Ukraine wants US arms and ammunition against rare earth elements may trigger more attack from Russia dgtl
Ukraine Arms Deal
নাকের বদলে নরুন! রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ট্রাম্পকে বিরল খনিজের ‘টোপ’ ইউক্রেনের
আমেরিকার হাতিয়ার ও গোলা-বারুদের সরবরাহ বজায় রাখতে বিরল খনিজের টোপ দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। এতে বেজায় চটেছে রাশিয়া।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৫:৪৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
হাতিয়ারের বদলে বিরল খনিজ! আধুনিক পৃথিবী প্রত্যক্ষ করতে পারে এই বিনিময় প্রথা। সম্প্রতি এই বিষয়ে এক সুরে কথা বলতে শোনা গিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কিকে। তবে শেষ পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হলে পূর্ব ইউরোপের পরিস্থিতি জটিল হওয়ার আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।
০২২৩
গত প্রায় তিন বছর ধরে রাশিয়ার সঙ্গে মরণপণ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেন। লড়াইয়ে কিভের বড় ভরসা মার্কিন হাতিয়ার। কিন্তু ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সেই অস্ত্র হাতে পাওয়ার সম্ভাবনা কমেছে। এই পরিস্থিতিতে হাতিয়ার ও গোলা-বারুদের সরবরাহ সচল রাখতে ওয়াশিংটনকে বিরল খনিজের টোপ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জ়েলেনস্কি।
০৩২৩
ইউরোপের ‘রুটির ঝুড়ি’ ইউক্রেনের মাটির গভীরে লুকিয়ে আছে কোটি কোটি টাকার বিরল খনিজ। এর মধ্যে লিথিয়াম ও টাইটানিয়াম উল্লেখযোগ্য। কিন্তু, দেশটির যে এলাকায় এই খনিজগুলি পাওয়া যায়, বর্তমানে তার সিংহভাগেই রয়েছে রাশিয়ার দখলে। বাকি খনিগুলির অবস্থান রণক্ষেত্র লাগোয়া হওয়ায় সেখান থেকে উত্তোলন বেশ কঠিন।
০৪২৩
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। রাজধানী ওয়াশিংটনের ওভাল কার্যালয়ে বসে তিনি বলেছেন, ‘‘বিরল খনিজের নিরাপত্তা দিতে হবে। এর জন্য আমরা কোটি কোটি ডলার খরচ করছি। ওদের কাছে (পড়ুন ইউক্রেন) প্রচুর পরিমাণে বিরল খনিজ রয়েছে। আমাদের পদক্ষেপ মেনে নিতে ওরা ইচ্ছুক।’’
০৫২৩
ইউক্রেনের লিথিয়াম ও টাইটানিয়ামের খনিতে ট্রাম্পের নজর পড়ার নেপথ্যে মূল কারণ হিসাবে চিনের কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের দাবি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট মনে করেন বিরল খনিজের কারণেই অভাবনীয় উন্নতি করেছে বেজিং। ড্রাগনভূমিতে এই ধরনের খনিজের বিপুল ভান্ডার রয়েছে।
০৬২৩
ইউক্রেনীয় সংবাদ সংস্থা ‘কিভ ইন্ডিপেন্ডেন্ট’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে রয়েছে বিশ্বের ২০টি গুরুত্বপূর্ণ জটিল খনিজ ও ধাতু। বিরল খনিজ বলতে ট্রাম্প এর মধ্যে কোনগুলিকে বুঝিয়েছেন, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়।
০৭২৩
তবে ওভাল অফিসে বসে করা মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওই মন্তব্যের পর মূলত দু’টি খনিজ নিয়ে সর্বাধিক চর্চা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমটি টাইটানিয়াম। প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম এবং মহাকাশ গবেষণায় এর বহুল ব্যবহার রয়েছে।
০৮২৩
দ্বিতীয় খনিজটির নাম লিথিয়াম। বৈদ্যুতিন গাড়ির ব্যাটারি থেকে শুরু করে মাইক্রোচিপ— সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের মেরুদণ্ড হল এই খনিজ। বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, এই ক্ষেত্রে আমেরিকার থেকে এগিয়ে রয়েছে চিন। আর তাই লিথিয়ামের মজুত যুক্তরাষ্ট্রে বাড়াতে চাইছেন ট্রাম্প।
০৯২৩
‘কিভ ইন্ডিপেন্ডেন্ট’-এর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এই দুই খনিজ বাদ দিলে ইউক্রেনের মাটির গভীরে রয়েছে সেরিয়াম, ইট্রিয়াম, ল্যান্থানাম এবং নিওডিয়ামিয়াম। সাম্প্রতিক সময়ে পুনর্নবীকরণ শক্তির দিকে নজর দিয়েছে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ। আর তাই এই খনিজগুলির চাহিদা দুনিয়া জুড়ে হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে।
১০২৩
পুনর্নবীকরণ শক্তি উৎপাদনে বায়ু টারবাইন জেনারেটরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এতে অতি শক্তিশালী চুম্বকের প্রয়োজন হয়। সেটি তৈরি করতে ব্যবহার করা হয় সেরিয়াম, ইট্রিয়াম, ল্যান্থানাম এবং নিউওডিয়ামিয়ামের মতো বিরল খনিজ।
১১২৩
ইউক্রেনের আর একটি সংবাদ সংস্থা ‘কিভ পোস্ট’ লিখেছে, গত বছর বিরল খনিজের বিনিময়ে হাতিয়ার ও গোলা-বারুদের সরবরাহ চালু রাখার বিষয়টি মার্কিন কর্মকর্তাদের কাছে তুলে ধরেন প্রেসিডেন্ট জ়েলেনস্কি। পরে এই ইস্যুতে তিনি বলেন, ‘‘আগ্রাসী রাশিয়ার মোকাবিলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে। আর তাই ওয়াশিংটনের খনি সংস্থাগুলিকে প্রবেশাধিকার দেওয়া ন্যায্য সিদ্ধান্ত হবে।’’
১২২৩
অন্য দিকে জ়েলেনস্কির এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করেছে রাশিয়া। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ বলেছেন, ‘‘ইউক্রেনীয় খনিজের বিনিময়ে হাতিয়ার সরবরাহ আমরা কখনওই মেনে নেব না। কিভকে এই সাহায্য করা হলে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বাধ্য হব আমরা।’’
১৩২৩
‘দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের অর্ধেকের বেশি রয়েছে রাশিয়ার দখলে। এর মূল্য ৭৫ লক্ষ কোটি ডলারেরও বেশি। সংশ্লিষ্ট খনিজগুলি পাওয়া যায় লুহানস্ক, ডনেৎস্ক, জ়াপোরিঝিয়া এবং খেরসন এলাকায়। এর মধ্যে খেরসনে খনির সংখ্যা সবচেয়ে কম।
১৪২৩
২০১৪ সালে ইউক্রেনের থেকে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ ছিনিয়ে নেয় মস্কো। ‘দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট’-এর দাবি, কৃষ্ণসাগর সংলগ্ন ওই এলাকাটিতেও রয়েছে ২৫,৮০০ ডলার মূল্যের খনিজ। এ ছাড়া ডনেৎস্ক এবং জ়াপোরিঝিয়ার সীমানাবর্তী দনিপ্রোপেট্রোভস্ক ওব্লাস্টে থাকা খনিজের বাজারমূল্য ৩৫ লক্ষ কোটি টাকা।
১৫২৩
২০২২ সালে সেপ্টেম্বরে ডনেৎস্ক, লুহানস্ক ও জ়াপোরিঝিয়া-সহ মোট চারটি এলাকায় গণভোট করান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বলা বাহুল্য, মস্কোর সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে হওয়া ওই নির্বাচনে ৯৯ শতাংশের বেশি ভোট যায় তাঁর পক্ষে। এর পর সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিকে রুশ ভূখণ্ড বলে ঘোষণা করেন তিনি।
১৬২৩
বর্তমানে দনিপ্রোপেট্রোভস্ক ওব্লাস্টের খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছে রুশ সেনা। ওই খনি এলাকাটির উপর যে কোনও মুহূর্তে আক্রমণ চালাতে পারে মস্কো। বিষয়টি নিয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন পোস্ট। সেখানে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের খনিগুলি রণক্ষেত্রের এতটাই কাছে যে সেখান থেকে কিছু উত্তোলন করা কার্যত অসম্ভব।
১৭২৩
চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন ট্রাম্প। কুর্সিতে বসার পর থেকেই পূর্ব ইউরোপে যুদ্ধ বন্ধ করার উপর জোর দিয়েছেন তিনি। এর প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে ইউক্রেনকে হাতিয়ার ও গোলা-বারুদ সরবরাহ বন্ধ করার নির্দেশেও সই করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
১৮২৩
ট্রাম্পের ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের হাতিয়ারের বিনিময়ে বিরল খনিজের টোপ ওয়াশিংটন গিললে পরিস্থিতি অন্য দিকে বাঁক নেবে। কারণ হাতে আসা খনিজ সম্পদ ছাড়তে নারাজ মস্কো। বিশ্লেষকদের দাবি, ইউক্রেনের জ্বালানি, ধাতু ও খনিজ পদার্থ মিলিয়ে ১,২০০ লক্ষ কোটি ডলারের সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ক্রেমলিনের।
১৯২৩
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি, হাতিয়ারের বিনিময়ে খনিজের টোপ দিয়ে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জ়েলেনস্কি। প্রথমত, বিভিন্ন রণাঙ্গনে রুশ বাহিনীর সঙ্গে কিছুতেই এঁটে উঠতে পারছে না তাঁর ফৌজ। প্রায় তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধ বিপুল প্রাণহানির জেরে সৈনিক সঙ্কটেও ভুগছেন তিনি।
২০২৩
দ্বিতীয়ত, যুদ্ধ শুরুর দিন থেকে ইউক্রেনকে হাতিয়ার ও কোটি কোটি ডলার দিয়ে সাহায্য করেছে আমেরিকা। সেই টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে জ়েলেনস্কির বিরুদ্ধে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ময়দানে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রকে টেনে নামাতে চাইছেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট। আর তাই অস্ত্রের বিনিময়ে বিরল খনিজের টোপ দিয়েছেন তিনি।
২১২৩
বিশেষজ্ঞদের কথায়, জ়েলেনস্কি জানেন কিছু দিনের মধ্যেই লড়াই বন্ধ করতে প্রবল চাপ তৈরি করবে আমেরিকা। সে ক্ষেত্রে বিপুল জমি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে তাঁর। আর তাই যুদ্ধবিরতির দর কষাকষিতে নিজের অবস্থান মজবুত করতে চাইছেন তিনি। এই অবস্থায় খনিজের লোভ দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যে রুশ ফৌজের দখলে থাকা এলাকা মুক্ত করার ‘মাস্টারস্ট্রোক’ দিয়েছেন জ়েলেনস্কি।
২২২৩
তবে ইউক্রেন প্রেসিডেন্টের ওই স্বপ্ন কত দূর সফল হবে, তা নিয়ে সন্দিহান আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা। পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, জ়েলেনস্কিকে সরানোর নীল নকশা আঁকা শুরু করে দিয়েছে আমেরিকা ও রাশিয়া। কিভে ক্ষমতা বদল না হলে যুদ্ধবিরতি যে সম্ভব নয়, তা একরকম বুঝে গিয়েছে ওয়াশিংটন ও মস্কো।
২৩২৩
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে বিশেষ সেনা অভিযান (স্পেশাল মিলিটারি অপারেশন) চালাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। ট্রাম্পের শপথের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে কথা বলতে আগ্রহী বলেও বার্তা দিয়েছেন তিনি। আন্তর্জাতিক মহলের অনুমান, খুব দ্রুত এক টেবিলে দেখা যাবে দুই রাষ্ট্রনেতাকে।