UK Government Uses Bibby Stockholm Barge to House 500 Asylum Seekers, Sparks Controversy Over Conditions dgtl
Bibby barge controversy
ছোট ছোট কুঠুরি, বিপজ্জনক সব নিয়ম! তিনতলা উঁচু ভাসমান ‘কারাগারে’ এক বছর নরকযন্ত্রণা সহ্য করেন ৫০০ অভিবাসী
তিনতলা সমান উঁচু, দেখে বাড়ি না বার্জ বোঝা দায়! এমনই এক বার্জে ন’মাসের বেশি সময় কাটিয়েছেন ৫০০ জন অভিবাসী।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৫ ১৩:৫০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
জলের উপর ভাসছে তিনতলা বাড়ি। দূর, এমনটা আবার হয় নাকি! হ্যাঁ, একনজরে বার্জটিকে দেখে বাড়ি ভেবে ভিরমি খাওয়ার মতো। তবে এই ভাসমান বাড়িই কিন্তু একসময় ৫০০ জন মানুষের অস্থায়ী ঠিকানা ছিল।
০২১৬
২০২৩ সালে ইউরোপের ফ্যালমাউথ থেকে পোর্টল্যান্ডের ডরসেটে এমনই এক বার্জ এসে পৌঁছোয়। তিনটি ডেক বিশিষ্ট বার্জটির নাম ছিল ‘বিবি স্টকহলোম’। আয়তনে বিশাল বড় ছিল বার্জটি।
০৩১৬
লম্বায় ৯৩.৪৪ মিটার এবং চওড়ায় ২৭.৪৩ মিটার। মোট ২২২টি কেবিন ছিল বার্জটিতে। আর এই ২২২টি কেবিন ঘরেই থাকতেন ৫০০ জন অভিবাসী।
০৪১৬
ঘরগুলির দেওয়াল ধবধবে সাদা। প্রতিটি ঘরে ছিল ২টি তলা যুক্ত একটি খাট, কাঠের ছোট আলমারি, একটি টেবিল এবং চেয়ার। একনজরে দেখলে বোঝা দায় এটি একটি বার্জের কেবিন, না ইট-বালি-সিমেন্টের তৈরি কোনও ঘর।
০৫১৬
‘বিবি স্টকহলোম’-এর ভিতরে ঢুকলে মনে হবে কোনও হোটেলে প্রবেশ করেছেন। কী নেই! ক্যান্টিন, টিভি দেখার ঘর, জিম, মিটিং করার ঘর সবই ছিল। এমনকি ওয়াইফাইও ছিল। তবে প্রতিটি ঘরই আকারে অনেক ছোট, আর সব সময় ভাসছে।
০৬১৬
‘বিবি স্টকহলোম’কে প্রথমে জাহাজ হিসাবে তৈরি করা হয়েছিল। ১৯৭৬ সালে নেদারল্যান্ডে এটি বানানো হয়। পরে ১৯৯০ সালে জাহাজটিকে থাকার উপযুক্ত করে তোলা হয়। এর আগেও জার্মানি এবং নেদারল্যান্ডে বেশ কিছু দিনের জন্য সাধারণ মানুষকে থাকার জায়গা দিয়েছিল ‘বিবি স্টকহলোম’।
০৭১৬
সাময়িক ভাবে অভিবাসীদের থাকার খরচ কমাতে ‘বিবি স্টকহলোম’কে ব্যবহার করেছিল ব্রিটেন সরকার। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা যে সমস্ত মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না, তাঁদের জন্য ছিল ‘বিবি স্টকহলোম’।
০৮১৬
২২২টি কেবিনে প্রায় ৫০০ জন অভিবাসীকে রেখেছিল ব্রিটেন সরকার। চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল বেশ কিছু নিয়মকানুন। বার্জের মধ্যে কারও মদ্যপান করার অনুমতি ছিল না। রাত নামার সঙ্গে সঙ্গে বার্জে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। অযথা পোর্টল্যান্ড শহরে ঘোরাফেরা করাও বারণ ছিল।
০৯১৬
ধীরে ধীরে বার্জে বাস করা অভিবাসীদের কাছে যেন আতঙ্ক হয়ে ওঠে। যত দিন যাচ্ছিল অত্যন্ত ছোট মাপের কেবিনে দু’জনের থাকা যেন তত কষ্টকর হয়ে উঠছিল। পাশাপাশি, অভিবাসীদের মনে ভয় ধরে যাচ্ছিল ব্রিটেন সরকার হয়তো তাঁদের এই বার্জের সাহায্যেই অন্য কোথাও স্থানান্তরিত করে দেবে।
১০১৬
সে ভাবে আলো-বাতাস ঢুকতে পারত না বার্জের ভিতর। একটি প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, অভিবাসীদের অস্বাস্থ্যকর খাবার দেওয়া হত সেখানে। পান করার জলের মধ্যেও জীবাণু দেখা দিচ্ছিল। সব মিলিয়ে মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করে দিয়েছিলেন অভিবাসীরা।
১১১৬
‘বিবি স্টকহলোম’-এর আশ্রিতদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও দেখা দিচ্ছিল। এমনকি একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, লিওনার্ড ফারুকু নামক এক জনের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল ‘বিবি স্টকহলোম’-এর শৌচালয় থেকে। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা না গেলেও অনেকেরই ধারণা, আত্মহত্যা করেছিলেন তিনি।
১২১৬
এই ভাবে এক বছরের বেশি সময় কাটিয়েছিলেন অভিবাসীরা। কিন্তু আর সম্ভব হচ্ছিল না! একের পর এক অভিবাসী অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন। ব্রিটেন সরকার চায়নি এই খবর সংবাদমাধ্যম পর্যন্ত পৌঁছোক।
১৩১৬
প্রথমে অসুস্থ ৩৯ জন আশ্রিতকে রাতারাতি অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বাকিদের মধ্যেও জীবন বাঁচানোর উৎকণ্ঠা প্রবল ভাবে বাড়তে থাকে। সে কারণে আর বেশি দিন সেখানে অভিবাসীদের রাখতে পারেনি সরকার। ২০২৩ থেকে ২০২৪— মাত্র এক বছর পরই অভিবাসীদের সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় ব্রিটেন সরকার।
১৪১৬
আরও একটি বিষয় রয়েছে। একটি প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ‘বিবি স্টকহলোম’-এর জায়গায় দীর্ঘ ন’বছর একটি অস্থায়ী কারাগার রাখা ছিল। এইচএমপি উইয়ার নামক একটি কারাগার জাহাজ ঠিক সেই জায়গায় রাখা থাকত, যেখানে ‘বিবি স্টকহলোম’ ছিল।
১৫১৬
কারাগার জাহাজটি ১৯৯৭ সাল থেকে প্রায় ২০০৬ সাল পর্যন্ত ছিল ওই বন্দরে। সেটি মূলত ব্রিটেন কারাগার বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত হত। কম সাজাপ্রাপ্তদের রাখা হত সেখানে।
১৬১৬
ওই একই জায়গায় এই অস্থায়ী বার্জটি রাখায় বেশ কিছু সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল ‘বিবি স্টকহলোম’কে। অনেকেই অভিবাসীদের থাকার এমন জায়গাকে ‘ভাসমান কারাগার’ বলে উল্লেখ করেছেন।