E-Paper

কবুতর

ব্যোমকেশবাবুর বয়স তাঁর মতোই বলে মনে হয় সমিধবাবুর। ওই চল্লিশের আশপাশে হবে। মহুয়া গত কয়েক দিন ধরেই মাথা খেয়ে নিচ্ছে ওঁর ‘কবুতর’ বইটা পড়ার জন্য।

নয়ন বসু

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:১৭
ছবি: প্রসেনজিৎ নাথ।

ছবি: প্রসেনজিৎ নাথ।

সমিধবাবু বইটা খুলে চমকে উঠলেন।

এ আবার কী রে বাবা! বইয়ের সবগুলো পৃষ্ঠা যে একেবারে সাদা! এক্কেবারে দাগহীন সাদা, যেন মনে হচ্ছে আঁকার খাতা। এক্ষুনি বুকান এসে বলবে, “বাবা খাতাটা দাও তো, একটা সিনারি এঁকে ফেলি!”

সমিধবাবু আবার বইয়ের কভারটা দেখলেন। নাহ্, স্পষ্ট একটা সাদা পায়রার ছবি। মিটমিটে তারায় ভরা কালো একটা আকাশের নীচ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। মাথার উপর সাদায় লেখা আছে বইয়ের নাম, ‘কবুতর’। ঠিক তার নীচেই জ্বলজ্বল করছে লেখকের নাম, ব্যোমকেশ সামন্ত।

হুঁহ্! নামের বাহার দেখে আর বাঁচি না! একেবারে ব্যোমকেশ। নাম দেখেই মনে হচ্ছে, একটা জালি লোক হবে। তার আবার বই, সেই বই আবার সমিধবাবুর বৌ মহুয়ার ফেভারিট!

বইয়ের পিছনের পাতায় লেখকের একটা ছবিও আছে। সমিধবাবু আগেও দেখেছেন, আবার এক বার দেখলেন ছবিটা ভাল করে। দেখলেন বলার চেয়ে মাপলেন বলা বেশি সুপ্রযুক্ত। একটা খাদির পাঞ্জাবি পরে আছেন লেখক ভদ্রলোক। কায়দা করে দাঁড়ানো, চোখে একটা রিমলেস চশমা। আহা, দাঁড়ানোর কী ছিরি! দেখেই মনে হয়, এক্ষুনি বাসের সবাই ‘পকেটমার পকেটমার’ বলে মারতে আসবে।

ব্যোমকেশবাবুর বয়স তাঁর মতোই বলে মনে হয় সমিধবাবুর। ওই চল্লিশের আশপাশে হবে। মহুয়া গত কয়েক দিন ধরেই মাথা খেয়ে নিচ্ছে ওঁর ‘কবুতর’ বইটা পড়ার জন্য। কী, না ব্যোমকেশ সামন্তর লেখা! এই বই পড়ে মহুয়া আবার লেখককে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে! ইনবক্সে পাঠিকার মুগ্ধতার কথাও জানিয়েছে! কেমন লেখক রে বাবা, তিনি আবার অ্যাকসেপ্টও করে নিয়েছেন সেটা!

লেখক ছিলেন সেই যুগে! সমিধবাবু মনে মনে ভাবেন। বিমল কর, জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী, সুবোধ ঘোষ। পাঠকের থেকে লেখক দূরে থাকবেন, এটাই দস্তুর। লেখক হবেন দূর গ্রহের বাসিন্দা। তবে না তিনি সুদূর আকাশের তারা!

তা নয়, হাত বাড়ালে যেমন মুদির দোকানের সুখেনকে ছোঁয়া যায়, দু’টি গাল দেওয়া যায়, লেখকও এখন তেমন হাতের মোয়া হয়ে গেছে। আদিখ্যেতা যত সব! নিজের মনেই আবার গজগজ করে ওঠেন সমিধবাবু।

কিন্তু এ আবার কী আজব সমস্যায় পড়া গেল! বইয়ের কভার দেখা যাচ্ছে, পিছনে লেখকের চোর-চোর পানা ছবিটা দেখা যাচ্ছে, এ দিকে সব ক’টা পাতা সাদা। অথচ এই একই বই মহুয়া পড়েছে!

সমিধবাবু এক বার ভাবলেন, মহুয়ার কি চোখ খারাপ হল নাকি? কী পড়তে কী পড়েছে! অথচ কই, এই তো সে দিন মাইনের টাকা ঢুকল। সমিধবাবু ব্যাঙ্ক থেকে পাসবই আপডেট করে আনলেন। দিব্যি দেখে বলল, “একটু জমেছে, এই মাসে তা হলে বুকানের ওই দামি রংগুলো, প্যালেট, এ সব কিনে নেওয়া যাবে।”

নাহ্, মহুয়ার চোখ ঠিকই আছে। কিন্তু আজ যে করে হোক বইটা পড়তেই হবে। মহুয়া গোটা গত সপ্তাহ ধরে, “বইটা পড়ো! পড়ো!” বলতে বলতে মাথা খারাপ করে দিয়েছে। তাও সমিধবাবুর আগ্রহ নেই দেখে শেষ দু’দিন কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছে।

এই একটি জায়গায় সমিধবাবু বড় অসহায় হয়ে পড়েন। স্ত্রী কথা বলা বন্ধ করে দিলে। আরে বাবা, কোথাকার কে চোর-চোর দেখতে ব্যোমকেশ বক্সী না ব্যোমকেশ সামন্ত তোমার প্রিয় লেখক হতে পারে, তো আমার কী! তাকে ইনবক্স করো, ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাও, তোমার ব্যাপার। আমার ওই বই পড়ার কোনও আগ্রহ নেই। ব্যস!

কিন্তু সংসারে ‘ব্যস’ এর পরেও কথা বাকি থাকে। সমিধবাবুকে শায়েস্তা করার ব্রহ্মাস্ত্র এত দিনে মহুয়া জানে। ওই, কথা বলা বন্ধ করা।

আরে বাবা ঝগড়া করো, বাড়িতে কাক-চিল বসবে না, সেও আচ্ছা। নিজের বাড়িতে এমন শ্মশানের স্তব্ধতা মানা যায়!

অগত্যা আজ সন্ধেবেলা অফিস থেকে ফিরেই সমিধবাবু ‘কবুতর’ খুলে বসেছেন। এবং বসেই এই বিপত্তি। মহুয়া বোধহয় রান্নাঘরে। বছর দশের বুকান মেঝেতে আঁকার খাতা খুলে প্রাণপণে প্যাস্টেল ঘষে চলেছে। কী যে আঁকছে কে জানে। না বাঘ, না হাতি, না বেড়াল, না আর অন্য কিছু। মডার্ন আর্ট হবে বোধহয়, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবেন সমিধবাবু।

এ দিকে মহুয়াকে ডেকে যে বলবেন, “তোমার প্রিয় লেখক বই লিখেছেন না আঁকার খাতা লিখেছেন, বোঝা যাচ্ছে না তো!” সেই সাহসও জুটিয়ে উঠতে পারছেন না উনি। সারা দিন অফিসের হ্যাপা সামলে আসার পর এই নির্জন পুরীতে ঢুকতে ভাল লাগে!

বিরক্তিভরে সমিধবাবু বইটা খাটের মাথার পাশের ছোট্ট টেবিলটায় অনেকটা ছুড়ে ফেলার মতো করে ফেলে দিলেন। থ্যাপ করে একটা শব্দ হল।

বিপত্তিটা ঘটল রাতে খেতে বসে। একে মেজাজ ফর্দাফাঁই হয়ে আছে কয়েক দিন ধরে। তার উপর আজ মাছওয়ালা সুন্দরের কাছে পেটি ছিল মোটে দুটো। সেই দুটো বুকানের বরাদ্দ। এ দিকে সমিধবাবু নিজে এই বয়সেও গাদার পিসে ঠিক স্বচ্ছন্দ নন। এখনও ছোট ছোট কাঁটায় যমের মতো ভয় পান।

খাবার টেবিলে শুধু প্লেট বাটি হাতার ঠুংঠাং ছাড়া আর কোনও শব্দ নেই। মহুয়া তিরিক্ষি মেজাজে বুকানকে বলছে, “তাড়াতাড়ি খেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়, নইলে কাল সকালে ওঠার সময় যদি ঝামেলা করিস, একটা মারও বাইরে পড়বে না!”

তার মধ্যেই হঠাৎ সমিধবাবু, ‘ওয়াক’ করে একটা সন্দেহজনক শব্দ করে বসলেন। সঙ্গে সঙ্গে মহুয়া আর বুকানের চোখ ঘুরে গেল ওঁর দিকে। তার পর আর একটা ‘ওয়াক!’ মুখে যা ছিল, সামনের প্লেটে ফেলে দিয়েছেন সমিধবাবু।

মহুয়া উঠে এসেছে। সমিধবাবুর মুখচোখ ধীরে ধীরে পাল্টে যাচ্ছে। পরিস্থিতি ঠিক সুবিধের নয় বুঝে বুকানের মুখেও একটা পাতলা ভয়ের আস্তরণ সরের মতো ভাসছে।

“কী গো, কাঁটা ফুটেছে নাকি?”

মহুয়া জিজ্ঞেস করছে। সমিধবাবু কিছু একটা বলার চেষ্টা করছেন, কিন্তু কিছু বলতে গেলেই বুঝতে পারছেন, গলার কাছে একটা তীক্ষ্ম জিনিস খোঁচা মারছে। কথা বলা খুব একটা সমীচীন হবে না এই সময়।

“আরে ভাতের গরাস চটকে খাও ওই জায়গাটা দিয়ে!” মহুয়া যেন আর্তনাদ করে বলে উঠল।

সমিধবাবু ঠিক নড়াচড়াও করতে পারছেন না। মুখ নিচু করেই প্লেটের এক পাশ থেকে একটু ভাত নিয়ে মুখে পুরে চিবোতে থাকলেন। তার মধ্যেই দেখলেন মহুয়া হন্তদন্ত হয়ে রান্নাঘরের দিকে ছুটেছে। সেখান থেকে ওর গলা পেলেন, “ধুত্তেরিকা! আজই বাড়িতে একটাও পাতিলেবু নেই!”

সমিধবাবু তখনও ওভাবেই বসে। ভাতের গরাসে এই মোক্ষম কাঁটা ঘায়েল হয়নি। সে অবশ্য ওঁর বসার ভঙ্গি দেখেই মালুম পড়ছে। ওর মধ্যেই বুকানের মুখটা দেখে একটু মায়া-মায়াও লাগছে। আহা, ছেলেটা বড্ড ভয় পেয়ে গেছে। এর আগে এমন জিনিস যে সে দেখেনি তা নয়, কিন্তু সে নিজেও বুঝতে পারছে, আজকের পরিস্থিতিটা অন্য দিনের তুলনায় গুরুতর।

“দাঁড়াও, আমি একটু আলুভাতে নিয়ে আসি!”

মহুয়া আবার ছুটতে ছুটতে রান্নাঘরে চলে গেল। সমিধবাবু এক বার মনে মনে ভাবলেন, উনি হাসপাতালের একটা সাদা বেডে শুয়ে আছেন। এক জন গোমড়ামুখো ডাক্তার ওঁর দিকে তাকিয়ে একটা ভয়ানক হাসি হাসছে। ডাক্তারবাবুর হাতে একটা ইয়াব্বড় সাঁড়াশি। ডাক্তারবাবুর মুখটা কেমন চোর-চোর দেখতে।

মহুয়া কোথা থেকে একটু আলুভাতে এনেছে। কোঁৎ করে গিলে নিলেন সমিধবাবু। দেখতে পেলেন, ঢোঁক গিলে মহুয়া জিজ্ঞেস করছে, “গেল?”

সমিধবাবু গম্ভীর হয়ে দু’দিকে ঘাড় নাড়লেন। কাঁটা যায়নি। গ্যাঁট হয়ে যেখানে থাকার সেখানেই বিরাজ করছে। হঠাৎ সমিধবাবু দেখলেন, মহুয়া আকুল হয়ে বলছে, “বুকান দেখ, তোর বাবা কেমন সবুজ হয়ে যাচ্ছে!”

বিস্তর গলা ভাত, ঘিয়ে মাখা আলুভাতে, কুসুম-কুসুম ফোটানো গরমজলেও যখন কিছু হল না, মহুয়া নিদান দিল, “চলো, হাসপাতাল যেতে হবে।”

সমিধবাবুর চোখে আবার ভেসে উঠল একটু আগের দৃশ্যটা। চোখে জল এসে যাচ্ছিল ওঁর। ঘড়িতে সময় দেখলেন, এগারোটা। খেতে বসেছিলেন তখন দশটা হবে। ওই সময় নাগাদই রাতের খাবার খাওয়া হয়।

মহুয়া যখন শাড়ি পরবে বলে বড় ঘরের দিকে যাচ্ছে, ঘড়িতে তখন প্রায় সাড়ে এগারোটা, বেচারা বুকান তখনও এঁটো মুখে খাবার টেবিলে বসে, সমিধবাবু লটারির টিকিট পাওয়ার মতো গলায় বলে উঠলেন, “চলে গেছে!”

মুহূর্তে ঘরের আবহাওয়া বদলে গেল। বুকান হাততালি দিয়ে উঠল, “ইউরেকা! ইউরেকা!” বলে।

মহুয়া এমন একটা মুখ করে তাকাল, যেন এত বড় শয়তান এই জীবনে সে আর দুটো দেখেনি!

সমিধবাবু উঠে মুখ-হাত ধুলেন। বাড়িতে আবার সেই বিচ্ছিরি স্তব্ধতাটা ফিরে এসেছে। মহুয়া খাবার টেবিল থেকে এঁটো কাপ প্লেট ডিশ তুলছে। সমিধবাবু ঘষে ঘষে বুকানের মুখ থেকে শক্ত হয়ে যাওয়া খাবারের দাগ তুলছেন।

শুতে আসার সময় মহুয়া বলল, “তুমি শিয়োর যে কাঁটা চলে গেছে?”

অনেকটা আকাশ থেকে পড়ার মতো মুখে সমিধবাবু বললেন, “আরে ঢোঁক গিললে ওই জায়গাটায় আর লাগছে না, আবার কী হবে!”

কেমন একটা সুর করে একই সঙ্গে একটু উদাসীন, আবার একটু অন্য রকম করে মহুয়া বলল, “অনেক সময় বোঝা যায় না। আমি জেগে আছি। যদি আবার মনে হয় বলবে, হাসপাতাল যাব।”

সমিধবাবু কিছু বললেন না। খাটের এ দিকে শুয়ে তিনি দেখলেন, মহুয়া আজ মাঝখানে শুয়েছে। অন্য দিন ওদের মাঝে বুকান থাকে। মহুয়া মাথায় আলতো চাপড় দিয়ে বুকানকে ঘুম পাড়াচ্ছে। বুকান আর তিনি নিজে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়েছেন। মহুয়া খাটের লাগোয়া দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে।

কত রাতে যে সমিধবাবুর ঘুমটা ভাঙল তিনি নিজেও ঠিক বুঝতে পারলেন না। সাধারণত ওঁর খুব গভীর নিদ্রা হয়। এক ঘুমে রাত কাবার।

একটু ধাতস্থ হয়ে ঘুম ভাঙার কারণটা বুঝতে পারলেন তিনি। মহুয়া ওই অবস্থায় বসে বসেই কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছে। কে জানে, হয়তো অপেক্ষা করছিল সমিধবাবু উঠে বলবেন, ‘বুঝলে, এখনও মনে হচ্ছে গলার কাছটা খচখচ করছে!’ আর আবার মহুয়া শাড়ি পরতে যাবে। ব্যাগে দেখবে খুচরো আছে কি না, ট্যাক্সিভাড়া আছে কি না, মেডিক্লেমের কাগজও নিতে পারে, সঙ্গে আধার কার্ড।

ঘুমোতে ঘুমোতে মহুয়ার একটা হাত আলগোছে ওর কোল থেকে গড়িয়ে সমিধবাবুর মাথায় পড়েছে। সেই হাতটা খুব সাবধানে, যাতে ঘুম না ভেঙে যায় মহুয়ার, এমন করে তুলে একটু উঠে দেখলেন সমিধবাবু। মহুয়ার আর একটা হাত বুকানের মাথায়।

একটা গভীর শ্বাস ফেলে সমিধবাবুও উঠে বসলেন। মহুয়ার মতো করে। ঘরের জানলা খোলা। একটু দূরের ল্যাম্পপোস্টের হলুদ আলো এসে পড়েছে মহুয়ার ঘুমন্ত মুখে। আকাশ দেখা যাচ্ছে। সমিধবাবু দেখতে পেলেন, রাতের আকাশে বেখেয়ালে ইতিউতি সাদা-সাদা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। আধখানা ভাঙা চাঁদ উঠেছে। আর এক বার তিনি মহুয়ার মুখের দিকে তাকালেন। যে হাতটা একটু আগে ওঁর মাথায় লেগে ছিল, সেই হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে আলতো
চাপ দিলেন। ঘুমের মধ্যেই মহুয়া ‘উহ্‌’ করে একটা আধো আদরের শব্দ জাগিয়ে সমিধবাবুর হাতটা জড়িয়ে ধরল।

উনি দেখলেন, ঘরের মেঝেতে বুকানের আঁকা শিল্পকলাটি সম্পূর্ণ হয়েছে। খাওয়ার পরবর্তী উত্তেজনায় তখন খেয়াল করা হয়নি। বুকান একটা মুখ এঁকেছে। খুবই বিচ্ছিরি হয়েছে মুখটা। মানুষ, এটুকুই শুধু বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু কিম্ভূতকিমাকার মানুষটার পরনে একটা বেগুনি শার্ট, পকেট থেকে একটা পেনের ডাঁটি বেরিয়ে আছে। ঘরের আলনাটার দিকে এক বার তাকালেন সমিধবাবু। অফিস থেকে ফিরে বেগুনি শার্টটা ওখানেই ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। এখনও ঝুলছে ওটা।

খাটের পাশের টেবিলটা থেকে মহুয়ার বলা বইটা তুলে নিলেন উনি। একটা হাত ঘুমন্ত মহুয়ার কবলে। ছাড়াতে গেলে বেচারির ঘুম ভেঙে যাবে। বইটা ছোট, হার্ডবাউন্ড। দুটো পায়ের মাঝখানে ব্যালান্স করে রেখে আর একটা হাতে সন্তর্পণে বইটা খুললেন তিনি।

জানলা দিয়ে আসা আলোয় বই পড়া যায় না। কিন্তু সমিধবাবু দেখতে পেলেন, রাতের ভ্রাম্যমাণ মেঘের মধ্য দিয়ে, তারায় ভরা আকাশের মধ্য দিয়ে, ভাঙা চাঁদের আড়াল থেকে খোলা জানলা দিয়ে লক্ষ লক্ষ সাদা কবুতর ডানা ঝটপট করতে করতে এসে ঢুকে যাচ্ছে সাদা-সাদা পাতাগুলোয়, আর ছোট ছোট, কালো কালো অক্ষর হয়ে মুক্তোর মতো
ফুটে উঠছে।

আবছা আলোয় সমিধবাবুর মনে হল— বইয়ের প্রথম লাইন, ‘সমিধবাবু বইটা খুলে চমকে উঠলেন।’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bengali Short Story Short story

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy