Israel deploys world first leaser weapon named Iron Beam, know its destruction power and other details dgtl
Iron Beam
‘অদৃশ্য’ লেজ়ার রশ্মিতে মাঝ-আকাশেই ধ্বংস হবে ড্রোন-রকেট! ‘আয়রন বিম’কে যুদ্ধক্ষেত্রে এনে খেলা ঘোরাচ্ছে ইজ়রায়েল
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসাবে এ বার রণাঙ্গনে লেজ়ার হাতিয়ার মোতায়েন করল ইজ়রায়েল। কী ভাবে কাজ করবে এই অস্ত্র? কতটা শক্তিশালী ইহুদিদের নতুন যুগের এই অত্যাধুনিক হাতিয়ার?
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:৫৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
গত দু’বছর ধরে প্যালেস্টাইনপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে লড়ছে ইজ়রায়েল। পাশাপাশি লেবাননের হিজ়বুল্লা, ইয়েমেনের হুথি এবং ইরানের আক্রমণও সামলাতে হচ্ছে তাদের। এ-হেন সংঘর্ষের মধ্যেই এ বার রণাঙ্গনে ‘অদৃশ্য’ এক নতুন হাতিয়ার নিয়ে হাজির হল ইহুদি ফৌজ। এটি একাই সমস্ত ‘হাওয়াই হামলা’কে আটকে দেবে বলে দাবি করেছে তেল আভিভ। পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধে এই অস্ত্র যে ‘গেম চেঞ্জার’ হতে চলেছে, তা বলাই বাহুল্য।
০২১৮
ইজ়রায়েলের এই নতুন হাতিয়ারটির নাম ‘আয়রন বিম’। এর থেকে উচ্চশক্তির ‘অদৃশ্য’ লেজ়ার রশ্মি ছুড়তে পারবে ইহুদি ফৌজ। তেল আভিভের দাবি, বিশ্বের প্রথম দেশ হিসাবে নতুন প্রজন্মের অত্যাধুনিক এই অস্ত্রকে রণাঙ্গনে মোতায়েন করেছে তারা। শুধু তা-ই নয়, অচিরেই ‘আয়রন বিম’ সামরিক ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাবে বলে একরকম নিশ্চিত প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার। সংশ্লিষ্ট হাতিয়ারটি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) হিসাবে কাজ করবে বলে জানা গিয়েছে।
০৩১৮
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের চতুর্থ সপ্তাহে প্রথম বার ‘আয়রন বিম’কে জনসমক্ষে আনে ইহুদি প্রতিরক্ষা সংস্থা ‘রাফায়েল অ্যাডভান্স ডিফেন্স সিস্টেম্স’। তার পরই সংশ্লিষ্ট হাতিয়ারটিকে বাহিনীতে শামিল করা হচ্ছে বলে ঘোষণা করে ‘ইজ়রায়েল ডিফেন্স ফোর্স’ বা আইডিএফ। বর্তমানে তাঁদের হাতে রয়েছে আয়রন ডোম, ডেভিড্স স্লিং এবং অ্যারোর মতো আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এদের সঙ্গেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ‘আয়রন বিম’ কাজ করবে বলে জানিয়েছে তেল আভিভ।
০৪১৮
আইডিএফ জানিয়েছে, শত্রুর ছোড়া রকেট, মর্টার এবং ড্রোনকে চিনে নিয়ে মাঝ-আকাশে ধ্বংস করবে ‘আয়রন বিম’। তবে প্রথাগত এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমগুলির সঙ্গে এর বেশ পার্থক্য রয়েছে। এই কাজের জন্য সুনির্দিষ্ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে থাকে আয়রন ডোম, অ্যারো বা ডেভিড্স স্লিঙের মতো আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। সেখানে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন লেজ়ার রশ্মি ব্যবহার করে গোটা প্রক্রিয়া শেষ করবে ‘আয়রন বিম’।
০৫১৮
ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে খবর, রকেট, মর্টারের গোলা ও ড্রোনের পাশাপাশি নিচু দিয়ে উড়ে যাওয়া যুদ্ধবিমান এবং সামরিক কপ্টারকে ধ্বংস করতে পারবে এই ‘অদৃশ্য’ হাতিয়ার। ২০২১ সালে সংশ্লিষ্ট অস্ত্রটির নমুনা তৈরি করেন ইহুদি গবেষকেরা। তখন থেকেই আইডিএফের অস্ত্রাগারে আয়রন বিমকে যুক্ত করতে মরিয়া ছিলেন তাঁরা।
০৬১৮
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, বিপুল খরচ আটকাতেই প্রচলিত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলির পাশাপাশি লেজ়ার হাতিয়ারকে রণাঙ্গনে আনল ইজ়রায়েল। তাঁদের অনুমান, ভবিষ্যতে আয়রন ডোমের জায়গা নেবে ‘আয়রন বিম’। প্রচলিত এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমটিতে রয়েছে ‘তামির’ নামের একটি ক্ষেপণাস্ত্র। এর এক একটির দাম ৫০ থেকে ৬০ হাজার ডলার। অর্থাৎ, ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৫৪ লক্ষ টাকা।
০৭১৮
প্যালেস্টাইনপন্থী হামাস বা হিজ়বুল্লার মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলি সাধারণত ইহুদি ভূমিতে যে রকেট হামলা করে, তার দাম মেরেকেটে ৩০০ ডলার। গত দু’বছরে যখনই তারা আক্রমণ শানিয়েছে, তখনই একসঙ্গে ১৫০-২০০ বা আরও বেশি রকেট ছুড়তে দেখা গিয়েছে তাদের। ফলে আয়রন ডোমের মতো আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় সেগুলিকে মাঝ-আকাশে ধ্বংস করতে জলের মতো খরচ হয়েছে আইডিএফের।
০৮১৮
এই সমস্যার সমাধান করতেই এ বার বাহিনীর হাতে ‘আয়রন বিম’ তুলে দিলেন ইহুদি প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। কারণ, এর মাধ্যমে লেজ়ার রশ্মি ছুড়তে আইডিএফের খরচ হবে মাত্র দু’ডলার। সে ক্ষেত্রে ইজ়রায়েলের উপর রকেট হামলা করতে অনেক বেশি খরচ হবে হামাস ও হিজ়বুল্লার।
০৯১৮
‘আয়রন বিম’ নিয়ে ইতিমধ্যেই বিবৃতি দিয়েছেন সাবেক ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট। তাঁর কথায়, ‘‘আকাশে শত্রুর ছোড়া কোনও বিস্ফোরক নজরে পড়লেই সক্রিয় হবে আমাদের নতুন লেজ়ার হাতিয়ার। এতটুকু সময় নষ্ট না করে সেটিকে টুকরো টুকরো করে ফেলবে আয়রন বিম। এটার মাধ্যমে আমরা শত্রুদের দেউলিয়া করে দেব। আর বাঁচাব অসংখ্য জীবন।’’
১০১৮
‘আয়রন বিম’ তৈরির ক্ষেত্রে মূল অবদান রয়েছে ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন গবেষণা এবং উন্নয়ন ইউনিটের। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট অস্ত্রটির নকশা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ইহুদি বিমানবাহিনীর একগুচ্ছ অফিসার। রাফায়েলের পাশাপাশি হাতিয়ার উৎপাদনে জড়িয়ে আছে ‘এলবিট সিস্টেম’ নামে তেল আভিভের আর একটি প্রতিরক্ষা সংস্থা। সামরিক জীবন শুরু করার আগে ‘আয়রন বিম’কে লাগাতার পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে বলে সূত্র মারফত মিলেছে খবর।
১১১৮
সংবাদসংস্থা ‘সিএনএন’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইজ়রায়েলের এই নতুন হাতিয়ারটি থেকে ১০০ কিলোওয়াটের লেজ়ার বিম ছোড়া যায়। এর পাল্লা সাত কিলোমিটার। অর্থাৎ, এই দূরত্বে কোনও রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন বা মর্টার চিহ্নিত হলে তা আকাশেই ধ্বংস করতে পারবে ‘আয়রন বিম’। যদিও এই নিয়ে সরকারি ভাবে কিছু জানায়নি পশ্চিম এশিয়ার ইহুদি রাষ্ট্র।
১২১৮
দ্বিতীয়ত, ‘আয়রন বিম’কে এক রকম অদৃশ্য হাতিয়ার বলা যেতে পারে। কারণ, লেজ়ার বিম খালি চোখে দেখা যায় না। ফলে শত্রুর পক্ষে তাদের রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে কোন রাস্তা দিয়ে লেজ়ার বিম ছুটে আসবে তা বোঝা শক্ত।
১৩১৮
তবে ‘আয়রন বিম’-এর বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ‘সিএনএন’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেঘলা আবহাওয়া বা বৃষ্টিতে এটি ঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না। তা ছাড়া এটি চালাতে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। সেখানে কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি থাকলে এটিকে আর ব্যবহার করা যাবে না।
১৪১৮
তা ছাড়া লেজ়ার হাতিয়ারটি ব্যালেস্টিক এবং হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে পুরোপুরি অক্ষম। গত জুনে ইরানের সঙ্গে ১২ দিন ধরে যুদ্ধ চলে ইজ়রায়েলের। ওই সংঘাত চলাকালীন ইহুদি শহরগুলিকে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে নিশানা করে তেহরান। শব্দের পাঁচ গুণের চেয়ে গতিশীল হওয়ায় সেগুলিকে আটকাতে পারেনি আইডিএফের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ফলে রাজধানী তেল আভিভ-সহ একাধিক শহরের যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছিল।
১৫১৮
সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে আরও মজবুত করার চেষ্টা করছে ইহুদি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ফৌজ। ব্যালেস্টিক ও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রকে ধ্বংসের ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়ার মতো করে ‘আয়রন বিম’কে তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। ঠিক এই রকমই একটি অস্ত্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগন। সেটির নাম ‘স্টার ওয়ার্স’ রাখার ইচ্ছা ছিল তাঁর। যদিও এখনও পর্যন্ত তাতে সাফল্য পাননি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানীরা।
১৬১৮
বর্তমানে আমেরিকার তৈরি ‘থার্মাল হাই অল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স’ বা থাড নামের একটি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করছে ইজ়রায়েল। দূরপাল্লার ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে মাঝ-আকাশে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে এটি সিদ্ধহস্ত। এটি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় বাহিনীকেও ইহুদিভূমিতে মোতায়েন রেখেছে ওয়াশিংটন।
১৭১৮
গত ১৩ এপ্রিল লেজ়ার হাতিয়ারের সফল পরীক্ষা চালায় ভারত। অস্ত্রটির পোশাকি নাম ‘এমকে-টু(এ) লেজ়ার’। এটি প্রকৃতপক্ষে একটি ‘ডিরেক্ট এনার্জি ওয়েপন সিস্টেম’ বা ডিইডব্লিউ বলে জানিয়েছে প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ‘ডিফেন্স রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজ়েশন’ বা ডিআরডিও। এটি রয়েছে বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকটি দেশের কাছে।
১৮১৮
প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা সূত্রে খবর, শত্রুর নজরদারি সেন্সর, অ্যান্টেনা, রাডার ব্যবস্থা বা একগুচ্ছ ড্রোনকে ধ্বংস করতে পারবে ‘এমকে-টু(এ)’। চোখের পলক ফেলার আগে নিখুঁত নিশানায় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে হামলা চালাতে পারবে এই সমরাস্ত্র। লেজ়ার হাতিয়ারটি ৩০ কিলোওয়াট শক্তি সম্পন্ন। তবে এর পাল্লার বিষয়টি গোপন রেখেছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার।