Jaish-e-Mohammad top commander Abdul Rauf involved in murder of Jewish journalist Daniel Pearl eliminated in Operation Sindoor dgtl
Operation Sindoor
ইহুদি খুনের রক্ত মেখে পাকিস্তানের গুপ্তঘাঁটিতে আশ্রয়, জঙ্গিনেতাকে উড়িয়ে ইজরায়েলকে উপহার দিল ভারত
‘অপারেশন সিঁদুর’-এ জইশ কমান্ডার তথা মৌলানা মাসুদ আজ়হারের ভাই আবদুল রউফকে ভারতীয় ফৌজ নিকেশ করেছে বলে সূত্র মারফত মিলেছে খবর। ইজ়রায়েলি সাংবাদিককে নৃশংস ভাবে হত্যার নেপথ্যে হাত ছিল তার।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২৫ ১২:০৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং তার পর থেকে চলা ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে আপাতত দাঁড়ি। পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর অঘোষিত ‘যুদ্ধ’ থামাতে বড় ভূমিকা নিয়েছে আমেরিকা। চার দিনের লড়াইয়ে ইতি টানা হলেও সেখান থেকে নয়াদিল্লির প্রাপ্তিযোগ কতটা? তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণের মধ্যেই প্রকাশ্যে এল খুশির খবর। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে ‘প্রিয় বন্ধু’ ইজ়রায়েলকে বড় উপহার দিয়েছে ভারতীয় ফৌজ, বলছেন বিশ্লেষকেরা।
০২১৯
গত ৭ মে মধ্যরাতে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরের (পাক অকুপায়েড জম্মু-কাশ্মীর বা পিওজেকে) মোট ন’টি জায়গায় জঙ্গিদের গুপ্তঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় নয়াদিল্লি। এই অভিযানেরই পোশাকি নাম, ‘অপারেশন সিঁদুর’। কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের দাবি, এতে শতাধিক সন্ত্রাসবাদীর মৃত্যু হয়েছে। সূত্রের খবর, নিহতদের তালিকায় আছে আবদুল রউফ আজ়হারের নামে। ইজ়রায়েলি সাংবাদিককে অপহরণ করে নৃশংস ভাবে হত্যার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিল এই কুখ্যাত পাক জঙ্গি।
০৩১৯
আবদুল রউফ সম্পর্কে ইসলামাবাদ মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদের প্রতিষ্ঠাতা মৌলানা মাসুদ আজ়হারের ভাই। ২০০২ সালের ২৩ জানুয়ারি তার নির্দেশেই দক্ষিণ পাকিস্তানের বন্দর শহর করাচি থেকে ইজ়রায়েলি বংশোদ্ভূত মার্কিন সাংবাদিক ড্যানিয়েল পার্লকে অপহরণ করে জঙ্গিরা। পরে নৃশংস ভাবে তাঁকে খুন করে জইশ সন্ত্রাসীরা। প্রকাশ্যে পার্লের মুণ্ডচ্ছেদ করতেও হাত কাঁপেনি তাদের।
০৪১৯
ড্যানিয়েলের মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশ্যে আসতেই ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গিদের তালিকায় রউফের নাম তোলে ইজ়রায়েল। তার খোঁজে কোমর বেঁধে নেমে পড়ে ইহুদিভূমির গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ। অন্য দিকে, পার্ল হত্যার যুক্তি সাজাতে তাঁকে মার্কিন এবং ইজ়রায়েলি গুপ্তচর বলে উল্লেখ্য করে রউফ। জইশের বক্তব্য ছিল, ‘‘ইহুদিরা আমাদের শত্রু। তারা সব সময় ষড়যন্ত্র করছে। সেই কারণেই ড্যানিয়েলকে হত্যা করা হল।’’
০৫১৯
উল্লেখ্য, গত ২৩ বছর ধরে লাগাতার চেষ্টা চালিয়েও রউফের নাগাল পায়নি মোসাদ। এই সময়ে পাক সেনার নিরাপত্তার ঘেরাটোপে দিব্যি লুকিয়ে ছিল সে। শুধু তা-ই নয়, পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের লাহৌর সংলগ্ন বহাওয়ালপুরে জইশের সদর দফতর পরিচালনার দায়িত্ব ছিল তারই কাঁধে। গত ৭ মে ওই ঘাঁটি ভারতীয় সেনা গুঁড়িয়ে দেওয়ায় প্রাণ হারায় ইহুদি-বিদ্বেষী এই কুখ্যাত পাক জঙ্গি।
০৬১৯
জইশের প্রতিষ্ঠাতা মৌলানা মাসুদ আজ়হারের ভাই রউফের অবশ্য কুকীর্তির শেষ নেই। ভারতে একাধিক সন্ত্রাসবাদী হামলার সঙ্গে নাম জড়িয়ে রয়েছে তার। ১৯৯৯ সালে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের আইসি-৮১৪ বিমানটি ছিনতাই করে জইশের সন্ত্রাসবাদীরা। এর মূল চক্রী ছিল রউফ। বিমানটিকে আফগানিস্তানের কন্দহরে নিয়ে যায় পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা।
০৭১৯
আইসি-৮১৪-এর যাত্রীরা পণবন্দি থাকায় ওই সময়ে জইশ প্রতিষ্ঠাতা মৌলানা মাসুদ আজ়হারকে ছাড়তে বাধ্য হয় নয়াদিল্লি। মুক্তি পায় ওমর সইদ শেখ নামের আরও এক জঙ্গি। পুরস্কার হিসাবে এর পরই সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীটির শীর্ষ কমান্ডার হয়ে বসে রউফ। পরবর্তী কালে তার হুকুমেই ড্যানিয়েলকে অপহরণ এবং খুন করে ওমর। আল কায়দার সঙ্গেও তার যোগাযোগ ছিল বলে গোয়েন্দা সূত্রে মিলেছে খবর।
০৮১৯
২০০১ সালে জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভা এবং ভারতের সংসদে ফিঁদায়ে হামলা চালায় জইশ জঙ্গিরা। ২০১৬ সালে পঞ্জাবের পঠানকোটে বায়ুসেনা ঘাঁটিতে ঢুকে পড়ে সন্ত্রাসীদের একটি দল। ২০১৯ সালে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে মানববোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণ হারান ৪০ জন জওয়ান। গোয়েন্দাদের দাবি, এই সমস্ত ফিঁদায়ে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিল রউফ।
০৯১৯
বহাওয়ালপুরের জইশের জঙ্গিঘাঁটিতে ভারতীয় ফৌজের প্রত্যাঘাতের জেরে পরিবারের অন্তত ১০ জন সদস্যের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে খোদ মাসুদ আজ়হার। ওই দিনই একটি বিবৃতি জারি করে রাষ্ট্রপুঞ্জের এই স্বীকৃত জঙ্গি নেতা। সেখানে আজ়হার জানিয়েছে, বড় বোন ও তাঁর স্বামী, ভাগ্নে ও তাঁর স্ত্রী এবং এক ভাগ্নীর প্রাণ গিয়েছে। এদের পরিবর্তে তার মৃত্যু হলে ভাল হত বলেও মন্তব্য করে জইশের প্রতিষ্ঠাতা।
১০১৯
গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় পর্যটক-সহ মোট ২৬ জনকে নৃশংস ভাবে খুন করে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা। ওই ঘটনার পরই সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করে নয়াদিল্লি। ইসলামাবাদের বিমানের জন্য বন্ধ করা হয় আকাশপথ। পাশাপাশি, পাক নাগরিকদের ভিসা না দেওয়ার কথাও ঘোষণা করে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার।
১১১৯
পহেলগাঁও হামলার বদলা যে অচিরেই নেওয়া হবে, তা ঘোষণা করেছিল নয়াদিল্লি। সেইমতো ৭ মে মধ্যরাতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালায় ভারতীয় ফৌজ। এর পরই দুই প্রতিবেশীর সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে। জম্মু-কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা (লাইন অফ কন্ট্রোল বা এলওসি) এবং পশ্চিমের আন্তর্জাতিক সীমান্তে দু’পক্ষের মধ্যে প্রবল গুলি বিনিময় হয়। একাধিক জায়গায় ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র এবং যুদ্ধবিমান দিয়ে পাল্টা প্রত্যাঘাতের মরিয়া চেষ্টা চালায় ইসলামাবাদ।
১২১৯
কিন্তু, এতে ফল হয় হিতে বিপরীত। পাকিস্তানের যাবতীয় আগ্রাসন রুখে দেয় ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম)। ইসলামাবাদের সমস্ত ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্রকে মাঝ-আকাশেই গুলি করে ধ্বংস করে এ দেশের বাহিনী। পাশাপাশি, চিনের তৈরি দু’টি জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমানকেও নয়াদিল্লি ধ্বংস করেছে বলে স্বীকার করে নেয় পাকিস্তান।
১৩১৯
গত ৮ এবং ৯ মে রাতে ইসলামাবাদের ওই হামলার বিরুদ্ধে ফের প্রত্যাঘাত হানে ভারতীয় সেনা। নয়াদিল্লির ড্রোন উড়িয়ে দেয় লাহৌরের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং একটি রেডার সিস্টেম। সূত্রের খবর, চিনের তৈরি এইচকিউ-৯পি নামের এয়ার ডিফেন্স হারিয়েছে পাকিস্তান। ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্রকে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছিল সেটি।
১৪১৯
এর পাশাপাশি পাকিস্তানের একাধিক বায়ুসেনা ঘাঁটিতে আগুন ঝরিয়েছে ভারতীয় বিমানবাহিনী। ১০ মে এই ইস্যুতে বিবৃতি দেন ভারতীয় সেনার কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ। তাঁরা বলেন, পাকিস্তানের রফিকি, মুরিদ, চকলালা এবং রহিম ইয়ার খান বায়ুসেনা ঘাঁটিতে আকাশপথে হামলা চালানো হয়েছে। এ ছাড়া নিশানা করা হয় সুক্কুর এবং চুনিয়ায় পাক সেনাঘাঁটি, পসরুর এবং সিয়ালকোটের বিমানঘাঁটিকে।
১৫১৯
নয়াদিল্লির তরফে এই বিবৃতি জারি করার আগেই বায়ুসেনা ঘাঁটিতে হামলার বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলে ইসলামাবাদ। পাক সেনাবাহিনীর জনসংযোগ শাখার (ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন বা আইএসপিআর) মুখপাত্র আহমদ শরিফ চৌধরি জানান, রাওয়ালপিন্ডির নুর খান, চকওয়ালের মুরিদ এবং পঞ্জাব প্রদেশের ঝাং জেলার রফিকি বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত হেনেছে ভারত।
১৬১৯
সংঘাত এ ভাবে তীব্র হওয়ায় নিয়ন্ত্রণরেখা এবং আন্তর্জাতিক সীমান্তে সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধি করে পাকিস্তান। পাল্টা সেখানে বাহিনী ও হাতিয়ারের সংখ্যা বাড়়াতে থাকে ভারতও। পাকিস্তানের লাগাতার গোলাবর্ষণে প্রাণ হারান জম্মু-কাশ্মীরের রাজৌরী জেলার এক পদস্থ আধিকারিক। ভূস্বর্গের শম্ভু মন্দির এবং একটি গুরুদ্বারকে নিশানা করে ইসলামাবাদের সেনা।
১৭১৯
তবে ছ’টি বায়ুসেনা ঘাঁটিতে জোরালো প্রত্যাঘাতের পর কিছুটা দমে যায় পাকিস্তান। শেষে আমেরিকার মধ্যস্থতায় সংঘর্ষবিরতির কথা ঘোষণা করে দুই দেশ। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, লড়াই থামার তিন ঘণ্টার মধ্যেই ফের সীমান্তে গোলাবর্ষণ করে ইসলামাবাদ। এতে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স বা বিএসএফ) এক জন কনস্টেবলের মৃত্যু হয়।
১৮১৯
নয়াদিল্লি জানিয়েছে, ১২ মে সংঘর্ষবিরতি নিয়ে দুই দেশের ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশন বা ডিজিএমও পর্যায়ের অফিসারদের মধ্যে হবে একপ্রস্ত আলোচনা। পাকিস্তান আগ্রাসী মনোভাব দেখালে তাকে ‘যুদ্ধ’ হিসাবে গণ্য করা হবে বলে স্পষ্ট করেছে মোদী সরকার।
১৯১৯
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ওড়াতে ইজ়রায়েলি ‘হারোপ’ ড্রোন ব্যবহার করে ভারতীয় সেনা। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নয়াদিল্লির অভিযানকে প্রথম থেকে সমর্থন করে এসেছে পশ্চিম এশিয়ার ইহুদি রাষ্ট্র। তাদেরই ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গিকে নিকেশ করায় যোগ্য প্রতিদান দেওয়া গিয়েছে, বলছেন সাবেক ফৌজি অফিসারেরা। বহু ইহুদি এর জন্য সমাজমাধ্যমে মোদী সরকারকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন।