Pakistan Army increases security of Lashkar e Taiba chief Hafiz Saeed’s son Talha after Operation Sindoor dgtl
Hafiz Saeed’s Son
সইফুল্লার পর কি ‘হিটলিস্টে’ লশকরের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড? ভয়ে ‘গর্তে লুকোলেন’ মোদীকে হুমকি দেওয়া হাফিজ়-পুত্র
পাকিস্তানে অজ্ঞাতপরিচয় আততায়ীর গুলিতে প্রাণ গিয়েছে লশকর-এ-ত্যায়বার অন্যতম শীর্ষ জঙ্গিনেতা সইফুল্লার। এই ঘটনার জেরে আতঙ্কিত ২৬/১১ মুম্বই হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ হাফিজ় সইদের পুত্র তাল্হা।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২৫ ১৬:২২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
‘যুদ্ধ’ থামতেই ফের রক্তাক্ত পাকিস্তান। অজ্ঞাতপরিচয় আততায়ীর হাতে খুন হল এক ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ সন্ত্রাসবাদী। নিহত রাজ়াউল্লাহ নিজ়ামনি ওরফে আবু সইফুল্লা ওরফে সইফুল্লা খালিদ ছিল লশকর-এ-ত্যায়বার অন্যতম শীর্ষনেতা। তার মৃত্যুতে ইসলামাবাদ মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠনটির অন্দরে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। এ বার তবে কার পালা? লশকর প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ় সইদ, না কি তার পুত্র তথা সেকেন্ড-ইন-কমান্ড তাল্হা?
০২১৮
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, দলের একের পর শীর্ষনেতা খুন হওয়ায় পাক ফৌজের নিরাপত্তার ঘেরাটোপে রয়েছে হাফিজ়-পুত্র তাল্হা। লাহৌরের বাড়ি থেকে তাকে গুপ্ত আস্তানায় সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে বাহিনী। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর থেকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি লশকরের এই সেকেন্ড-ইন-কমান্ডকে। এর আগে অবশ্য এক বার তাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল অজ্ঞাতপরিচয় আততায়ীরা। সে বার অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যায় তাল্হা।
০৩১৮
১৯৮৫-’৮৬ সালে জিহাদি সংগঠন লশকরের প্রতিষ্ঠা করে হাফিজ়। ছেলে তাল্হা কিছুটা বড় হওয়ার পর জঙ্গি গোষ্ঠীটির অর্থ সংগ্রহের দায়িত্ব তার উপরে দেয় রাষ্ট্রপুঞ্জের তালিকাভুক্ত এই সন্ত্রাসবাদী নেতা। ২৬/১১-র মুম্বই হামলার পর লশকরে দ্রুত উত্থান হতে থাকে হাফিজ়-পুত্রের। এই সন্ত্রাসী কার্যকলাপের ‘মাস্টারমাইন্ড’ ছিল হাফিজ়। কিছু দিনের মধ্যেই জঙ্গি গোষ্ঠীটির সেকেন্ড-ইন-কমান্ডের দায়িত্ব পায় তাল্হা।
০৪১৮
লশকরের মতো জঙ্গি গোষ্ঠী ছাড়া পাকিস্তানে হাফিজ় সইদের মিল্লি মুসলিম লিগ বা এমএমএল নামের একটি রাজনৈতিক দল রয়েছে। কিন্তু ইসলামাবাদের নির্বাচন কমিশন একে স্বীকৃতি দেয়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ছেলে তাল্হাকে ভোটের ময়দানে নামায় ২৬/১১ মুম্বই হামলার মাস্টারমাইন্ড হাফিজ়। আল্লা-হো-আকবর তেহরিক বা এএটি নামের একটি দলের প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল সে। যদিও জয়ের মুখ দেখতে পারেনি।
০৫১৮
পহেলগাঁও কাণ্ডের পর গত ৫ মে পাক পঞ্জাব প্রদেশের লাহৌরে এক জনসভায় শেষ বার দেখা যায় তাল্হাকে। সেখানে ভারতের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে এই জঙ্গিনেতা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নাম করে হুঁশিয়ারি দিতেও শোনা যায় তাকে। জেলবন্দি বাবা হাফিজ় সইদ ‘শান্তিপূর্ণ’ জীবন কাটাচ্ছে বলে জানিয়েছিল তাল্হা। তার অভিযোগ, নয়াদিল্লি নাকি লশকর প্রতিষ্ঠাতাকে খুন করতে উঠেপড়ে লেগেছে।
০৬১৮
কয়েক বছর আগে রাষ্ট্রপু়ঞ্জ হাফিজ়কে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করায় পাক সরকারের উপর চাপ বাড়ছিল। তখনই তাকে গ্রেফতার করে লাহৌরের জেলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন রাওয়ালপিন্ডির ফৌজ জেনারেলরা। ভারতীয় গোয়েন্দাদের দাবি, সেখানে বহাল তবিয়তেই দিন কাটাচ্ছে লশকরের প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমানে জঙ্গি কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দেখভাল করে তার ছেলে তাল্হা। পাক গুপ্তচর সংস্থা ‘ইন্টার সার্ভিসেস ইনটেলিজেন্স’ বা আইএসআইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে লশকরের সেকেন্ড-ইন-কমান্ডের।
০৭১৮
ভারতের ৫৭ জন ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ সন্ত্রাসীদের তালিকায় ৩২ নম্বরে নাম রয়েছে হাফিজ়-পুত্রের। ২০১৯ সালে লাহৌরে বোমা বিস্ফোরণে তাকে খুনের চেষ্টা করে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা। ওই সময় একটি দোকানের সামনে ছিল তাল্হা। কোনওমতে প্রাণে বেঁচে যায় সে। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর পাক সেনা তার নিরাপত্তা বাড়িয়েছে বলে দাবি ভারতীয় গোয়েন্দাদের। ইসলামাবাদ অবশ্য তাকে জঙ্গিনেতা হিসাবে মানতে নারাজ।
০৮১৮
গত ১৮ মে পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশে অজ্ঞাতপরিচয় আততায়ীরা গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয় লশকরের অন্যতম শীর্ষনেতা সইফুল্লার বুক। ভারতে একাধিক সন্ত্রাসী নাশকতার মূলচক্রী হিসাবে উঠে এসেছিল তার নাম। ২০০১ সালে উত্তরপ্রদেশের রামপুরে আধাসেনা বাহিনীর ছাউনি, ২০০৫ সালে বেঙ্গালুরুতে ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেস এবং ২০০৬ সালে নাগপুরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা আরএসএসের সদর দফতরে হামলায় মূল মাথা হিসাবে সইফুল্লাকে চিহ্নিত করেন তদন্তকারীরা।
০৯১৮
গোয়েন্দাদের দাবি, নাম ভাঁড়িয়ে ‘বিনোদ কুমার’ পরিচয়ে দীর্ঘ দিন নেপালে বাস করেছিল এই লশকর নেতা। সেখানে বসেই জঙ্গি কার্যকলাপ পরিচালনা করত সে। পরে পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের বাদিন জেলার মাতলিতে থাকতে শুরু করে সইফুল্লা। লশকর ছাড়াও তাদের অন্যতম শাখা সংগঠন জামাত-উদ-দাওয়ার হয়েও জঙ্গি কার্যকলাপ পরিচালনা করত এই সন্ত্রাসী।
১০১৮
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, মূলত লশকরের হয়ে অর্থ সংগ্রহ এবং নতুন জঙ্গি নিয়োগের দায়িত্ব ছিল সইফুল্লার উপর। আত্মগোপন করতে একাধিক নাম ব্যবহার করত সে। বিনোদ ছাড়াও মহম্মদ সেলিম, খালিদ, বনিয়াল, ওয়াজ়িদ, সেলিম ভাই হিসাবেও পরিচিত ছিল এই জঙ্গিনেতা।
১১১৮
সইফুল্লা খুনের কয়েক দিনের মাথায় লশকর-এ-ত্যায়বার সহ-প্রতিষ্ঠাতা আমির হামজ়ার গুরুতর আহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। তড়িঘড়ি তাকে লাহৌরের একটি সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে পাক গুপ্তচরবাহিনী আইএসআইয়ের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছে বলে জানা গিয়েছে।
১২১৮
পাকিস্তানের গণমাধ্যমগুলির একাংশের দাবি, লশকরের ম্যাগাজ়িনের সম্পাদক বছর ৬৬-র আমির নিজের বাড়িতেই জখম হয়। তবে তার উপরে প্রাণঘাতী হামলা হয়েছে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে বিষয়টি নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে। পাক পঞ্জাব প্রদেশের গুজরানওয়ালা শহরের বাসিন্দা আমির লশকরের শীর্ষনেতা হাফিজ় সইদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত।
১৩১৮
২০১২ সালের অগস্টে আমিরকে বিশ্বব্যাপী ‘সন্ত্রাসী’ বলে ঘোষণা করে আমেরিকা। হাফিজ়ের হাত ধরেই লশকরের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসে সে। লশকরের প্রচার পরিচালনা করার মূল দায়িত্ব রয়েছে তার কাঁধে। ২০০০ সালের গোড়ার দিকে ভারতে সক্রিয় ছিলেন জঙ্গি গোষ্ঠীটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা।
১৪১৮
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, সইফুল্লার সঙ্গে মিলে ২০০৫ সালে বেঙ্গালুরুর ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স’-এ হামলার নীল নকশা (ব্লু প্রিন্ট) তৈরি করেছিল আমির। ২০১৮ সালে লশকর এবং জামাত-উদ-দাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারির পরই হাফিজ়ের কথায় ‘জইশ-ই-মানকাফা’ নামে নতুন এক সংগঠন তৈরি করে আমির। সেই সময় অনেকেরই ধারণা ছিল, লশকরের মধ্যে ফাটলের কারণেই নতুন সংগঠনের আবির্ভাব, এই পদক্ষেপ ভিতর থেকে লশকরকে দুর্বল করে দেবে বলে মনে করেছিলেন অনেকে। তবে বাস্তবে তা হয়নি।
১৫১৮
গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের হামলায় প্রাণ হারান পর্যটক-সহ মোট ২৬ জন। এই ঘটনার বদলা নিতে ৭ মে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরের (পাকিস্তান অকুপায়েড জম্মু-কাশ্মীর বা পিওজেকে) ন’টি সন্ত্রাসী ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় ভারতীয় সেনা। এই অভিযানেরই পোশাকি নাম ছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’। নয়াদিল্লির এই পদক্ষেপে তীব্র হয় দুই দেশের সংঘাত।
১৬১৮
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর উত্তর এবং পশ্চিম ভারতের সীমান্তে পাল্টা প্রত্যাঘাতের চেষ্টা চালায় পাকিস্তান। ঝাঁকে ঝাঁকে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়ে এ দেশের একাধিক এলাকাকে নিশানা করে ইসলামাবাদ। সেই তালিকায় ফৌজি ছাউনির পাশাপাশি ছিল অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরও। কিন্তু, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে (এয়ার ডিফেন্স) কাজে লাগিয়ে সেগুলিকে শূন্যেই ধ্বংস করতে সক্ষম হয় ভারতীয় সেনা।
১৭১৮
ইসলামাবাদকে শিক্ষা দিতে এর পর পাকিস্তানের ১১টি বায়ুসেনা ছাউনিতে হামলা চালিয়ে সেগুলিকে প্রায় ধ্বংস করে দেয় ভারতীয় বায়ুসেনা। ওড়ানো হয় লাহৌরের এয়ার ডিফেন্স। এ ছাড়া চিনের তৈরি দু’টি জেএফ-১৭ লড়াকু জেটও হারায় পাকিস্তান। ফলে যুদ্ধবিরতির জন্য আবেদন করেন রাওয়ালপিন্ডির সেনা অফিসারেরা। ১০ মে বিকেল থেকে সেই সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়েছে কেন্দ্রের মোদী সরকার।
১৮১৮
এই পহেলগাঁও কাণ্ডকে ‘মোদীর নাটক’ বলে উল্লেখ করে লাহৌরের জনসভায় সুর চড়িয়েছিল তাল্হা। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, তার পরই হাফিজ়-পুত্রের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে পাক সেনা। ইসলামাবাদের গণমাধ্যমগুলির দাবি, ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’কে নিকেশ করতে আফগান শুটারদের কাজে লাগাচ্ছে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং বা ‘র’। তাদেরই হিটলিস্টে তাল্হার নাম রয়েছে। যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে নয়াদিল্লি।