Pakistan’s military drone manufacturing faced obstacle as Taiwan denies to help Islamabad dgtl
Taiwan on Pakistan Drone
আত্মঘাতী ড্রোন বানাতে ড্রাগন-শত্রুর দরজায়! পাকিস্তানকে মুখের উপর ‘না’ বলল ভারতের ‘বন্ধু দ্বীপদেশ’
আত্মঘাতী ড্রোন নির্মাণে গতি আনতে তাইওয়ানের একটি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে পাকিস্তানের করাচির প্রতিরক্ষা সংস্থা। কিন্তু, ইসলামাবাদের প্রস্তাবে সটান ‘না’ বলে দিয়েছে ভারতের পাশে থাকা প্রশান্ত মহাসাগরীয় ওই দ্বীপরাষ্ট্র।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২৫ ১২:৩৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
আতঙ্কের নাম ভারতের হাতে থাকা ড্রোন! সাম্প্রতিক সংঘর্ষে যার আঘাতে থরহরি কম্প পাকিস্তান! নয়াদিল্লির মানববিহীন উড়ুক্কু যান উড়িয়ে দিয়েছে লাহৌরের ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’। নিঁখুত নিশানায় হামলা চালিয়ে মারাত্মক ক্ষতি করেছে পাক বায়ুসেনার একাধিক ঘাঁটির। ফলে আগামী দিনে ভারতকে চ্যালেঞ্জ জানাতে অত্যাধুনিক ড্রোন তৈরিতে মরিয়া ইসলামাবাদ। কিন্তু, সেই কাজে গোড়াতেই শাহবাজ় শরিফের সরকারকে ধাক্কা দিল প্রশান্ত মহাসাগরের ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র।
০২২০
সম্প্রতি, ইসলামবাদের সৈন্যবাহিনীর জন্য হামলাকারী ড্রোন নির্মাণের কাজে গতি আনার চেষ্টা করে দক্ষিণ পাকিস্তানের বন্দর শহর করাচির একটি সংস্থা। এর জন্য তাইওয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা। প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রটির একাধিক সংস্থা ভারতে ড্রোন সরবরাহ করে। কিন্তু, পাকিস্তানকে এ ব্যাপারে কোনও সাহায্য করা হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে তারা। এর জন্য ইসলামাবাদের ‘চিন-প্রেম’কেই দায়ী করেছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা।
০৩২০
উত্তর-পূর্ব তাইওয়ানের বন্দর শহর কিলুং সিটিতে রয়েছে ‘ড্রোন্সভিশন’ নামের একটি সংস্থা। সামরিক উড়ুক্কু যান তৈরিতে তাদের দুনিয়াজোড়া খ্যাতি রয়েছে। সংস্থাটির তৈরি জনপ্রিয় পণ্যের নাম ‘রিভলভার ৮৬০’। এই আত্মঘাতী ড্রোন গত তিন বছর ধরে চলা রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে বহুল পরিমাণে ব্যবহার করেছে ইউক্রেনীয় সেনা। শুধু তা-ই নয়, একাধিক রণাঙ্গনে মস্কো ফৌজের গোলাবারুদের ডিপো উড়িয়ে দিয়ে বার বার খবরের শিরোনামে এসেছে ‘রিভলভার ৮৬০’।
০৪২০
এ হেন ‘ড্রোন্সভিশন’-এর সঙ্গে কিছু দিন আগে যোগাযোগ করে করাচির সংস্থা ইউনিভার্সাল স্মার্ট মিলিটারি সিস্টেমস বা ইউএসএমএস। সংশ্লিষ্ট প্রতিরক্ষা কোম্পানির শীর্ষপদে রয়েছেন আমান জালাল খান। কিন্তু, তাইওয়ানের সংস্থাটি তাদের পত্রপাঠ না বলে দেওয়ায় খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে করাচির সংস্থাকে। উল্লেখ্য, ইউনিভার্সাল স্মার্ট মিলিটারিতে পাক ফৌজের বড় অঙ্কের অংশীদারি রয়েছে।
০৫২০
দ্য সানডে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘রিভলভার ৮৬০’ সামরিক ড্রোনের প্রযুক্তি তাইওয়ানের সংস্থার কাছে চায় পাকিস্তানের ওই প্রতিরক্ষা কোম্পানি। ‘ড্রোন্সভিশন’ প্রথমেই এতে না বলে দিলেও হাল ছাড়েনি ইসলামাবাদ। তাদের যৌথ ভাবে ড্রোন উৎপাদনের জন্য ‘লোভ দেখান’ রাওয়ালপিন্ডির ফৌজি জেনারেলরা। কিন্তু, তাতেও সাড়া না মেলায় শেষ পর্যন্ত হতাশ হতে হয়েছে তাঁদের।
০৬২০
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, পাক ফৌজের ‘রিভলভার ৮৬০’ হাতে পাওয়ার ইচ্ছার নেপথ্যে একাধিক কারণ রয়েছে। ছোট্ট এই উড়ুক্কু যানের ধ্বংসক্ষমতা মারাত্মক। ৬০ মিলিমিটারের মোট আটটি মর্টারের গোলা নিয়ে উড়তে পারে এই ড্রোন। ৪২ কেজি বিস্ফোরক বহনের ক্ষমতা রয়েছে সংশ্লিষ্ট উড়ুক্কু যানটির। ২০ থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যে শত্রুঘাঁটিতে উড়ে গিয়ে নিখুঁত নিশানায় আত্মঘাতী হামলা চালাতে পারে ‘রিভলভার ৮৬০’।
০৭২০
এ হেন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রোন হাতে পেলে পাক সেনাবাহিনীর শক্তি যে অনেকটাই বৃদ্ধি পেত, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু, বর্তমানে হাতিয়ারের ব্যাপারে প্রায় পুরোপুরি চিনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে ইসলামাবাদ। ভারত-বিরোধিতার স্বার্থেই বেজিঙের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত রেখেছেন রাওয়ালপিন্ডির সেনা অফিসারেরা। অন্য দিকে, ড্রাগনের ‘দৌরাত্ম্যে’ দিন দিন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে তাইওয়ান। বিশ্লেষকদের দাবি, সেই কারণেই এ ব্যাপারে করাচির সংস্থাটিকে ‘না’ বলতে দু’বার ভাবেনি প্রশান্ত মহাসাগরীয় ওই দ্বীপরাষ্ট্র।
০৮২০
দীর্ঘ দিন ধরেই তাইওয়ানকে পৃথক রাষ্ট্র বলে মানতে নারাজ চিন। বেজিঙের দাবি, সাবেক ফরমোজ়া দ্বীপটি তাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। গত কয়েক বছরে বেশ কয়েক বার দ্বীপটিকে কব্জা করার হুমকি দিয়েছেন ড্রাগন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। মহড়ার নামে রণতরী দিয়ে তাইওয়ানকে ঘিরে ধরে আগ্রাসী মনোভাব দেখিয়েছে তাঁর ‘পিপল্স লিবারেশন আর্মি’ বা পিএলএ নৌসেনা। ফলে ধীরে ধীরে নয়াদিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার রাস্তায় হেঁটেছে তাইপে।
০৯২০
‘অপারেশন সিঁদুর’কে ঘিরে চার দিনের ‘যুদ্ধে’ পাকিস্তানকে সরাসরি সাহায্য করেছে চিন। বেজিঙের এই মনোভাব কারও অজানা নয়। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সেটা মাথায় রেখেই পাক প্রতিরক্ষা সংস্থাকে মুখের উপর ‘না’ বলে দিয়েছে দ্বীপরাষ্ট্রটির কোম্পানি। কারণ, তাইওয়ান খুব ভাল করেই জানে ইসলামাবাদকে সাহায্য করলে বকলমে চিনের হাত শক্ত হবে। অন্য দিকে ভারতের মতো নির্ভরযোগ্য ‘বন্ধু’কে হারাবে তারা।
১০২০
এই ইস্যুতে অবশ্য ‘দ্য সানডে গার্ডিয়ান’কে বিবৃতি দিয়েছে তাইনিজ় ‘ড্রোন্সভিশন’। সেখানে বলা হয়েছে, ‘‘আমাদের সমস্ত পণ্য তাইপে সরকার দ্বারা কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রিত। উচ্চ প্রযুক্তির কোনও সামগ্রী বিদেশে বিক্রির ক্ষেত্রে আমরা সরকারি অনুমতি নিয়ে থাকি। এ ক্ষেত্রে ভূরাজনৈতিক সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলি মেনে সংবেদনশীল পণ্য রফতানি করা হয়। সেই কারণেই পাক প্রতিরক্ষা সংস্থার অনুরোধ মানা সম্ভব হয়নি।’’
১১২০
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে ড্রোনের বহর বৃদ্ধি করছে ইসলামাবাদ। গত আড়াই দশকে এর জন্য ৫০ কোটি ডলার খরচ করতে পিছপা হয়নি পাক সরকার। ফলে চিনের তৈরি উইং লুং টু এবং সিএইচ-৪র মতো মানববিহীন যান হাতে পেয়েছেন রাওয়ালপিন্ডির ফৌজি জেনারেলরা। এর জন্য খরচ হয়েছে ১৩ থেকে ২৬ কোটি ডলার। এ ছাড়া তুরস্কের তৈরি বের্যাক্টার টিবি-২র মতো অতিশক্তিশালী ড্রোনও রয়েছে তাঁদের বহরে।
১২২০
বর্তমানে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে দু’টি ড্রোন তৈরির দিকে নজর দিয়েছে পাকিস্তান। সেগুলি হল শাহপার-২ এবং বুরাক। এর জন্য প্রাথমিক ভাবে চার কোটি ডলার বরাদ্দ করেছে শাহবাজ় শরিফ সরকার। কিন্তু, সামরিক মানববিহীন যানের জটিল প্রযুক্তি নির্মাণে সে ভাবে সাফল্য না-পাওয়ায় তাইওয়ানের সাহায্য চেয়েছিল ইসলামাবাদ।
১৩২০
গত ৮ মে ভারতীয় বিমানবাহিনীর জম্মু-কাশ্মীর, পঞ্জাব, রাজস্থান এবং গুজরাতের একাধিক ঘাঁটিকে নিশানা করে পাক সেনা। ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র এবং যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে সেগুলিকে ধ্বংস করার ছক ছিল ইসলামাবাদের। কিন্তু ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’কে (এয়ার ডিফেন্স) কাজে লাগিয়ে সেই আক্রমণ প্রতিহত করে নয়াদিল্লি। এর পরই পাল্টা প্রতি আক্রমণ শানায় ভারতীয় ফৌজ।
১৪২০
ওই সময়ে পাকিস্তানকে মুখের মতো জবাব দিতে লাহৌরে ড্রোন হামলা করে ভারতীয় সেনা। আর তাতেই ধ্বংস হয় সেখানকার ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’। সূত্রের খবর, লাহৌরে চিনের তৈরি এইচকিউ-৯পি নামের এয়ার ডিফেন্স মোতায়েন রেখেছিল পাক ফৌজ। ইজ়রায়েলের তৈরি ‘হারোপ’ আত্মঘাতী ড্রোন দিয়ে নয়াদিল্লি তা উড়িয়ে দিয়েছে বলে স্বীকার করে নিয়েছে ইসলামাবাদ।
১৫২০
এই ‘হারোপ’-এর নির্মাণকারী সংস্থা হল ‘ইজ়রায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ়’। কৌশলগত হাতিয়ার হিসাবে এর ব্যাপক ব্যবহার করে থাকে ইহুদি ফৌজ। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে মানববিহীন এই আত্মঘাতী উড়ুক্কু যানটিকে বহরে শামিল করার কথা ঘোষণা করে ভারতীয় বায়ুসেনা। এর জন্য ১০ কোটি ডলার খরচ করেছিল কেন্দ্র। চুক্তি অনুযায়ী, প্রথমে মাত্র ১০টি ‘হারোপ’ ড্রোন সরবরাহ করে ইজ়রায়েল।
১৬২০
কিন্তু, পরবর্তী কালে আত্মঘাতী ড্রোনের বহর বাড়াতে থাকে ভারতীয় বাহিনী। সূত্রের খবর, ২০২০ সালের মধ্যে ফৌজের অস্ত্রাগারে ইজ়রায়েলি ‘হারোপ’-এর সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যায়। হামলার সময়ে কয়েকশো কিলোমিটার দূরে বসেও একে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আবার নিজে থেকে উড়ে গিয়ে আক্রমণ করার ক্ষমতাও রয়েছে ইজ়রায়েলি ‘হারোপ’-এর।
১৭২০
ইহুদিদের তৈরি এই আত্মঘাতী ড্রোনটির দু’টি সুবিধা হয়েছে। এটি একাধারে ছোটখাটো একটি ক্ষেপণাস্ত্র। আবার এর সাহায্য অন্যান্য মানববিহীন ড্রোনের মতো নজরদারি চালানো সম্ভব। মূলত, ট্র্যাঙ্ক, রেডার স্টেশন, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মতো উচ্চ মূল্যের সামরিক লক্ষ্যবস্তুকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যেই এগুলিকে তৈরি করা হয়েছে। আবার লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত না করলে সংশ্লিষ্ট ড্রোনটিকে ঘাঁটিতে ফিরিয়ে আনতে পারে সেনা।
১৮২০
তবে শুধুমাত্র লাহৌরের ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’কে ধ্বংস করতে ভারতীয় সেনা ড্রোন হামলা চালিয়েছে, এমনটা নয়। সূত্রের খবর, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়ে ‘স্কাই স্ট্রাইকার’ নামের আত্মঘাতী মানববিহীন উড়ুক্কু যানকে আসরে নামায় নয়াদিল্লি। ফলে দেশীয় সংস্থার তৈরি এই ড্রোনের রণক্ষেত্রে হাতেখড়ি হয়েছে, এ কথা বলাই যায়।
১৯২০
‘স্কাই স্ট্রাইকার’-এর নির্মাণকারী কোম্পানি আলফা ডিজ়াইনের সদর দফতর বেঙ্গালুরুতে। ইজ়রায়েলের এলবিট সিকিউরিটি সিস্টেমের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এটি তৈরি করেছে তারা। ২০২১ সালে জরুরি ভিত্তিতে ১০০টি ‘স্কাই স্ট্রাইকার’ কেনে ভারতীয় সেনা। ১০০ কিলোমিটার উড়ে গিয়ে নিখুঁত নিশানায় হামলা চালাতে পারে এই ড্রোন। এতে পাঁচ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত বিস্ফোরক থাকতে পারে বলে জানা গিয়েছে।
২০২০
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা সংস্থা পাকিস্তানকে ড্রোন নির্মাণে সাহায্য না করায় আখেরে লাভই হয়েছে ভারতের। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রটির সঙ্গে ধীরে ধীরে সম্পর্ক আরও মজবুত করার রাস্তায় হাঁটছে নয়াদিল্লি। ভবিষ্যতে তাইপের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সামরিক ড্রোন তৈরির রাস্তায় হাঁটতে পারে নয়াদিল্লি। অন্য দিকে, মানববিহীন যানের প্রযুক্তি নির্মাণে ইসলামাবাদকে আরও কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা।