International Media released various pictures of Pakistan and PoK after Operation Sindoor dgtl
Operation Sindoor after Situation
রাস্তায় ট্যাঙ্ক, বিধ্বস্ত জঙ্গিঘাঁটির সামনে সেনা, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর থমথমে পাকিস্তানের ছবি প্রকাশ্যে
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর থমথমে পাকিস্তান। লাহোর সংলগ্ন বহাওয়ালপুর থেকে শুরু করে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মুজফ্রাবাদের একাধিক ছবি ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এনেছে একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২৫ ১৭:৪০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
‘অপারেশন সিঁদুর’-এ বেসামাল ইসলামাবাদ। পহেলগাঁও কাণ্ডের ১৪ দিন পর বদলা নিল ভারতীয় ফৌজ। পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের (পাকিস্তান অকুপায়েড কাশ্মীর বা পিওকে) ন’টি জায়গায় হামলা চালিয়ে জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে নয়াদিল্লি। অন্য দিকে, এই ঘটনায় প্রত্যাঘাতের হুমকি দিয়ে সুর চড়িয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ।
০২১৯
মঙ্গলবার মধ্যরাতে পাকিস্তান এবং পিওকের সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারতীয় বাহিনী। হামলার ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা পর পাক পঞ্জাব প্রদেশের একাধিক ছবি প্রকাশ্যে আনে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। সেখানে প্রত্যাঘাতের জন্য রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তারা যে তৈরি হচ্ছেন, তার স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে।
০৩১৯
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলির প্রকাশ করা ছবিতে পঞ্জাব প্রদেশের লাহোর সংলগ্ন মুরিদকের হাইওয়েতে ট্রাকে করে একের পর এক ট্যাঙ্ক যেতে দেখা গিয়েছে। উল্লেখ্য, এই এলাকাতেই ছিল পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি গোষ্ঠী লশকর-ই-ত্যায়বার সদর দফতর। পহেলগাঁও কাণ্ডের বদলা নিতে সেখানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারতীয় ফৌজ।
০৪১৯
এ ভাবে পাক ট্যাঙ্কের রাস্তায় বেরিয়ে আসার নেপথ্যে দু’টি কারণের কথা বলেছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা। প্রথমত, ভারতের সঙ্গে পুরোদস্তুর যুদ্ধে জড়াতে সেগুলিকে ধীরে ধীরে সীমান্তে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন সেনাপ্রধান আসিম মুনির। অথবা, নয়াদিল্লির পরবর্তী আক্রমণের ভয়ে ট্যাঙ্কগুলিকে নিরাপদ জায়গায় সরাচ্ছে ইসলামাবাদ।
০৫১৯
দ্বিতীয় ছবিতে একে-৪৭ রাইফেল হাতে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা পাকিস্তানের নিরাপত্তাবাহিনীর এক জওয়ানের পাশ দিয়ে সাদা রঙের একটি গাড়িকে যেতে দেখা গিয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, ওই গাড়িতে ছিলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিনিধিরা। তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই মোতায়েন ছিলেন ওই জওয়ান।
০৬১৯
এ ছাড়া জঙ্গিঘাঁটিতে ভারতের হামলায় নিহত এক ব্যক্তির শেষকৃত্যের ছবিও প্রকাশ্যে এসেছে। ইসলামীয় রীতি মেনে এক ধর্মগুরু-সহ সেখানে সার হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বহু মানুষ। নিহত ব্যক্তি পাক মদতপুষ্ট কোন সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর, বা কত বড় মাপের নেতা, তা অবশ্য জানা যায়নি।
০৭১৯
ইসলামাবাদের দাবি, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের রাজধানী মুজফফ্রাবাদের বিলাল মসজিদে হামলা চালিয়েছে ভারত। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ওই এলাকা পরিদর্শন করেন রাষ্ট্রপুঞ্জের কয়েক জন প্রতিনিধি। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পদস্থ কর্তারা। সেই ছবিও প্রকাশ্যে এনেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
০৮১৯
হামলার পর মুজফফ্রাবাদের বিলাল মসজিদের রাস্তা-সহ গোটা এলাকাকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলে পাকিস্তানের সেনা। পথের মোড়ে মোড়ে মোতায়েন করা হয় সশস্ত্র রক্ষী। সেখানকার বাসিন্দাদের স্বাধীন ভাবে চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে বলে সূত্র মারফত মিলেছে খবর।
০৯১৯
ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় উড়ে যাওয়া বিলাল মসজিদের ধ্বংসস্তূপ ভাল ভাবে পরীক্ষা করেন পাক সেনার পদস্থ আধিকারিকেরা। ধর্মস্থানটিকে জঙ্গিঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। এখান থেকেই মৌলবাদের বিষ ছড়াতেন ইসলামাবাদ মদতপুষ্ট সন্ত্রাসী নেতারা। নয়াদিল্লির প্রত্যাঘাতে উড়ে যায় ধর্মীয় স্থানটির ছাদ-সহ গম্বুজ। ভেঙে পড়ে চারদিকের দেওয়ালও।
১০১৯
এ ছাড়া পাক পঞ্জাব প্রদেশের বহাওয়ালপুরের জঙ্গিঘাঁটিতে হামলা চালায় ভারতীয় বাহিনী। সেখানকার ধ্বংসস্তূপের ছবিও প্রকাশ্যে এনেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। ইসলামাবাদের দাবি, সেখানকার একটি মাদ্রাসায় আক্রমণ করেছে দিল্লি। এতে নিরীহ নাগরিকদের প্রাণ গিয়েছে। যদিও এই তত্ত্ব মানতে নারাজ কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার।
১১১৯
বহাওয়ালপুরে ভারতের হামলায় নিহত এক ব্যক্তির কফিনবন্দি দেহ সমাধিস্থ করার প্রস্তুতির ছবি তুলেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। সেখানে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত কি না, তা স্পষ্ট নয়। নিহত ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করেনি পাক সরকার। তবে তাঁর কফিন সাদা কাপড়ে ঢাকা ছিল।
১২১৯
পাক পঞ্জাব প্রদেশের মুরিদকে এলাকার একটি জঙ্গিঘাঁটি উড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনা। সেই এলাকাতেও বাহিনী মোতায়েন করেছেন রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তারা। শুধু তা-ই নয়, নমুনা সংগ্রহের জন্য এলাকাটিকে ঘিরে রাখা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপ দেখে সেটি কোনও জঙ্গি নেতার বাড়ি বলে মনে হয়েছে।
১৩১৯
মুরিদকেতে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় উড়ে যাওয়া জঙ্গিঘাঁটিগুলিতে উদ্ধারকাজের জন্য বিশেষ বাহিনীকে নামিয়েছে শরিফ সরকার। ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে পড়ে থাকা জঙ্গিদের প্রাণ বাঁচানোই যে তাঁদের উদ্দেশ্য, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ আবার বলেছেন আপাতত প্রমাণ লোপাট করতে চাইছে ইসলামাবাদ।
১৪১৯
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের ছবিতে, হামলার ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পরেও মুজফফ্রাবাদের বিলাল মসজিদ থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখা গিয়েছে। মসজিদের উপরের গম্বুজ অংশটি উড়ে যাওয়ায় লোহার খাঁচা বেরিয়ে পড়ে। ক্যামেরার লেন্সেও সেটাও ধরা পড়েছে।
১৫১৯
এ ছাড়া বহাওয়ালপুরে একটি ঘরের মধ্যে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকায় মোড়া বেশ কয়েকটি কফিনের ছবিও প্রকাশ্যে এনেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। এ ক্ষেত্রেও নিহতদের পরিচয় জানা যায়নি। তবে অতীতে বহু বার সন্ত্রাসবাদীদের স্বাধীনতা সংগ্রাহী বা নায়কের মর্যাদা দিয়েছে পাকিস্তান। তাই এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই, বলছেন বিশ্লেষকেরা।
১৬১৯
গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের হামলায় প্রাণ হারান পর্যটক-সহ মোট ২৬ জন। তখনই প্রত্যাঘাতের হুঁশিয়ারি দিয়েছিল মোদী সরকার। সেইমতো গোয়েন্দা তথ্যের উপর ভিত্তি করে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ন’টি জায়গায় জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় ভারতীয় ফৌজ।
১৭১৯
রাত ১টা বেজে পাঁচ মিনিটে শুরু হওয়া এই অভিযানের সময়সীমা ছিল ২৫ মিনিট। লশকর-এ-ত্যায়বা ও জইশ-ই-মহম্মদের প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলিই ছিল ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর লক্ষ্য। কোথায় কোথায়, কেন হামলা চালানো হয়েছে, সাংবাদিক বৈঠকে সেই তথ্য দেন উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ এবং কর্নেল সোফিয়া কুরেশি।
১৮১৯
সেনার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রথম নিশানা ছিল শুভান আল্লা মসজিদ, সেখানে লশকর-এ-ত্যায়বার ঘাঁটি এবং প্রশিক্ষণকেন্দ্র রয়েছে। বিলাল মসজিদে ছিল জইশ-ই-মহম্মদের প্রশিক্ষণকেন্দ্র। কোটলিতে যে মসজিদে হামলা হয়েছে, তা লশকরের ঘাঁটি। এই ঘাঁটি পুঞ্চে সক্রিয়। এগুলির অবস্থান পাক অধিকৃত কাশ্মীরে বলে জানিয়েছেন ব্যোমিকা ও সোফিয়া।
১৯১৯
আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম না করেই বহাওয়ালপুর, মুরিদকে, গুলপুর, ভিম্বর, চক আমরু, বাগ, কোটলি, সিয়ালকোট এবং মুজফ্ফরাবাদের ঘাঁটিগুলিকে নিশানা করা সশস্ত্র বাহিনী। সূত্রের খবর, হামলার জন্য স্ক্যাল্প ক্রুজ় এবং হ্যামার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। স্ক্যাল্প ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্রটি আবার ‘স্টর্ম শ্যাডো’ নামেও পরিচিত।