দীর্ঘ দিন ধরেই এফবিআইয়ের নজরে রয়েছে সাইবার অপরাধীদের কুখ্যাত গোষ্ঠী কন্টির সদস্যরা। অভিযোগ, আমেরিকার শত শত গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোয় আঘাত হেনে লক্ষ লক্ষ ডলারের লোকসান করেছে কন্টি। ইউরোপের বহু ক্ষেত্রের কম্পিউটার সার্ভারে ভাইরাস ঢুকিয়ে সেগুলির পরিষেবাও সাময়িক ভাবে স্তব্ধ করে দিয়েছিল তারা।
কন্টি আদতে এক ধরনের র্যানসমওয়্যারের নাম। বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোর কম্পিউটার সিস্টেমে ওই ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে তা ব্লক করে দেওয়াই কন্টির লক্ষ্য। এতে ওই সিস্টেমের পরিষেবা স্তব্ধ হয়ে গেলে তা চালুর জন্য মোট অঙ্কের অর্থ আদায় করে কন্টি। র্যানসময়ওয়্যারের নামেই নিজেদের গ্যাংয়ের নাম রেখেছে এর সদস্যরা। ট্রিকবটের মতো হ্যাকিং টুলও ব্যবহার করে কন্টি।
আমেরিকার দাবি, কন্টির মদতদাতাদের মধ্যে রয়েছে ভ্লাদিমির পুতিন সরকার। ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে কৌশলগত সুবিধা নেওয়ার জন্যই এ পদক্ষেপ ক্রেমলিনের। যদি সে দাবি বরাবরই অগ্রাহ্য করেছে রাশিয়া। তবে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পরের দিনই রাশিয়াকে নিজেদের সমর্থনের কথা জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেছিল কন্টি। এর পরই কন্টির বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতী হামলার সিদ্ধান্ত নেন বলে দাবি ওই ইউক্রেনীয় সাইবার বিশেষজ্ঞের।
পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের ইউক্রেনে জন্ম হলেও দীর্ঘকাল দেশের বাইরে ছিলেন ড্যানিলোর। নিজের দেশের দখল রাশিয়ার হাতে চলে যাক, তা কোনও ভাবেই চান না তিনি। ফলে এই যুদ্ধে সাইবার সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ হিসাবে তাঁর দক্ষতাকেই হাতিয়ার করেছেন ড্যানিলো। ইউরোপের আন্ডারগ্রাইন্ড সাইবার ক্রিমিনাল ইকনমি নিয়ে পড়াশোনাকেও কাজে লাগাচ্ছেন তিনি।
এর আগেও কন্টির কুকীর্তির বহু তথ্যপ্রমাণ ইউরোপীয় আধিকারিকদের হাতে তুলে দিয়েছেন দাবি ড্যানিলোর। তবে এ বার তাঁর লড়াই মাতৃভূমির খাতিরে। দেশে ফেরার পর তাঁর প্রিয়জনের ঘরবাড়ির আশপাশে মুহূর্মুহু বোমাবর্ষণ দেখেছেন তিনি। শুনেছেন, অসংখ্য নিরীহ নাগরিকের প্রাণহানির খবর। তাতেই তেতে উঠেছেন বলে দাবি ড্যানিলোর। এর পর অনলাইনে কন্টির তথ্য ফাঁস করে দিতে থাকেন তিনি। ড্যানিলো বলেন, ‘‘আমি গুলি করে লক্ষ্যভেদ করতে পারি না। তবে কিবোর্ড আর মাউস দিয়েই লড়াই চালাতে পারি।’’
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগে থেকেই ইউক্রেনের বহু সরকারি ওয়েবসাইটে হানা দিয়েছে অপরাধীরাও। তাতে মদত দিচ্ছে রাশিয়ার সামরিক গুপ্তচর সংস্থা জিআরইউ। যদিও এ দাবি অস্বীকার করেছে ক্রেমলিন। অন্য দিকে, রাশিয়ার বহু সংস্থায় হ্যাকিংয়ের জন্যও ভোলোদিমির জোলেনস্কি সরকার ‘সাইবারযোদ্ধাদের’ উৎসাহ দিয়েছেন বলে দাবি।
বস্তুত, এই যুদ্ধে যেন পার্শ্বযোদ্ধা হিসাবে কাজ করছেন হ্যাকারেরা। ড্যানিলোর মতো বহু ‘সাইবারযোদ্ধা’ই রাশিয়া অথবা ইউক্রেনের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধে নেমেছেন। তবে কন্টির মতো কুখ্যাত গোষ্ঠীর সার্ভারে হানা দেওয়ায় এফবিআইয়ের নজরে পড়ে গিয়েছেন ড্যানিলো। তার সঙ্গে যোগাযোগও করেছে এফবিআই। যদিও তারা কন্টির গোপন তথ্য প্রকাশ্যে না আনার অনুরোধ করেছে ড্যানিলোকে। এফবিআইয়ের আশঙ্কা, এতে সতর্ক হয়ে গিয়ে সার্ভার বদলে ফেলবে কন্টি। তখন তাদের ধরা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy