Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Varun Dagar The Busker

মাথায় জটা, তবে পরনে গেরুয়া নেই! সাধু নন, তিনি ‘বাস্কর’

বছরখানেক ধরেই দিল্লির চেনা মুখ বরুণ ডগর। ইদানীং তিনি বার বার খবরে আসছেন। কখনও শিল্পপতি শেয়ার করেছেন তাঁর ভিডিয়ো, তো কখনও জুটেছে পুলিশের মার। তবে বরুণের কাছ থেকে শিল্প কেড়ে নেওয়া যায়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২৩ ১৩:০০
Share: Save:
০১ ২১
picture of Varundagar

ভবঘুরের মতো চেহারা। রাস্তাতেই ঘরবাড়ি। কাঁচির স্পর্শ না পেয়ে পিঠ ছাপিয়ে কোমর ছুঁয়েছে চুল। সেই চুলে ধুলোয়, অযত্নে তৈরি হয়েছে জটা। তবে তাঁর পরনে গেরুয়া বসন নেই। তিনি কোনও সাধুও নন।

ছবি: সমাজ মাধ্যম

০২ ২১
picture of Varun Dagar

বয়স বছর ২৩। ইন্টারনেটের তথ্য বলছে উচ্চতা ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি। এখানে ফেলুদার মতো পাঠক প্রশ্ন করতে পারেন, প্রথমে কি উচ্চতাই দেখেন? উঁহু, আসলে বাকি তথ্য পেতে ইন্টারনেটের তথ্যভান্ডার না দেখলেও চলে। ভবঘুরে যুবকের ইনস্টাগ্রাম পেজে দেখা যাচ্ছে, তাঁর গৌর বর্ণ, পেটানো হিলহিলে চেহারা। সেই চেহারাকে যখন -তখন বেঁকিয়েচুরিয়ে নাচের বিভঙ্গ তৈরি করতে পারেন তিনি। আর সেই বিভঙ্গ চর্মচক্ষে দেখতে ভিড় জমে রাস্তায়। টাকায় ভরে ওঠে তাঁর ঝুলি।

ছবি: সমাজ মাধ্যম

০৩ ২১
picture of Varun Dagar

রাস্তার উপরেই রাখা থাকে তাঁর উলের টুপিখানা। ভিতরে দশ, বিশ, পঞ্চাশের নোট, কিছু খুচরো কয়েনও। রাজধানীর অফিসপাড়ায় যখন সবে বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামে, তখনই বড় রাস্তার ধারের শানবাঁধানো চত্বরে সেই টাকাভর্তি টুপিটা নামিয়ে রাখেন ভবঘুরে টুপির মালিক।

ছবি: সমাজ মাধ্যম

০৪ ২১
picture of Varun Dagar

টুপির কাছেই থাকেন তিনি। কখনও শরীরে ঢেউ তোলেন, কখনও বনবনিয়ে ঘুরে অদ্ভুত ভঙ্গিতে নাচেন। হাঁ করে সেই অদ্ভুত কসরত দেখে উৎসাহী জনতা। তাঁদেরই কেউ কেউ এগিয়ে এসে টাকা রেখে দিয়ে যান টুপির ভিতরে। ভবঘুরে নাচিয়ে অবশ্য তখন সে দিকে দৃকপাতও করেন না।

ছবি: সমাজ মাধ্যম

০৫ ২১
picture of Varun Dagar

বরং ক্লান্ত হলে বসে পড়েন রাস্তার কোনও দেওয়ালে ঠেস দিয়ে। কখনও বা বন্ধ দোকানের সামনে। কোথা থেকে যেন তাঁর হাতে উঠে আসে এক পুরনো গিটার। তাতে সুর তোলেন। গান ধরেন। সুরেলা গলায় খেলে যায় মিষ্টি সুর। তাতে গেঁথে থাকে অজানা সব শব্দ। শ্রোতারা দাঁড়িয়ে ভাবেন, আগে তো এ গান শুনিনি। অথচ অনভ্যস্ত কানে শুনতে মন্দ লাগছে না।

ছবি: সমাজ মাধ্যম

০৬ ২১
picture of Varun Dagar

গান শুনে দাঁড়িয়ে পড়েন অনেকে। কেউ কেউ আবার গান শুনতে ফিরেও আসেন। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মগ্ন ভবঘুরের গিটার বাজানো গানের ভিডিয়ো করেন। আশপাশের মানুষের কাছে জানতে চান কে ইনি? দেখে তো পাগল মনে হয় না! কোনও ভাল ঘরের সন্তান নাকি? কিসের দুঃখ ওঁর গানে?

ছবি: সমাজ মাধ্যম

০৭ ২১
picture of Varun Dagar

এ তো গেল অনুরাগীদের কথা। বিদ্বেষীও কম নেই তাঁর। তাঁরা আবার পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে আড়চোখে চেয়ে মন্তব্য ছোড়েন, ‘ভিক্ষার নয়া ফন্দি’!

ছবি: সমাজ মাধ্যম

০৮ ২১
picture of Varun Dagar

যাঁকে লক্ষ্য করে উড়ে আসে মন্তব্যগুলি তাঁকে দেখলে হঠাৎ জিশু খ্রিস্টের কথা মনে পড়ে যেতে পারে। মনে পড়তে পারে আফ্রিকান পপ গায়ক বব মার্লের কথাও। আবার হলিউডের জনপ্রিয় সিনেমা সিরিজ় ‘পাইরেটস অফ ক্যারিবিয়ান’-এর ভূতুড়ে ডাকাত সর্দার জ্যাক স্প্যারোকেও মনে পড়ে পারে। সাধুর মতো দেখতে ওই যুবকের নাম বরুণ ডগর। সময়বিশেষে রাস্তার ‘মঞ্চে’ এই তিন জনের চরিত্রেই অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে এই তরুণকে।

ছবি: সমাজ মাধ্যম

০৯ ২১
picture of Varun Dagar

বছরখানেক ধরেই দিল্লির কনট প্লেস এলাকার চেনামুখ বরুণ। ইদানীং তিনি বার বার খবরেও আসছেন। কখনও শিল্পপতি আনন্দ মহিন্দ্রা শেয়ার করেছেন তাঁর নাচের ভিডিয়ো তো কখনও জুটেছে পুলিশের মার। তবে বরুণের হাত থেকে গিটার কেড়ে নেওয়া যায়নি। পায়ের তলা থেকে সরিয়ে নেওয়া যায়নি দিল্লির কনট প্লেসের মঞ্চকেও। উল্টে দেশের অভিনয় জগৎ, গানের জগতের তারকারা সমর্থন করেছেন বরুণকে।

ছবি: সমাজ মাধ্যম

১০ ২১
picture of Varun Dagar

কে এই বরুণ? কেনই বা তাঁকে নিয়ে এত আলোচনা? বরুণকে কিন্তু নাচের জগতের অনেকেই চেনেন। বছর দুয়েক আগে একটি প্রথম সারির বেসরকারি টিভি সংস্থার নাচের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান ‘ইন্ডিয়া’জ় বেস্ট ডান্সার’-এর দ্বিতীয় সিজ়নে অংশগ্রহণ করেছিলেন বরুণ। সেখান থেকেই তার নাম ছড়াতে শুরু করে। সংস্কৃতির জগতের মানুষ জানতে পারেন বরুণের লড়াইের গল্প।

ছবি: সমাজ মাধ্যম

১১ ২১
picture of Varun Dagar

বাড়ি হরিয়ানায়। ছোট থেকেই শখ অভিনেতা হওয়ার, বিখ্যাত হওয়ার। গলায় সুর ছিল। কবিতাও লিখতেন। কিন্তু বাবা- মাকে নিজের শখের কথা জানালেও তাঁরা বরুণকে সমর্থন করেননি। ১৭ বছর বয়সে তাই স্বপ্নের সন্ধানে বাড়ি ছাড়েন বরুণ। চলে আসেন দিল্লিতে। ভবঘুরের মতোই থাকতে শুরু করেন রাস্তাঘাটে।

ছবি: সমাজ মাধ্যম

১২ ২১
picture of Varun Dagar

কঠিন ছিল সেই জীবন। কিন্তু বরুণ লড়ে গিয়েছেন। যে ভাবে হোক দিন কাটিয়েও স্বপ্নকে ভোলেননি। আজ বরুণ নিজের পরিচয় দেন ‘বাস্কার’ বলে। বাস্কার হল এমন এক শিল্পী যিনি রাস্তায় তাঁর শিল্পের প্রদর্শন করেন। অথবা এমন কোনও জায়গায়, যেটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। মানুষের মনোরঞ্জন করে তার বদলে পুরস্কারের আশা রাখেন তাঁরা। তবে এ ধরনের শিল্পীরা নিজে থেকে কারও কাছে হাত পাতেন না। ভাল লাগলে যে যা দেন তাতেই সন্তষ্ট থাকেন।

ছবি: সমাজ মাধ্যম

১৩ ২১
picture of Varun Dagar

বরুণও রাস্তায় তাঁর টুপিটি উল্টে রেখে তাঁর শিল্পের প্রদর্শন করেন। কখনও কনট প্লেসের রাস্তায়, কখনও কোনও শপিংমল চত্বরে বসে আসর। ভিড় জমতে দেরি হয় না। ছোট্ট টুপি মুহূর্তে উপচে পড়ে ‘পুরস্কারে’।

ছবি: সমাজ মাধ্যম

১৪ ২১
picture of Varun Dagar

তবে এর পাশাপাশি বরুণ অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন নাচ কিংবা গানের প্রতিযোগিতায়। ইদানীং বড় মঞ্চেও প্রায়ই তাঁর ডাক পড়ে।

ছবি: সমাজ মাধ্যম

১৫ ২১
picture of Varun Dagar

কিছু দিন আগে দিল্লির এক ফ্যাশন শোয়ে অনুষ্ঠান করেছেন। দিন কয়েক আগে নিজের ইনস্টাগ্রাম পেজে একটি পোস্টার দিয়ে বরুণ ঘোষণা করেছিলেন, তিনি তাঁর অর্জিত শিল্প শেখানোর ক্লাস করাবেন। সেই পাঠশালা বসবে চণ্ডীগড়ে। ইচ্ছুকেরা যোগ দিতে পারেন।

ছবি: সমাজ মাধ্যম

১৬ ২১
picture of Varun Dagar

এককালে ভবঘুরে বরুণ তা হলে কত উপার্জন করেন? বরুণ অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি সেই হিসাব রাখেন না। রোজ যা পান, এক জায়গায় জমা করেন। দরকার মতো সেখান থেকেই আবার নিয়ে খরচ করেন। এক সাক্ষাৎকারে বরুণ বলেছেন, তাঁর টাকা গুনতে ভাল লাগে না।

ছবি: সমাজ মাধ্যম

১৭ ২১
picture of Varun Dagar

কিন্তু তিনি কি চিরকাল এ ভাবে রাস্তাতেই অভিনয়, নাচ, গান নিয়ে পড়ে থাকবেন? বলিউড যদি ডাকে, সাড়া দেবেন না? বরুণ জানিয়ছেন, "বলিউডে সে রকম চরিত্র পেলে যাব। তা না হলে আমার রাস্তা তো রয়েছেই। এই রাস্তা আমাকে ছেড়ে যাবে না।"

ছবি: সমাজ মাধ্যম

১৮ ২১
picture of Varun Dagar

বরুণের বক্তব্য তিনি শিল্পী। তাঁর কাজ শিল্পের সাধনা করা। অনেকেই তাঁর এই সাধনা নিয়ে বিদ্রুপ করেন! কেউ কেউ তাঁর পেশাকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘আরে বাস্কর অব বস কর’ অর্থাৎ ওহে বাস্কর, এ বার থামো। কিন্তু তাতে কিছুই যায় আসে না তাঁর।

ছবি: সমাজ মাধ্যম

১৯ ২১
picture of Varun Dagar

পুলিশের অত্যাচারের কথাও জানিয়েছেন পথশিল্পী বরুণ। যে দিন পুলিশ এসে তাঁকে উৎখাত করেছিল, সে দিন নিজের শিল্পী পরিচয় দিয়েও লাভ হয়নি বরুণের। পুলিশের লাঠির বাড়ি পরেছে শীর্ণ শরীরে। কনুইয়ের আঘাত বার বার লেগেছে পেটে। ব্যথা পাচ্ছেন জানাতে জুটেছে ধমক। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বরুণের ভক্তদের দৌলতে তাঁকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে দিল্লি পুলিশ।

ছবি: সমাজ মাধ্যম

২০ ২১
picture of Varun Dagar

বরুণ অবশ্য তার পরও পুলিশের পরোয়া করেননি। গিটার হাতে নেমেছেন পথে। বলেছেন, আবার পুলিশ এলে দেখা যাবে। তবে দিল্লি পুলিশের অফিসারদের অনেকেই তাঁকে চিনে গিয়েছেন। তাঁদের অনেকেই কিছু বলেন না।

ছবি: সমাজ মাধ্যম

২১ ২১
picture of Varun Dagar

ইনস্টাগ্রামে সাড়ে চার লক্ষ অনুরাগী বরুণের। নিয়মিত সেখানে থাকে বরুণের নাচ এবং গানের আপডেট। ইতিমধ্যেই স্বরচিত দু’টি গান ইন্টারনেটে মুক্তি পেয়েছে। তবে সেই দু’টিতেই আটকে থাকতে চান না বরুণ। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর গান এবং তাঁর নিজের স্টাইলের নাচকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে প্রাণপাত করতেও রাজি তিনি। কারণ তিনি শিল্পী। আর শিল্পকে বাঁচানোই তাঁর একমাত্র কর্তব্য।

ছবি: সমাজ মাধ্যম

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE