শেষ অবধি সেকেন্ডহ্যান্ড গাড়ির সেলসম্যান হিসেবে থিতু হন জোসেফ বাইডেন সিনিয়র। কিন্তু তাঁদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি থেকে যায় মধ্যবিত্ত স্তরেই। উচ্চবিত্ত পরিবারের গণ্ডি তাঁরা আর পেরতে পারেননি। মধ্যবিত্ত পরিসরের ক্যাথলিক পরিবারেই বড় হন জো বাইডেন। ২ ভাই এবং ১ বোনের সঙ্গে। ভাইবোনদের মধ্যে তিনি ছিলেন সবথেকে বড়।
বাইডেনের প্রাথমিক পড়াশোনা ক্লেমন্টের আর্চমেয়ার অ্যাকাডেমিতে। পড়াশোনায় বিশেষ আগ্রহ না থাকলেও ফুটবল এবং বেসবলে ছিলেন চৌখস। বিশ্ববিদ্যালয়েও ফুটবল খেলা চালিয়ে গিয়েছিলেন। ডেলাওয়্যার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৬৫ সালে স্নাতক হন। বিষয় ছিল ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং ইংরেজি। তবে স্কুলের পরে বিশ্ববিদ্যালয়েও তাঁর রেজাল্ট ছিল পিছনের সারিতেই।
১৯৬৮ সালে তিনি সাইরাকিউজ ইউনিভার্সিটি কলেজ অব ল’ থেকে আইনবিদ্যায় ডিগ্রি পান। ৮৫ জন পড়ুয়ার মধ্যে তাঁর স্থান ছিল ৭৬। মেধাতালিকায় বিশেষ এগোতে না পারলেও বাইডেন এই সময় মুক্তি পেয়েছিলেন স্কুলজীবনের তোতলামির সমস্যা থেকে। পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কবিতাপাঠ করে করে তিনি এই সমস্যা থেকে মুক্ত হন।
আমেরিকার সাম্প্রতিক নির্বাচন প্রথম থেকেই আবর্তিত হয়েছে ট্রাম্প-বাইডেন দ্বৈরথ ঘিরে। সেপ্টেম্বরে অতিমারি আবহেই বর্ণবিদ্বেষ-বিরোধী সমাবেশ-মিছিলে উত্তাল ছিল বেশ কয়েকটি মার্কিন শহর। গোটাটাই শান্তিপূর্ণ ভাবে করা হয়েছে বলে কৃষ্ণাঙ্গ বিক্ষোভকারীরা দাবি করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা, লুটতরাজ আর নৈরাজ্যের অভিযোগ আনেন।
নিজের সমর্থকদের ট্রাম্প বলেন, ‘‘বাইডেন প্রেসিডেন্ট হলে গোটা দেশ শুধু এই ধরনের ঘটনারই সাক্ষী থাকবে।’’ এ ভাবেই বিক্ষোভকারীদের ‘বামপন্থী’ আখ্যা দিয়ে ডেমোক্র্যাটদের ব্যাকফুটে রাখার চেষ্টা লাগাতার চালিয়ে যান ট্রাম্প। পাল্টা উত্তর দিতে ছাড়েননি বাইডেনও। ট্রাম্পকে ‘বিষাক্ত’ বলে উল্লেখ করেন বাইডেন। তাঁর কথায়, ‘‘গোটা দেশে আগুন জ্বলছে। আর উনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে সেটা বন্ধ করার চেষ্টা না করে তা আরও বেশি করে জ্বলার ইন্ধন দিচ্ছেন।’’
বাইডেনের বিরুদ্ধে ঘুরিয়ে মাদক সেবনেরও অভিযোগ তুলেছেন ট্রাম্প। এক মার্কিন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘উনি নিশ্চয়ই কিছু একটা নেন। না হলে বিতর্কসভায় এমন পারফরম্যান্স!’’ ট্রাম্পের দাবি, কিছু দিন আগেও মঞ্চে থাকাকালীন ম্যাড়মেড়ে শোনাত বাইডেনকে। তবে সাম্প্রতিক কিছু বক্তৃতায় দেখা গিয়েছে, বাইডেন অসম্ভব উন্নতি করেছেন। কী ভাবে? এই প্রসঙ্গেই ট্রাম্প বলেন, ‘‘কিছু একটা না নিলে ওঁর কথা বা চিন্তাভাবনায় এতখানি স্বচ্ছতা আসার কথা নয়।’’
ট্রাম্প-বাইডেন বিতর্কসভা শেষে হয়ে দাঁড়ায় গলাবাজি করে পরস্পরকে খাটো করে দেখানোর হাট। হোয়াইট হাউসের দৌড়ে নিজেকে যোগ্যতম প্রমাণ করাটা চ্যালেঞ্জ ছিল বাইডেনের কাছে। ট্রাম্পের সামনে সুযোগ ছিল, ভোটের আগে শেষ প্রহরে নিজের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দু’জনের কেউই সে-পথ মাড়াননি। ৯০ মিনিট ধরে লাগাতার চলে শুধু খেয়োখেয়ি।
প্রথম থেকেই বাইডেনের পিছনে ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের সমর্থনকে গুরুত্ব দিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অভিবাসী গোষ্ঠী হিসেবে ভারতীয়েরাই আমেরিকায় দ্বিতীয় বৃহত্তম। অবশ্য ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে তাঁরা দেশের মোট ভোটদাতার ১ শতাংশও নয়। তবু এই ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের মন পেতে গোড়া থেকেই আগ্রাসী ছিল দুই শিবির। ট্রাম্প-বাইডেনের প্রচারে বহু বার উঠে এসেছে তাঁদের ‘ভারতপ্রেমের’ কথা।
প্রতিক্রিয়ায় বাইডেন এক টুইটে লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ভারতকে নোংরা বলেছেন। বন্ধু (মিত্র দেশ) সম্পর্কে কেউ এ ভাবে কথা বলে না। এই ভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিশ্বজনীন সমস্যার সমাধান করা যাবে না। কমলা হ্যরিস ও আমি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে গভীর মর্যাদা দিই। শ্রদ্ধাবোধকে আমরা আমেরিকার বিদেশনীতির কেন্দ্রে নিয়ে আসব’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy