Secret Relationship, Emotional post, Breakup, and Mental Health Moments of Babil Khan dgtl
Babil Khan's Life
প্রভাবীর সঙ্গে গোপনে সম্পর্ক, বিচ্ছেদের পর অবসাদে মোড়া ‘চিঠি’! মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বার বার চর্চায় বাবিল
গুঞ্জন শোনা যেতে থাকে যে, অভিনয় করবেন বলে মাঝপথে পড়াশোনা বন্ধ রেখেছিলেন তিনি। তার পর আবার স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করেছিলেন ইরফান-পুত্র।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২৫ ১৬:১০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৮
চোখমুখ ফুলে গিয়েছে। গলা বুজে যাচ্ছে। ক্যামেরার সামনে কান্নায় ভেঙে পড়া একটি ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমের পাতায় পোস্ট করে ফেলেছিলেন প্রয়াত বলি অভিনেতা ইরফান খানের পুত্র বাবিল খান। মুহূর্তের মধ্যে নিজেকে ইনস্টাগ্রাম থেকে মুছে ফেলেন তিনি। কিন্তু আন্তর্জালের দুনিয়ায় ভিডিয়োটি ছড়িয়ে পড়ে। তার পর থেকে বলিপাড়ায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন ইরফান-পুত্র। তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শুভানুধ্যায়ীরা।
০২২৮
বাবিলের সহকারী দলের তরফে অবশ্য বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে যে, ‘প্যানিক অ্যাটাক’ থেকে বাবিল এমন আচরণ করেছেন। ভিডিয়োয় যে বলি তারকাদের নামোল্লেখ করে বলিপাড়াকে এক ‘মিথ্যা দুনিয়া’ বলে দাগিয়ে দিয়েছিলেন বাবিল, সেই বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তবে এই প্রথম বার নয়, বাবিলের পূর্ব আচরণেও মানসিক অবসাদের আভাস পাওযা যায়।
০৩২৮
বাবিলের লড়াই করার ক্ষমতা নেই— পুত্র প্রসঙ্গে এমন মন্তব্যই করেছিলেন তাঁর মা সুতপা শিকদার। বাবিলের উপর সব সময় মানসিক চাপ কাজ করতে থাকে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। কখনও আড়ালে-আবডালে, কখনও প্রকাশ্যে ইরফানের সঙ্গে বাবিলের তুলনা চলতে থাকে। সে কারণে সময়ে-অসময়ে ভেঙে পড়েন বাবিল।
০৪২৮
ছেলেকে নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে সুতপা বলেছিলেন, ‘‘ও অবসাদে ভুগছে। বাবিল খুবই নমনীয়, লড়াই করার ক্ষমতা ওর নেই। ইরফানের সঙ্গে প্রতিনিয়ত বাবিলের তুলনা করা হয়, যা উচিত নয়। ইরফানের ক্ষেত্রে কখনও এটা ঘটেনি। আসলে যখন কোনও রকম চাপ থাকে না, তখনই কোনও ব্যক্তি তাঁর প্রকৃত প্রতিভা তুলে ধরতে পারেন।’’ বাবিল যে এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠবেন তা নিয়ে আশাবাদী সুতপা।
০৫২৮
তিন বছর ধরে অভিনয়জগতের সঙ্গে যুক্ত বাবিল। তবে কেরিয়ারের ঝুলিতে খুব বেশি ছবি নেই তাঁর। বলিপাড়ার কোনও অভিনেত্রীর সঙ্গে তাঁর নাম জড়ায়নি কখনও। তবে এক তরুণীর সঙ্গে গোপনে নাকি সম্পর্কে ছিলেন তিনি। বিচ্ছেদের পর তা প্রকাশ্যে আসে।
০৬২৮
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায় যে, এক নেটপ্রভাবীর সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন বাবিল। কিন্তু কোনও কারণে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল। ২০২৪ সালে সেই তরুণীর সঙ্গে আদরমাখা ছবি পোস্ট করে দীর্ঘ ‘চিঠি’ লিখেছিলেন বাবিল।
০৭২৮
বলিপাড়া সূত্রে খবর, নেটপ্রভাবী তরুণীর নাম প্রকৃতি পভানি। তাঁর প্রেমেই নাকি ডুবে গিয়েছিলেন বাবিল। সম্পর্কের বিচ্ছেদ যে অভিনেতাকে মানসিক ভাবে ভেঙে দিয়েছে তা পোস্ট করে জানিয়েছিলেন তিনি। যদিও তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কখনওই প্রকাশ্যে আলোচনা করেননি বাবিল।
০৮২৮
দিন কয়েক আগে সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে বাবিল তাঁর অনুরাগীদের অনুরোধ করেছিলেন, প্রত্যুষ দুয়া নামে এক বিষয়স্রষ্টাকে ‘আনফলো’ করে দিতে। তবে সমাজমাধ্যমে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও প্রত্যুষের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
০৯২৮
পরে জানা যায় যে, নিজের ছবির প্রচারের জন্য ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন বাবিল। সম্প্রতি ওটিটির পর্দায় মুক্তিপ্রাপ্ত ‘লগআউট’ নামের সাইবার থ্রিলার ঘরানার ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে বাবিলকে। সেই ছবিতে বাবিল অভিনীত চরিত্রের নাম প্রত্যুষ দুয়া। পেশায় বিষয়স্রষ্টা সে।
১০২৮
১৯৯৮ সালের মে মাসে মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে জন্ম বাবিলের। বাবা-মা এবং ভাইয়ের সঙ্গে সেখানেই থাকতেন তিনি। মুম্বইয়ে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি দেন বাবিল।
১১২৮
লন্ডনের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলচ্চিত্র নিয়ে পড়াশোনা করেছেন বাবিল। গুঞ্জন শোনা যেতে থাকে যে, অভিনয় করবেন বলে মাঝপথে পড়াশোনা বন্ধ রেখেছিলেন তিনি। তার পর আবার স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করেছিলেন ইরফান-পুত্র।
১২২৮
২০২০ সালে ইরফানের শেষকৃত্যের সময় ছবিশিকারিদের ক্যামেরায় প্রথম ধরা পড়েছিলেন বাবিল। ২০২১ সালে ‘দ্য ম্যাট্রেস ম্যান: ইয়ন টু অ্যাকশন’ নামের ইংরেজি ভাষার একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন তিনি।
১৩২৮
ক্যামেরার পিছনে কাজ করে বলিপাড়ায় কেরিয়ার শুরু করেন বাবিল। ২০১৭ সালে বড় পর্দায় মুক্তি পায় ‘করীব করীব সিঙ্গল’ নামের একটি হিন্দি ছবি। এই ছবির মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ইরফান। সহ-প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন সুতপা। এই ছবিতে ক্যামেরা সহকারীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন বাবিল।
১৪২৮
২০২২ সালে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পায় ‘কলা’ নামের একটি হিন্দি ছবি। এই ছবিতে বলি নায়িকা তৃপ্তি ডিমরী এবং বাঙালি অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন বাবিল।
১৫২৮
ওটিটির পর্দায় প্রথম ছবি মুক্তির এক বছর পর আবার অভিনয় করতে দেখা যায় বাবিলকে। ২০২৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ফ্রাইডে নাইট প্ল্যান’ ছবিতে জুহি চাওলার সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পান ইরফান-পুত্র।
১৬২৮
২০২৩ সালে ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করার সুযোগ পান বাবিল। আর মাধবন এবং কেকে মেননের মতো তাবড় তাবড় তারকাদের সঙ্গে ‘দ্য রেলওয়ে মেন’ নামের সিরিজ়ে অভিনয় করেন তিনি।
১৭২৮
জ্যাসলিন কৌর রয়্যাল নামের সঙ্গীতশিল্পীর একটি মিউজ়িক ভিডিয়োয় অভিনয় দেখা যায় বাবিলের। তবে পরবর্তী দু’বছর বাবিলকে কোনও ছবি বা ওয়েব সিরিজ়ে দেখা যায়নি।
১৮২৮
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ওটিটির পর্দায় মুক্তি পাওয়া ‘লগআউট’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন বাবিল। দর্শকমহলে বাবিলের অভিনয় প্রশংসা পায়।
১৯২৮
রবিবার দুপুর থেকে চর্চার কেন্দ্রে রয়েছেন বাবিল। নিজের ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে বলিউডের প্রতি একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন তিনি। কাঁদতে কাঁদতে সেই ভিডিয়োয় বাবিল বলেন, “বলিউড একটা জঘন্য জায়গা। বলিউডের লোকজন খুবই খারাপ। বলিউডের মতো ভুয়ো জায়গা আর একটাও নেই। তবে কিছু মানুষ রয়েছেন, যাঁরা বলিউডকে ভাল করে গড়ে তুলতে চান। আমার এই বলিউডকে অনেক কিছু দেওয়ার রয়েছে।’’
২০২৮
ভিডিয়োয় অনন্যা পাণ্ডে, অর্জুন কপূর, সিদ্ধান্ত চতুর্বেদী, শানায়া কপূর, রাঘব জুয়াল, আদর্শ গৌরব এবং অরিজিৎ সিংহের নামও উল্লেখ করেন বাবিল। ভিডিয়ো পোস্ট করার কিছু ক্ষণ পর ইনস্টাগ্রাম থেকে নিজের অ্যাকাউন্ট সরিয়ে ফেলেন তিনি।
২১২৮
বাবিলের সহযোগী দলের তরফ থেকে বিবৃতি প্রকাশ করে পরে জানানো হয়, তাঁর কথার ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বাবিলের মা সেই বিবৃতি সমাজমাধ্যমে ভাগ করে নেন। বিবৃতিতে লেখা, “শেষ কয়েক বছরে বাবিল ওঁর কাজের জন্য অনেক ভালবাসা ও উৎসাহ পেয়েছে। কাজের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলার জন্যও অনেক ভালবাসা পেয়েছে। অন্যদের মতো ওঁরও তো একটা খারাপ দিন থাকতে পারে। আজকের দিনটা তেমনই।”
২২২৮
বাবিলের উদ্বিগ্ন অনুরাগীদের উদ্দেশে বিবৃতিতে লেখা হয়, “ওঁর (বাবিল) শুভাকাঙ্ক্ষীদের বলতে চাই, বাবিল নিরাপদে রয়েছেন এবং আগের চেয়ে ভাল বোধ করছেন। তবে ওঁর ভিডিয়োবার্তার ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অন্য প্রসঙ্গে ওই বার্তার অর্থ খোঁজা হয়েছে।”
২৩২৮
অনুরাগীদের অনুমান ছিল, বলিউডের বৈষম্য ও ভেদাভেদের কথা তুলে ধরতে চেয়েছেন বাবিল। কিন্তু বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বাবিল ওঁর সমসাময়িক অভিনেতাদের কৃতজ্ঞতা জানাতে চেয়েছেন। ভারতীয় ছবির অগ্রগতিতে তাঁদের অর্থবহ যোগদান রয়েছে। অনন্যা পাণ্ডে, সিদ্ধান্ত চতুর্বেদী, শানায়া কপূর, রাঘব জুয়াল, অরিজিৎ সিংহ, অর্জুন কপূরদের নাম তিনি প্রশংসা করার জন্য উল্লেখ করেছেন।”
২৪২৮
বাবিল প্রসঙ্গে অভিনেতা রাঘব জুয়াল বলেছেন, ‘‘ওর মা, সুতপা ম্যামের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি আমাকে বলেছেন, ওর অ্যাংজ়াইটি অ্যাটাক হচ্ছে। ও এখন হায়দরাবাদে রয়েছে। কাল থেকে ওর শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ও বাড়ি ফিরছে। ওর বিশ্রামের দরকার। ওকে বুঝতে হবে, আমরা সকলে ওর পাশে আছি। কিন্তু লড়াইটা ওর একার। ওকে বাস্তবে ফিরতে হবে। ওর পরিবারের ঐতিহ্য ওকে বহন করতে হবে। কিন্তু পরম্পরার ভারে যেন ও চাপা না পড়ে যায়।’’
২৫২৮
রবিবার রাতে নিজের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলটি ফের সক্রিয় করেন ইরফান-পুত্র। ‘স্টোরি’ বিভাগে ভাগ করে নেন তাঁর সহযোগী দলের তরফে জারি করা বিবৃতির অংশ, সঙ্গে জানান সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা। পাশাপাশি অভিনেতা যে ক্লান্ত তা জানিয়ে তিনি লেখেন, ‘‘এর থেকে বেশি কিছু বলার শক্তি আমার নেই এখন। তবে আমার সহযোগীদের জন্য এইটুকু লিখতেই হচ্ছে, আমি ওদের শ্রদ্ধা করি।’’
২৬২৮
বাবিলকে কটাক্ষের সুরে বিঁধেছিলেন পরিচালক সাই রাজেশ। রাজেশের সঙ্গে দু’টি ছবিতে কাজ করেছেন বাবিল। ভারত-আমেরিকা যৌথ ভাবে ‘যক্ষী’ নামের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি বানিয়েছিল। সেখানে অভিনয় করেছিলেন ইরফান-পুত্র। দ্বিতীয়টি ওটিটির ছবি। নাম ‘ফ্রাইডে নাইট প্ল্যান’।
২৭২৮
পরিচালক সাই প্রতিবাদ জানিয়ে সমাজমাধ্যমে প্রশ্ন তোলেন, তিনি এবং বাকি যাঁরা নীরবে এত দিন বাবিলের পাশে থাকলেন, সমর্থন জানালেন, তাঁরা কেউ নন? তাঁরা কি এত দিন ধরে বোকামি করলেন? তিনি এ-ও দাবি করেন, ভিডিয়োতেই হয়তো বাবিল সত্য বলেছিলেন। এখন হয়তো ধামাচাপা দিতে তিনি এই সব কথা বলতে বাধ্য হচ্ছেন।
২৮২৮
রাজেশের পোস্টের মন্তব্য বিভাগে পাল্টা জবাব দিয়ে বাবিল লেখেন, “আপনার ছবির জন্য জীবনের দুটো বছর ত্যাগ করেছি। চরিত্র জীবন্ত করতে কী না করেছি! নোংরা হয়ে থেকেছি। চরিত্রের প্রয়োজনে আমার দাড়িতে উকুন ধরে গিয়েছিল। নিজের ভালমন্দের দিকে খেয়াল করিনি। শুধু আপনাকে খুশি করতে চোখের জল লুকিয়ে হেসেছি। আপনার জন্য হাতের শিরা পর্যন্ত কেটেছি! আর আপনি...। আপনি আমার হৃদয় ভেঙে দিলেন।” পরে অবশ্য এই বক্তব্যও মুছে দেন বাবিল। অভিনেতার শুভানুধ্যায়ীদের অনুমান, বলিউডের বৈষম্যের শিকার হয়ে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন তিনি। তবে আসল সত্য জানেন ইরফান-পুত্র এবং তাঁর ঘনিষ্ঠেরাই।