Pakistan increases military deployment near Indian boarder after Pahalgam terror attack dgtl
Pakistan Escalation
ভারত সীমান্তে সেনা বাড়াচ্ছে পাকিস্তান, উড়িয়ে আনা হচ্ছে যুদ্ধবিমান! পহেলগাঁও কাণ্ডের পর ‘ডুয়েল বার্তা’ ইসলামাবাদের
পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলার জেরে যে কোনও মুহূর্তে ভারত যে প্রত্যাঘাত শানাবে, তা বুঝে গিয়েছে পাকিস্তান। তাই আগেভাগেই সীমান্তবর্তী ঘাঁটিগুলিতে সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধি করছে ইসলামাবাদ।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:৫৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনায় বদলার আগুনে ফুঁসছে গোটা দেশ। ধীরে ধীরে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছে ভারত। অন্য দিকে যুদ্ধের আশঙ্কায় পাল্টা প্রস্তুতি চালাচ্ছে ইসলামাবাদ। সেই লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই সীমান্ত লাগোয়া ঘাঁটিগুলিতে বাহিনীর সংখ্যা বৃদ্ধি করেছেন রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তারা। সমাজমাধ্যমে এই খবর ছড়িয়ে পড়লেও পাক ফৌজের তরফে অবশ্য এই নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
০২২০
সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় ইসলামাবাদের সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধির প্রমাণ মিলেছে বিমান ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ‘ফ্লাইটরাডার২৪’-এর স্ক্রিনশট থেকে। এক্স হ্যান্ডলে সেগুলিকে ছড়িয়ে দেন নেটাগরিকদের একাংশ। ওই স্ক্রিনশট অনুযায়ী, পহেলগাঁও কাণ্ডের পর দক্ষিণের করাচি বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে একের পর এক বিমান উত্তরের লাহোর এবং রাওয়ালপিন্ডির কাছে মোতায়েন করেছে ইসলামাবাদ। এর সত্যতা অবশ্য যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম।
০৩২০
উল্লেখ্য, করাচির ‘সাউথ এয়ার কমান্ড’ থেকেই গোটা দক্ষিণাঞ্চলের যাবতীয় অপারেশন পরিচালনা করে পাক বিমানবাহিনী। উত্তরাঞ্চলে ভারতের সীমান্তের কাছে ইসলামাবাদের মোট চারটি বায়ুসেনা ছাউনি রয়েছে। সেগুলি হল, লাহোর সংলগ্ন সারগোধা ও মুরিদ এবং রাওয়ালপিন্ডি সংলগ্ন চাকলালা ও নুর খান। এই ঘাঁটিগুলিকে পাক বায়ুসেনার শিরদাঁড়া বলে মনে করেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা।
০৪২০
সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া খবর অনুযায়ী, পিএএফ১৯৮ এবং লকহিড সি-১৩০ই হারকিউলিস নামের পরিবহণ বিমান দক্ষিণের ঘাঁটি থেকে উত্তরে নিয়ে গিয়েছেন রাওয়ালপিন্ডি ফৌজি জেনারেলরা। এ ছাড়া পিএএফ১০১ ও এমব্রায়ের ফেনম ১০০ নামের ছোট জেট বিমানও সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে। শেষেরটি মূলত ভিআইপি পরিবহণ এবং নজরদারির জন্য ব্যবহার করে ইসলামাবাদ।
০৫২০
উল্লেখ্য, পাক বিমানবাহিনীর ভারত লাগোয়া ছাউনিগুলির মধ্যে লাহোর সংলগ্ন মুরিদে আবার মোতায়েন রয়েছে নজরদারি এবং হামলাকারী ড্রোন। কয়েক বছর আগে তুরস্কের থেকে বের্যাক্টার টিবি-২ নামের মানববিহীন উডুক্কু যান কেনে ইসলামাবাদ। সেগুলির প্রায় সব ক’টি ওই ঘাঁটিতে মোতায়েন রয়েছে বলে সূত্র মারফত মিলেছে খবর। ২০২০ সালে আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে আজারবাইজ়ানের জয়ের নেপথ্যে বড় ভূমিকা নিয়েছিল এই ড্রোন।
০৬২০
বায়ুসেনা ঘাঁটির পাশাপাশি জম্মু-কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় (লাইন অফ কন্ট্রোল বা এলওসি) উচ্চ সতর্কতা জারি করেছে পাক ফৌজ। সেখানকার বাঙ্কারগুলিতেও সেনাসংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে সূত্র মারফত খবর মিলেছে। বিশ্লেষকদের দাবি, ভারতের সঙ্গে সম্মুখসমরে যেতে যে ইসালামাবাদ প্রস্তুত, এই সমস্ত পদক্ষেপেই রয়েছে তাঁর ইঙ্গিত।
০৭২০
বিশ্লেষকদের দাবি, ২০১৯ সালের মতো ভারতীয় বিমানবাহিনী প্রত্যাঘাত শানাবে বলে একরকম ধরেই নিয়েছে পাকিস্তানের সেনা। সেই জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে রাখছে তারা। পাশাপাশি, ছায়া-যুদ্ধ বজায় রাখতে ক্রমাগত চলছে জঙ্গিদের মদত দেওয়ার কাজ। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৪২টি ‘লঞ্চ প্যাডে’ অনুপ্রবেশের অপেক্ষা করছে অন্তত ১১৫ জন সন্ত্রাসী।
০৮২০
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ৭৭৮ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে বিভিন্ন শিবিরে শতাধিক প্রশিক্ষিত জঙ্গির পাশাপাশি লশকর-এ-ত্যায়বা, জইশ-ই-মহম্মদ, হিজবুল মুজাহিদিন, ‘দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)-সহ বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদীর গোষ্ঠীর কয়েক জন প্রথম সারির কমান্ডারও রয়েছে। জম্মু-কাশ্মীর উপত্যকার সক্রিয় ‘হ্যান্ডলার’দের সঙ্গেও তাদের ধারাবাহিক যোগাযোগ রয়েছে।
০৯২০
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার পর ২৩ তারিখ মধ্যরাতেই ইসলামাবাদের শীর্ষ কূটনীতিক সাদ আহমেদ ওয়ারাইচকে তলব করে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। ইতিমধ্যেই নয়াদিল্লির পাক দূতাবাসে থাকা পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা, নৌ উপদেষ্টা, বায়ু উপদেষ্টাকে ‘অবাঞ্ছিত’ (পার্সোনা নন গ্রাটা) ঘোষণা করেছে ভারত। এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের ভারত ছাড়তে বলা হয়েছে।
১০২০
২৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বাসভবনে জরুরি বৈঠক করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটি (সিসিএস)। পরে রাত ৯টা নাগাদ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেন বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রী। যত দিন না পাকিস্তান আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসের প্রতি তার সমর্থন প্রত্যাহার করছে, তত দিন সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি।
১১২০
এ ছাড়া অটারী-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করেছে ভারত। উপযুক্ত নথিপত্র নিয়ে যাঁরা এই সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে প্রবেশ করেছেন, তাঁদের ১ মে-র মধ্যে পাকিস্তানে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ‘সার্ক ভিসা অব্যাহতি প্রকল্প’ (এসভিইএস)-এর অধীনে কোনও পাক নাগরিককে আর এ দেশে প্রবেশাধিকার দেবে না নয়াদিল্লি। অতীতে এই ভিসায় যাঁদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছিল, বর্তমানে তা-ও বাতিল করা হয়েছে।
১২২০
‘সার্ক ভিসা অব্যাহতি প্রকল্প’ ভিসা প্রকল্পের অধীনে যে সমস্ত পাকিস্তানি এখন ভারতে আছেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে। ইসলামাবাদে ভারতীয় দূতাবাসের সদস্যসংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি।
১৩২০
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে উরির সেনাশিবিরে হামলা চালায় জইশ জঙ্গিদের একটি দল। তাতে ১৯ জন সৈনিকের মৃত্যু হয়। জবাবে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ভিমবার, হটস্প্রিং, লিপা এবং কেল সেক্টরের বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসীদের লঞ্চ প্যাডে অভিযান চালিয়েছিলেন ভারতীয় সেনার ‘প্যারা এসএফ’ কমান্ডোরা।
১৪২০
২০১৯ সালে পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে মানববোমা হামলা চালায় জইশ-ই-মহম্মদ। তাতে ৪০ জন জওয়ানের প্রাণ গিয়েছিল। এ বার পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বালাকোটে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ শিবির উড়িয়ে দেয় ভারতীয় বায়ুসেনা। পরবর্তী সময়ে টংধর, নীলম উপত্যকা, কেরান সেক্টরেও এলওসি পেরিয়ে কয়েকটি সন্ত্রাসী শিবির ধ্বংস করে ভারতীয় ফৌজ।
১৫২০
বালাকোটে ভারতীয় বিমানবাহিনীর ‘এয়ারস্ট্রাইক’-এর পর চুপ করে বসে থাকেনি পাকিস্তান। আমেরিকার তৈরি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান নিয়ে ভারতের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করে ইসলামাবাদের বায়ুসেনা। তৎপর ছিল ভারতীয় বায়ুসেনাও। ওই সময় পাক এফ-১৬কে গুলি করে নামান উইং কমান্ডার পদের অফিসার অভিনন্দন বর্তমান।
১৬২০
কিন্তু, এফ-১৬কে তাড়া করতে গিয়ে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে পড়ে অভিনন্দনের মিগ-২১ বাইসন। মাঝ-আকাশের লড়াইয়ে ভারতীয় যুদ্ধবিমানটিও সেখানে ভেঙে পড়ে। তবে আগেই ককপিট থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে যান অভিনন্দন। তাঁকে বন্দি করে ইসলামাবাদ। পরে নয়াদিল্লির চাপে ভারতীয় যোদ্ধা পাইলটকে ছাড়তে বাধ্য হয় তৎকালীন পাক সরকার।
১৭২০
বিশ্লেষকদের দাবি, এ বার ভারত প্রত্যাঘাত শানালে পাক বায়ুসেনার পক্ষে জবাব দেওয়া বেশ কঠিন হবে। কারণ, এফ-১৬ নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে ইসলামাবাদের একটি বিশেষ চুক্তি রয়েছে। কোনও অবস্থাতেই যুদ্ধবিমানগুলির ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হোক তা চায় না ওয়াশিংটন। সে ব্যাপারে কয়েক দিন আগেই পাক সরকারকে সতর্ক করেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন।
১৮২০
পহেলগাঁওয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত চার জঙ্গিকে শনাক্ত করেছে ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলি। ইতিমধ্যে চার জনের ছবিও প্রকাশ করে পরিচয় জানানো হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, চার জঙ্গি হল— আদিল, আসিফ ফুজি, সুলেমান শাহ এবং আবু তালহা। গোয়েন্দা সূত্রে দাবি, হামলাকারীরা সংখ্যায় ছিল পাঁচ-ছ’জন। সকলের মুখে ছিল মাস্ক। হাতে একে ৪৭-এর মতো রাইফেল।
১৯২০
গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় পর্যটকদের উপর হামলা চালায় টিআরএফ। এতে বাংলার তিন পর্যটক-সহ প্রাণ গিয়েছে মোট ২৬ জনের। পহেলগাঁওয়ের হত্যালীলায় জড়িত জঙ্গিদের খোঁজ পেতে পুরস্কার ঘোষণা করেছে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ। অনন্তনাগ পুলিশ বিভাগ জানিয়েছে, জঙ্গিনিধন অভিযানে সাহায্য হওয়ার মতো কোনও তথ্য দিয়ে কেউ সহায়তা করলে তাঁকে ২০ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।
২০২০
পহেলগাঁও কাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী লশকর-এ-ত্যায়বার ছায়া সংগঠন ‘দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)। এই ঘটনার পর বড় রকমের প্রত্যাঘাতের দায়িত্ব পুরোপুরি সেনাবাহিনীর কাঁধে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এ ব্যাপারে বিবৃতি দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহও। তবে কখন এবং কী ভাবে পাকিস্তানের উপর ভারত বদলা নেবে, তার উত্তর দেবে সময়।