Taliban minister Sher Mohammad Abbas Stanikzai who supports girl education forced to flee Afghanistan dgtl
Afghanistan Women Education
নারীশিক্ষার কথা বলায় হাতকড়া হাতে ছুটল পেয়াদা! খোদ মন্ত্রীকেই ‘দেশছাড়া’ করল তালিবান
নারীশিক্ষার পক্ষে সওয়াল করায় বিপাকে তালিবানের বিদেশ প্রতিমন্ত্রী শের মহম্মদ আব্বাস স্ট্যানিকজ়াই। দেশ ছেড়ে পালিয়ে আরব মুলুকে তাঁকে আশ্রয় নিতে হয়েছে বলে দাবি করেছে পশ্চিমি সংবাদমাধ্যম।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:২৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
নারীশিক্ষাকে কেন্দ্র করে তালিবানে ‘ভাঙন’! দলের মধ্যেই বাড়ছে মতপার্থক্য। এর প্রভাবে দেশছাড়া হয়েছেন এক আফগান মন্ত্রী। ‘পলাতক’ ব্যক্তির আবার রয়েছে ভারত-যোগ। শুধু তা-ই নয়, এই ইস্যুতে আগামী দিনে হিন্দুকুশের কোলের দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা মাথাচাড়া দেবে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।
০২২১
আফগানিস্তান ছেড়ে অন্যত্র ‘আশ্রয়’ নেওয়া ওই মন্ত্রীর নাম শের মহম্মদ আব্বাস স্ট্যানিকজ়াই। কাবুলের তালিবান সরকারের উপ-বিদেশমন্ত্রী পদে ছিলেন তিনি। দেশত্যাগের পর বর্ষীয়ান স্ট্যানিকজ়াই সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
০৩২১
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি পাক-আফগান সীমান্তের খোস্ত প্রদেশের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্নাতক স্তরের অনুষ্ঠানে যোগে দেন স্ট্যানিকজ়াই। সেখানে স্কুল-কলেজের শিক্ষায় মেয়েদের উপরে থাকা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন তিনি।
০৪২১
অনুষ্ঠানে বর্ষীয়ান তালিবান নেতা স্ট্যানিকজ়াই বলেন, ‘‘দু’কোটি আফগান মহিলার সঙ্গে আমরা অন্যায় করছি। তাঁদের শিক্ষার অধিকার কেড়ে নেওয়ার কোনও অর্থ নেই। এ ক্ষেত্রে অজুহাত দিয়ে লাভ নেই। এই ধরনের সিদ্ধান্ত দেশের ভবিষ্যতের জন্য একেবারেই ভাল নয়।’’
০৫২১
এর পর আরও এক ধাপ এগিয়ে এই ইস্যুতে ইসলামের প্রবর্তক হজরত মহম্মদের প্রসঙ্গ তোলেন স্ট্যানিকজ়াই। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘‘নবী মহম্মদের সময়ে জ্ঞানের দরজা পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই উন্মুক্ত ছিল।’’
০৬২১
বর্ষীয়ান মন্ত্রীর প্রকাশ্যে এ ভাবে নারীশিক্ষার পক্ষে সওয়াল করাকে একেবারেই মেনে নিতে পারেননি তালিবান নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, সশস্ত্র সংগঠনটির ‘সুপ্রিম নেতা’ হিবায়তুল্লাহ আখুনজ়াদা সঙ্গে সঙ্গে স্ট্যানিকজ়াইয়ের গ্রেফতারির নির্দেশ দেন। তাঁর চলাফেরার উপরেও জারি হয় নিষেধাজ্ঞা।
০৭২১
পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমের অবশ্য দাবি, গ্রেফতারির আশঙ্কা রয়েছে বুঝতে পেরেই দেশ ছাড়েন স্ট্যানিকজ়াই। সম্প্রতি দুবাইয়ে তাঁকে দেখা গিয়েছে। তালিবানের এই বর্ষীয়ান নেতার অবশ্য দাবি, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কারণে আরব মুলুকটিতে রয়েছেন তিনি।
০৮২১
নারীশিক্ষার উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ব্যাপারে মুখ খোলায় ‘শাস্তি’র মুখে পড়তে হয়েছে বলে মানতে নারাজ স্ট্যানিকজ়াই। তিনি মুখে যা-ই বলুন না কেন, তালিবান যে নারী স্বাধীনতার পক্ষে নয়, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
০৯২১
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তালিবানের সর্বোচ্চ নেতা এবং আফগানিস্তানের প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির দাবিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা দায়ের হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে রয়েছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ। যদিও একে গুরুত্ব দিতে নারাজ কাবুলের বর্তমান শাসকেরা।
১০২১
২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে আমেরিকা। এর পরই হিন্দুকুশের কোলের দেশটিতে দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় ফেরে তালিবান। কুর্সিতে বসেই শরিয়া আইন চালু করে তারা।
১১২১
রাজদণ্ড হাতে পাওয়া ইস্তক নারীশিক্ষার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন তালিবান নেতৃত্ব। পাশাপাশি মেয়েদের ক্রিকেট খেলা বা জনসমক্ষে আসার উপরেও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেন তাঁরা। গত চার বছরে এর বিরুদ্ধে আফগান মেয়েদের একাধিক বার প্রকাশ্যে প্রতিবাদ জানাতেও দেখা গিয়েছে।
১২২১
১৯৬৩ সালে আফগানিস্তানের লোগার প্রদেশে স্ট্যানিকজ়াইয়ের জন্ম হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে তাঁর। একাধিক ভাষায় কথা বলতে পারেন এই বর্ষীয়ান তালিবান নেতা। এর মধ্যে রয়েছে ইংরেজি, উর্দু, পাশতুন এবং দারি।
১৩২১
সৈনিক হওয়ার প্রশিক্ষণ নিতে ১৯৭৯ সালে ভারতে আসেন স্ট্যানিকজ়াই। মোট তিন বছর এ দেশে কাটান তিনি। দেহরাদূনের ঐতিহ্যবাহী ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমির ক্যাডেট ছিলেন এই বর্ষীয়ান তালিবান নেতা। সেখান থেকে দেড় বছর সেনা অফিসার হওয়ার প্রশিক্ষণ নেন তিনি।
১৪২১
সোভিয়েত রাশিয়া ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তান দখল করলে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। ওই সময়ে মস্কোর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেন স্ট্যানিকজ়াই। দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রন্টের কম্যান্ডার ছিলেন তিনি। পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল এই পাঠান নেতার।
১৫২১
১৯৮৯ সালে আমু দরিয়ার তীর থেকে সৈন্য সরিয়ে নেন তৎকালীন সোভিয়েত নেতৃত্ব। এর পরই দ্রুত বদলাতে শুরু করে আফগানিস্তানের রাজনীতি। ওই সময়েই উত্থান হয় তালিবানের। ১৯৯০ সালে সশস্ত্র গোষ্ঠীটিতে যোগ দেন স্ট্যানিকজ়াই।
১৬২১
১৯৯৬ সালে রুশ সমর্থিত সরকারকে সরিয়ে প্রথম বার কাবুলের ক্ষমতা দখল করে তালিবান। ওই সময় বিদেশ মন্ত্রকের দায়িত্ব পান ওয়াকিল আহমেদ মুত্তাওয়াকিল। তাঁর অধীনে দীর্ঘ দিন কাজ করেন স্ট্যানিকজ়াই।
১৭২১
ইংরেজি ভাষার উপর ভাল দখল থাকায় বিদেশি গণমাধ্যমের কাছে প্রায়ই সাক্ষাৎকার দিতেন স্ট্যানিকজ়াই। ফলে কিছু দিনের মধ্যেই ওয়াকিল আহমেদের চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন তিনি। পাশাপাশি মদ্যপানের প্রতি শিথিল মনোভাবের জন্য তালিবানের আর এক শীর্ষনেতা মহম্মদ ওমরের রোষের শিকার হন এই পাঠান নেতা।
১৮২১
পরবর্তী সময়ে ক্ষমতা হারান স্ট্যানিকজ়াই। তাঁকে গৃহবন্দি করেন তালিবান নেতৃত্ব। সালটা ছিল ১৯৯৮। বেশি দিন অবশ্য অন্তরালে কাটাতে হয়নি তাঁকে। পাক গুপ্তচর বাহিনীর সাহায্যে প্রভাব খাটিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে ফের ক্ষমতায় ফেরেন ওই পাঠান নেতা।
১৯২১
২০১২ সালে কাতারের রাজধানী দোহায় রাজনৈতিক দফতর খোলে তালিবান। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন স্ট্যানিকজ়াই। ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দোহার তালিবানের যাবতীয় কাজকর্মের নেতৃত্ব দিতেন ভারতের থেকে সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই আফগান নেতা।
২০২১
চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেওয়ার পর ইজ়রায়েল এবং মিশর বাদ দিয়ে অন্য দেশগুলিকে দেওয়া আর্থিক সাহায্য আপাতত স্থগিত করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের হাতে থাকা আফগানিস্তানের যাবতীয় অর্থ ফেরত দিতে নারাজ তিনি।
২১২১
বিশ্লেষকদের দাবি, এই পরিস্থিতিতে স্ট্যানিকজ়াইয়ের উপর কড়া ব্যবস্থা নেওয়া তালিবান নেতৃত্বের পক্ষে বেশ কঠিন। কারণ, এ ব্যাপারে আমেরিকার সঙ্গে কথা বলতে হলে তুখোড় ইংরেজি জ্ঞানসম্পন্ন এই বর্ষীয়ান নেতার প্রয়োজন রয়েছে তাঁদের। দেশের আর্থিক অবস্থার হাল ফেরাতে ওয়াশিংটনের থেকে ওই টাকা ফেরাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন কাবুলের বর্তমান শাসকেরা।