Pakistan’s military intelligence agency ISI allegedly helping to form Lashkar-ISIS alliance, claims report dgtl
Pakistan
বিদ্রোহীদের দমন করতে দুই জঙ্গি সংগঠনকে নিয়ে জোট গড়ছে ইসলামাবাদ! পরিকল্পনা কাশ্মীরকে অশান্ত করারও?
মনে করা হচ্ছে, ‘কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে’ অর্থাৎ, বিএলএ এবং টিটিপি-কে শিক্ষা দিতে এ বার আইসিস-লশকরকে নিয়ে জোট করতে চাইছে পাকিস্তান। আর দুই সন্ত্রাসী সংগঠনকে সঙ্ঘবদ্ধ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আইএসআই-কে।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:৪৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৫
জোট বাঁধছে আফগানিস্তানে সক্রিয় সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট-খোরাসান প্রোভিয়েন্স (আইএসকেপি) এবং লশকর-এ-ত্যায়বা। আর তাদের হাত শক্ত করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে খোদ পাক সামরিক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রকে উদ্ধৃত করে তেমনটাই দাবি করা হয়েছে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে।
০২২৫
বালোচিস্তান এবং খাইবার পাখতুনখোয়ায় সক্রিয় বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) এবং তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) বিদ্রোহীদের ধারাবাহিক হামলায় বিপর্যস্ত ইসলামাবাদ।
০৩২৫
মনে করা হচ্ছে, ‘কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে’, অর্থাৎ বিএলএ এবং টিটিপি-কে শিক্ষা দিতে এ বার আইসিস-লশকর জোট চাইছে পাকিস্তান। আর দুই সন্ত্রাসী সংগঠনকে সঙ্ঘবদ্ধ করার সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আইএসআই-কে।
০৪২৫
পাক সামরিক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই ইতিমধ্যেই আইএসকেপি এবং লশকরের মধ্যে সমঝোতা গড়ে তুলে বালোচ এবং টিটিপির মোকাবিলায় সক্রিয় হয়েছে বলেও বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
০৫২৫
সূত্রের খবর, আইসিস-লশকরকে শুধু জোটবদ্ধ করা নয়, তাদের পরিচালনা করা এবং তাদের জঙ্গিমূলক অভিযানের অর্থায়নের দায়িত্বও নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই।
০৬২৫
আর সেই তথ্য প্রকাশ্যে আসার পরেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জঙ্গিদের মদত দেওয়ার এবং রাষ্ট্রীয় কৌশলের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহারের যে অভিযোগ দীর্ঘ দিন ধরে উঠছে, তা নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি এ বার জঙ্গিদের মদতে বালোচ বিদ্রোহীদের শায়েস্তা করতে তৎপর হয়েছে ইসলামাবাদ?
০৭২৫
২০২১-এর ১৫ অগস্ট আনুষ্ঠানিক ভাবে কাবুল পুনর্দখল করে তালিবান। আফগানিস্তানে দ্বিতীয় বার তালিবানি শাসন কায়েম হওয়ার পরেই সে দেশ থেকে পাততাড়ি গুটোতে শুরু করে আমেরিকা। সর্বশেষ বিমানটি কাবুল বিমানবন্দর ছাড়ে ২০২১-এর অগস্টের শেষ পর্বে।
০৮২৫
সেই সময়েই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেদের শক্তির পরিচয় দিয়েছিল পশ্চিম এশিয়ার জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর আফগান শাখা আইএসকেপি। জাতি এবং বর্ণগত ভাবে বহু দিক থেকে বিভক্ত আফগানভূমে আইএসকেপি (এলাকার পুরনো নাম খোরাসান থেকে) বরাবরই তালিবানবিরোধী।
০৯২৫
আফগান তালিবান বাহিনী ধারাবাহিক ভাবে অভিযান চালাচ্ছে আইএসকে-র বিরুদ্ধে। ঘটনাচক্রে, কাবুলের ক্ষমতা দখলের পরে গত সাড়ে চার বছরে তালিবানের সঙ্গে ইসলামাবাদের সম্পর্কেরও অনেকটাই অবনতি হয়েছে।
১০২৫
পাক-ঘনিষ্ঠ হক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান তথা আফগান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজ়উদ্দিন হক্কানি ক্ষমতার দ্বন্দ্বে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। উল্টো দিকে প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ হাসান আখুন্দ, উপপ্রধানমন্ত্রী আব্দুল গনি বরাদরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে নয়াদিল্লির।
১১২৫
এর মধ্যেই একাধিক প্রতিবেদনে দাবি, এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান চাইছে লশকরের সঙ্গে আইএসকেপি-র সমঝোতার পথ প্রশস্ত করে আগামী দিনে বালোচ, টিটিপি-র মোকাবিলার অভিঘাত বাড়াতে।
১২২৫
গত কয়েক মাসে কাচ্চি বোলানে ট্রেন ছিনতাই, কোয়েটায় আধাসেনা ফ্রন্টিয়ার কোরের গাড়িতে আইইডি বিস্ফোরণ, নোশকিকে সেনা কনভয়ে আত্মঘাতী হামলার মতো নতুন কৌশলে হানাদারি চালিয়েছে বিএলএ। তাদের ফিদায়েঁ বাহিনী মজিদ ব্রিগেডই এই হামলাগুলি চালাচ্ছে বলে সেনার দাবি।
১৩২৫
ঘটনাচক্রে, মার্চ মাসের গোড়াতেই অন্য দুই সশস্ত্র বালোচ গোষ্ঠী, বালোচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট (বিএলএফ) ও বালোচ রিপাবলিকান গার্ডস (বিআরজি) এবং সিন্ধুপ্রদেশে সক্রিয় বিদ্রোহী সংগঠন ‘সিন্ধুদেশ রেভলিউশনারি আর্মি’র (এসআরএ) সঙ্গে হাত মিলিয়ে নতুন যৌথমঞ্চ গড়েছে বিএলএ। ইসলামাবাদের অভিযোগ, ভারতের তৎপরতাতেই একজোট হচ্ছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলি।
১৪২৫
অন্য দিকে, প্রায় দেড় দশক ধরে পাক সেনার বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে টিটিপি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তাদের সঙ্গে পাক সরকারের শান্তিবৈঠক ভেস্তে গিয়েছিল। তার পর থেকেই অশান্ত খাইবার পাখতুনখোয়া। ধারাবাহিক ভাবে অভিযান চালিয়েও স্বাধীন পাশতুনিস্তানপন্থী এই সশস্ত্র বাহিনীকে বাগে আনতে পারেনি ইসলামাবাদ।
১৫২৫
উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের কুররম জেলায় আফগান সীমান্তে বুধবারও টিটিপির হানায় এক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এবং এক মেজর-সহ ১১ পাক সেনা নিহত হয়েছেন। আফগানিস্তানের শাসক তালিবানের একাংশ থেকে টিটিপি মদত পাচ্ছে বলে পাক সেনার অভিযোগ।
১৬২৫
বস্তুত, গত ডিসেম্বরে আফগানিস্তানের মাটিতে বিমানহানাও চালিয়েছিল পাক বায়ুসেনা, যা নিয়ে কাবুল-ইসলামাবাদ টানাপড়েন তৈরি হয়েছিল। পাকিস্তানের সরকার এবং সেনা টিটিপি-কে ‘ফিতনা অল খোয়ারিজ়’ এবং বালোচ বিদ্রোহীদের ‘ফিতনা অল হিন্দুস্থান’ নামে চিহ্নিত করে।
১৭২৫
সেই বিদ্রোহীদের দমন করতেই ইসলামাবাদ এ বার জঙ্গিদের সাহায্য নিচ্ছে বলে খবর উঠে এসেছে। আইএসকেপি এবং লশকর ঘনিষ্ঠতা যে বেড়েছে তার প্রমাণ পোক্ত করতে একটি ছবিও সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে।
১৮২৫
ওই ছবিতে আইএসকেপি নেতা মির শফিক মেঙ্গলের সঙ্গে লশকর কমান্ডার তথা তাদের ‘নাজ়িম-ই-আলা’ রানা মহম্মদ আশফাককে একসঙ্গে দেখা গিয়েছে। ছবিতে দেখা গিয়েছে, ‘বন্ধুত্বের প্রতীক’ হিসাবে মেঙ্গল একটি পিস্তল উপহার দিচ্ছেন রানাকে। উত্তর বালোচিস্তানে আইএসআই-এর তত্ত্বাবধানে তাঁদের দু’জনের বৈঠক হয়েছে বলে প্রকাশিত খবরে দাবি।
১৯২৫
আইএসকেপি নেতা মির শফিক মেঙ্গল বালোচিস্তানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নাসির মেঙ্গলের ছেলে। দীর্ঘ দিন ধরে আইএসআই-এর অন্যতম ‘সম্পদ’ তিনি। বালোচিস্তানকে জাতীয়তাবাদীদের রাস্তা থেকে সরাতে একটি ব্যক্তিগত ‘ডেথ স্কোয়াড’-এর পরিচালনার দায়িত্বেও তিনি রয়েছেন বলে শোনা যায়।
২০২৫
২০১৫ সাল থেকে আইএসকেপির মূল সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করে আসছেন মির। আইএসকেপি-কে অর্থ ও অস্ত্র জোগান দেওয়া এবং জঙ্গিদের নিরাপদ আশ্রয় দেওয়ার দায়িত্বেও রয়েছেন তিনি। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের যৌথ তদন্ত দলের (জেআইটি) প্রতিবেদনে তার নাম উঠে আসে।
২১২৫
এ-ও শোনা যায়, আইএসআইয়ের মদতেই মাস্তুং এবং খুজ়দারে আইএসকেপি ঘাঁটি তৈরি করেছিলেন মেঙ্গল। ঘাঁটিগুলি বালোচ বিদ্রোহীদের দমন করতে এবং আফগানিস্তানে সীমান্ত পার করে আক্রমণ চালানোর জন্য ব্যবহৃত হত।
২২২৫
মাঝখানে আইএসকেপির দাপট কমেছিল। কিন্তু কাবুলে দ্বিতীয় বার তালিবানি ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার পর বালোচিস্তানে আইএসকেপির কাঠামো পুনর্গঠন করেছে আইএসআই। সম্প্রতি লশকরের সঙ্গে তাদের জোট বাঁধতেও সাহায্য করছে।
২৩২৫
তবে ইসলামাবাদের মদতে আইএসকেপি-লশকর জোট বাঁধলে বিপদ হতে পারে ভারতের। জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাস বাড়তে পারে। অন্তত তেমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
২৪২৫
বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন লশকর-আইএসকেপির জোট বালোচিস্তান এবং আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা নষ্ট করার পাশাপাশি কাশ্মীরে জঙ্গি কর্মকাণ্ডের পালে হাওয়া দিতে পারে। আইএসকেপির প্রচারণামূলক পত্রিকা ‘ইয়ালগার’-এও নাকি সেই ইঙ্গিত রয়েছে।
২৫২৫
‘ইয়ালগার’-এর সাম্প্রতিক সংস্করণগুলিতে নাকি কাশ্মীরে অভিযান সম্প্রসারণের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে আইএসকেপি। ফলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞেরা। পুরো বিষয়টিকে দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা নষ্ট করার জন্য পাকিস্তানের পরিকল্পিত ‘নোংরামি’ বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।