অন্যান্য সংস্থা থেকে ঋণ নিয়েছিল বঙ্কিমের টেলি সংস্থা ব্রডব্যান্ড টেলিকম অ্যান্ড ব্রিজভয়েস। ওই দু’টি সংস্থাই ব্যাঙ্কাই গ্রুপের। ২০২৫ সালের জুলাই মাসে ব্যাঙ্কাই গ্রুপ এক্স (সাবেক টুইটার)-এর একটি পোস্টে ব্রহ্মভট্টকে প্রেসিডেন্ট এবং সিইও হিসাবে উল্লেখ করেছিল।
০৫১৬
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম বার টেলি সংস্থাটিকে ঋণ দিয়েছিল এইচপিএস। ধাপে ধাপে তার অঙ্ক পৌঁছোয় ৫০ কোটি ডলারে। এই ঋণে তাদের সাহায্য করে ফরাসি ব্যাঙ্ক বিএনপি পারিবা। এ দিকে, চলতি বছরের শুরুতে এইচপিএস-কে হাতে নেয় ব্ল্যাকরক। প্রতিটি ঋণের জন্য নিখুঁত জাল নথি ও ভুয়ো গ্রাহক অ্যাকাউন্ট তৈরি করেছিলেন বঙ্কিম। এমনকি ঋণ নেওয়ার জন্য যে সম্পত্তি জমা করেছিলেন সেগুলিও ভুয়ো বলে অভিযোগ দায়ের করেছে ঋণদাতা সংস্থা।
০৬১৬
আর্থিক জালিয়াতির ফলে ব্ল্যাকরককে বিপুল অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। কয়েক হাজার কোটি টাকা ঋণ উদ্ধার করতে নাকানি-চোবানি খেতে হচ্ছে ব্ল্যাকরকের বেসরকারি ঋণ বিনিয়োগ শাখা এইচপিএসকে।
০৭১৬
প্রতিবেদন অনুসারে, বঙ্কিম বেসরকারি-ঋণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে কোটি কোটি ডলার সংগ্রহের জন্য ক্যারিওক্স ক্যাপিটাল এবং বিবি ক্যাপিটাল এসপিভি নামের আর্থিক সংস্থার এক জটিল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন।
০৮১৬
২০২৪ সালের জুলাই মাসে এই বিস্ময়কর জালিয়াতির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এক এইচপিএস কর্মচারী লক্ষ করেন যে ইমেলের ঠিকানাগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি আসল টেলিকম সংস্থার অনুকরণে তৈরি করা। কিন্তু এগুলি ভুয়ো ডোমেইন থেকে এসেছে। পরবর্তী তদন্তে জানা যায় যে ব্রডব্যান্ড টেলিকম অ্যান্ড ব্রিজভয়েসের গ্রাহকদের কাছ থেকে আসা চুক্তি বলে যেগুলি দেখানো হয়েছিল সে সমস্তই জাল। বঙ্কিমকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের সময়, এইচপিএস কর্তাদের তিনি বলেছিলেন, চিন্তার কিছু নেই। তার পরই সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দেন তিনি।
০৯১৬
এইচপিএস-এর প্রশ্ন বরাবরই এড়িয়ে যান বঙ্কিম। একসময় ফোন তোলাও বন্ধ করে দেন। তল্লাশি চালাতে গিয়ে দেখা যায় ফাঁকা পড়ে রয়েছে তাঁর নিউ ইয়র্কের অফিস ও বাড়ি।
১০১৬
ঋণদাতা সংস্থার অ্যাকাউন্টিং ফার্ম সিবিআইজ়েড এবং আইনসংস্থা কুইন ইমানুয়েলের পরবর্তী তদন্তে উঠে এসেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রমাণ হিসাবে বঙ্কিমের সংস্থা বেশ কয়েকটি ইনভয়েস এবং ইমেল জাল করে। বেলজিয়ামের একটি টেলিকম সংস্থা তদন্তকারীদের জানিয়েছে, বঙ্কিমের সংস্থার ব্যবহার করা ইমেলগুলির সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি ঋণ পাওয়ার জন্য একটি বিস্তৃত ব্যালেন্স শিটও তৈরি করেছিলেন। সেই তথ্যের অস্তিত্ব কেবল কাগজে-কলমেই ছিল।
১১১৬
‘এন্টারপ্রেনার মিডল ইস্ট’ এবং‘ ইন্ডাস্ট্রি ক্রনিকল’-এর সঙ্গে একটি পুরনো সাক্ষাৎকারে বঙ্কিম নিজেকে টেলিকম ইঞ্জিনিয়ার থেকে বিবর্তিত উদ্যোগপতি বলে উল্লেখ করেছিলেন। ১৯৮৯ সালে ভারতে একটি টেলিফোন উৎপাদন কারখানা দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন বঙ্কিম। পরের কয়েক দশক ধরে, তাঁর সংস্থা স্যাটেলাইট যোগাযোগ, টেলিকম বিলিং এবং ডিজিট্যাল আর্থিক পরিষেবার ক্ষেত্রগুলিতে পা রাখে।
১২১৬
একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, বঙ্কিম গুজরাতের গান্ধীনগরের সেন্ট জ়েভিয়ার্স স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। তাঁর পারিবারিক পরিচয় বা যোগ্যতা সম্পর্কে আর কিছুই জানা যায়নি।
১৩১৬
জুলাই মাসে নিউ ইয়র্কের গার্ডেন সিটিতে তাঁর অফিসে গিয়ে ব্ল্যাকরকের এক কর্তা দেখেন যে অফিসগুলি বন্ধ এবং পরিত্যক্ত। পরে আশপাশের প্রতিবেশীরা সাংবাদিকদেরও জানিয়েছেন যে, তাঁরা কয়েক সপ্তাহ ধরে সেখানে কাউকে ঢুকতে বা বেরোতে দেখেননি।
১৪১৬
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুসারে, আর্থিক কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত বঙ্কিম বিএমডব্লিউ, পোর্শে, টেসলা এবং অডি-সহ বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল গাড়ির মালিক। সেই গাড়িগুলিকে ড্রাইভওয়েতে পার্ক করা অবস্থায় দেখা গিয়েছে। সেগুলির উপর জমেছে পুরু ধুলো।
১৫১৬
অগস্ট মাসে ব্রডব্যান্ড টেলিকম, ব্রিজভয়েস, ক্যারিওক্স ক্যাপিটাল এবং বিবি ক্যাপিটালকে দেউলিয়া ঘোষণা করেন বঙ্কিম। তল্পিতল্পা গুটিয়ে গা ঢাকা দেওয়ার আগে বঙ্কিম নিজেকেও দেউলিয়া ঘোষণা করেন। তদন্তকারীদের ধারণা তিনি সমস্ত টাকা ভারত ও মরিশাসে স্থানান্তর করে দিয়েছেন।
১৬১৬
ঋণদাতারা বিশ্বাস করেন যে বঙ্কিম বর্তমানে ভারতেই আছেন। গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় বংশোদ্ভূত উদ্যোক্তার আইনজীবী সমস্ত ধরনের অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন জালিয়াতির সব অভিযোগ ভিত্তিহীন।