Israel orders for Universal Rocket Launcher of Rs 150 crore to Indian Defence Company after Operation Sindoor dgtl
Indian Rocket Launchers for Israel
পাকিস্তানকে সপাটে চড় মেরে হিরোগিরি! গাজ়া যুদ্ধ খতম করতে সেই ভারতীয় অস্ত্রের বরাত দিল ‘বন্ধু’ ইজ়রায়েল
‘অপারেশন সিঁদুর’-এ ভারতীয় অস্ত্রের পরাক্রম দেখে এ বার একটি দেশীয় প্রতিরক্ষা সংস্থাকে ১৫০ কোটির বরাত দিল ইজ়রায়েল। গাজ়া যুদ্ধের মধ্যে অত্যাধুনিক ইউনিভার্সাল রকেট লঞ্চার নয়াদিল্লির থেকে কিনছে ‘বন্ধু’ ইহুদি রাষ্ট্র।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২৫ ০৭:৩৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
‘অপারেশন সিঁদুর’-এ ভারতীয় অস্ত্রের জয়জয়কার! ‘যুদ্ধ’ থামতেই নয়াদিল্লির হাতিয়ার নিয়ে দুনিয়া জুড়ে শুরু হয়েছে চর্চা। এই আবহে ভারতীয় অস্ত্র কিনতে এগিয়ে এল ‘বন্ধু’ ইজ়রায়েল। পশ্চিম এশিয়ার ইহুদি রাষ্ট্রটির এ হেন পদক্ষেপে হতবাক গোটা বিশ্ব। এর জেরে নয়াদিল্লি ও তেল আভিভের সম্পর্ক নতুন খাতে বইবে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা। পাশাপাশি, অস্ত্র বাজারে দেশীয় সংস্থাগুলির পা জমাতে যে সুবিধা হবে, তা বলাই বাহুল্য।
০২১৮
ভারতের শীর্ষ প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলির অন্যতম হল এনআইবিই লিমিটেড। সম্প্রতি, ইজ়রায়েলকে নিয়ে বড় ঘোষণা করেছে এই প্রতিষ্ঠান। তাদের দাবি, ইউনিভার্সাল রকেট লঞ্চার সরবরাহের জন্য বরাত দিয়েছে ইহুদি দেশটির একটি টেক জায়ান্ট সংস্থা। এর জন্য চুক্তি অনুযায়ী ১ কোটি ৭৫ লক্ষ ২০ হাজার ডলার পাবে এনআইবিই লিমিটেড, ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১৫০.৬২ কোটি টাকা।
০৩১৮
বিশ্বের অত্যাধুনিক হাতিয়ারগুলির তালিকায় অবশ্যই আসবে ইউনিভার্সাল রকেট লঞ্চারের নাম। এর পাল্লা ৩০০ কিলোমিটার। ভারতে উৎপাদিত এই অস্ত্র আগে কখনও কোনও বিদেশি রাষ্ট্রকে বিক্রি করেনি নয়াদিল্লি। ইজ়রায়েলের মতো শক্তিশালী দেশ হাতিয়ারটির বরাত দেওয়ায় রাতারাতি খবরের শিরোনামে চলে এসেছে এনআইবিই লিমিটেডের নাম। হু-হু করে বেড়েছে এর শেয়ারের দর। যদিও ইহুদি টেক-জায়ান্ট সংস্থাটি কত সংখ্যায় সংশ্লিষ্ট অস্ত্রটি কিনতে চেয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।
০৪১৮
ইজ়রায়েলি সংস্থার থেকে বরাত পাওয়ার পর এই ইস্যুতে বিবৃতি দেয় ওই ভারতীয় প্রতিরক্ষা সংস্থা। সেখানে এনআইবিই লিমিটেড বলেছে, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘আত্মনির্ভর ভারত’ ও ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র লক্ষ্যকে মাথায় রেখে আমরা এগিয়ে চলেছি। ভারতীয় ফৌজকে অত্যাধুনিক হাতিয়ার সরবরাহ করে যেতে চাই। পাশাপাশি, আমাদের আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার স্বপ্ন রয়েছে। ইজ়রায়েলি সংস্থার বরাত মেলায় সেই রাস্তায় পা ফেলার সুযোগ পেলাম আমরা।’’
০৫১৮
জন্মলগ্ন থেকে আমেরিকা এবং পশ্চিম দুনিয়ার হাতিয়ার ব্যবহার করে আসছে এই ইহুদি রাষ্ট্র। এ ছাড়া ইজ়রায়েলের নিজস্ব প্রতিরক্ষা শিল্প যথেষ্ট উন্নত। আরব দেশগুলির সঙ্গে একের পর এক যুদ্ধে প্রতি বারই তাদের জয়ের রাস্তা খুলে দিয়েছে দেশীয় এবং মার্কিন হাতিয়ার। এ হেন ইহুদিভূমির টেক জায়ান্ট সংস্থার ভারতীয় রকেট লঞ্চার হাতে পাওয়ার আগ্রহকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
০৬১৮
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে প্যালেস্টাইনপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে ইজ়রায়েলি ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ। প্যালেস্টাইনের গাজ়া ভুখণ্ডের প্রায় ৭৭ শতাংশ এলাকা বর্তমানে দখল নিয়েছে ইহুদি ফৌজ। ঠিক এই সময়ে ইউনিভার্সাল রকেট লঞ্চারের মতো অত্যাধুনিক হাতিয়ারের বরাত ভারতীয় সংস্থাকে দেওয়ার নেপথ্যে তেল আভিভের একাধিক কারণ রয়েছে। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, গাজ়ায় গ্রাউন্ড অপারেশন আরও তীব্র করার পরিকল্পনা রয়েছে আইডিএফের। আর সেখানে ‘গেম চেঞ্জার’ হতে পারে ভারতের রকেট লঞ্চার।
০৭১৮
চলতি বছরের মে মাসে সৌদি আরব সফর করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আরব মুলুকটিতে বসে সিরিয়ার অন্তর্বর্তিকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-সারার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। দুই রাজনৈতিক নেতাকে করমর্দনও করতে দেখা যায়। এর কয়েক দিনের মধ্যেই দামাস্কাসের উপর থেকে একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় ওয়াশিংটন। শুধু তা-ই নয়, কুখ্যাত জঙ্গি নেতাদের তালিকা থেকে সারার নাম সরিয়ে দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপে ইজ়রায়েলের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ।
০৮১৮
গত শতাব্দীর ৬০ এবং ৭০-এর দশকে বহু বার ইহুদিভূমিতে হামলা চালিয়েছে সিরিয়া। দামাস্কাসের কোনও শাসকই ইজ়রায়েলের অস্তিত্ব মেনে নিতে নারাজ। আল-সারাও এই চিন্তাভাবনার বাইরে নন। অন্য দিকে পশ্চিম এশিয়ায় সফরের সময়ে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে কয়েক কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তি সেরেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। মার্কিন অস্ত্রে আরব মুলুকগুলি শক্তিশালী হলে ইহুদিভূমির আতঙ্ক যে বাড়বে, তা বলাই বাহুল্য।
০৯১৮
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, আমেরিকার এ হেন ‘উলটপুরাণ’ বিদেশ নীতিতে বেজায় ক্ষুব্ধ ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। সেই কারণেই ওয়াশিংটনের উপর নির্ভরশীলতা কমানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করার মরিয়া চেষ্টা রয়েছে তাঁর। আর তাই ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ নয়াদিল্লির দেশীয় হাতিয়ারগুলিকে পাকিস্তানে ধ্বংসলীলা চালাতে দেখে সেগুলির ভূয়সী প্রশংসা করতে ভোলেনি নেতানিয়াহুর সরকার। পরবর্তী ধাপে রকেট লঞ্চার কিনে ইজ়রায়েল ভারতকে ‘বন্ধুত্ব’ বজায় রাখার বার্তা দিল বলেই মনে করা হচ্ছে।
১০১৮
অন্য দিকে ইহুদিভূমি থেকে বিপুল অঙ্কের হাতিয়ার বিক্রির বরাত মিলতেই ছুটতে শুরু করে এনআইবিই লিমিটেডের স্টক। ২৬ মে, সোমবার বেলা ১২টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট সংস্থাটির শেয়ারে পাঁচ শতাংশ ঊর্ধ্বগতি দেখা গিয়েছে। ফলে প্রায় ১,৬০০ টাকায় উঠে যায় এর দাম। দেশীয় প্রতিরক্ষা সংস্থাটির বাজার মূলধন ২,২৯০ কোটি টাকা বলে জানা গিয়েছে। ব্রোকারেজ ফার্মগুলির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এনআইবিইর মাল্টিব্যাগার স্টক গত দু’বছরে ৩২৫ শতাংশ এবং গত তিন বছরে ৩,১৮৫ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে।
১১১৮
১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিয়ম মেনে ইজ়রায়েল তৈরি হলেও প্রাথমিক ভাবে ইহুদি দেশটিকে স্বীকৃতি দিতে চায়নি ভারত। ওই সময়ে প্যালেস্টাইনের পক্ষে গিয়েছিল নয়াদিল্লির ভোট। পরে ১৯৫০ সালে ইজ়রায়েলের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নেয় কেন্দ্র। কিন্তু, ১৯৯০ সালের আগে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক মজবুত হয়নি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর অবশ্য ইহুদিভূমির সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বের সংজ্ঞায় এসেছে বড় বদল। এ দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ইজ়রায়েল সফরেও গিয়েছিলেন তিনি।
১২১৮
গত শতাব্দীর ৯০-এর দশকের পর থেকে ইহুদিভূমি থেকে হাতিয়ার আমদানি বৃদ্ধি করে নয়াদিল্লি। ভারতীয় সেনার প্যারাস্যুট রেজিমেন্টের জন্য পশ্চিম এশিয়ার দেশটি থেকে আনা হয় টাভোর নামের অ্যাসল্ট রাইফেল। ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধের সময়ে লেজ়ার গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ভারতকে সাহায্য করে ইজ়রায়েল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমি দুনিয়া ওই সময়ে এই অস্ত্র সরবরাহ করতে অস্বীকার করে। ফলে কার্গিলের দুর্গম উঁচু পাহাড়ি এলাকায় পাক ফৌজকে পর্যুদস্ত করতে নয়াদিল্লির বাহিনীকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল। ইহুদিদের থেকে সংশ্লিষ্ট হাতিয়ারটি চলে আসতেই যুদ্ধের গতি অন্য দিকে মোড় নেয়।
১৩১৮
কার্গিল যুদ্ধে ইজ়রায়েলি লেজ়ার গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র বহুল পরিমাণে ব্যবহার করেছিল ভারতীয় বিমানবাহিনী। এ ছাড়া অত্যাধুনিক মর্টার ও কামানের গোলা পাঠিয়েও বিপদের দিনে নয়াদিল্লির পাশে ছিল তেল আভিভ। ফলে ২১ শতকে পশ্চিম এশিয়ার দেশটি থেকে হাতিয়ার আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সেই তালিকায় যুক্ত হয় ড্রোন এবং ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ বা এয়ার ডিফেন্স।
১৪১৮
‘অপারেশন সিঁদুর’কে কেন্দ্র করে চলা চার দিনের ‘যুদ্ধে’ ইহুদিদের তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করতে পিছপা হয়নি ভারতীয় সেনা। সূত্রের খবর, ইহুদিদের তৈরি ‘হারোপ’ ড্রোন দিয়ে পাকিস্তানের ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’কে ধ্বংস করে নয়াদিল্লি। চিন থেকে আমদানি করা এইচকিউ-৯পি নামের এয়ার ডিফেন্স লাহৌরে মোতায়েন রেখেছিল ইসলামাবাদ। ইজ়রায়েলি ‘হারোপ’ সেখানে আছড়ে পড়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। পাক সেনার হাতে থাকা বেজিঙের ওই এয়ার ডিফেন্স একে চিহ্নিতই করতে পারেনি।
১৫১৮
ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতির পর এই ইস্যুতে মুখ খোলেন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অভিযোগের সুরে তিনি বলেন, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর নীল নকশা তৈরিতে বড় ভূমিকা নেন ইজ়রায়েলি সেনাবাহিনীর বেশ কয়েক জন পদস্থ আধিকারিক। সংঘর্ষ চলাকালীন নয়াদিল্লিতেই ছিলেন তাঁরা। যদিও তাঁর ওই বয়ানকে পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছে নয়াদিল্লি ও তেল আভিভ।
১৬১৮
তবে এ কথা ঠিক যে সংঘাত শুরু হতেই ভারতকে সরাসরি সব রকমের সাহায্য করার কথা ঘোষণা করেন ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। গত কয়েক বছরে এ দেশের প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলির সঙ্গে হাত মিলিয়ে একাধিক হাতিয়ার তৈরি করেছে ইহুদি মুলুকটির একাধিক সংস্থা। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ ভারতীয় সেনা সেই অস্ত্রও ব্যবহার করেছে বলে জানা গিয়েছে। উদাহরণ হিসাবে আত্মঘাতী ‘স্কাইস্ট্রাইকার’ ড্রোনের কথা বলা যেতে পারে। ইজ়রায়েলি সংস্থা এলবিট সিকিউরিটি সিস্টেমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এটি তৈরি করেছে বেঙ্গালুরুভিত্তিক আদানি গোষ্ঠীর আলফা ডিজ়াইন।
১৭১৮
এ ছাড়া ইজ়রায়েলের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বারাক-৮ নামের একটি ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ তৈরি করেছে ভারত। পাকিস্তানের সঙ্গে ‘যুদ্ধে’ ইসলামাবাদের ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে এটিও ব্যবহার করা হয়েছে বলে সূত্র মারফত মিলেছে খবর। সংশ্লিষ্ট হাতিয়ারটিতে রয়েছে দূরপাল্লার এবং মাঝারি পাল্লার ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র (সারফেস টু এয়ার মিসাইল)।
১৮১৮
সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারা বিলোপের মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ ক্ষমতা প্রত্যাহারের পর সেখানে লগ্নি করেছে ইজ়রায়েল। বিশ্লেষকদের অনুমান, আগামী দিনে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আরও কাছাকাছি আসবে এই দুই দেশ। এত দিন সেটা ছিল একমুখী। অর্থাৎ, ইহুদিদের থেকে হাতিয়ার কিনত ভারত। এ বার দেখা যাবে উল্টো ছবিও। পাশাপাশি, যৌথ উদ্যোগে হাতিয়ার নির্মাণের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তাঁরা।