Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Short story

novel: ডানায় ডানায়

একটু ক্ষণের মধ্যেই নিজেকে সামলে নিল গরিমা। থমথমে মুখে চলে গেল নিজের চেয়ারে। একটু পরেই সে বেরিয়ে যাবে।

রূপক ঘটক
শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২১ ০৯:১০
Share: Save:

আজ সকালেও সেই খারাপ লাগাটাই কাঁধে টোকা মেরে তাকে ঘুম থেকে তুলে দিল। আর তার পর থেকেই এই রকম বেপথু হয়ে বসে আছে সে। এক বার বসার জায়গার দিকে তাকাল। চেয়ারটা একটু বেঁকিয়ে রাখা। ওখানেই কাল পায়ের ওপর পা রেখে বল্লাল বসেছিল। কথা বলছিল। এমন কথা যা সময়ের হিসেব রাখেনি। আর আজ সময় কাটছেই না। কী এমন হল তার? নিজেকে জোর করে হাসিখুশি করতে চাইল তমা। হল না। কিন্তু কেন? তা হলে বল্লালই কি তার ঠিক জুড়ি? সুখুচরের বুড়িদির কথা মনে পড়ল। তা হলে সে কি এত দিনে তার আদর্শ জুড়িকে খুঁজে পেল? ছাত্রীদের ভাষায় সোলমেট? এটা মনে হতেই পলকে মন ভাল হয়ে গেল তার। তমা চট করে উঠে বসল। আজ তার সাপ্তাহিক ডে অফ। নিকুচি করেছে অফের! কাল ডুব দিয়েছিল কলেজ। কিছু কাজ তো আছেই। তাই কলেজ যাবে বলে তৈরি হল। বেরনোর পর দেখল খুব রোদ উঠেছে বাইরে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। তাও রোদ ভাল লাগল তার। হঠাৎ সারা দুনিয়াটাই সুন্দর হয়ে উঠল তার কাছে। হাঁটতে লাগল সে। হাঁটতে হাঁটতে ফোনে ধরল বল্লালকে। শুরু হল কথার এক্সপ্রেস।

কলেজে গরিমা তাকে দেখে চমকে গেল। বলে উঠল, “আজ?”

তমা বলল, “তোকে জ্বালাতে এলাম।”

গরিমা বলল, “ভালই হল আজ এলি, তোর সঙ্গে কিছু দরকারি কথা আছে।” তমা বলল, “আমারও আছে।”

তখনই কোনও কথা হল না তাদের। দু’জনই হাত চালিয়ে প্রজেক্টের খাতায় নম্বর ফেলার কাজ শেষ করতে লাগল। কাজ করতে করতে তমা জিজ্ঞেস করল গরিমাকে, “তোর আজ কি উকিলের সঙ্গে দেখা করার কথা?”

গরিমা বলল, “আধা উকিলের সঙ্গে।”

তমা মৃদু হেসে কাজ করতে শুরু করল। তার ইচ্ছে আজই নম্বরগুলো জমা দিয়ে যাবে। তার ইচ্ছে করছে না একা একা বিরক্ত হতে। তার মাথায় ঘুরছে অন্য পরিকল্পনা। এরই মধ্যে চা এল। টিচার্স রুম তখন গমগম করছে। আজ সব টেবিলেই লোক। লাঞ্চের সময়ও তমা কাজ করে যাচ্ছিল। এমন সময় গরিমাই তার কাজ গুছিয়ে তমার টেবিলে এল। তমা হাতের খাতা শেষ করে পেন তুলে রাখল। প্রজেক্ট খাতাগুলো ছেলেমেয়েরা শুধু শুধু মোটা করে। অতিরিক্ত ছবি দেয়। মৌলিক কিছুই দেয় না কেউ, এখানে সবাই গড়। অথবা শুধু এখানেই নয়, এখন হয়তো সবাই গড়। সে আর গরিমাও কি এক রকম? পুরুষগুলোও? একই রকম গড়পড়তা? বল্লাল, বিপ্লব, তমাল, স্নেহময় সবাই কি এক রকম? আসলে একটাই লোক এক-এক বার এক-এক জনের মুখোশে ঢুকে নাট্যবৃত্তি সেরে যায়?

চিন্তার সূত্র কেটে যায় গরিমার নিচু গলার গাঢ় সুরের কথায়, “দু’-এক দিনের মধ্যেই শিফ্ট করছি, বুঝলি? ক’দিন ধরে খুব খোঁজাখুজি চালাচ্ছি। পছন্দ হচ্ছে না। তেমন ওয়ার্কিং উইমেন্স হস্টেল পেলে ভাল, না পেলে তোর ওখানে।”

“খুঁজতে হবে না, চলে আয় আমার কাছে।”

“দাঁড়া, শুরুতেই তুরুপের তাস দেখালে হবে? তমাল বলল, ‘ব্যাটাকে খুঁজতে দাও দু’-চার দিন হন্যে হয়ে। তোর বাড়িতে আমি থাকব এটা সহজেই আন্দাজ করে নিতে পারবে। হস্টেলের কথাটা ভাবতে পারবে না।”

“তুই বলে আসবি না? একটা বিদায়-টিদায় তো ওর প্রাপ্য।”

“জানি। কিন্তু টেকনিক্যাল অসুবিধা আছে রে, বলা যাবে না। ওকে ওটা আমি বলতেই পারব না।”

“এত দিন এক সঙ্গে থাকলি, তার পর চলে আসবি, মামলা লড়বি, কিছুই বলে আসবি না?”

“ওর দিকে তাকিয়ে এটা আমি বলতে পারব না রে। লোকটা খারাপ, অসভ্যর মতো চিৎকার করে, সব সত্যি কথা। কিন্তু এক দিনের জন্য হলেও তো লোকটাকে ভালবেসেছি। একটা মায়া চিরদিনই থেকে যাবে। আমি ঝগড়া করতে পারব, গালাগাল দিতে পারব, কিন্তু ঠান্ডা মাথায় ধীরে সুস্থে এ সব কথা ওকে বলতে পারব না রে, অসম্ভব!”

“তা হলে ঝগড়ার সময়েই বল! সে তো থেকে থেকেই তোর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। তেমনই কোনও চিৎকার করলে তুইও রাগ দেখিয়ে ‘ধুত্তোরি! আর কোনও দিন থাকব না’ বলে বেরিয়ে পড়!”

“তুই পারবি? এ রকম হিসেবনিকেশ করে ঝগড়া করতে?”

“সেই পরিস্থিতির মধ্যে না পড়লে কী করে
বলব গরিমা?”

“আমি পরিস্থিতির মধ্যে পড়েই বলছি তমা। রাগ, ঝগড়া করে হিসেব উল্টে দিতে আমি পারি, কিন্তু হিসেব করে রেগে কাজ গুছোতে পারলাম না রে। যাকগে, এখন এগিয়ে এসেছি, আর পিছোনো যাবে না। তুই কী দরকারি কথা আছে বলছিলি?”

“বাদ দে। এখন এর মধ্যে আর সে সব কথা বলে কাজ নেই।”

“আরে বল না! মুখে আসা কথা কখনও ফিরিয়ে নিবি না।”

তমা বলতে চেয়েছিল তার পট পরিবর্তনের কথা, কিন্তু সে মুখে চলে আসা কথা ফিরিয়েই নিল। এই মুহূর্তে গরিমাকে পরীক্ষা করার ইচ্ছেটা প্রবল হয়ে উঠল তার। সে আগের দিনের অসমাপ্ত প্রশ্নটাই ফের নিয়ে এল, “বলতে ইচ্ছে হলে বলিস, না হলে বলিস না। সে দিনও তোকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তোদের বিয়েতে কি স্নেহময়কে নিমন্ত্রণ করবি?”

“মরে গেলেও না! ব্যাটা হুমদো মোটা, বদমেজাজি!”

“আর স্নেহময় যদি কোনও দিন বিয়ে করে, যদি তোদের দু’জনকে নিমন্ত্রণ করে, তা হলে যাবি?”

“বিয়ে করবে? ও আবার বিয়ে করবে? লজ্জা করবে না ছোটলোকটার? ও জানে, ওর স্যালারি স্লিপ কোথায় থাকে? ওর জাঙিয়া কোথায় থাকে, জানে? ওকে সব কিছু সাজিয়েগুছিয়ে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর মতো অফিসে পাঠাই। ছুটির দিনে আমি না বললে ও স্নানে যায়? কবে শ্যাম্পু করবে, কবে জুতোটা পালিশ করতে হবে, কবে কাকে ফোন করে পরিবারের সম্মান রক্ষা করতে হবে, সে সব জানে? খাওয়া, ঘুম, অফিস, বেড়ানো ছাড়া এই পৃথিবীর কিছু জানে? শালা! ও শুতে এলে কন্ডোমটা পর্যন্ত মনে করে নিয়ে আসতে হত এই বেহায়াকে! ও বেঁচে আছে কার জন্য? ওর তো নিঃশ্বাসটাও আমি টেনে দিলে ভাল হয়! এই আমার ওপর ও চিৎকার করে, দোষ দেয়। ও কি মানুষ? আবার বিয়ে করবে? করলে বুঝত, আমি ওকে কী ভাবে রেখেছি! আমি ওকে বাঁচিয়ে রেখেছি বুঝলি, বাঁচিয়ে রেখেছি।”

“গরিমা, আস্তে! অনেক লোক রয়েছে গরিমা। তুই উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছিস, সামলা নিজেকে।”

“বিয়ে করবে! কোনও দিন এক বেলার জন্য রান্না করেছে? কোনও দিন আঁচ পেতে দিয়েছি কিছু? রান্নার লোক কামাই করেছে, কাজের লোক ডুব দিয়েছে, ও সে সবের খোঁজ রেখেছে? আমার জীবনটা তো শেষ করল, কিন্তু যদি কোনও দিন শুনি বিয়ে করে সেই বৌয়ের জন্য হাত পুড়িয়ে রান্না করছে, বৌয়ের জন্য বাসন মাজছে, ঘর মুছছে, যেচে শাড়ি কিনে আনছে, সে দিন দেখিস আমার রণমূর্তি! সেদিন ওর বাড়িতে গিয়ে ওর মাথা আমি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেব, বলে দিলাম।”

তমার টেবিলের সামনে বসে কথা বলছে গরিমা। তার গলা ক্রমশ চড়ছে। মুখচোখ লাল হয়ে এসেছে। তমা নিজে চেয়ার ছেড়ে তার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, “আর এক বার ভেবে দেখবি কি?”

গরিমা উত্তর দেয় না। তমা দ্বিতীয় বার তার মাথার কোঁকড়া চুলে হাত বোলাতে গিয়ে বোঝে, টেবিলে রাখা হাতের আড়ালে মাথা গুঁজে সে কাঁদছে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে এবং সেই কান্নাকে নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থ চেষ্টা করছে। তমার মনে পড়ল সেই আকাশের কথা। জলে টইটম্বুর মেঘ নিয়ে যে অপেক্ষা করে মেঘদূতের জন্য।

একটু ক্ষণের মধ্যেই নিজেকে সামলে নিল গরিমা। থমথমে মুখে চলে গেল নিজের চেয়ারে। একটু পরেই সে বেরিয়ে যাবে। খুঁজতে যাবে ওয়ার্কিং হস্টেল। পছন্দ হলেই তখনই ঠিকানা বদলানোর কথা বলে রেখেছে তমাল। কিন্তু বিদায়ী শিকড়েও তো লেগে থাকে পুরনো মাটি। একটু পরেই তার ফোনে শব্দ করে ফোন আসবে, সে তুলে দেখবে স্নেহময় কলিং! এখনও তার বর স্নেহময়, এখনও শিকড় স্বস্থানে থাকা স্নেহময়। মেদবহুল, থলথলে গোবরগণেশ। ফোন ধরতেই এক বারও কোথায় আছে, কী করছে জানতে না চেয়েই গাঁকগাঁক করে বলবে, “এই, এ বার পিপিএফে টাকা ফেলেছ?”

সে বলবে, “ফেলব না কেন?”

“ফেলেছ? কত টাকা গো? কুড়ি? উঃ! মার্ভেলাস! দারুণ! আরে না হলেই আয়কর দফতর এসে চুমু খেতে শুরু করে দিত!” বলেই পট করে কেটে দেবে ফোন। গরিমা এক মুহূর্তের জন্য থমকে যাবে। একটা ‘রাখি’ বলতেও এত কষ্ট। তা হলে বিদায়বেলার সম্বোধনের জন্য সে-ই বা কেন এত ভাববে?

অ্যালিস এল দুনে

রান্নাঘর সে ভাবে টানে না তমাকে। গবেষণাটা তেড়েফুঁড়ে করছে বটে, কিন্তু কলেজের প্র্যাকটিক্যাল রুমও তাকে সে ভাবে টানে না। সিনেমা দু’-চারটে দেখে বটে মাঝে মাঝে, কিন্তু তারাও দড়ি ধরে টানাটানি করে না তার মনকে। গত দু’দিনে ইন্টারন্যাল অ্যাসেসমেন্ট ও যাবতীয় প্রজেক্ট খাতার নম্বর জমা করার পর, তৎকালে দুন উপত্যকাগামী ট্রেনের একটা টিকিট জোগাড় করার পর, কলেজে ছুটি নিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ার পর মনে হচ্ছে তাকেও টানে বাউন্ডুলেপনা। এই অভিযানে নেমে এই প্রথম নিজেকে পরিণত মনে হচ্ছে তার। এক সপ্তাহের মধ্যেই বল্লালকে দেখার জন্য কৈশোরসুলভ আকর্ষণে বেরিয়ে পড়ে নিজেকে মনে হচ্ছে অপরিণত। বাড়িতে মিথ্যে মিথ্যে শিক্ষামূলক ভ্রমণের কথা বলার জন্য নিজেকে মনে হচ্ছে প্রাপ্তবয়স্ক আর ব্যস্ত গরিমাকে এত কথা বলতে না পেরে বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে ফেলায় নিজেকে মনে হচ্ছে অপ্রাপ্তবয়স্ক। বিপ্লবকে কিছুই না বলায় নিজেকে মনে হচ্ছে হিসেবি মাঝবয়সি আর বল্লালকে কিচ্ছু না বলে গিয়ে চমকে দেওয়ার পরিকল্পনার জন্য তমার তার নিজেকে মনে হচ্ছে কিশোরী মেয়েটি। ট্রেনটা দেহরাদূনে পৌঁছনোর আগে শেষ তিরিশ মিনিট সে দাঁড়িয়ে ছিল চলন্ত ট্রেনের খোলা দরজায়। হাওয়ায় উড়ছিল তার চুল। বিপুল বেগে হাওয়া এসে এলোমেলো করে দিচ্ছিল তার চিন্তার প্রবাহকে। তার এক বার নিজেকে মনে হচ্ছিল সেই ডানা মেলা বক, যে তার জুড়িকে খুঁজছে। যদি তার সঙ্গে এ যাত্রায় বল্লালের দেখা না-ও হয়, এমনকি যদি দেখে কোনও পুঁটির মা তার দেহরাদূনের কোয়ার্টার আলো করে বা অন্ধকার করে বসে আছে, তাও কিছু যাবে আসবে না তার। তাকে বড় করে দিয়ে গেল বল্লাল বাউন্ডুলেই।

সে যে একটু একটু করে দেহরাদূনে পৌঁছে গেছে প্রায়, তা জানা নেই বল্লালের। চলন্ত ট্রেনে সে ভাবে কথা বলতে দেয়নি মোবাইল নেটওয়ার্ক, বার্তা বিনিময়ে সে জেনেছে বাবু আজও ব্যস্ত কনফারেন্সে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েরই কনফারেন্স রুমে চলছে তাদের কাজ। তার আগমনের খবর কিচ্ছুটি জানায়নি সে। স্টেশনের রিটায়ারিং রুমে স্নান সেরেছে। তার পর ব্যাগটি পিঠে নিয়ে পৌঁছে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভিতরে ঢোকেনি, গেটের উল্টো দিকের রাস্তার ধারে পাতা একটা বেঞ্চে আয়েশ করে বসেছে অপেক্ষায়। মনে মনে বলেছে, ‘আমি এখন তোমার দরজায়।’ চার পাশে তাকিয়ে মনে হয়েছে, এখানে কত গাছ! আর বেশ ফাঁকা। কলকাতা হলে এখানে মাটি ফুঁড়ে গজিয়ে উঠত দুটো চায়ের দোকান, দুটো এগরোল, দেড়খানা লটারির টিকিটের দোকান।

ভাবনাচিন্তার মধ্যেই হঠাৎ বেজে উঠল ফোন। ব্যাগ খুলে ফোন বার করে নামটা দেখে সে একটু বিব্রতই হল, বিপ্লব। সম্পর্ক কখনও এমন তলানিতে ঠেকে যে, মিথ্যে বলাটাও অতিরিক্ত বলে মনে হয়। খুব নিস্পৃহ গলায় তমা বলল, “বল।”

“আমি তোর দরজায় দাঁড়িয়ে আছি।”

চমকে উঠল তমা। সামান্য আগে সে তো মনে মনে এই বাক্যটাই উচ্চারণ করেছিল! চমকে উঠে বলল, “মানে?”

“না মানে, ঠিক ঘরের দরজায় নয়। দরজায় দেখলাম তালা, তাই তোর আবাসনের দরজায় এসে অপেক্ষা করছি।”

“ও! না, আমি তো এখন অন্য জায়গায়। কী বলবি বল।”

“তাড়ার কিছু নেই। তুই আয় না, একটু সামনাসামনি দেখা করতাম।”

“আমি তো অনেক দূরে বিপ্লব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Short story
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE