Jyoti Maurya’s husband Alok Maurya has now approached the Allahabad High Court seeking alimony dgtl
Who Is Jyoti Maurya
‘ভুল বুঝে’ ঝাড়ুদারকে বিয়ে, স্বামীর ‘সাহায্যে’ উচ্চপদে চাকরি, পরকীয়া! ‘বেওয়াফা’ জ্যোতির থেকে ভরণপোষণ দাবি স্বামীর
পরীক্ষায় পাশ করার পরে বরেলীর এসডিএম বা মহকুমাশাসক হিসাবে নিযুক্ত হন জ্যোতি মৌর্য। ২০২০ সাল পর্যন্ত অলোক ও জ্যোতির দাম্পত্য সম্পর্ক মসৃণই ছিল। গোলমাল বাধে তার পর থেকে। অলোক সন্দেহ করতে শুরু করেন জ্যোতিকে।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২৫ ১৫:১৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
২০১০ সালে উত্তরপ্রদেশের বরেলীর বাসিন্দা অলোক কুমার সাত পাকে বাঁধা পড়েন। পাত্রী উত্তরপ্রদেশেরই প্রতাপগড় জেলার। নাম জ্যোতি মৌর্য। স্নাতক জ্যোতির ইচ্ছা ছিল বিয়ের পরও পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আমলা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি।
০২১৬
সেই স্বপ্নে সায় ছিল স্বামী এবং শ্বশুরবাড়িরও। জ্যোতির স্বামী পঞ্চায়েতের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী হলেও স্ত্রীর ইচ্ছায় বরাবর সায় দিয়ে গিয়েছিলেন। সরকারি কর্মচারী হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য বছরের পর বছর ধরে পরিশ্রম করেছিলেন। জ্যোতিকে প্রয়াগরাজের একটি শীর্ষস্থানীয় কোচিং সেন্টারে ভর্তি করিয়েছিলেন বলে দাবি অলোকের।
০৩১৬
জ্যোতির প্রশাসক হওয়ার স্বপ্নপূরণের জন্য মানসিক ভাবে সাহস জোগানোর পাশাপাশি পড়াশোনার সমস্ত খরচ নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন অলোক। ২০১৫ সালে যমজ সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর একই বছরে উত্তরপ্রদেশের প্রাদেশিক সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন জ্যোতি। সেখানে রাজ্যের মধ্যে ১৬তম স্থান অধিকার করেন তিনি।
০৪১৬
পরীক্ষায় পাশ করার পরে বরেলীর এসডিএম বা মহকুমাশাসক হিসাবে নিযুক্ত হন তিনি। ২০২০ সাল পর্যন্ত অলোক ও জ্যোতির দাম্পত্য সম্পর্ক মসৃণই ছিল। গোলমাল বাধে তার পর থেকে। অলোক সন্দেহ করতে শুরু করেন জ্যোতিকে। অলোকের অভিযোগ ছিল, সাফল্যের স্বাদ পাওয়ার পর থেকে বৈবাহিক সম্পর্কে প্রতারণা করা শুরু করে দেন স্ত্রী।
০৫১৬
প্রতাপগড়ের পঞ্চায়েত বিভাগে চতুর্থ শ্রেণির সরকারি পদে কর্মরত অলোক জ্যোতির বিরুদ্ধে হোমগার্ড কমান্ড্যান্ট মণীশ দুবের সঙ্গে অবৈধ প্রেমের সম্পর্কের অভিযোগ তোলেন। তিনি দাবি করেন, সরকারি আধিকারিক হয়েই স্বামীকে ভুলে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন জ্যোতি। জ্যোতি ও অলোকের বিবাদ নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে তোলপাড় চলছে গোটা দেশে।
০৬১৬
পঞ্চায়েত কর্মী জ্যোতির স্বামীর দাবি, স্ত্রীর শিক্ষা এবং স্বপ্নপূরণে সহায়তা করার ফল হাতেনাতে পাচ্ছেন তিনি। ২০২০ সালে প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে স্ত্রীকে একটি হোটেল থেকে বার হতে দেখেন অলোক। স্ত্রী ও তাঁর প্রেমিক মণীশ তাঁকে হত্যা করার চক্রান্ত করছেন বলে স্ত্রীর দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন অলোক। এই বিষয়ে তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
০৭১৬
জ্যোতি বর্তমানে বরেলীতে এসডিএম হিসাবে কর্মরত। ২০২৩ সালে গণমাধ্যমের সামনে প্রকাশ্যে কান্নায় ভেঙে পড়েন অলোক। সকলের সামনে স্ত্রীকে মণীশের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে পরিবারে ফিরে আসার জন্য অনুরোধ করেন তিনি। সেই ভিডিয়োটি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই তা ঝড়ের গতিতে ভাইরাল হয়ে পড়ে। অনেকে বরেলীর মহকুমাশাসককে বিশ্বাসঘাতক বলে অভিহিত করতে শুরু করেন।
০৮১৬
স্বামীর এই আচরণ ভাল ভাবে নেননি জ্যোতি। ২০২৩ সালে অলোক ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা দায়ের করেন তিনি। একই সঙ্গে বিয়ের আগে অলোকের চাকরি ও যোগ্যতা নিয়ে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগও তোলেন জ্যোতি।
০৯১৬
এক বিবৃতিতে জ্যোতি দাবি করেছেন যে, বিয়ের সময় তাঁদের বলা হয়েছিল অলোক পঞ্চায়েত বিভাগের এক কর্মকর্তা। প্রতারণা করে তাঁর বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে তিনি বুঝতে পারেন যে তাঁকে মিথ্যা বলা হয়েছে। অলোক আসলে এক জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। তিনি পঞ্চায়েত দফতরে ঝাড়ুদার হিসাবে কর্মরত। তখন তিনি তাঁর সিদ্ধান্তের জন্য অনুতপ্ত হন। কিন্তু তত দিনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।
১০১৬
অন্য দিকে, স্ত্রীর বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন জ্যোতির স্বামী। তিনি জানান, ২০১৯ সালের গোড়ার দিকে জ্যোতি কৌশাম্বী মহকুমায় প্রবেশনারি অফিসার হিসাবে নিযুক্ত হন। সেখানে মাসিক ভিত্তিতে কমিশনের আকারে ঘুষ নিতেন বলে দাবি অলোকের। ঘুষ লেনদেনের রেকর্ড সংবলিত একটি ডায়েরিও জমা দিয়েছেন থানায়।
১১১৬
নোটবুকে উল্লিখিত বিবরণ অনুসারে, জ্যোতি ২০২১ সালের অক্টোবরে ৬ লক্ষ টাকা ঘুষ হিসাবে পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ডায়েরিতে বিভিন্ন সরকারি বিভাগের পরিদর্শক আধিকারিকদের প্রতি মাসে কয়েক হাজার টাকা দেওয়ার কথাও উল্লেখ রয়েছে।
১২১৬
জ্যোতি এর আগে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেছিলেন। সেই নিয়ে কম চাপানউতর হয়নি দু’পক্ষের। অলোক অভিযোগ তোলেন বিবাহবিচ্ছেদ না দিলে তাঁকে খুনের হুমকি দিচ্ছেন জ্যোতি। এর আগে আজমগড়ের পারিবারিক আদালতে অন্তর্বর্তিকালীন ভরণপোষণের জন্য আবেদন করেছিলেন অলোক, যেখানে তিনি স্বাস্থ্যগত সমস্যা এবং আর্থিক সমস্যার কথা উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু ৪ জানুয়ারি তাঁর আবেদন খারিজ হয়ে যায়।
১৩১৬
এর পরই উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন জ্যোতির স্বামী। ২০২৫ সালে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে দায়ের করা এক আবেদনে আলোক জানিয়েছেন, তাঁর স্ত্রী এক জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তিনি নিজে একটি সামান্য সরকারি চাকরি করেন। বেশ কয়েক দিন ধরে নানা অসুস্থতায় ভুগছেন। তাই তিনি স্ত্রী কাছ থেকে ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী।
১৪১৬
জ্যোতির বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ তুললেও অলোকের বিরুদ্ধেও নেহাত কম অভিযোগ নেই গোগৌর গ্রামের বাসিন্দাদের। কারণ এটিই অলোকের কর্মক্ষেত্র। সংবাদমাধ্যমের সামনে ভূরি ভূরি অভিযোগ তুলেছেন সেখানকার অধিবাসীরা। অলোক ২০০৯ সাল থেকে এই গ্রামে ঝাড়ুদার হিসাবে নিযুক্ত। গ্রামবাসীরা জানান, তাঁরা কখনও অলোকের হাতে বেলচা বা ঝাড়ু দেখেননি।
১৫১৬
সপ্তাহে এক দিনের জন্য গ্রামপ্রধানের বাড়িতে আসেন অলোক ও গোটা সপ্তাহের হাজিরা দিয়ে চলে যান। অলোককে গ্রাম পরিষ্কার করতে দেখা যায়নি কোনও দিন। অলোককে মাঝেমাঝে গ্রামে বাইকে করে আসতে দেখা যায়। তিনি তাঁর চাকরির প্রথম দিনগুলিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাজ করতেন। কিন্তু তাঁর স্ত্রী যে দিন থেকে আমলা হয়েছেন তার পর থেকে তিনি বিলাসবহুল জীবনযাপন করে চলেছেন বলে দাবি গোগৌর গ্রামের বাসিন্দাদের।
১৬১৬
পারিবারিক আদালতে আবেদন খারিজের পর অলোক ইলাহাবাদ হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। হাই কোর্ট অলোকের আবেদনের ভিত্তিতে জ্যোতি মৌর্যের বিরুদ্ধে নোটিস জারি করা হয়েছে। পরবর্তী শুনানি ৮ অগস্ট। সেই রায়ের দিকে তাকিয়ে দুই পক্ষই।