Investors Including Indians have lost millions of dollar after Dubai-based Commercial Brokers firm vanished overnight dgtl
Dubai investment scam
কর্পূরের মতো উবে গেল আস্ত সংস্থা, উধাও কোটি কোটি টাকা! বিপাকে ভারতীয়-সহ বহু বিনিয়োগকারী
ফোন করে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখাত সংযুক্ত আরব আমিরশাহির একটি ব্রোকারেজ ফার্ম। কোনও কিছু না জানিয়ে তাদের সংস্থা ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের পথে বসিয়ে তহবিল থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে গাল্ফ ফার্স্ট কমার্শিয়াল ব্রোকারস নামের সংস্থাটি।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২৫ ১৪:৪৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৫
এ যেন সাক্ষাৎ ভোজবাজি! জলজ্যান্ত একটি সংস্থা জাদুবলে উধাও হয়ে গেল রাতারাতি। সেই সঙ্গে গায়েব হয়ে গেল কোটি কোটি টাকা। বিনিয়োগকারীরা শত চেষ্টা করেও সংস্থার হদিস পেলেন না। সংস্থাটি অন্তর্হিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাথায় হাত পড়েছে শত শত গ্রাহকের। গ্রাহকদের তহবিল থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে পাততাড়ি গুটিয়ে ফেলেছে দুবাইভিত্তিক এই বিনিয়োগকারী সংস্থাটি।
০২১৫
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির একটি ব্রোকারেজ ফার্ম কোনও কিছু না জানিয়ে সংস্থার ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের পথে বসিয়ে তহবিল থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ‘গাল্ফ ফার্স্ট কমার্শিয়াল ব্রোকারস’ নামের সংস্থাটি।
০৩১৫
দুবাইয়ের বিজনেস বে-তে অবস্থিত ক্যাপিটাল গোল্ডেন টাওয়ারের ৩০২ নম্বর সুইটে যখন বিনিয়োগকারীরা তল্লাশি চালাতে যান তখন তাঁরা দেখেন তল্পিতল্পা গুটিয়ে সংস্থাটি উধাও হয়ে গিয়েছে। পড়ে রয়েছে কেবল আবর্জনা। দুবাইয়ের সংবাদমাধ্যমে ‘দ্য খালিজ টাইমস’-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই সেখানে গাল্ফ ফার্স্ট কমার্শিয়াল ব্রোকারস নামে ওই সংস্থার কার্যালয় ছিল।
০৪১৫
দুবাইয়ের ওই টাওয়ারে ব্রোকারেজ সংস্থাটির দু’টি কার্যালয় ছিল। ৩০২ এবং ৩০৫ নম্বর সুইটে প্রায় ৪০ জন কর্মচারী সংস্থাটির কাজকর্ম সামলাতেন বলে জানা গিয়েছে। দেশ-বিদেশের গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় সব প্রস্তাব দিতেন তাঁরা। লোভনীয় সে সব প্রস্তাবে দ্রুত বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন গ্রাহকেরা। বিদেশি মুদ্রায় আমানতের লোভ দেখিয়ে বিনিয়োগ আনত সংস্থাটি।
০৫১৫
বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ছিলেন বেশ কয়েক জন ভারতীয়ও। প্রতারকেরা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে তাঁদের মাতৃভাষায় যোগাযোগ করে প্রলুব্ধ করেছিল। ভারতীয়দের মধ্যে কেরল এবং কর্নাটকের প্রবাসীরাও রয়েছেন। মহম্মদ এবং ফায়াজ় পোয়িল নামে কেরলের দুই প্রবাসী আকর্ষণীয় প্রস্তাবে রাজি হয়ে ওই ভুয়ো সংস্থায় ৭৫ হাজার ডলার বিনিয়োগ করেছিলেন।
০৬১৫
সংস্থায় লালবাতি জ্বলার খবর পেয়ে সেখানে বিনিয়োগকারীরা হাজির হয়ে দেখেন, দু’টি সুইটই শুনশান। ফোনের সংযোগের তার ছেঁড়া, মেঝে ধুলোয় ঢাকা। বহুতলের এক নিরাপত্তারক্ষী জানিয়েছেন, বর্তমানে তাঁদের কাছে প্রতি দিন লোকজন আসছেন এবং সংস্থাটি সম্পর্কে নানা তথ্য জিজ্ঞাসা করছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, এক দিন সংস্থার কর্মকর্তারা দ্রুত এসে চাবি দিয়ে চলে যান। ওই সময় যা ছিল সব কিছু নিয়ে চলে যান তাঁরা।
০৭১৫
ফায়াজ় বলেন, ‘‘আমি সংস্থার নম্বরে বহু বার ফোন করে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলাম। নিরুপায় হয়ে কার্যালয়ের বন্ধ দরজার সামনে এসে উপস্থিত হই। কার্যালয়টির চেহারা দেখে মনে হচ্ছিল যেন সংস্থাটির কোনও অস্তিত্বই সেখানে ছিল না।’’
০৮১৫
প্রথম প্রথম সংস্থাটি গ্রাহকদের বিশ্বাসভাজন হওয়ার জন্য সামান্য লাভের মুখ দেখিয়েছিল। বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ তুলে নিতে পেরেছিলেন। সংস্থার এক ম্যানেজার তাঁর সঙ্গে মাতৃভাষায় কথা বলতেন ও বিনিয়োগ করলে মোটা টাকা লাভের প্রস্তাব দিতেন বলে জানান ফায়াজ়। সেই ফাঁদে পা দিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করে বসেন ওই ভারতীয়। প্রায় দু’কোটি টাকা খোয়া গিয়েছে তাঁর।
০৯১৫
কয়েক দিন পরই গ্রাহকদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করে সংস্থাটি। লভ্যাংশ ফেরত দেওয়ার বদলে একটি বিশেষ সংস্থার হয়ে অনলাইন ট্রেডিং করার জন্য চাপ দিতে থাকে গাল্ফ ফার্স্ট কমার্শিয়াল ব্রোকারস। এক জন বিনিয়োগকারী সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, ক্রেডিট কার্ড, যাবতীয় জমানো অর্থ, এমনকি স্ত্রীর জমানো সঞ্চয়ও ওই সংস্থায় দিয়েছিলেন। প্রতি বারই সংস্থাটি তাঁকে বেশি করে টাকা জমা করার জন্য উৎসাহিত করতে থাকে।
১০১৫
সিগমা ওয়ান ক্যাপিটাল নামের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে টাকা বিনিয়োগ করাত গাল্ফ ফার্স্ট কমার্শিয়াল ব্রোকারস। পরে এই প্ল্যাটফর্মটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। গ্রাহকদের অভিযোগ জমা পড়তে শুরু করে সংস্থার বিরুদ্ধে। যদিও সংস্থার তরফে এই সমস্ত অভিযোগ খারিজ করে দেওয়া হয়। তাদের দাবি ছিল, ক্যারিবিয়ার সেন্ট লুসিয়ায় এই সংস্থা নথিভুক্ত রয়েছে। দুবাইয়ের মাসালা টাওয়ারে সিগমার কার্যালয় ছিল বলে জানায় এই প্রতারক সংস্থাটি।
১১১৫
শত শত বিনিয়োগকারীর থেকে অভিযোগ পেয়ে পুলিশ গাল্ফ ফার্স্ট এবং সিগমা ওয়ানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। তদন্তে উঠে এসেছে, সিগমা ওয়ান ক্যাপিটাল ‘দুবাই ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস সিকিয়োরিটিজ় অ্যান্ড কমোডিটিজ় অথরিটি’র কোনও অনুমোদন ছাড়াই আমানতকারীদের থেকে টাকা তুলেছে।
১২১৫
মহম্মদ নামের এক ব্যক্তি এই সংস্থায় ৫০ হাজার ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৪২ লক্ষ টাকা) বিনিয়োগ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘সংস্থার কর্মীরা গাল্ফ ফার্স্ট এবং সিগমা ওয়ান নাম দু’টি একসঙ্গে ব্যবহার করে গ্রাহকদের ফাঁদে ফেলতেন। সংস্থার কর্মীরা আমানতকারীদের জানাতেন সিগমা ওয়ান তাঁদেরই প্রতিষ্ঠানের অংশ।’’
১৩১৫
ফায়াজ় জানিয়েছেন, সংস্থার কর্মীরা কেবল ফোনে কথোপকথনের মাধ্যমেই গ্রাহকদের ফার্মে বিনিয়োগ করাতে রাজি করাতেন। তাঁদের সুমিষ্ট ব্যবহার ও মাতৃভাষায় কথা বলার কারণে খুব দ্রুত সংস্থার কর্মীরা গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জন করে নিতেন বলে জানান তিনি। প্রাথমিক ভাবে ১ হাজার ডলার জমা করতে রাজি হয়ে যান ফায়াজ়। পরবর্তী কালে তাঁকে মোটা মুনাফার লোভ দেখিয়ে আরও বিনিয়োগ করার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল বলে জানান তিনি।
১৪১৫
সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে এই ধরনের জালিয়াতির ঘটনা এই প্রথম ঘটল এমন নয়। এর আগে মার্চ মাসে দু’টি সংস্থার বিরুদ্ধে কোটি কোটি দিরহাম (স্থানীয় মুদ্রা) হাতিয়ে পালানোর অভিযোগ ওঠে। সন্দেহজনক এই প্ল্যাটফর্মগুলি অনলাইন ট্রেডিংয়ে নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একই কায়দায় গ্রাহকদের ফোন করে বিনিয়োগ করাত বলে অভিযোগ।
১৫১৫
অধিক লাভের ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারিতেরা সাধারণত ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অথবা ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করা শুরু করেছিলেন। পরে তাঁরা দেখেন যে এই সংস্থাগুলির দুবাইয়ের অফিসগুলি অস্তিত্বহীন। সম্প্রতি একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের সন্দেহ, এই জালিয়াতির পিছনে কোনও একটি নির্দিষ্ট চক্রের হাত রয়েছে।