Who is JD(U) leader Anant Singh aka Chhote Sarkar arrested for death of Jan Suraaj supporter dgtl
Anant Kumar Singh
বহুমূল্য গাড়ি, পোষা অজগর, কোটি কোটির সম্পত্তি এবং ২৮টি মামলা! ভোটমুখী বিহারে জেলে যাওয়া ‘ছোটে সরকারের’ রয়েছে ‘অনন্ত প্রতিভা’
কে এই অনন্ত? কেন তাঁকে নিয়ে এত শোরগোল? অনন্ত ওরফে ‘ছোটে সরকার’ বিহারের পোড়খাওয়া এবং বিতর্কিত রাজনীতিবিদদের মধ্যে অন্যতম। বাহুবলীও বটে।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৫ ১৩:০১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
আগামী ৬ নভেম্বর বিহারে ভোটগ্রহণ। ঠিক তার পাঁচ দিন আগে খুনের দায়ে গ্রেফতার হয়েছেন বিহারের মোকামার জেডিইউ প্রার্থী অনন্ত সিংহ। অভিযোগ, প্রশান্ত কিশোরের জন সুরাজ পার্টির কর্মী ৭৫ বছর বয়সি দুলারচাঁদ যাদবকে খুন করেছেন তিনি এবং তাঁর সহযোগীরা।
০২২০
দুলারের নাতির অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার রাত ১১টা ৫০ মিনিট নাগাদ অনন্ত এবং তাঁর দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়। রাতেই সাংবাদিক বৈঠক করে সে খবর জানান এসএসপি কার্তিকেয় কে শর্মা। পুলিশের বক্তব্য, ঘটনাস্থলে এই তিন জন উপস্থিত ছিলেন। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই উত্তাল ভোটমুখী বিহার।
০৩২০
কিন্তু কে এই অনন্ত? কেন তাঁকে নিয়ে এত শোরগোল? অনন্ত ওরফে ‘ছোটে সরকার’ বিহারের পোড়খাওয়া এবং বিতর্কিত রাজনীতিবিদদের মধ্যে অন্যতম। বাহুবলীও বটে। অনন্তের জীবন মোকামা বিধানসভা কেন্দ্রের অস্থির ইতিহাসের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য ভাবে জড়িত। বহু অপরাধের সঙ্গেও নাম জুড়েছে তাঁর। কুখ্যাত হয়েছেন গ্যাংস্টার হিসাবে।
০৪২০
অপরাধজগৎ থেকে বিহারের রাজনীতির আঙিনায় প্রবেশ করা অনন্তের জন্ম নাদওয়ান গ্রামে। ভূমিহার সম্প্রদায়ভুক্ত অনন্ত দশকের পর দশক ধরে মোকামায় নিজের রাজনৈতিক খুঁটি পোক্ত করেছেন।
০৫২০
রাজধানী পটনা থেকে মোকামার দূরত্ব ১০০ কিলোমিটারও নয়। ২০০৫ সাল থেকে সেখানে ‘রাজত্ব’ চালাচ্ছেন অনন্ত। কখনও ভোটে হারেননি। মোকামা এবং তদ্সংলগ্ন এলাকায় অনন্তের প্রভাবও সর্বজনবিদিত।
০৬২০
বিহারের রাজনীতি সম্পর্কে যাঁরা ওয়াকিবহাল, তাঁরা বলেন, মোকামায় অনন্তের আলাদা ‘সরকার’ চলে। সেখানে তিনিই শেষ কথা। আর তাই তাঁর নাম, ‘ছোটে সরকার’।
০৭২০
মোকামার চার বারের বিধায়ক অনন্ত বিহারের রাজনীতিতে বর্ণময় চরিত্র। বেশির ভাগ সময়েই সাদা পোশাক পরে থাকেন। কপালে থাকে তিলক, চোখে থাকে কালো চশমা। পুরু গোঁফ পরিপাটি করে ছাঁটা।
০৮২০
১৯৯০ সাল থেকে মোকামার উপর লৌহমুষ্টি রয়েছে সিংহ পরিবারের। বিহারের তাবড় রাজনীতিবিদেরাও সে কথা জানতেন। অনন্তের দাদা দিলীপ সিংহ ছিলেন মোকামার বিধায়ক।
০৯২০
২০০৫ সালের নির্বাচনে মোকামা বিধানসভায় জিতে বিধায়ক হন অনন্তও। তার পর থেকে তাঁকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এর পর থেকে প্রায় দুই দশক ধরে জয়ের ধারা বজায় রেখেছেন তিনি।
১০২০
২০০৫ সালে অনন্ত প্রথম বিহার বিধানসভায় প্রবেশ করেছিলেন জেডিইউ-এর টিকিটে জিতে। ২০১০ সালে জেডিইউ-এর হয়েই আবার জেতেন। ২০১৫ সালে নীতীশ কুমার, লালু প্রসাদের আরজেডির সঙ্গে হাত মেলালে জেডিইউ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন অনন্ত। তখন নির্দল হিসাবে মোকামায় লড়েছিলেন, হারিয়ে দিয়েছিলেন জেডিইউ প্রার্থীকেই!
১১২০
এর পর নীতিশ-লালু আলাদা হলে ২০২০ সালের নির্বাচনের আগে আরজেডিতে যোগ দেন অনন্ত। রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে গেলেও মোকামার রাজনৈতিক সমীকরণ বদলায়নি। ক্ষমতা ছিল ‘ছোটে সরকারের’ হাতেই।
১২২০
২০২২ সালে অস্ত্র সংক্রান্ত একটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর বিধানসভার সদস্যপদ হারান অনন্ত। জেলে যেতে হয় তাঁকে। কিন্তু কারাগারে থাকাকালীনও তাঁর প্রভাব ছিল প্রবল।
১৩২০
নিজে বিধায়কপদ খোয়ালেও আরজেডির টিকিটে মোকামার উপনির্বাচনে স্ত্রী নীলম দেবীকে দাঁড় করিয়েছিলেন অনন্ত। ভোটে জিতে বিধায়ক হন নীলম। পরোক্ষ ভাবে ক্ষমতা থেকে গিয়েছিল সেই অনন্তের হাতেই।
১৪২০
সম্প্রতি পটনা হাই কোর্ট অনন্তকে বেকসুর খালাস করে। জেল থেকে বেরিয়ে আবার রাজনীতির ময়দানে প্রত্যাবর্তন হয় ‘ছোটে সরকার’-এর। তবে আসন্ন নির্বাচনের জন্য আরজেডি নয়, জেডিইউতে ফিরে এসেছিলেন অনন্ত। টিকিটও পেয়েছিলেন।
১৫২০
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অনন্তের রাজনৈতিক জীবন বর্ণময় হলেও তাঁর কাজকর্ম অমানিশার ঘোর অন্ধকারের মতো। মোকামা অঞ্চলে ‘ছোটে সরকার’-এর রাজনৈতিক এবং অপরাধমূলক প্রভাব রাজ্য প্রশাসনের প্রভাবকেও ছাপিয়ে গিয়েছিল বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
১৬২০
মনোনয়নপত্র অনুযায়ী, অনন্তের বিরুদ্ধে ২৮টি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে খুন, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, অত্যাচার, অপহরণ এবং হেনস্থার অভিযোগ অন্যতম। এ ছাড়া চুরি, অপরাধীদের আশ্রয় দেওয়া এবং অস্ত্র সংক্রান্ত একাধিক মামলাও রয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগের চেয়ে তাঁর পেশিশক্তি ব্যবহারের নজিরই রয়েছে বেশি।
১৭২০
বাহুবলী অনন্ত তাঁর বিলাসবহুল জীবনযাত্রার জন্যও বিখ্যাত। গবাদি পশুর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি গোশালা রয়েছে তাঁর। এ ছাড়াও রয়েছে দামি দামি ঘোড়া, হাতি এবং অজগর।
১৮২০
হলফনামা অনুযায়ী, একাধিক বিলাসবহুল গাড়ির মালিক অনন্ত। তাঁর কাছে ২ কোটির টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজ়ার এবং টয়োটা ফরচুনার এসইউভি রয়েছে। যদিও একটি অ্যান্টিক গাড়িতে চড়ে যাতায়াত করতেই বেশি পছন্দ করেন তিনি।
১৯২০
‘ছোটে সরকার’-এর সম্পত্তির পরিমাণও প্রচুর। অনন্তের নির্বাচনী হলফনামা বলছে, স্থাবর, অস্থাবর মিলিয়ে তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ৩৭.৮৮ কোটি টাকা। তাঁর স্ত্রী তথা মোকামার বর্তমান বিধায়কের ৬২.৭২ কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে।
২০২০
জন সুরাজ পার্টির কর্মীকে হত্যার ঘটনায় সেই অনন্তকেই এ বার গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জামিন না-পেলে জেলে বসেই নির্বাচন লড়তে হতে পারে অনন্তকে। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা অবশ্য তাতে ভোটের ফলাফলে খুব একটা ফারাক হবে বলে মনে করছেন না। কারণ ছোটে সরকার ‘বাহুবলী’। শ্রীঘরে বসেও তিনি শক্তিঘর।