কী অসুখে ভুগছেন? জানতে চিকিৎসকের কাছে ছুটেছিলেন মেরি অ্যান এবং টমাস। পরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, মেরি অ্যানের অসুখের নাম ‘অ্যাক্রোমেগ্যালি’। এমন এক সমস্যা যাতে দেহে অতিরিক্ত মাত্রায় হরমোন নিঃসৃত হয়। যার জেরে হাড়গোড়, পেশি এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অস্বাভাবিক ভাবে বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে পেশিতে তীব্র যন্ত্রণা এবং মাথাব্যথাও হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই টিউমার থাকায় এই সমস্যা দেখা দেয়। চিৎসকেরা আরও জানিয়েছিলেন, একে পিটুউটারি অ্যাডেনোমাও বলে।
এরই মাঝে হঠাৎই ছন্দপতন। বিয়ের ১১ বছরের মাথায় মারা যান মেরি অ্যানের স্বামী টমাস। চার সন্তানকে নিয়ে অথৈ জলে পড়েন তিনি। সংসার চালাতে আবারও রোজগারের খোঁজে নেমে পড়েন। তবে মেরি অ্যানের মুখের দিকে চেয়ে কেউ তাঁকে কাজ দিতে রাজি নন। উল্টে অপমান করে তাড়িয়ে দেন অথবা ঠাট্টাতামাসা করেন। দিন কাটানোই সঙ্গিন হয়ে ওঠে মেরি অ্যানের।
সংসার চালাতে এ বার দুনিয়ার ‘কুৎসিততম’ মহিলার খেতাবকেই হাতিয়ার করে ফেলেন মেরি অ্যান। ১৯২০ সালে আমেরিকার সার্কাসে কাজের ডাক পান মেরি অ্যান। তাঁবু খাটানো মঞ্চে উঠে সকলকে হাসাতে হবে। যেমনটা সার্কাসের জোকাররা করেন। অথবা সায়ামিজ যমজ বা দৈত্যাকার মানুষদের দেখে হাসি লুঠতে ভিড় করেন মানুষজন। সঙ্গে সঙ্গে রাজি মেরি অ্যান। ইংল্যান্ডের জীবন ছেড়ে আমেরিকা পাড়ি দেন তিনি।
মেরি অ্যানকে নিয়ে ঠাট্টাতামাশার বিরুদ্ধে এক সময় সরব হয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। তিনি যে ‘অ্যাক্রোমেগ্যালি’-র সমস্যায় ভুগছেন, তা কোনও ভাবে প্রকাশ্যে চলে আসে। ১৯২৭ সালে সে সময়কার এক স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ হার্ভি কাসিং চিঠি লিখে প্রতিবাদ জানান। মেরি অ্যানের চেহারাকে যে ভাবে হাসির খোরাক করে তোলা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন হার্ভি। তবে প্রতিবাদ সত্ত্বেও সার্কাসে মেরি অ্যানের শো বন্ধ হয়নি।
জনপ্রিয়তার সঙ্গে আয় বাড়লেও মেরি অ্যানকে নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রূপের মাত্রা কমেনি। তবে শেষজীবন পর্যন্ত সার্কাসের মঞ্চেই কাটিয়েছেন তিনি। কেবলমাত্র এক বার ইউরোপে ফেরার সুযোগ পেয়েছিলেন। ১৯২৫ সালে একটি প্রদর্শনীতে যোগ দিতে প্যারিসে গিয়েছিলেন। তবে দেশের মাটিতে আর ফেরা হয়নি। যদিও তাঁর দেহ ফিরেছিল ইংল্যান্ডে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy