Advertisement
০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
Iran Water Crisis

জলের জন্য ছটফট করছে গোটা শহর, ভয়ঙ্কর পরিণতির অপেক্ষায় দেড় কোটি মানুষ! কোন ‘অভিশাপে’ মৃত্যুশয্যায় পারস্যের রাজধানী?

শুকিয়ে কাঠ ইরান। রাজধানী তেহরানেও মিলছে না পর্যাপ্ত জল। ফলে নাগরিকদের অন্যত্র চলে যাওয়ার আর্জি জানিয়েছেন সাবেক পারস্য দেশটির খোদ প্রেসিডেন্ট। কেন এই বিপর্যয়?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৫ ০৭:৫৩
Share: Save:
০১ ১৮
Iran may relocate its capital Tehran due to acute water crisis

জলশূন্য ইরান! তেষ্টায় ছাতি ফাটছে তেহরানের। আর তাই সাবেক পারস্য দেশে শুরু হয়েছে ‘জল-রেশনিং’। অর্থাৎ গণবণ্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে নাগরিকদের ‘জীবন’ বিলি করছে প্রশাসন। শুধু তা-ই নয়, পরিস্থিতি সামলাতে বাসিন্দাদের রাজধানী ছাড়ার অনুরোধ করেছে শিয়া মুলুকটির সরকার। ফলে এক কোটির বেশি মানুষের বাস্তুহারা হওয়ার বাড়ছে আশঙ্কা। একে চলতি শতাব্দীর জলবায়ু পরিবর্তনগত সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক সঙ্কট বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের একাংশ।

০২ ১৮
Iran may relocate its capital Tehran due to acute water crisis

স্থানীয় গণমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে মারাত্মক খরার কবলে পড়েছে ইরান। গত ৬০ বছরে এ-হেন শুষ্ক ও রুক্ষতার মুখোমুখি কখনওই হয়নি তেহরান। চলতি বছরে উষ্ণতম শরৎকাল কাটিয়েছে সাবেক পারস্য দেশ। শুধু তা-ই নয়, সেপ্টেম্বরের গোড়া থেকে শিয়া মুলুকটিতে এক ফোঁটাও বৃষ্টি হয়নি। নভেম্বর-ডিসেম্বরেও সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে জানিয়েছেন আবহবিদেরা।

০৩ ১৮
Iran may relocate its capital Tehran due to acute water crisis

ইরানে তীব্র জলসঙ্কটের সর্বাধিক প্রভাব পড়েছে তেহরানে। রাজধানী শহরটিতে ইতিমধ্যেই মধ্যরাত থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত জল সরবরাহ পুরোপুরি ভাবে বন্ধ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এত দিন পর্যন্ত ওই এলাকার জলের চাহিদা মেটাচ্ছিল পাঁচটি প্রধান জলাধার। তার মধ্যে একটি সম্পূর্ণ ভাবে শুকিয়ে গিয়েছে। বাকিগুলির জলধারণ ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে প্রায় ৯২ শতাংশ। ফলে যত সময় গড়াচ্ছে ততই সেখানে বাড়ছে খরার প্রকোপ।

০৪ ১৮
Iran may relocate its capital Tehran due to acute water crisis

রাজধানীর ‘জল-দেউলিয়া’ অবস্থা নিয়ে ইতিমধ্যেই গণমাধ্যমের কাছে মুখ খুলেছে তেহরান রিজিয়োন্যাল ওয়াটার অথরিটি। তাদের দাবি, কারাজ বাঁধের জলাধারে মাত্র দু’সপ্তাহের মতো পানীয় জল অবশিষ্ট রয়েছে। ফলে ধীরে ধীরে শহরের বাইরেও বিস্তৃত হচ্ছে খরার প্রকোপ। সাবেক পারস্য দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মাশহাদের জলাধারের জলধারণ ক্ষমতা তিন শতাংশের নীচে নেমে গিয়েছে। ফলে তীব্র জলসঙ্কটের মুখে পড়েছেন ৪০ লক্ষের বেশি বাসিন্দা।

০৫ ১৮
Iran may relocate its capital Tehran due to acute water crisis

বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই অবস্থার কোনও পরিবর্তন না হলে আগামী দিনে পুরোপুরি জলশূন্য হবে তেহরান। তখন বাসিন্দাদের এক ফোঁটা জলও সরবরাহ করতে পারবে না স্থানীয় প্রশাসন বা পুরসভা। পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করে গত অক্টোবরে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন ইরানি প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজ়েশকিয়ান। তাঁর দাবি, আগামী দিনে রাজধানী হিসাবে কাজ করার যোগ্যতা হারাবে ওই শহর। এর জন্য মূলত জলসঙ্কটকেই দায়ী করেছেন তিনি।

০৬ ১৮
Iran may relocate its capital Tehran due to acute water crisis

গত ২০ নভেম্বর সরকারি গণমাধ্যমে প্রেসিডেন্ট পেজ়েশকিয়ান বলেন, ‘‘এই মাসের শেষের দিকে তেহরানে বৃষ্টি না হলে আমাদের জল-গণবণ্টন ব্যবস্থাকে আরও কঠোর করতে হবে। তাতেও পরিস্থিতি কতটা সামাল দেওয়া যাবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আমাদের হয়তো রাজধানী শহর খালি করতে হবে। তার জন্য প্রস্তুত হতে নাগরিকদের অনুরোধ করছি।’’

০৭ ১৮
Iran may relocate its capital Tehran due to acute water crisis

উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট পেজ়েশকিয়ান তেহরান খালি করার কথা বললেও সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়াটি মোটেই সহজ নয়। যে ভাবে জলসঙ্কট বাড়ছে সেই হারে বাসিন্দাদের অন্যত্র সরানো অসম্ভব। ইতিমধ্যেই রাজধানীর বিত্তবানেরা মোটা টাকা খরচ করে জল কিনছেন। মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তদের সরকারি গণবণ্টন ব্যবস্থার উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। জলের অভাবে নাগরিক ও গৃহপালিত প্রাণীর মৃত্যুর আশঙ্কাও করা হচ্ছে।

০৮ ১৮
Iran may relocate its capital Tehran due to acute water crisis

ইরানের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এই খরা পরিস্থিতি শুধুমাত্র বৃষ্টিপাতের অভাবে হয়েছে, এমনটা নয়। এর নেপথ্যে রয়েছে একাধিক কারণ। সাবেক পারস্য দেশটিকে ‘জল-মাফিয়া’ বলে কটাক্ষ করেছেন নিক কাউসার নামের এক পশ্চিমি গবেষক। তাঁর দাবি, অপরিকল্পিত ভাবে ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করেছে তেহরান। নাগরিক সুবিধার কথা বলে কয়েক বছর ধরে সেখানে চলেছে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প। সেই তালিকায় বাঁধ নির্মাণ, গভীর কূপ খনন এবং মাত্রাতিরিক্ত জল সরবরাহের কথা বলেছেন তিনি।

০৯ ১৮
Iran may relocate its capital Tehran due to acute water crisis

এ প্রসঙ্গে ‘টাইমস’ পত্রিকায় কাউসার লিখেছেন, ‘‘মেগা প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত করতে জলবিদ্যা এবং পরিবেশগত ভারসাম্যের মৌলিক বিষয়গুলিকে উপেক্ষা করেছিল ইরান। ফলে তেহরানের উপরে নেমে এসেছে ঈশ্বরের অভিশাপ।’’ বিশ্লেষকদের একাংশের অভিযোগ, একটা সময় রাজধানী শহরটিতে জলের অপচয় ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু তার পরেও এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করেনি পারস্য উপসাগরের কোলের দেশটির সরকার ও প্রশাসন।

১০ ১৮
Iran may relocate its capital Tehran due to acute water crisis

শিয়া মুলুকটিতে জলের সঙ্কটের দ্বিতীয় কারণ হিসাবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার দিকে আঙুল তুলেছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অস্ত্রটি তেহরানের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে। ফলে বাঁধের জলধারণকে অত্যাধুনিক করে তোলা বা জল সংগ্রহ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি সাবেক পারস্য রাষ্ট্র। এর জেরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি খারাপ থেকে খারাপতর হয়েছে।

১১ ১৮
Iran may relocate its capital Tehran due to acute water crisis

১৯৭৯ সালে ‘ইসলামীয় বিপ্লব’-এ ইরানে পতন হয় রাজতন্ত্রের। তেহরানের ক্ষমতা আসেন শিয়া ‘ধর্মগুরু’ রুহুল্লাহ খোমিনি। অন্য দিকে সাবেক পারস্য দেশটির রাজা মহম্মদ রেজা শাহ পাহলভি আশ্রয় নেন আমেরিকায়। ওই বিপ্লবের আগে পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট দেশটির উপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু কুর্সিতে বসেই রাতারাতি খোমিনি তার পরিসমাপ্তি ঘটান। ফলে তেহরানের উপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেয় ওয়াশিংটন। গত সাড়ে চার দশকে সেখান থেকে কিছুতেই বেরিয়ে আসতে পারেনি ওই শিয়া মুলুক।

১২ ১৮
Iran may relocate its capital Tehran due to acute water crisis

ভূ-প্রাকৃতিগত ভাবে ইরানের মাটি বেশ রুক্ষ। পারস্য উপসাগরের পাহাড়ঘেরা দেশটির একটা বড় অংশ জুড়ে আছে মরুভূমি। এই পরিস্থিতিতে সমুদ্রের লবণাক্ত জল পরিশোধন করে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে তেহরানের সামনে। কিন্তু সমস্যা হল শিয়া মুলুকটির হাতে নেই ওই পরিশোধন প্রযুক্তি। সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়াটি বহুল পরিমাণে ব্যবহার করে থাকে ইজ়রায়েল, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো পশ্চিম এশিয়ার একাধিক দেশ। ভূ-রাজনৈতিক কারণে এদের প্রত্যেকের সঙ্গে ইরানের শত্রুতা রয়েছে।

১৩ ১৮
Iran may relocate its capital Tehran due to acute water crisis

এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলির তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে ইরান। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শিয়া মুলুকটির ৮২ শতাংশ এলাকা শুষ্ক বা আধা শুষ্ক এলাকায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু তার পরেও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা পেতে যে ফসলগুলি উৎপাদনে বেশি জল লাগে, সেগুলিই বহুল পরিমাণে চাষ করছেন সেখানকার কৃষকরা। ফলে উত্তোলিত ভূগর্ভস্থ জলের ৯০ শতাংশ ব্যবহার হচ্ছে সেচের কাজে।

১৪ ১৮
Iran may relocate its capital Tehran due to acute water crisis

পশ্চিমি গণমাধ্যমগুলির একাংশ আবার বর্তমান জলসঙ্কটের জন্য ইরানের অভ্যন্তরীণ জাতিগত এবং আঞ্চলিক সমস্যাকে নিশানা করেছে। তাদের দাবি, দেশের সুনির্দিষ্ট কয়েকটি জনগোষ্ঠীকে জল ব্যবহার থেকে বঞ্চিত রেখেছে শিয়া ধর্মগুরু পরিচালিত তেহরান। সেই কারণে অপরিকল্পতি ভাবে এক এলাকার জলকে অন্যত্র সরানো হয়েছে। পরে সেটাই ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে প্রশাসনের কাছে।

১৫ ১৮
Iran may relocate its capital Tehran due to acute water crisis

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ এবং ইরান বিশেষজ্ঞ আরাশ আজিজি জানিয়েছেন, অতীতে এই ছবি ব্রাজ়িলের সাও পাওলো এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনে দেখতে পাওয়া গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বৃষ্টি হওয়ায় প্রাকৃতিক ভাবেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে সক্ষম হয় ওই দুই রাষ্ট্র। কিন্তু, সেই সৌভাগ্য তেহরানের না হতেও পারে। কারণ বৃষ্টিপাতের কোনও পূর্বাভাস দিতে পারেনি সাবেক পারস্য দেশটির আবহাওয়া দফতর।

১৬ ১৮
Iran may relocate its capital Tehran due to acute water crisis

কিন্তু তার পরেও আজ়িজি মনে করেন, দ্রুত রাজধানী বদল করলে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে ইরান। কারণ এক কোটির বেশি বাসিন্দাকে অন্য শহরে নিয়ে যাওয়া মুখের কথা নয়। দ্বিতীয়ত, তেহরানকে দেশটির বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র বলা যেতে পারে। দূরবর্তী এলাকা থেকেও সেখানে চাকরি বা ব্যবসা করতে আসেন বহু মানুষ। রাজধানী স্থানান্তরিত হলে তাঁদের রুটি-রুজিও প্রশ্নের মুখে পড়বে।

১৭ ১৮
Iran may relocate its capital Tehran due to acute water crisis

দ্বিতীয়ত, রাজধানী স্থানান্তরিত করলে তেহরানের দূতাবাসগুলিকেও সরাতে হবে। তার জন্য কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে, এমন প্রতিটা দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে ইরান সরকারকে। সেই কাজ বেশ সময়সাপেক্ষ। সাবেক পারস্য দেশটির হাতে কোনও পরিকল্পিত শহর নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটা তৈরি করতে গেলে বিপুল খরচ করতে হবে তাদের। সে ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক চাপ সহ্য করতে হতে পারে শিয়া মুলুকটিকে।

১৮ ১৮
Iran may relocate its capital Tehran due to acute water crisis

আর তাই প্রেসিডেন্টের মন্তব্যকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না তেহরানের সাবেক মেয়র গোলাম হোসেইন কারবাশি। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘‘উনি অবশ্যই কোনও রসিকতা করেছেন। রাজধানী শহর কোনও ভাবেই খালি করা সম্ভব নয়। আর এটাকে আমরা সমাধান হিসাবেও দেখতে পারি না। অন্য শহরেও একই ধরনের খরার সমস্যা হতে পারে। আর আপনি বার বার রাজধানী বদল করতে পারবেন না।’’

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy