বাবা পুলিশ আধিকারিক। তাই প্রথমে পুলিশে যোগদানের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন প্রিয়া। প্রিয়ার জন্য ভাগ্যের অন্য পরিকল্পনা ছিল। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর কেরিয়ারের ভাবনার মোড় ঘুরে যায়। বাড়ির পরিবেশ ছোট থেকে দেশসেবার চিন্তার বীজ বুনে দিয়েছিল প্রিয়ার মনে। স্কুলে পড়ার সময় থেকে প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতি আগ্রহ তাঁকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর দিকে ঝুঁকতে বাধ্য করে।
কিন্তু ভাবনা থাকলেও সেনাবাহিনীতে প্রবেশের পথে বাধা ছিল লাল ফিতের ফাঁস। কলেজে পড়াকালীন সংবাদপত্রে ভারতীয় সেনায় নিয়োগের একটি বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে তাঁর। সেখানে সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য তরুণদের আহ্বান করা হয়েছিল। সেই বিজ্ঞাপনটি দেখে তিনি হতাশ হয়েছিলেন এটা জেনে যে চিকিৎসক ও সেবিকা ছাড়া মহিলাদের সেনাবাহিনীতে যোগদানের সুযোগ নেই।
নিয়মের চক্রব্যূহে আটকে পড়ে থাকতে রাজি ছিলেন না প্রিয়া। কোনও কিছু না ভেবেই তৎক্ষণাৎ তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল এসএফ রডরিগেজ়কে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে একটি চিঠি লিখে ফেলেন কলেজপড়ুয়া ছাত্রী। যথাসময়ে উত্তরও আসে তাঁর কাছে। সেনাপ্রধান রডরিগেজ় প্রিয়াকে লিখেছিলেন, সেনাবাহিনীতে তাঁদের মতো তরুণ এবং উৎসাহী মহিলাদের প্রয়োজন। তাঁর এই প্রস্তাব ভেবে দেখবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।
সেনাপ্রধানের চিঠিটি আসার পর প্রিয়াকে কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হয়। ১৯৯২ সালে তাঁর স্বপ্নের কেরিয়ার বেছে নেওয়ার সুযোগ মেলে। জজ অ্যাডভোকেট জেনারেল শাখায় অফিসারদের জন্য দু’টি শূন্যপদ ছিল। প্রিয়া সেই পদের জন্য আবেদন করেন। সশস্ত্র সীমা বলের পক্ষ থেকে একটি সাক্ষাৎকারের বিজ্ঞপ্তি আসে তাঁর কাছে। সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন প্রিয়া।
পরীক্ষায় সফল হওয়ার পর চেন্নাইয়ের অফিসার্স ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে আধিকারিক হিসাবে নিযুক্ত হন। ১৯৯২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে আরও ২৪ জন মহিলা ক্যাডেটের সঙ্গে প্রিয়া প্রশিক্ষণ শুরু করেন। অফিসার প্রশিক্ষণ চলেছিল এক বছর ধরে। ১৯৯৩ সালে ‘ক্যা়ডেট নম্বর ১’ তকমা সেঁটে জজ অ্যাডভোকেট জেনারেল শাখায় যোগ দেন তিনি। সেনাবাহিনীর আইনি বিষয়গুলি নিয়ে দেখভাল করে এই শাখাটি।
প্রিয়ার যাত্রা সহজ ছিল না। সামরিক পরিবেশ মূলত পুরুষতান্ত্রিক হওয়ায় অসংখ্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে প্রিয়া ও বাকি ২৪ জনকে। কঠোর পরিশ্রম এবং তাঁর স্বপ্নের প্রতি নিষ্ঠা সেই সমস্ত প্রতিকূলতাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। প্রশিক্ষণের সময় তাঁর সাফল্য আলোচনার বিষয় হয়েছিল বাহিনীতে। ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে সেনাবাহিনীতে প্রথম বারের মতো রৌপ্য পদক পেয়ে স্নাতক হন তিনি।
প্রিয়া একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন ‘‘আমি কখনও ভাবিনি যে আমি এই অচলায়তন ভাঙছি। আমার কেবল মনে হয়েছিল যে আমি অন্য যে কোনও ব্যক্তির মতোই সক্ষম। স্বপ্ন সত্যি হওয়ায় আমি এতটাই মুগ্ধ ছিলাম যে এই ধরনের বিষয়গুলি নিয়ে মাথা ঘামাইনি। পুরুষ ক্যাডেটরা আমাদের সঙ্গে ঠিক তাঁদের সতীর্থদের মতোই আচরণ করতেন। তাঁরা প্রয়োজনে তিরস্কার করতেন। আবার প্রশংসা করতেন, পরামর্শ দিতেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy