India’s first microchip can be a game changer for china and America monopoly in semi-conductor field dgtl
Microprocessor Vikram3201
‘বিক্রম’-এর পরাক্রমে চিন, আমেরিকার চোখে চোখ! খেলা ঘোরাবে দেশি প্রযুক্তির ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সেমি-কন্ডাক্টর চিপ?
কম্পিউটার, স্মার্টফোন থেকে শুরু করে ই-ভেহিকল, হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র কিংবা পারমাণবিক অস্ত্রের প্রাণকেন্দ্র হল এই সেমিকন্ডাক্টর। আগামী দিনে এই ছোট্ট চিপই হয়ে উঠতে পারে বড়সড় যুদ্ধের বারুদ।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৩:৪৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
সেমি-কনডাক্টর চিপের জন্য মূলত চিনের উপরেই নির্ভর করতে হয় ভারতকে। এত দিন পর্যন্ত নিজস্ব কোনও ৩২-বিট মাইক্রোপ্রসেসর ছিল না ভারতের হাতে। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ৩২-বিট মাইক্রোপ্রসেসর (চিপ) ‘বিক্রম ৩২০১’ আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ্যে এসেছে মঙ্গলবার ২ সেপ্টেম্বর। ‘সেমিকন ইন্ডিয়া ২০২৫’-এর সম্মেলনে সেই ৩২-বিট মাইক্রোপ্রসেসর (চিপ) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে তুলে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।
০২২০
চণ্ডীগড়ের সেমি-কন্ডাক্টর ল্যাবরেটরির সহযোগিতায় ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো তৈরি করেছে ‘বিক্রম ৩২০১’কে। আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ হওয়ার আগে ১৬ বিটের মাইক্রোচিপ ব্যবহার করা হত ইসরোর বিভিন্ন রকেট ও মহাকাশযানে। এত দিন পর্যন্ত ইসরোর বিভিন্ন গবেষণায় ব্যবহার করা ‘বিক্রম ১৬০১’-এর উন্নত সংস্করণ হল ৩২-বিট মাইক্রোপ্রসেসরটি।
০৩২০
কম্পিউটার, স্মার্টফোন থেকে শুরু করে ই-ভেহিকল, হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র কিংবা পারমাণবিক অস্ত্রের প্রাণকেন্দ্র হল এই সেমিকন্ডাক্টর। যে কোনও যন্ত্রেই তথ্য সংরক্ষণের জন্য মাইক্রোচিপ কাজে লাগে। বৈদ্যুতিন যন্ত্রগুলির হার্ডডিস্ক তৈরি হয় মাইক্রোচিপের মাধ্যমে। সেই চিপ তৈরির অত্যাবশ্যকীয় উপাদান সেমিকন্ডাক্টর। এই সেমি-কন্ডাক্টর বা মাইক্রোচিপের জন্য ভারতকে তাকিয়ে থাকতে হত চিন বা আমেরিকার দিকে।
০৪২০
তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি ভরসা করে এই সেমি-কন্ডাক্টরের উপরেই। দেখতে ক্ষুদ্র হলেও আগামী দিনে এই মাইক্রোপ্রসেসর ‘ডিজিটাল হিরে’র তকমা পেতে চলেছে। আগামী দিনে এই ছোট্ট চিপই হয়ে উঠতে পারে বড়সড় যুদ্ধের বারুদ।
০৫২০
বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দুই দেশ আমেরিকা এবং চিনের মধ্যে সেমিকন্ডাক্টরকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব দীর্ঘ দিনের। সেমি-কন্ডাক্টর শিল্পে চিন ও আমেরিকার সঙ্গে টক্কর দিতে নেমে পড়েছে তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া। বিশ্ব জুড়ে মাইক্রোচিপের বাজার কুক্ষিগত করে রাখতে বদ্ধপরিকর বেজিং।
০৬২০
উৎপাদন চিনে বেশি হলেও চিপ নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে আমেরিকা বিশ্বসেরা। তথ্যপ্রযুক্তিগত গবেষণা এবং উন্নয়নে আমেরিকা সবচেয়ে বেশি খরচ করে। তাই সেমি-কন্ডাক্টরের বিশ্বজনীন বাজার এখনও তাদেরই দখলে। অন্য দিকে, বিশ্ব জুড়ে প্রতি বছর এক লক্ষ কোটিরও বেশি মাইক্রোচিপ তৈরি হয়। বিশ্বে সেমি-কন্ডাক্টর তৈরির সবচেয়ে বড় সংস্থা তাইওয়ানের ফক্সকন।
০৭২০
চিন, আমেরিকার এই দ্বন্দ্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে তাইওয়ানেরও। চিনের উপকণ্ঠে এই দ্বীপরাষ্ট্রের উপর সেমি-কন্ডাক্টরের জন্য আমেরিকা এবং চিন উভয়ই নির্ভর করে। চিপের বাজারের অন্যতম নিয়ন্ত্রক তাইওয়ান।
০৮২০
সেমি-কন্ডাক্টর যুদ্ধের ময়দানে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে নিজেকে বসাতে চাইছে ভারত। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী এই শিল্পের বাজার ১ লক্ষ কোটি ডলারে পৌঁছোবে বলে আশা করা হচ্ছে। সম্ভাবনাময় শিল্পে ভারতের অবস্থান স্বনির্ভর হোক এমনটাই চাইছে মোদী সরকার। ‘বিক্রম ৩২০১’ এর সাফল্যের পর সেমি-কন্ডাক্টর ক্ষেত্রে ভারত আগামী দিনে গোটা বিশ্বকে পথ দেখাবে বলে আশাবাদী কেন্দ্রীয় সরকার।
০৯২০
ভারতের নবজাতক সেমি-কন্ডাক্টর এবং মাইক্রোপ্রসেসর শিল্পে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছেন, ‘‘ভারতের সঙ্গে সেমি-কন্ডাক্টর শিল্পে ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে বিশ্বও প্রস্তুত।’’ মোদী বলেন, “দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ছোট একটি চিপ বিশ্বের বাজারে আলোড়ন ফেলবে, সেই দিন আর খুব বেশি দূরে নেই। ভারতের পরিকল্পনায় তৈরি পণ্যটিতে গোটা পৃথিবীর ভরসা রয়েছে।”
১০২০
ভারতকে এই শিল্পক্ষেত্রে স্বনির্ভর করার জন্য ২০২১ সালে ‘ইন্ডিয়া সেমি-কন্ডাক্টর মিশন’ ৭৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চালু হয়েছিল। ২০২৩ সালে ভারতের সেমি-কন্ডাক্টর শিল্পের বাজারের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৮০০ কোটি ডলার এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ১০ হাজার কোটি ডলারে শিল্পক্ষেত্রে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
১১২০
অতিমারির সময় বিশ্ব বাণিজ্য ধাক্কা খাওয়ায় গাড়ি, বৈদ্যুতিন পণ্য-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেমি-কনডাক্টর চিপের জোগান বিঘ্নিত হওয়ার পর থেকেই ভারতকে একই সঙ্গে উৎপাদন ও রফতানি তালুক হিসাবে গড়তে চাইছে কেন্দ্র। অতিমারির জেরে সেই সব বৈদ্যুতিন পণ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ সেমি-কনডাক্টরের ঘাটতি এমন জায়গায় পৌঁছে যায় যে মোবাইল, ফ্রিজ, গাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল ভারতকে।ভারতকে এই শিল্পক্ষেত্রে স্বনির্ভর করার জন্য ২০২১ সালে ‘ইন্ডিয়া সেমি-কন্ডাক্টর মিশন’ ৭৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চালু হয়েছিল। ২০২৩ সালে ভারতের সেমি-কন্ডাক্টর শিল্পের বাজারের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৮০০ কোটি ডলার এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ১০ হাজার কোটি ডলারে শিল্পক্ষেত্রে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
১২২০
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে টাটা ইলেক্ট্রনিক্স ও তাইওয়ানের পাওয়ারচিপ সেমি-কন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কর্পোরেশন গুজরাতের ধোলেরায় ৯১ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের ঘোষণা করেছিল। টাটা সেমি-কনডাক্টর অ্যাসেম্বলি অ্যান্ড টেস্ট ২৭ হাজার কোটি টাকা খরচ করে আর একটি কারখানা তৈরি করবে অসমের মোরিগাঁওয়ে, এমন কথাও শোনা গিয়েছিল গত বছর।
১৩২০
সিজি পাওয়ার, জাপানের রেনেসাঁ ইলেক্ট্রনিক্স এবং তাইল্যান্ডের স্টার্স মাইক্রোইলেক্ট্রনিক্স মিলে গুজরাতের সানন্দে তৈরি করবে তৃতীয় কারখানাটি। ৭ হাজার ৬০০ কোটি লগ্নি করার কথা দু’টি সংস্থার।
১৪২০
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে কেইনস সেমিকন প্রাইভেট লিমিটেড ৩,৩০৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ এবং প্রতি দিন ৬৩.৩ লক্ষ চিপ উৎপাদনের ক্ষমতা নিয়ে সানন্দে একটি সেমি-কন্ডাক্টর কারখানা খোলার কথা ঘোষণা করে।
১৫২০
২০২৫ সালের মে মাসে এইচসিএল এবং তাইওয়ানের সংস্থা ফক্সকনের যৌথ উদ্যোগ উত্তরপ্রদেশের জেওয়ারে একটি কারখানা শুরু করবে বলে জানা গিয়েছিল। সেই যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগের পরিমাণ ৩,৭০০ কোটি টাকা। উৎপাদন ক্ষমতা বার্ষিক ৩ কোটি ৬০ লক্ষ ইউনিট চিপ।
১৬২০
আগের মাইক্রোচিপগুলির তুলনায় নতুন চিপগুলির আরও বেশি পরিমাণে তথ্যধারণের ক্ষমতা সম্পন্ন. অন্য প্রযুক্তিগত সুবিধাও বেশি মিলবে এই চিপে। মহাকাশ অভিযানের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন চরম পরিস্থিতিতে পরীক্ষা করা হয়েছে এই চিপটির। চরম পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার মতো ক্ষমতা রয়েছে মাইক্রোপ্রসেসরটির।
১৭২০
উন্নত সংস্করণ আনলেও প্রতিযোগী দেশগুলির তুলনায় ভারতের প্রযুক্তি বেশ কয়েক ধাপ পিছিয়ে আছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, চিপ যত ছোট হয় তত ভাল হয় তার অপারেটিং সিস্টেম। আর তাই ছোট সেমি-কন্ডাক্টর বানাতে এর ভিতরের ট্রানজ়িস্টারকেও সেই মাপে তৈরি করতে হবে।
১৮২০
টেলিকম এবং অন্যান্য শিল্পে ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে কৌশলগত ভাবে উন্নত সেমি-কন্ডাক্টর উৎপাদনের (২৮ ন্যানোমিটার-৬৫ ন্যানোমিটার) প্রয়োজন পড়বে ভারতের। সেখানে ‘বিক্রম ৩২০১’ ১৮০ ন্যানোমিটার ফ্যাব্রিকেশন প্রযুক্তিতে তৈরি। সেখানে তাইওয়ানের সেমি-কন্ডাক্টর সংস্থাগুলি ৩ ন্যানোমিটার আকৃতির চিপ তৈরিতে সিদ্ধহস্ত।
১৯২০
চিনের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খুব একটা ভাল নয়। ফলে সেমি-কন্ডাক্টরের দুনিয়ায় বেজিং ভারতকে কতটা মাথা তুলতে দেবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে এই বাজারে মাথা তুলতে হলে অন্য দেশের সাহায্যও ভারতের প্রয়োজন।
২০২০
মহাকাশ অভিযানে সফল ভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে ‘বিক্রম ৩২০১’। ২০২৫ সালের মার্চেই এই চিপের প্রথম দফার উৎপাদন ইসরোর হাতে তুলে দেয় বৈদ্যুতিন এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক। ওই সময়ই স্পেডেক্স অভিযানে পিএসএলভি-সি৬০ রকেটে এই ৩২-বিটের চিপটি বসানো হয়েছিল। তাতে সাফল্যের পরে ‘বিক্রম ৩২০১’ চিপটি আরও ব্যাপক পরিসরে ব্যবহারের কথা ভাবছে ইসরো।