সাগরে তুফান তুলে রাত-দিন টহল, জিরিয়ে নিতে ক্ষেপণাস্ত্রের রণসাজে কলকাতার ঘাটে ভিড়েছে ‘খঞ্জর-কোরা’

আইএনএস খঞ্জর মূলত একটি ৭৬ মিমি ওটিও মেলারা প্রধান বন্দুক এবং জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রে সজ্জিত একটি রণতরী। ভূপৃষ্ঠের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। খুকরি শ্রেণির জাহাজের দক্ষতা এটির নকশার মধ্যেই নিহিত রয়েছে। জাহাজটির বৈশিষ্ট্যই হল এর আকার, ক্ষিপ্র গতি এবং আঘাতের শক্তি।

অনুসন্ধান ও উদ্ধার (এসএআর) অভিযান এবং উপকূলীয় নজরদারিতেও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছে করভেট জাহাজটি। অত্যাধুনিক সেন্সর এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার সাহায্যে অন্যান্য জাহাজের সঙ্গে সমন্বয় তৈরি করতে সক্ষম খঞ্জর। ফলে যৌথ মহড়া এবং সামুদ্রিক অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে এই রণপোতটি।

বর্তমানে জাহাজটির নেতৃত্বে আছেন কমোডর রনি চৌপো। আনন্দবাজার ডট কমকে তিনি জানান, ৩৪ বছরের তরুণ জাহাজটি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরের বিভিন্ন প্রান্তে অভিযান চালিয়েছে। এই রণতরীর গতি, ক্ষিপ্রতা ও ক্ষমতার জন্য এটিকে ‘গ্রে ফেরারি’ নামেও ডাকা হয়ে থাকে।

জাহাজটির ভারবহন ক্ষমতা ১৩৫০ টন। এই যুদ্ধজাহাজের দৈর্ঘ্য ৯১.১ মিটার। অস্ত্রসজ্জিত ‘আইএনএস খঞ্জর’ চেতক বা ধ্রুবের মতো একটি হেলিকপ্টার বহনে সক্ষম।

১৯৯৮ সালে নৌবাহিনীতে জায়গা করে নেওয়া আইএনএস কোরা হল প্রথম পি-২৫এ ক্লাস করভেট যুদ্ধজাহাজ। এটিকে নেপালের কিংবদন্তি জাতীয় তরবারির নামে নামকরণ করা হয়েছে।

আইএনএস কোরার প্রাণশক্তি এর ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতার মধ্যেই নিহিত। এটি চারটি কোয়াড লঞ্চার দিয়ে সজ্জিত। প্রাণঘাতী জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে সক্ষম এই করভেটটি। ফলে এটি নৌবাহিনীতে ‘কিলার করভেট’ নামেও পরিচিত।

একটি ৭৬ মিমির একে-১৭৬ বন্দুক এবং দু’টি ৩০ মিমি একে-৬৩০ বন্দুক ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ এবং আকাশ হুমকির বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে জাহাজটিকে। অত্যাধুনিক রাডার, ইলেকট্রনিক ওয়ারস্যুট এবং সেন্সর যে কোনও সামুদ্রিক সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুত করে তুলেছে রণতরীটিকে। সে কারণে জাহাজটিকে করভেট শ্রেণির মধ্যে সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ এবং শক্তিশালী বলে মনে করা হয়।

নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্তির পর আইএনএস কোরা বেশ কয়েকটি বড় অভিযানে দক্ষতা প্রমাণ করেছে। এটি প্রায়শই পূর্ব নৌ কমান্ডের বিভিন্ন অভিযানে মোতায়েন করা হয়। সিমবেক্সের মতো আন্তর্জাতিক মহড়া এবং ট্রোপেক্সের মতো মেগা-থিয়েটার মহড়ায় জাহাজটি অংশগ্রহণ করে তার দক্ষতা প্রমাণ করেছে।

জাহাজটির দক্ষতা কেবল যুদ্ধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। উপকূলীয় নজরদারি অভিযানেও সমান ভাবে কার্যকরী এটি। ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় সমুদ্রপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে করভেট জাহাজগুলির মধ্যে অন্যতম আইএনএস কোরা।

এই রণতরীর ভারবহন ক্ষমতা ১৪০০ টন। ক্ষেপণাস্ত্র, কামান ছাড়াও এতে রয়েছে একে-১৭৬ ও একে-৬৩০ অস্ত্র ব্যবস্থা। হেলিকপ্টার পরিচালনার সুবিধাও রয়েছে আইএনএস কোরায়। শত্রুপক্ষের যে কোনও জলপথ ও আকাশপথে হুমকি মোকাবিলায় সদাসর্বদা সজাগ দৃষ্টি থাকে এটির।

আইএনএস কোরাকে ভারতীয় নৌবাহিনীর স্বনির্ভরতার প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। রাডার ক্রস-সেকশন নকশা আধুনিক সামুদ্রিক সমরকৌশলের জন্য একে উপযুক্ত করে তুলেছে। এই শ্রেণির জাহাজটি ভারতের নতুন প্রজন্মের করভেটের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। আজও তা ভারতীয় জলসীমা রক্ষার জন্য বিভিন্ন ভূমিকায় ব্যবহৃত হচ্ছে। গত ২৫ বছর ধরে ক্রমাগত সংস্কারের মাধ্যমে, জাহাজটি কর্মক্ষমতা বজায় রেখেছে। বঙ্গোপসাগর জুড়ে টহল দেওয়া ছাড়াও বিদেশি জাহাজের গতিবিধির উপর নজরদারি করে থাকে জাহাজটি।