The seas and oceans are hiding gold worth trillions of dollars dgtl
Gold reserve in sea
নোনা জলে মিশে আছে কোটি কোটি টন সোনা! সাগর সেঁচে হলুদ ধাতু তুলে আনতে পারলেই কেল্লা ফতে!
সমুদ্রের গভীরে সত্যিই লুকিয়ে আছে বিশাল সোনার খনি। সমুদ্রের তলায় ডুবে থাকা সোনার পরিমাণ কম করে হলেও ২ কোটি টন। সমুদ্রের জলে দ্রবীভূত হয়ে রয়েছে কুবেরের ভান্ডার।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:৪৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৫
পৃথিবীর ৭০ ভাগ জুড়ে রয়েছে সমুদ্র। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ভূপৃষ্ঠের ৭০ শতাংশ জুড়ে থাকা সমুদ্রের ৮০ শতাংশ অঞ্চলই এখনও মানুষের অজানা। সেই সুবিশাল জলরাশিতে মিশে রয়েছে এমন সম্পদ, যা গোটা পৃথিবীর সমস্ত দেশের জিডিপির চেয়েও বেশি। পৃথিবীর মহাসাগরগুলির পেটে লুকিয়ে রয়েছে অতুল বৈভব, যা হাতে এলে পাল্টে যেতে পারে অর্থনীতির রূপরেখা।
০২১৫
সমুদ্রের গহীন অতল নীল জলে মিশে রয়েছে সোনালি ধাতু। এক-দু’টি টুকরো নয়। লুকিয়ে আছে লক্ষ লক্ষ টন সোনা। আর এই সোনা লুকিয়ে আছে সমুদ্রের জলে। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও তা বাস্তব। সমুদ্রের গভীরে সত্যিই লুকিয়ে আছে বিশাল সোনার খনি। গবেষকেরা জানিয়েছেন, সমুদ্রের তলায় ডুবে থাকা সোনার পরিমাণ কম করে হলেও ২ কোটি টন। সমুদ্রের জলে দ্রবীভূত হয়ে রয়েছে কুবেরের ভান্ডার।
০৩১৫
আমেরিকার ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বেশ কয়েক বছর ধরে অভিযান চালানোর পর চাঞ্চল্যকর তথ্যটি পৃথিবীর সামনে এনেছিল। আটলান্টিক মহাসাগরের গভীরে এই অভিযান চালানোর পর অভিযাত্রীরা জানতে পারেন কয়েক কোটি কোটি ডলারের সম্পদ মিশে আছে মহাসাগরের নোনা জলে।
০৪১৫
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই সোনার মূল্য ২ কোয়াড্রিলিয়ন ডলার হতে পারে। অর্থাৎ প্রায় ২০০০০০০০০ কোটি ডলার। সেই মূল্য যে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে তা বলাই বাহুল্য। সেই সম্পদ উত্তোলন করা গেলে গোটা পৃথিবী জুড়ে সোনার চাহিদার অনেকটাই সামাল দেওয়া যাবে।
০৫১৫
সমুদ্রের জল থেকে সোনা বার করা অত্যন্ত জটিল এক প্রক্রিয়া। সে প্রক্রিয়ায় সমুদ্রের লবণাক্ত জল থেকে সোনা আলাদা করা সহজ কথা নয়। প্রতি ১০০০ লক্ষ মেট্রিক টন সমুদ্রের জলে এক গ্রাম সোনা পাওয়া যায়। ২০১৮ সালে ‘নেচার’ পত্রিকা ও ‘জার্নাল অফ দ্য আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি’ থেকে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে সমুদ্র থেকে সোনা উত্তোলনের পদ্ধতির বেশ কয়েকটি প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
০৬১৫
সমুদ্রের সোনা উত্তোলনের জন্য সেই পদ্ধতির কার্যকারিতা কতখানি? এর কি কোনও বাস্তব প্রয়োগ রয়েছে? না কি এটি কেবল একটি অসম্ভব স্বপ্ন? এ সব বিষয়ে নানা মুনির নানা মত। আদৌ কি জমানো সোনা আহরণ করা সম্ভব হবে? সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সংশ্লিষ্ট মহলে।
০৭১৫
কী ভাবে সমুদ্রের পেটের মধ্যে জমা হল এই বিপুল পরিমাণ সোনা? এই সোনা বিভিন্ন উৎস থেকে জমা হয় সমুদ্রের তলদেশে। প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সোনা সমুদ্রে পৌঁছোয়। এর মধ্যে একটি হল ভূমিক্ষয়, অর্থাৎ পাথর এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক বস্তুতে থাকা সোনা ক্ষয় পেতে পেতে ধীরে ধীরে সমুদ্রে প্রবেশ করে। বৃষ্টি এবং নদী ধীরে ধীরে পাথর ভেঙে দেয়। ফলে পাথরে থাকা কিছু সোনা সমুদ্রে প্রবেশ করে।
০৮১৫
সমুদ্রের তলদেশে থাকে হাইড্রোথার্মাল ভেন্ট বা সমুদ্রতলের ফাটল। এই ফাটল দিয়ে উত্তপ্ত জল সমুদ্রের জলের সঙ্গে এসে মেশে। সাধারণত টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে বা যেখানে প্লেটগুলি আলাদা হয়ে যাচ্ছে, সেই সব অঞ্চলে এই ফাটল দেখা যায়। এই ফাটল দিয়ে প্রবল তাপের কারণে ম্যাগমায় থাকা সোনা-সহ দ্রবীভূত খনিজ পদার্থগুলি তরলের আকারে নির্গত হয়।
০৯১৫
এমনকি ঝোড়ো বাতাস ভূমি থেকে সমুদ্রে সোনার ধুলোর কণা বহন করে নিয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াগুলির সংমিশ্রণের ফলে বিশ্বের মহাসাগরে তলদেশে জমা সোনার ভান্ডার গড়ে উঠেছে। যদিও সমুদ্রের সোনা সঞ্চয়ের প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীর লয়ে ঘটে থাকে।
১০১৫
ভূমধ্যসাগর, আটলান্টিক ও উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর— মূলত এই তিনটি মহাসাগরে জমা হয়েছে ‘সোনার আকর’। বর্তমান সোনার দাম অনুযায়ী, এক টন সোনার মূল্য আনুমানিক ১০ কোটি ৬০ লক্ষ ডলার। যদি সমুদ্রে সত্যি ২০ কোটি টন সোনা থাকে, তা হলে এই সোনার মোট মূল্য প্রায় ২১৩০০০০০ কোটি ডলার হতে পারে, যা সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতির তুলনায় অনেক বেশি।
১১১৫
সমুদ্র থেকে সোনা উত্তোলন করা বেশ কষ্টসাধ্য। প্রযুক্তিগত ও আর্থিক দু’দিক থেকেই। ১৯৪১ সালে করা একটি গবেষণা ‘নেচার’-এ প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে একটি তড়িৎ-রাসায়নিক পদ্ধতির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সেই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হলে যা খরচ পড়ত তা সোনার মোট মূল্যের পাঁচ গুণ বেশি বলে প্রমাণিত হয়েছিল। তাই সেই পরিকল্পনা গবেষণার স্তরেই থেকে যায়।
১২১৫
২০১৮ সালে ‘জার্নাল অফ দ্য আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি’তে প্রকাশিত হয় আরও একটি পদ্ধতি। সেখানে এমন একটি উপাদান ব্যবহার করার প্রস্তাব করা হয়েছিল যা স্পঞ্জের মতো সোনা শুষে নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে গবেষকরা মাত্র দু’মিনিটের মধ্যে সমুদ্রের জল থেকে অল্প পরিমাণে সোনা বার করতে সক্ষম হবেন। তবে লাভজনক ভাবে প্রচুর পরিমাণে সোনা আহরণের জন্য সেটি এখনও একটি চ্যালেঞ্জ।
১৩১৫
এক লিটার সমুদ্রের নোনা জলে মিলবে এক গ্রাম সোনার ১৩০০ কোটি ভাগের এক ভাগ। সমুদ্রের জল থেকে সোনা পাওয়ার খবর কৌতূহলোদ্দীপক হলেও বাস্তবে তা কতখানি সম্ভব তা নিয়ে সংশয় রয়েছে সমুদ্রবিজ্ঞানীদের মধ্যেই। জল থেকে সোনা আহরণ করা ব্যয়বহুল। তাতেও যে পরিমাণ সোনা পাওয়া যাবে তা দিয়ে ব্যবসায়িক লাভ কতখানি হবে সে নিয়ে সন্দিহান তাঁরা।
১৪১৫
পদার্থবিজ্ঞান এবং তড়িৎ-রাসায়নিক প্রক্রিয়ার উন্নত প্রযুক্তি বা পদ্ধতির সাহায্যে এক দিন হয়তো সমুদ্রের সোনা উত্তোলনের প্রক্রিয়াকে বাস্তবে পরিণত করা যেতে পারে। আপাতত, গবেষকেরা সমুদ্রের বিপুল ভান্ডার থেকে সোনা বার করার বিকল্প পদ্ধতির দিকে নজর দিচ্ছেন। অনেকে মনে করছেন, মহাকাশের মতো অন্য কোথাও আরও লাভজনক সোনার খনির সন্ধান পাওয়া গেলে তা সমুদ্র থেকে সোনা তোলার প্রচেষ্টাকে পিছনে ফেলে দিতে পারে।
১৫১৫
বর্তমানে গ্রহাণুতে থাকা নানা ধাতুসম্পদের ভান্ডার নামিয়ে আনার তোড়জোড় করছেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। প্ল্যাটিনাম, সোনা, লোহা, তামা-সহ একাধিক বহুমূল্য ধাতুর উপকরণ দিয়ে ঠাসা থাকতে পারে বিভিন্ন গ্রহাণুগুলি। গ্রহাণুর খনিগুলি সমুদ্রের তুলনায় আরও বেশি ব্যবহারিক এবং লাভজনক বিকল্প হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।