Indian Skydiver Shital Mahajan becomes first woman to skydive over Mount Everest dgtl
Shital Mahajan
এভারেস্টকে সাক্ষী রেখে ২১,৫০০ ফুট থেকে ঝাঁপ! ‘ভারতের আকাশরানি’কে চেনেন?
পুণের ফার্গুসন কলেজের কৃতী ছাত্রী শীতল বিয়ে করেছেন তাঁরই সঙ্গী স্কাই ডাইভারকে। তাঁদের যমজ সন্তান। সংসারের সমস্ত ভার সামলেও শীতলকে বিশ্বরেকর্ড করা থেকে আটকানো যায়নি।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:৩৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৫
আকাশ তাঁর বিচরণক্ষেত্র। সেই আকাশেই হেলায় ভেঙেছেন একের পর এক রেকর্ড, আর তৈরি করেছেন নতুন নতুন। সম্প্রতি সকলের চোখ কপালে তুলে দিয়েছেন হালফিলের কীর্তি দিয়ে। তিনি ভারতীয় স্কাইডাইভার শীতল মহাজন। এক্সট্রিম স্পোর্টস বিভাগে পুণের শীতল এখন কার্যত কিংবদন্তি।
০২১৫
স্কাই ডাইভিংয়ের ক্ষেত্রে অলিম্পিক্স হল তিনটি ঝাঁপ। প্রথমটি উত্তর মেরু, দ্বিতীয় দক্ষিণ মেরু এবং সর্বশেষ তথা সবচেয়ে কঠিন, এভারেস্ট। শীতলের প্রথম দু’টি হয়ে গিয়েছিল আগেই। বাকি ছিল শুধু ঘরের পাশের এভারেস্ট জয়। দীপাবলির সময় তা-ও করে ফেললেন শীতল।
০৩১৫
শীতলের আগে বিশ্বে কোনও মহিলা এই কীর্তি ছুঁতে পারেননি। তা একটি বিশ্বরেকর্ড। এই অনন্য কীর্তি ছোঁয়ার সময় শীতলের বয়স ছিল ৪১ বছর। চল্লিশ পেরনো কেউ এই অসম সাহসী কাজ করার ক্ষমতা দেখাননি। শীতল সেই পথও খুলে দিলেন ভবিষ্যতের জন্য।
০৪১৫
জানতে চান, ঠিক কোন কীর্তি স্পর্শ করেছেন শীতল? তিনি পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হিমালয় পর্বতের মাউন্ট এভারেস্টকে সাক্ষী রেখে ২১, ৫০০ ফুট উচ্চতা থেকে হেলিকপ্টার থেকে ঝাঁপ দেওয়া বিশ্বের প্রথম মহিলা। এর আগে বিশ্বের কোনও মহিলা এই কীর্তির কথা ভাবতেও পারেননি। ৪১ বছর বয়সে সেই চ্যালেঞ্জই হেলায় জিতে দেখিয়েছেন শীতল।
০৫১৫
এই অনন্য কীর্তিস্থাপনের পর নিজের সমাজমাধ্যমের পাতায় শীতল লিখেছেন, ‘‘আমি মাউন্ট এভারেস্টকে সাক্ষী রেখে ২১,৫০০ ফুট থেকে নিজের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ঝাঁপ দিয়েছি এবং কালাপত্থরের উচ্চতম অংশ ১৭,৪৪৪ ফুট উচ্চতায় অবতরণ করি। আমি সবচেয়ে উঁচু থেকে স্কাই ডাইভ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রথম মহিলা হলাম।’’
০৬১৫
এর আগে, এ বছরেরই ১১ নভেম্বর শীতল পাঁচ হাজার ফুট এজিএল (ভূমি থেকে উচ্চতা) থেকে সাড়ে সতেরো হাজার ফুট উচ্চতায় স্কাইডাইভ করেছেন। শীতলকে এ ব্যাপারে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন নিউ জ়িল্যান্ডের বিখ্যাত স্কাইডাইভার ওয়েন্ডি স্মিথ।
০৭১৫
শুধু কি তাই, শীতল যে নতুন ইতিহাস তৈরি করলেন, সেই ইতিহাস নাছোড় লড়াইয়ের, হাল না ছেড়ে লক্ষ্যের দিকে একাগ্রচিত্তে এগিয়ে যাওয়ার। সেই ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে শীতলের চাঁদে দাঁত চাপা লড়াইয়ের কথাও। পদ্মশ্রী সেই নাছোড় লড়াইয়েরই স্বীকৃতি।
০৮১৫
পুণের ফার্গুসন কলেজের কৃতী ছাত্রী শীতলের আগ্রহের তালিকায় বরাবরই একেবারে উপরের দিকে ছিল আকাশ। সেই আকাশে ঝাঁপ দিয়ে পাখির মতো ভেসে বেড়ানোর ইচ্ছে তাঁর বহু দিনের। কিন্তু ভারতে তেমন পরিকাঠামো কোথায়? কিন্তু শীতল হাল ছাড়ার বান্দা নন। ভারতের মতো দেশে যে খেলা মূলত পুরুষ নিয়ন্ত্রিত, সেই স্কাই ডাইভিংয়ে অনন্য কীর্তি স্থাপন কিন্তু মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে বাকিদেরও। অনেক মেয়েই এখন বড় হয়ে শীতল হতে চান।
০৯১৫
শীতল গত ১৬ বছর ধরে পরিশ্রম করছেন। এর আগে ২০০৪ সালে প্রথম মহিলা হিসাবে দক্ষিণ মেরু এবং ২০০৬ সালে উত্তর মেরুতে সফল স্কাইডাইভ দেন শীতল। বাকি ছিল শুধু এভারেস্ট। শেষ পর্যন্ত দীপাবলির দিন সেই পরিশ্রমের মূল্য পেলেন তিনি।
১০১৫
দুই মেরুতে স্কাইডাইভ একাই সেরে ফেলেছিলেন শীতল। কিন্তু এভারেস্টের বেলায় তাঁকে একা ছাড়েননি ওয়েন্ডি। যোগ্য শিষ্যকে সঙ্গে নিয়ে হেলিকপ্টারে চেপেছিলেন। নিজেও ছিলেন খানিকটা উদ্বেগে। যমজ বাচ্চার মা শীতল কি শেষ পর্যন্ত অসাধ্য সাধন করতে পারবেন? ওয়েন্ডির ভয়কে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছিলেন শীতল।
১১১৫
আসলে, শীতলের গোটা জীবনই আকাশকে কেন্দ্র করে। বিয়ে করেছেন সেই সঙ্গীকে, যাঁর সঙ্গে প্রথম বার স্কাইডাইভ করেছিলেন। তাঁরাই ভারতের একমাত্র ‘স্কাইডাইভার কাপল’ যাঁরা সর্বাধিক ৫৭টি ঝাঁপ দিয়েছেন, একে অপরের হাত ধরে।
১২১৫
বিয়ের পর যমজ বাচ্চার জন্ম দেন শীতল। তার পর ক্রমশ বাড়তে থাকে কাজের চাপ। বাচ্চাদের সামলানোর চাপ। বাড়ি, সন্তান সব সামলে শীতল কিন্তু আকাশকে মন থেকে দূরে সরিয়ে দেননি। সন্তানদের বয়স এক বছর হতেই আবার প্যারাশুট বেঁধে নেমে পড়েন শীতল।
১৩১৫
দুই মেরু হয়েছে। এমন কি এখন শীতলের করায়ত্ব এভারেস্টও। এ বার কি বুটজোড়া তুলে রাখার কথা ভাবছেন? কারণ, আর যে কিছুই বাকি নেই! শীতল মৃদু হেসে জবাব দেন, ‘‘মোটেই না। এ বার বাকি অন্তরীক্ষ!’’
১৪১৫
স্কাই ডাইভিংয়ে বিশ্বরেকর্ডের অধিকারী শীতলের নজর এ বার স্পেস ডাইভিংয়ের দিকে। অর্থাৎ, পৃথিবীর সীমা ছাড়িয়ে মহাশূন্যে নিজের ক্ষমতা দেখানোর স্বপ্ন দেখছেন পুণের স্কাই ডাইভার। স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে শীতল নিজে একটি স্কাই ডাইভিং স্কুল চালান পুণেতে। সেখানেই নাকি প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে লোকচক্ষুর অন্তরালে।
১৫১৫
শীতল জানাচ্ছেন, ইসরোর সঙ্গে এ ব্যাপারে প্রাথমিক কথাবার্তাও এগোচ্ছে। পদ্ম সম্মানে সম্মানিত শীতল বলছেন, ‘‘কত পুরুষ স্পেস ডাইভিংয়ের চেষ্টা করছেন। এমন কি একজন ভারতীয় পুরুষও এই চেষ্টা করছেন। তাহলে মহিলারা বাদ থাকবেন কেন? এ বার তো মহিলাদেরই পালা!’’ পাশাপাশি, শীতল জানিয়ে দেন, ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দেওয়াই তাঁর স্বপ্ন। নতুন স্বপ্ন।