Newlywed couple from Madhya Pradesh faces backlash in internet for Skin Colour, sparks debate dgtl
Rishabh Rajput and Shonali Chouksey
কালো বর, ফর্সা সুন্দরী কনে! চার হাত এক হতেই সমাজমাধ্যমে কটাক্ষের শিকার নবদম্পতি, হইচই ‘সরকারি চাকরি’ নিয়েও
ঋষভ এবং সোনালি মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে প্রথমে বন্ধুত্ব। পরে প্রেম। ১১ বছরের প্রেম তাঁদের। চেনেন আরও আগে থেকে। সম্পর্ক পোক্ত হওয়ায় দুই পরিবারের সম্মতিতে সম্প্রতি তাঁদের চার হাত এক হয়েছে।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৫ ১৫:২৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
১০-১১ বছরের বন্ধুত্ব-প্রেম। তার পর দুই পরিবারের মত নিয়ে বিয়ে। এমন প্রেম এবং বিয়ে যে নিয়মবহির্ভূত বা অস্বাভাবিক তেমনটা একেবারেই নয়। ভারতের বুকে আকছার পূর্ণতা পায় এমন প্রেমকাহিনি। যেমনটা পূর্ণতা পেয়েছে তরুণ যুগল ঋষভ রাজপুত এবং সোনালি চোক্সীর।
০২১৯
ইনস্টাগ্রাম এবং এক্সে ভাইরাল নবদম্পতির ছবি ও ভিডিয়োগুলিতে দেখা যাচ্ছে যে, ঋষভ এবং সোনালির বিয়েতে হইহুল্লোড় হচ্ছে। মালাবদল করছেন নবদম্পতি। ঋষভ একটি শেরওয়ানি পরেছেন। তার সঙ্গে একটি উজ্জ্বল গোলাপি পাগড়ি এবং শাল পরেছেন তিনি। সোনালি পরেছেন একটি ম্যাজেন্টা রঙের লেহঙ্গা। মনের মানুষকে বিয়ে করার আনন্দ তাঁদের চোখেমুখে ফুটে উঠেছে।
০৩১৯
ঋষভ এবং সোনালি মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে প্রথমে বন্ধুত্ব। পরে প্রেম। ১১ বছরের প্রেম তাঁদের। একে অপরকে চেনেন আরও আগে থেকে। সম্পর্ক পোক্ত হওয়ায় দুই পরিবারের সম্মতিতে সম্প্রতি তাঁদের চার হাত এক হয়েছে।
০৪১৯
এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু তাঁদের বিয়ের ছবি এবং ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে প্রকাশ্যে আসতেই বিদ্রুপের শিকার হয়েছেন তাঁরা। নেটাগরিকদের একাংশ তাঁদের নিয়ে অশ্লীল এবং চটুল মন্তব্যের বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন।
০৫১৯
কিন্তু কেন? কারণ তাঁদের গায়ের রং! সোনালি ধবধবে ফর্সা। সমাজের মানদণ্ডে যাঁদের সুন্দরী বলা হয়, সোনালি তা-ই। ঋষভ ফর্সা নন, শ্যামবর্ণ। ওই একই সমাজের মানদণ্ডে তিনি সুশ্রী নন।
০৬১৯
আর সে কারণেই কেন সুন্দরী সোনালি ‘অসুন্দর’ ঋষভকে বিয়ে করেছেন, তা এখন নেটাগরিকদের আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। দু’জনের একে অপরকে বিয়ে করার মনগড়া কারণ দিতেও শুরু করেছেন তাঁরা। যুগলের উদ্দেশে ধেয়ে এসেছে কটাক্ষের বাণ।
০৭১৯
এ সবের সূত্রপাত মধ্যপ্রদেশের ওই নবদম্পতির বিয়ের ছবি এবং ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পর থেকে। ১১ বছর ধরে একটি স্থিতিশীল বন্ধন গড়ে তোলার পর বিয়ে করেছেন তাঁরা। কিন্তু উষ্ণ অভিনন্দন পাওয়ার পরিবর্তে কঠোর, অবাঞ্ছিত এবং অযাচিত সমালোচনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাঁদের।
০৮১৯
শ্যামবর্ণ হওয়ার কারণে মূলত ঋষভকেই কটাক্ষের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আবার অনেকে সোনালির জীবনসঙ্গী পছন্দের সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
০৯১৯
নেটাগরিকদের ওই অংশের দাবি, ঋষভ এবং তাঁর পরিবারের নিশ্চয়ই অনেক টাকা। আর সে কারণেই সোনালি বিয়ে করেছেন ঋষভকে। এমনকি অনেকের অনুমান, ঋষভ নিশ্চয়ই বড় কোনও সরকারি চাকরি করেন।
১০১৯
ঋষভ-সোনালির আনন্দঘন মুহূর্তের ছবি-ভিডিয়ো দেখে এক নেটাগরিক লিখেছেন, ‘‘এই ধরনের বিয়ের পিছনে মূল কারণ কী? পাত্রী বুদ্ধিমান। তিনি জানেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রূপ না থাকলেও টাকা থাকবে। তাই শ্যামবর্ণ বরকে বিয়ে করেছে।’’
১১১৯
অন্য এক জন আবার লিখেছেন, ‘‘যখন কারও কাছে অফুরান টাকা, সরকারি চাকরি, বড় বাড়ি-গাড়ি থাকে, তখন গায়ের রং কালো হলেও সুন্দরী পাত্রী পাওয়া হাতের মোয়া।’’
১২১৯
তবে মানুষের বর্ণ, ধর্ম, জাতি নিয়ে বিচার করেন না এমন কিছু শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ ঋষভ এবং সোনালির পাশেও দাঁড়িয়েছেন। সে রকমই এক নেটাগরিক লিখেছেন, ‘‘দু’জন মানুষ প্রেমে পড়েছেন, ১১ বছর ধরে প্রেম করেছেন। তার পর বিয়ে করেছেন। এর মধ্যে টাকা, গায়ের রং আসছে কোথা থেকে! ওঁদের বন্ধন দৃঢ় হোক। সেই কামনা করুন সকলে।”
১৩১৯
ট্রোলারদের একহাত নিয়েছেন ঋষভও। তাঁদের বিয়ে নিয়ে সমাজমাধ্যমে চর্চা শুরু হতেই দীর্ঘ পোস্ট শেয়ার করেছেন তিনি।
১৪১৯
সেই পোস্টে ঋষভ জানিয়েছেন, মানুষের মতামতের তাঁর জীবনে কোনও মূল্য নেই। তিনি এবং সোনালি ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে একে অপরকে ভালবেসে বিয়ে করেছেন বলেই জানিয়েছেন তিনি।
১৫১৯
ঋষভ লিখেছেন, “২০১৪ সালে আমি প্রথম ভালবাসা বুঝেছিলাম এবং প্রকাশ করেছিলাম। আমি এখন আবেগতাড়িত। কারণ, প্রায় ১১ বছর ধরে এই মুহূর্তটির জন্য অপেক্ষা করেছিলাম আমি। কল্পনা করুন, এত দিন ধরে এই মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করা মুখের কথা নয়। কিন্তু তার পর এ সব শুনতে হচ্ছে।”
১৬১৯
ঋষভের কথায়, ‘‘কিছু মানুষকে হতাশ করার জন্য দুঃখিত, কিন্তু আমি সরকারি কর্মচারী নই। আমি আমার পরিবারের জন্য কাজ করি এবং তাদের একটি সুন্দর জীবন দিতে চাই। আমার আয় ভাল। কিন্তু যখন আমার কিছুই ছিল না তখনও ও (সোনালি) আমায় ভালবাসত এবং কলেজের দিন থেকেই আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল। আমার খুব খারাপ অবস্থাতেও আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল। তাই আপনাদের মতামত, মন্তব্য আমায় বিচলিত করে না। আমি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সোনালিকে হৃদয় দিয়ে ভালবেসেছি।’’
১৭১৯
ঋষভ আরও লিখেছেন, “আমি এই সত্য অস্বীকার করতে পারি না যে আমি শ্যামবর্ণ। আমি সারাজীবন এই ধরনের মন্তব্যের মোকাবিলা করেছি। আমি কেবল অনুরোধ করতে চাই, আমার পরিবার সম্পর্কে অযৌক্তিক কথাবার্তা বলবেন না। কালো হলেও সেরা স্বামী হতে পারব বলে আমার বিশ্বাস।’’
১৮১৯
অন্য দিকে সোনালি সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, তিনি এবং ঋষভ বহু বছর ধরে সম্পর্কে ছিলেন। তাঁদের সম্পর্কে দূরত্বও ছিল। অবশেষে তাঁরা একসঙ্গে। এতে তাঁরা যেমন খুশি, তেমনই শান্তি অনুভব করছেন।
১৯১৯
সোনালি ব্যাখ্যা করেছেন, নেটাগরিকদের কুমন্তব্য তাঁদের উপর মোটেও প্রভাব ফেলেনি। হঠাৎ চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়ায় বিরক্ত হওয়ার পরিবর্তে নেটমাধ্যমের গুঞ্জনকে হালকা ভাবেই নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন নববধূ।