Advertisement
০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
INS Tamal

ভিন্‌দেশে নয়, ঘরের মাটিতেই তৈরি হবে রণতরী! ‘ইন্দ্রের তলোয়ার’ হাতে পেয়ে ‘আত্মনির্ভর’ ভারতীয় নৌসেনা

রাশিয়ায় তৈরি ফ্রিগেট শ্রেণির রণতরী ‘আইএনএস তমাল’ হাতে পেয়েছে ভারতীয় নৌসেনা। বিদেশের মাটিতে তৈরি এটাই শেষ যুদ্ধজাহাজ, যা বাহিনীর বহরে শামিল হল বলে জানা গিয়েছে। কী ভাবে রণতরী নির্মাণের সক্ষমতা অর্জন করল নয়াদিল্লি?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৫ ১৫:২১
Share: Save:
০১ ১৮
INS Tamal may be Indian Navy’s last foreign made warship, know its significance

আর কোনও ‘সুপার পাওয়ার’ দেশের দিকে তাকিয়ে থাকা নয়। যুদ্ধজাহাজের ক্ষেত্রে এ বার পুরোপুরি ‘স্বনির্ভরতা’ পেতে চলেছে ভারতীয় নৌসেনা। বাহিনীতে শামিল হওয়া ‘আইএনএস তমাল’ই হবে বিদেশে তৈরি হওয়া শেষ রণতরী। যুদ্ধজাহাজটিকে হাতে পেয়ে সগর্বে এ কথা ঘোষণা করল নৌসেনা। তাঁদের ওই মন্তব্য ঘিরে দুনিয়া জুড়ে পড়ে গিয়েছে তুমুল হইচই।

০২ ১৮
INS Tamal may be Indian Navy’s last foreign made warship, know its significance

চলতি বছরের ১ জুলাই ‘আইএনএস তমাল’কে ভারতীয় নৌবাহিনীর হাতে তুলে দেয় রাশিয়া। মস্কোর কালিনিনগ্রাদের ইয়ান্টার শিপইয়ার্ডে জন্ম নেওয়া এই রণতরীটি প্রকৃতপক্ষে একটি ‘স্টেল্‌থ’ ফ্রিগেট। পুরাণ মতে, ইন্দ্রের তলোয়ারের নাম ‘তমাল’। সেই কারণে দেবরাজের প্রিয় হাতিয়ারটির সঙ্গে মিলিয়ে যুদ্ধজাহাজটির নাম রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। নৌসেনার বহরে অত্যাধুনিক ‘স্টেল্‌থ’ ফ্রিগেটটি যুক্ত হওয়ায় তাদের শক্তি যে কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেল তা বলাই বাহুল্য।

০৩ ১৮
INS Tamal may be Indian Navy’s last foreign made warship, know its significance

তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, প্রযুক্তি এবং যন্ত্রাংশ মিলিয়ে ‘আইএনএস তমাল’ নির্মাণে ২৬ শতাংশ অবদান রয়েছে ভারতের। এতে আছে ইউক্রেনের অত্যাধুনিক গ্যাস টার্বাইন ইঞ্জিন। ‘তলোয়ার’ শ্রেণির অষ্টম ফ্রিগেট হিসাবে একে বহরে শামিল করেছে এ দেশের নৌসেনা। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা যুদ্ধজাহাজটিকে ‘ক্রিভাক থ্রি’ শ্রেণির ফ্রিগেটের উন্নত সংস্করণ বলেছেন। উল্লেখ্য, রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ‘প্রকল্প ১১৩৫.৬’-এর অংশ হিসাবে সংশ্লিষ্ট রণতরীটি নির্মাণ করেছে নয়াদিল্লি।

০৪ ১৮
INS Tamal may be Indian Navy’s last foreign made warship, know its significance

স্বাধীনতার পর থেকেই যুদ্ধজাহাজ নির্মাণে ‘আত্মনির্ভর’ হয়ে ওঠার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে ভারত। প্রথম পর্যায়ে নয়াদিল্লির হাতে প্রযুক্তি ছিল না, ছিল না কোনও ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাও। ফলে মূলত ব্রিটেন এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমান রাশিয়া) থেকে ফ্রিগেট ও ডেস্ট্রয়ার শ্রেণির রণতরী কিনতে বাধ্য হয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। তবে এই ব্যবস্থা যে বেশি দিন চলতে পারে না তা বুঝতে সময় লাগেনি পদস্থ নৌসেনা অফিসারদের।

০৫ ১৮
INS Tamal may be Indian Navy’s last foreign made warship, know its significance

১৯৬০ সালে একটি ছোট টহলদারি যুদ্ধজাহাজকে বহরে শামিল করে ভারতীয় নৌবাহিনী। নাম, ‘আইএনএস অজয়’। এটিই ছিল প্রথম দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি রণতরী। ৬০-এর দশকের শেষ দিকে ব্রিটেনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ‘লিয়েন্ডার’ শ্রেণির ফ্রিগেট তৈরিতে হাত লাগায় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা মাজ়গাঁও ডক শিপবিল্ডার্স। কিন্তু, চ্যালেঞ্জ ছিল যুদ্ধজাহাজের যন্ত্রাংশ নির্মাণ। সেগুলির বেশির ভাগটাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হত ভারতীয় সংস্থাকে।

০৬ ১৮
INS Tamal may be Indian Navy’s last foreign made warship, know its significance

পরবর্তী দশকগুলিতে ধীরে ধীরে সেই খামতি মেটাতে থাকে নয়াদিল্লি। ১৯৭০-এর দশকে ‘লিয়েন্ডার’ শ্রেণির ফ্রিগেটগুলিতে দেশীয় উপাদান ছিল মাত্র ১৫ শতাংশ। ২০০০ সালের পর তৈরি হওয়া ‘কলকাতা’ শ্রেণির ডেস্ট্রয়ারগুলিতে সেটাই বেড়ে দাঁড়ায় ৫৯ শতাংশ। আর সর্বশেষ ‘বিশাখাপত্তনম’ ও ‘নীলগিরি’ শ্রেণির ফ্রিগেট ও ডেস্ট্রয়ারে সেটা আরও বেড়ে ৭৫ শতাংশের চেয়ে কিছু বেশিতে পৌঁছে গিয়েছে।

০৭ ১৮
INS Tamal may be Indian Navy’s last foreign made warship, know its significance

রণতরী নির্মাণের উপাদানের পাশাপাশি এর নকশার দিকেও নজর দিয়েছে ভারতীয় নৌসেনা। ১৯৬৪ সালে বাহিনীর তত্ত্বাবধানে তৈরি হয় সেন্ট্রাল ডিজ়াইন অফিস বা সিডিও। ছ’বছরের মাথায় (পড়ুন ১৯৭০ সাল) সেটাই বদলে যায় ‘নৌ-নকশা অধিদফতর’ বা ডিএনডিতে (ডাইরেক্টরেট অফ নেভাল ডিজ়াইন)। ১৯৯০-এর দশকে বিমানবাহী যুদ্ধপোত, গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র-যুক্ত ডেস্ট্রয়ার এবং পরমাণু ডুবোজাহাজের ‘ব্লুপ্রিন্ট’ সরবরাহ করতে থাকেন সেখানকারী আধিকারিক ও কর্মীরা।

০৮ ১৮
INS Tamal may be Indian Navy’s last foreign made warship, know its significance

সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি যুদ্ধজাহাজগুলিকে আরও শক্তিশালী এবং অত্যাধুনিক করে গড়ে তুলতে ২০০৫ সালে নয়াদিল্লিতে নৌবাহিনীর সদর দফতরে খোলা হয় ডাইরেক্টরেট অফ ইন্ডিজ়েনাইজ়েশন। ২০১০ সালের মে মাসের মধ্যে মুম্বই এবং বিশাখাপত্তনমে এর দু’টি শাখা দফতরের উদ্বোধন করে কেন্দ্র। পাশাপাশি, রণতরী নির্মাণের ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থাগুলির দরজা পুরোপুরি খুলে দেয় সরকার। ফলে একের পর এক চ্যালেঞ্জ টপকে যেতে সক্ষম হয়েছে নৌসেনা।

০৯ ১৮
INS Tamal may be Indian Navy’s last foreign made warship, know its significance

যুদ্ধজাহাজের ক্ষেত্রে ভারতীয় ‘জলযোদ্ধা’দের স্বনির্ভর হয়ে ওঠার বিষয়টি ‘এ ডিকেড অফ ট্রান্সফরমেশন: দ্য ইন্ডিয়ান নেভি ২০১১-২১’ শীর্ষক লেখায় তুলে ধরেছেন ক্যাপ্টেন এম দোরাইবাবু এবং কমান্ডার অমৃত দিলীপ গডবোলে। তাঁদের দাবি, ২০০১-১১ সালের মধ্যে বাহিনীর বহরে যুক্ত হয় ৫৭ হাজার টনের ৩৩টি রণতরী। ২০১১-২১ সালের মধ্যে সেটাই বেড়ে দাঁড়ায় ৯২ হাজার টনের ৪০টি যুদ্ধজাহাজ। এগুলির বেশির ভাগই দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

১০ ১৮
INS Tamal may be Indian Navy’s last foreign made warship, know its significance

প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে নৌসেনার জন্য নির্মিত ৩৯টি যুদ্ধজাহাজের মধ্যে ৩৩টি তৈরি হয়েছে ভারতীয় শিপইয়ার্ডে। ব্যতিক্রম কেবলমাত্র দু’টি। ‘আইএনএস তমাল’ এবং ‘আইএনএস তুশিল’। শেষেরটি গত বছর শামিল হয়েছে ভারতীয় নৌসেনার বহরে।

১১ ১৮
INS Tamal may be Indian Navy’s last foreign made warship, know its significance

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বিমানবাহী যুদ্ধপোত ‘আইএনএস বিক্রান্ত’কে হাতে পায় ভারতীয় নৌসেনা। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ৪৫ হাজার টনের এই রণতরীর নির্মাণকারী সংস্থা হল কোচিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা এই যুদ্ধজাহাজ নির্মাণকে ভারতের নৌ ইতিহাসের মাইলফলক বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ, এর আগে কখনও এত বড় রণতরী তৈরিতে হাত দেয়নি নয়াদিল্লি।

১২ ১৮
INS Tamal may be Indian Navy’s last foreign made warship, know its significance

‘আইএনএস তমাল’-এর মতো আরও দু’টি ফ্রিগেট রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ঘরের মাটিতে তৈরি করবে ভারত। ২০১৮ সালে সেগুলির বরাত দেয় নয়াদিল্লি। সংশ্লিষ্ট যুদ্ধজাহাজগুলির নাম ‘আইএনএস ত্রিপুট’ এবং ‘আইএনএস তভাস্য’। রণতরী দু’টির নির্মাণকারী সংস্থা হল গোয়া শিপইয়ার্ড লিমিটেড। এর মধ্যে ‘আইএনএস ত্রিপুট’-এর বর্তমানে সামুদ্রিক ট্রায়াল চলছে। আগামী বছর এটি নৌসেনার বহরে শামিল হবে বলে সূত্র মারফত মিলেছে খবর।

১৩ ১৮
INS Tamal may be Indian Navy’s last foreign made warship, know its significance

বিদেশে তৈরি সর্বশেষ যুদ্ধজাহাজ ‘আইএনএস তমাল’কে একটি বহুমুখী ফ্রিগেট বলে উল্লেখ করেছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা। যুদ্ধজাহাজটির ওজন ৪,০৩৫ টন। এটির দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ যথাক্রমে ১২৪.৮ মিটার ও ১৫.২ মিটার। সমুদ্রে সর্বোচ্চ ৩০ নট (প্রায় ৫৬ কিমি/ঘণ্টা) ছোটার ক্ষমতা রয়েছে ‘আইএনএস তমাল’-এর। রণতরীটির পাল্লা ৪,৮৫০ নটিক্যাল মাইল। সোজা রাস্তায় যেটা প্রায় ৮,৯৮০ কিলোমিটার। এটি চালাতে ২৬ জন অফিসার এবং ২৫০ জন নাবিকের প্রয়োজন হবে বলে জানা গিয়েছে।

১৪ ১৮
INS Tamal may be Indian Navy’s last foreign made warship, know its significance

তমালে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের হাতিয়ার। রণতরীটি দু’ধরনের লড়াকু জেট বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম। সেগুলি হল, ভূমি থেকে আকাশ এবং স্বল্পপাল্লার ইগলা ক্ষেপণাস্ত্র। ৭০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁত নিশানায় ধ্বংস করার ক্ষমতা রয়েছে শিলের। এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলার জন্য যুদ্ধজাহাজটির ভিতরে রয়েছে ২৪টি উল্লম্ব উৎক্ষেপণ লঞ্চার। এ ছাড়া আটটা ইগলা ছুড়তে পারবে ‘আইএনএস তমাল’।

১৫ ১৮
INS Tamal may be Indian Navy’s last foreign made warship, know its significance

যুদ্ধজাহাজটির সামনের অংশে বসানো আছে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ৩০ মিলিমিটারের ঘূর্ণায়মান একটি কামান, নাম একে-৬৩০। মিনিটে পাঁচ হাজার রাউন্ড গুলি চালানোর ক্ষমতা রয়েছে ওই আগ্নেয়াস্ত্রের। পাশাপাশি শত্রুপক্ষের রণতরীকে ধ্বংস করতে রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তৈরি আটটি ‘ব্রহ্মস’ সুপারসনিক ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র থাকছে ‘আইএনএস তমাল’-এ।

১৬ ১৮
INS Tamal may be Indian Navy’s last foreign made warship, know its significance

এ ছাড়া নৌসেনার নতুন ফ্রিগেটে রয়েছে একটি ১০০ মিলিমিটারের এ-১৯০ই বন্দুক। এর পাল্লা ২০ কিলোমিটার। বন্দুকটির সাহায্যে ২৫ কেজি গোলা ছুড়তে পারবেন নৌসৈনিকেরা। প্রয়োজনে ‘আইএনএস তমাল’কে ব্যবহার করে ধ্বংস করা যাবে ডুবোজাহাজ। সমুদ্রের গভীরে হামলা করতে যুদ্ধজাহাজটিতে রয়েছে ১২টি রকেট এবং ৫৩৩ মিলিমিটারের দু’টি টর্পেডো টিউব। এর সাহায্যে ডুবোজাহাজ ধ্বংসকারী ভারী টর্পেডোও ছুড়তে পারবে নৌসেনা।

১৭ ১৮
INS Tamal may be Indian Navy’s last foreign made warship, know its significance

‘আইএনএস তমাল’-এর রণসাজে রয়েছে ইলেকট্রনিক যুদ্ধের সরঞ্জামও। যুদ্ধের সময় সেগুলিকে ব্যবহার করে শত্রুর রেডার এবং জ্যামারগুলিকে নিষ্ক্রিয় করতে পারবে নৌবাহিনী। এ ছাড়া কামোভ ২৮ এবং কামোভ ৩১ নামের দু’টি হেলিকপ্টার থাকছে ওই রণতরীতে। ‘স্টেল্‌থ’ প্রযুক্তি ব্যবহার হওয়ায় যুদ্ধজাহাজটিকে ডুবিয়ে দেওয়া মোটেই সহজ নয়।

১৮ ১৮
INS Tamal may be Indian Navy’s last foreign made warship, know its significance

বিদেশে তৈরি শেষ ফ্রিগেটটিকে বাহিনীতে শামিল করার পর একটি বিবৃতিতে ভারতীয় নৌসেনা ‘আইএনএস তমাল’কে সমুদ্র চলমান একটি শক্তিশালী দুর্গ বলে উল্লেখ করেছে। এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ৯-১০টি যুদ্ধজাহাজ বাহিনীর বহরে শামিল হওয়ার কথা রয়েছে। আগামী চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে নৌবাহিনীকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্রের।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy