Syria’s 15.5 million dollar debt paid by Saudi Arabia and Qatar, may trigger conflict in West Asia dgtl
Syrian Crisis
ধার মেটাল দুই আরব রাষ্ট্র, সিআইএ ‘হিট লিস্টে’ থাকা নেতার সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প! ফের ঘনাচ্ছে সংঘাতের কালো মেঘ?
গৃহযুদ্ধ কাটিয়ে ওঠা সিরিয়ার বিপুল ঋণের বোঝা মিটিয়ে দিল সৌদি আরব এবং কাতার। বিবৃতি দিয়ে সে কথা জানিয়েছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। দামাস্কাসকে নতুন করে ঋণ দিতে তারা প্রস্তুত বলেও জানিয়েছে এই আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। উন্নয়নের নামে টাকা আসতে শুরু করলেই ফের অশান্ত হবে পশ্চিম এশিয়ার ওই দেশ? ঘনাচ্ছে আশঙ্কার কালো মেঘ।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২৫ ১৪:০১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
গলা পর্যন্ত ঋণ, অথচ পকেট গড়ের মাঠ! কিছু দিন আগে পর্যন্ত ঠিক এই অবস্থাতেই দাঁড়িয়েছিল সিরিয়া। এ হেন পরিস্থিতিতে সদ্য গৃহযুদ্ধ কাটিয়ে ওঠা পশ্চিম এশিয়ার দেশটির যাবতীয় ধার মিটিয়ে দিল আরব মুলুকের ধনকুবের দুই রাষ্ট্র। ফলে নতুন করে ঋণ নেওয়ার যাবতীয় রাস্তা খুলে গিয়েছে দামাস্কাসের সামনে। এই ঘটনায় সেখানকার ভূ-রাজনীতিতে আসবে বড় বদল? তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা।
০২১৮
বিপুল অঙ্কের দান-খয়রাতি করে সিরিয়াকে বাঁচানো ধনকুবের ওই দুই দেশ হল সৌদি আরব এবং কাতার। দামাস্কাসের ১ কোটি ৫৫ লক্ষ ডলারের ঋণ ভাগাভাগি করে মিটিয়ে দিয়েছে তারা। ফলে সিরিয়ার নতুন করে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে আরও কোনও বাধা নেই, বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। এই সংক্রান্ত অনুমতিও দামাস্কাসকে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
০৩১৮
চলতি বছরের এপ্রিলেই সিরিয়ার বকেয়া ঋণ পরিশোধের কথা ঘোষণা করে কাতার এবং সৌদি প্রশাসন। এই দুই আরব মুলুকের যুক্তি, গত ১৪ বছর ধরে গৃহযুদ্ধে রক্তাক্ত হয়েছে দামাস্কাস। এতে প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচ লক্ষ সিরিয়াবাসী। ধ্বংস হয়ে গিয়েছে বহু পরিকাঠামো। ফলে কোনও অবস্থাতেই ঋণ শোধ করতে পারত না সিরিয়ার নতুন সরকার। সেই কারণে মানবিকতার স্বার্থে ভূমধ্যসাগরের কোলের দেশটির পাশে দাঁড়িয়েছে তারা।
০৪১৮
বিশ্ব ব্যাঙ্কের অন্তর্ভুক্ত ‘আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা’ বা ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের থেকে দেড় কোটি ডলারের বেশি ঋণ নিয়েছিল সিরিয়া প্রশাসন। দুনিয়ার দরিদ্রতম দেশগুলিকে এর মাধ্যমে ঋণ দিয়ে থাকে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সেখান থেকে শূন্য বা নামমাত্র সুদের হারে ঋণ পাওয়ার সুবিধা রয়েছে। গরিব দেশের আর্থিক এবং পরিকাঠামো উন্নয়নে এই প্রকল্প চালিয়ে আসছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক।
০৫১৮
সিরিয়ার ঋণমুক্তি নিয়ে ইতিমধ্যেই বিবৃতি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সেখানে বলা হয়েছে, ‘‘কাতার এবং সৌদি আরব বকেয়া ঋণ মিটিয়ে দেওয়ায় অর্থের জন্য ফের যোগাযোগ করতে পারে দামাস্কাস। গৃহযুদ্ধ কাটিয়ে ওঠা সিরিয়ার আমজনতার উন্নয়নকে আমরা সব সময় গুরুত্ব দেব। তাঁদের স্বার্থে নতুন করে ঋণ পেতে পশ্চিম এশিয়ার দেশটির তেমন সমস্যা হবে না।’’
০৬১৮
সিরিয়ায় বর্তমানে বিদ্যুতের বড় সঙ্কট রয়েছে। এই পরিষেবা সারা দেশে ঠিকমতো চালাতে হলে দামাস্কাসের চাই বিপুল অঙ্কের টাকা। বিশ্ব ব্যাঙ্ক ইতিমধ্যেই এর জন্য ঋণ দিতে রাজি হয়েছে। বিবৃতিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ‘‘বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রকল্পে আমরা কাজ করতে ইচ্ছুক। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নথি জমা করলেই ঋণ পাবে সিরিয়া।’’ তবে এ ক্ষেত্রে যে বেশ কিছু শর্ত মানতে হবে, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক।
০৭১৮
রাষ্ট্রপুঞ্জের নথি অনুযায়ী, বর্তমানে ৯০ শতাংশ সিরিয়াবাসী দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করেন। পশ্চিম এশিয়ার দেশটিতে সারা দিনে বিদ্যুৎ থাকে মেরেকেটে দু’ঘণ্টা। ফলে বাকি সময়টা জেনারেটরের বিদ্যুৎ পরিষেবার উপর নির্ভরশীল দামাস্কাস। গরিব আমজনতার হাতে এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ নেই। টাকার অভাবে তাঁরা সৌর প্যানেলও লাগাতে পারেন না।
০৮১৮
সিরিয়ার এ হেন বিদ্যুৎসঙ্কট মেটাতে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ শুরু করেছে কাতার। প্রতিবেশী দেশ জর্ডন হয়ে সেই গ্যাস পৌঁছোচ্ছে দামাস্কাসে। কিন্তু, তাতেও সমস্যা পুরোপুরি মিটে গিয়েছে, এমনটা নয়। গৃহযুদ্ধের ফলে পশ্চিম এশিয়ার দেশটির বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিকাঠামো একরকম ধ্বংসই হয়ে গিয়েছে। সেটাকে নতুন করে গড়়ে তুলতে কয়েক দশক লেগে যাবে, বলছেন বিশ্লেষকদের একাংশ।
০৯১৮
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের দাবি, সিরিয়ার প্রতি সৌদি এবং কাতারের এ হেন সদয় ভাবের নেপথ্যে একাধিক কারণ রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরেই আরব দেশগুলির উপর প্রভাব বৃদ্ধি করতে চাইছে এই দু’টি রাষ্ট্র। এ ব্যাপারে তাদের মূল প্রতিপক্ষ ইরান এবং তুরস্ক। আর তাই দামাস্কাসের ঘাড় থেকে বিপুল ঋণের বোঝা সরিয়ে দিয়ে তাকে দলে টানতে চেয়েছে সৌদি ও কাতার। এতে মুসলিম দেশগুলির সংগঠন ‘অর্গানাইজ়েশন অফ ইসলামিক কান্ট্রিজ়’ বা ওআইসিতে তাদের কদর যে কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেল, তা বলাই বাহুল্য।
১০১৮
দ্বিতীয়ত, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ইজ়রায়েলের উপর চাপ বৃদ্ধির চেষ্টা চালিয়েছে এই দুই আরব মুলুক। অতীতে বহু বার ইহুদিভূমি আক্রমণ করেছে দামাস্কাস। কিন্তু প্রতি বারই পরাজয় স্বীকার করতে হয়েছে। গৃহযুদ্ধ কাটিয়ে ওঠা পশ্চিম এশিয়ার দেশটি যে ফের সেই চেষ্টা করবে না, তা বলা কঠিন। ঘাড়ের উপর বিপুল ঋণের বোঝা থাকলে সরাসরি যুদ্ধে জড়াতে সমস্যা হবে দামাস্কাসের। তাই দায়িত্ব নিয়ে তাদের দায়মুক্ত করল সৌদি ও কাতার, বলছেন বিশ্লেষকেরা।
১১১৮
গত বছরের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এবং তাদের সহযোগী জইশ আল-ইজ্জার যৌথবাহিনী। ওই সময় বাধ্য হয়ে দামাস্কাস ছেড়ে পালিয়ে রাশিয়ায় আশ্রয় নেন আসাদ। টানা ৫০ বছর পশ্চিম এশিয়ার দেশটির শাসনভার ছিল আসাদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হাতে। বাশার সরতেই আহমদ আল-শারাকে ক্ষমতায় বসায় বিদ্রোহীরা।
১২১৮
সিরিয়ার এই পালাবদলে প্রমাদ গোনে ইজ়রায়েল। বিদ্রোহীদের হাতে দামাস্কাসের পতন হতেই সীমান্তবর্তী গোলান মালভূমির (পড়ুন গোলান হাইট্স) বাফার এলাকা পেরিয়ে প্রতিবেশী দেশটির জমি কব্জা করার নির্দেশ দেন ইহুদি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। গত পাঁচ মাসে সেখানে একাধিক বার বিমানহানা চালিয়েছে ইজ়রায়েল ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ। চলতি বছরের মে মাসের গোড়াতেই দামাস্কাসে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের অদূরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তারা।
১৩১৮
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর দাবি, সংখ্যালঘু দ্রুজ় জনগোষ্ঠীকে কট্টরপন্থীদের হামলা থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যেই সিরিয়ায় সামরিক অভিযান চালানো হচ্ছে। অতীতে আল কায়দা, আইএস-সহ বিভিন্ন মৌলবাদী জঙ্গি ইসলামি সংগঠন এই জাতিগোষ্ঠীকে নিশানা করেছে। যদিও সামরিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, গৃহযুদ্ধের সমাপ্তিতে পালাবদলের জেরে অনিশ্চয়তার সদ্ব্যবহার করতে চাইছেন নেতানিয়াহু।
১৪১৮
অন্য দিকে গৃহযুদ্ধ থামতেই সাবেক প্রেসিডেন্ট আসাদ-ঘনিষ্ঠ আলাওয়াইট নামের একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে বেছে বেছে খুন করতে থাকে বিদ্রোহী সেনাদল। গত মার্চে এই সংক্রান্ত একটি তথ্য প্রকাশ করে ব্রিটেনের মানবাধিকার সংক্রান্ত সিরীয় পর্যবেক্ষণাগার। তাদের দাবি, দু’দিনে সিরিয়ায় প্রাণ হারান ১,৫০০-র বেশি নিরীহ নাগরিক। নিহতদের সিংহভাগই আলাওয়াইট সম্প্রদায়ভুক্ত এবং আসাদের নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। খুব কাছ থেকে গুলি করে তাঁদের খুন করে বিদ্রোহীরা।
১৫১৮
এ হেন পরিস্থিতিতে সিরিয়াকে বিশ্ব ব্যাঙ্ক ঋণ দিতে চাওয়ায় পরিস্থিতি জটিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্লেষকদের দাবি, ওই অর্থকে কাজে লাগিয়ে নতুন করে পশ্চিম এশিয়ার দেশটিতে দানা বাঁধতে পারে গৃহযুদ্ধ। কারণ, সেখানে বিদ্রোহকে চাগিয়ে তোলার মতো ক্ষমতা রয়েছে একাধিক ‘সুপার পাওয়ার’ দেশের গুপ্তচর সংস্থার। সেই তালিকায় রয়েছে আমেরিকা, রাশিয়া, ইরান এবং তুরস্কের নাম।
১৬১৮
সম্প্রতি সৌদি আরব এবং কাতার সফরে গিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট শারার। দামাস্কাসের উপর থেকে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। এ ব্যাপারে সদর্থক পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। বাশার ক্ষমতায় থাকাকালীন দেশটির উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছিল আমেরিকা।
১৭১৮
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট শারা ছিলেন কুখ্যাত জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়দার নেতা। পরে অবশ্য ইসলামীয় সন্ত্রাসবাদী সংগঠনটি ছেড়ে দিয়ে দামাস্কাসের গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন তিনি। তাঁর মাথার দাম কয়েক কোটি ডলার ধার্য করেছিল মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা ‘সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স এজেন্সি’ বা সিআইএ। এ হেন শারার সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক নিয়ে তাই ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
১৮১৮
দ্বিতীয় দফায় কুর্সিতে বসে প্রথম বার বিদেশ সফরে আরবের তপ্ত বালিতে পা রাখেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সৌদি এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে বিপুল অঙ্কের প্রতিরক্ষা চুক্তি সেরেছেন তিনি। এতে পশ্চিম এশিয়ায় নতুন করে সঙ্কটের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে বারুদের গন্ধে সেখানকার বাতাস ভরে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেউই।