Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Machli

অন্তত তিন পার্টনার, ১১ বাচ্চা, ‘মোস্ট ফেমাস’ এই বাঘিনীকে নিয়ে রয়েছে ফেসবুক পেজ পর্যন্ত

জীবনকালে নিজের কীর্তির জন্য ‘লেডি অব দ্য লেকস’, ‘ক্রোকোডাইল কিলার’, ‘টাইগার কুইন অব রণথম্বোর’— এই সব নামও উপাধি হিসাবে পেয়েছে সে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২০ ১৩:২৩
Share: Save:
০১ ১৭
নাম তার মছলী। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের পশুপ্রেমীদের কাছে পরিচিত মুখ সে। জীবনকালে নিজের কীর্তির জন্য ‘লেডি অব দ্য লেকস’, ‘ক্রোকোডাইল কিলার’, ‘টাইগার কুইন অব রণথম্বোর’— এই সব নামও উপাধি হিসাবে পেয়েছে সে।

নাম তার মছলী। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের পশুপ্রেমীদের কাছে পরিচিত মুখ সে। জীবনকালে নিজের কীর্তির জন্য ‘লেডি অব দ্য লেকস’, ‘ক্রোকোডাইল কিলার’, ‘টাইগার কুইন অব রণথম্বোর’— এই সব নামও উপাধি হিসাবে পেয়েছে সে।

০২ ১৭
মছলী একটি বাঘিনী। রাজস্থানের রণথম্বোর জাতীয় উদ্যান ছিল তার বিচরণ ক্ষেত্র। সেখানকার প্রায় ৩৫০ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে ছিল তার রাজত্ব। রণথম্বোরের জঙ্গলে মছলীর প্রভাব সর্বজনবিদিত।

মছলী একটি বাঘিনী। রাজস্থানের রণথম্বোর জাতীয় উদ্যান ছিল তার বিচরণ ক্ষেত্র। সেখানকার প্রায় ৩৫০ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে ছিল তার রাজত্ব। রণথম্বোরের জঙ্গলে মছলীর প্রভাব সর্বজনবিদিত।

০৩ ১৭
১৯৯৭-এর বর্ষার মরসুমে জন্ম হয় মছলীর। তার মুখ ও কানের কাছে মাছের আকৃতির দাগ ছিল। সেখান থেকেই তার এই নাম। এই অদ্ভুত ডোরাকাটা দাগ তার সৌন্দর্যকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল।

১৯৯৭-এর বর্ষার মরসুমে জন্ম হয় মছলীর। তার মুখ ও কানের কাছে মাছের আকৃতির দাগ ছিল। সেখান থেকেই তার এই নাম। এই অদ্ভুত ডোরাকাটা দাগ তার সৌন্দর্যকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল।

০৪ ১৭
ছোট থেকেই সে ছিল ডাকাবুকো। মাত্র দু’বছর বয়স থেকেই একা শিকার করতে বেরিয়ে পড়ে মছলী। আস্তে আস্তে আলাদা হয় নিজের মায়ের থেকে। ১৯৯৯ এই নিজের এলাকা গড়ে নেয় সে। মায়ের এলাকাতেও ভাগ বসায় মছলী।

ছোট থেকেই সে ছিল ডাকাবুকো। মাত্র দু’বছর বয়স থেকেই একা শিকার করতে বেরিয়ে পড়ে মছলী। আস্তে আস্তে আলাদা হয় নিজের মায়ের থেকে। ১৯৯৯ এই নিজের এলাকা গড়ে নেয় সে। মায়ের এলাকাতেও ভাগ বসায় মছলী।

০৫ ১৭
তার কিছু দিন পরই ‘বাম্বু রাম’ নামের এক শক্তিশালী বাঘের সঙ্গে মিলন হয় তার। জন্ম হয় তিনটি শাবকের। একটি স্ত্রী ও দু’টি পুরুষ শাবকের জন্ম দেয় সে। তার মেয়ের নাম ছিল ‘সুন্দরী’(টি-১৭)। ছেলেদের নাম ‘ব্রোকেন টেল’ ও ‘স্লান্ট ইয়ার’।

তার কিছু দিন পরই ‘বাম্বু রাম’ নামের এক শক্তিশালী বাঘের সঙ্গে মিলন হয় তার। জন্ম হয় তিনটি শাবকের। একটি স্ত্রী ও দু’টি পুরুষ শাবকের জন্ম দেয় সে। তার মেয়ের নাম ছিল ‘সুন্দরী’(টি-১৭)। ছেলেদের নাম ‘ব্রোকেন টেল’ ও ‘স্লান্ট ইয়ার’।

০৬ ১৭
২০০১-এ ব্রোকেন টেল ও স্লান্ট ইয়ার মছলীর থেকে আলাদা হয়ে যায়। বয়সের কারণে এর আগেই মারা গিয়েছিল বাম্বু রাম। তখন বাম্বু রামের এলাকার দখল নেয় ‘নিক ইয়ার’ নামে একটি পূর্ণ বয়স্ক বাঘ ও মছলী।

২০০১-এ ব্রোকেন টেল ও স্লান্ট ইয়ার মছলীর থেকে আলাদা হয়ে যায়। বয়সের কারণে এর আগেই মারা গিয়েছিল বাম্বু রাম। তখন বাম্বু রামের এলাকার দখল নেয় ‘নিক ইয়ার’ নামে একটি পূর্ণ বয়স্ক বাঘ ও মছলী।

০৭ ১৭
এর পর নিক ইয়ারের সঙ্গে মিলন হয় মছলীর। ২০০২-র এপ্রিলে দ্বিতীয় বারের জন্য সন্তানের জন্ম দেয় সে। সে বার দু’টি শাবকের জন্ম দেয় সে। তাদের নাম ‘ঝুমরু’ (পুরুষ) ও ‘ঝুমরি’ (স্ত্রী)।

এর পর নিক ইয়ারের সঙ্গে মিলন হয় মছলীর। ২০০২-র এপ্রিলে দ্বিতীয় বারের জন্য সন্তানের জন্ম দেয় সে। সে বার দু’টি শাবকের জন্ম দেয় সে। তাদের নাম ‘ঝুমরু’ (পুরুষ) ও ‘ঝুমরি’ (স্ত্রী)।

০৮ ১৭
এর পর ‘এক্স-মেল’ নামের এক বাঘের সঙ্গে মিলনের পর ২০০৫-এর মার্চে শর্মিলী (স্ত্রী) ও বাহাদুর (পুরুষ) নামের দু’টি শাবকের জন্ম দেয় সে। এ রকম করে মোট ১১টি শাবকের জন্ম দিয়েছিল মছলী। সাতটি মেয়ে ও চারটে ছেলে শাবক। তাঁর দু’টি মেয়েকে পরে রণথম্বোর থেকে সারিসকা ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্রে স্থানান্তরিত করা হয়। কারণ ওই ব্যাঘ্র প্রকল্পে বাঘের সংখ্যা খুব কমে গিয়েছিল।

এর পর ‘এক্স-মেল’ নামের এক বাঘের সঙ্গে মিলনের পর ২০০৫-এর মার্চে শর্মিলী (স্ত্রী) ও বাহাদুর (পুরুষ) নামের দু’টি শাবকের জন্ম দেয় সে। এ রকম করে মোট ১১টি শাবকের জন্ম দিয়েছিল মছলী। সাতটি মেয়ে ও চারটে ছেলে শাবক। তাঁর দু’টি মেয়েকে পরে রণথম্বোর থেকে সারিসকা ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্রে স্থানান্তরিত করা হয়। কারণ ওই ব্যাঘ্র প্রকল্পে বাঘের সংখ্যা খুব কমে গিয়েছিল।

০৯ ১৭
একের পর এক সন্তানের জন্ম দিয়ে রণথম্বোরে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল মছলীর। ২০০৪-এ রণথম্বোরে ছিল ১৫টি বাঘ। ২০১৪-তে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০-এ।

একের পর এক সন্তানের জন্ম দিয়ে রণথম্বোরে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল মছলীর। ২০০৪-এ রণথম্বোরে ছিল ১৫টি বাঘ। ২০১৪-তে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০-এ।

১০ ১৭
তবে শুধু সন্তানের জন্ম নয়। পর্যটক ও পশুপ্রেমীদের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে মছলী। সে যেমন ছিল দেখতে সুন্দর, তেমনই ক্যামেরার সামনেও ছিল সমান স্বচ্ছন্দ। সেই বোধহয় একমাত্র  বাঘিনী যার ছবি সব থেকে বেশি বার তোলা হয়েছে। সরকারি হিসাবই বলছে, তাঁর এই জনপ্রিয়তা ১৯৯৮ থেকে ২০০৯ এর মধ্যে ভারত সরকারকে ১০ কোটি মার্কিন ডলার রোজগার করতে সাহায্য করে। যা ভারতীয় মুদ্রায় ৭৫৫ কোটি টাকারও বেশি।

তবে শুধু সন্তানের জন্ম নয়। পর্যটক ও পশুপ্রেমীদের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে মছলী। সে যেমন ছিল দেখতে সুন্দর, তেমনই ক্যামেরার সামনেও ছিল সমান স্বচ্ছন্দ। সেই বোধহয় একমাত্র বাঘিনী যার ছবি সব থেকে বেশি বার তোলা হয়েছে। সরকারি হিসাবই বলছে, তাঁর এই জনপ্রিয়তা ১৯৯৮ থেকে ২০০৯ এর মধ্যে ভারত সরকারকে ১০ কোটি মার্কিন ডলার রোজগার করতে সাহায্য করে। যা ভারতীয় মুদ্রায় ৭৫৫ কোটি টাকারও বেশি।

১১ ১৭
এর পাশাপাশি রণথম্বোর জাতীয় উদ্যানে মছলীর দাপট ছিল চোখে পড়ার মতো। তাঁর ক্ষিপ্রতা, শক্তি নিদর্শন নেটদুনিয়াতেও ছড়িয়ে রয়েছে। ২০০৩-এ সে একা একটি ১৪ ফুট লম্বা কুমিরের সঙ্গে লড়াই করে তাকে মেরে ফেলে। যদিও এই লড়াইয়ে মছলীর দাঁতের বেশ ক্ষতি হয়। কিন্তু অন্য প্রাণীর হাত থেকে শাবকদের রক্ষা করতে তার হিংস্র হয়ে ওঠার কথা গোটা বিশ্ব জানে।

এর পাশাপাশি রণথম্বোর জাতীয় উদ্যানে মছলীর দাপট ছিল চোখে পড়ার মতো। তাঁর ক্ষিপ্রতা, শক্তি নিদর্শন নেটদুনিয়াতেও ছড়িয়ে রয়েছে। ২০০৩-এ সে একা একটি ১৪ ফুট লম্বা কুমিরের সঙ্গে লড়াই করে তাকে মেরে ফেলে। যদিও এই লড়াইয়ে মছলীর দাঁতের বেশ ক্ষতি হয়। কিন্তু অন্য প্রাণীর হাত থেকে শাবকদের রক্ষা করতে তার হিংস্র হয়ে ওঠার কথা গোটা বিশ্ব জানে।

১২ ১৭
বাস্তুতন্ত্র অসাধারণ অবদানের জন্য মছলীর প্রতি সম্মান জানাতে ২০১৩-তে ভারত সরকার তার ছবি সম্বলিত পোস্টাল কভার ও স্ট্যাম্প ছাপে। এ ছাড়াও বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণে অবদান ও পর্যটক আকর্ষণের জন্য লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কারও জিতেছিল সে।

বাস্তুতন্ত্র অসাধারণ অবদানের জন্য মছলীর প্রতি সম্মান জানাতে ২০১৩-তে ভারত সরকার তার ছবি সম্বলিত পোস্টাল কভার ও স্ট্যাম্প ছাপে। এ ছাড়াও বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণে অবদান ও পর্যটক আকর্ষণের জন্য লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কারও জিতেছিল সে।

১৩ ১৭
তবে ২০১৪-র পর থেকেই রণথম্বোরের রানি নিজের শক্তি হারাতে শুরু করে। ধীরে ধীরে দুর্বলও হয়ে পড়ে সে। শেষ বয়সে একটি চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিল সে। নিজের এলাকার দখলও ধীরে ধীরে হারাতে থাকে। অবশেষে ২০১৬-র ১৮ অগস্ট মৃত্যু হয় তার।

তবে ২০১৪-র পর থেকেই রণথম্বোরের রানি নিজের শক্তি হারাতে শুরু করে। ধীরে ধীরে দুর্বলও হয়ে পড়ে সে। শেষ বয়সে একটি চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিল সে। নিজের এলাকার দখলও ধীরে ধীরে হারাতে থাকে। অবশেষে ২০১৬-র ১৮ অগস্ট মৃত্যু হয় তার।

১৪ ১৭
মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ১৯ বছর। এ ব্যাপারেও অনেক এগিয়ে মছলী। সাধারণত বাঘেদের জীবনকাল হয় ১০-১৫ বছর। কিন্তু মছলী বেঁচেছিল তার থেকে অনেকটাই বেশি।

মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ১৯ বছর। এ ব্যাপারেও অনেক এগিয়ে মছলী। সাধারণত বাঘেদের জীবনকাল হয় ১০-১৫ বছর। কিন্তু মছলী বেঁচেছিল তার থেকে অনেকটাই বেশি।

১৫ ১৭
মৃত্যুর পর জাতীয় ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের প্রোটোকল অনুসারে তার দেহ সৎকার করা হয়।

মৃত্যুর পর জাতীয় ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের প্রোটোকল অনুসারে তার দেহ সৎকার করা হয়।

১৬ ১৭
তার নামে একটি ফেসবুক পেজও আছে। সেখানেও তার ভক্ত সংখ্যা কম নয়। তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকটি ডকুমেন্টারি ছবি। যার মধ্যে ‘দ্য ওয়ার্ল্ডস মোস্ট ফেমাস টাইগার’ ছবিটি ৬৬তম জাতীয় ফিল্ম পুরস্কার জিতেছিল।

তার নামে একটি ফেসবুক পেজও আছে। সেখানেও তার ভক্ত সংখ্যা কম নয়। তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকটি ডকুমেন্টারি ছবি। যার মধ্যে ‘দ্য ওয়ার্ল্ডস মোস্ট ফেমাস টাইগার’ ছবিটি ৬৬তম জাতীয় ফিল্ম পুরস্কার জিতেছিল।

১৭ ১৭
বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধিতে অবদান, সাহসিকতা ও জনপ্রিয়তার জন্য রণথম্বোররে ইতিহাসে মছলীর নাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধিতে অবদান, সাহসিকতা ও জনপ্রিয়তার জন্য রণথম্বোররে ইতিহাসে মছলীর নাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE