Advertisement
E-Paper

বুড়ো হাড়ে ভেলকি

ঠিক ছ’বছর আগের কথা। ভারতীয় রাজনীতির ‘ছোট’ হওয়ার বড়দিন। সেই কলঙ্কিত ২৫ ডিসেম্বর তামাম ভারত দেখল, তিন যুবতীর সঙ্গে একই বিছানায় যৌনক্রীড়ারত এক বছর চুরাশির বৃদ্ধকে।

সুস্নাত চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:০০

ঠিক ছ’বছর আগের কথা। ভারতীয় রাজনীতির ‘ছোট’ হওয়ার বড়দিন। সেই কলঙ্কিত ২৫ ডিসেম্বর তামাম ভারত দেখল, তিন যুবতীর সঙ্গে একই বিছানায় যৌনক্রীড়ারত এক বছর চুরাশির বৃদ্ধকে। স্তম্ভিত করে দিল সংমাদমাধ্যমের দাবি, এ বেডরুমটি কারও কোনও পাতি চৌখুপি নয়, একেবারে রাজভবনে খোদ রাজ্যপালের শয়নকক্ষ! রাজ্যের নাম অন্ধ্রপ্রদেশ। অশীতিপর নায়কটি তখন সে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান নারায়ণ দত্ত তিওয়ারি।

ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের এই বরিষ্ঠ নেতার কেরিয়ার চিরকালই ঝকঝকে। শিক্ষাগত জীবনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্নাতকোত্তরে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম স্থান অধিকার। তার পর এলএলবি। রাজনৈতিক কেরিয়ারে হাতেখড়ি স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে। ব্রিটিশ-বিরোধী লিফলেট লেখায় গ্রেফতার। সাল ১৯৪২। সোয়া বছরের জেল। পরবর্তী রাজনৈতিক কেরিয়ারেও তাঁর গ্রাফ ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। লোকসভা-রাজ্যসভা-কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব তো বটেই, তার পরেও দু-দু’টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর গদি! তিন বার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। এক বার উত্তরাখণ্ডের। রাজীব গাঁধী পরবর্তী জমানায় প্রধানমন্ত্রিত্বের শিকে ছিঁড়তে গিয়েও ছেঁড়েনি। শেষমেশ রাজ্যপাল হয়েছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের। কিন্তু সে কেরিয়ার টলে গেল মোটে দু’বছরেই। লোকে তাঁকে চিনে নিল যৌন কেলেঙ্কারির ফুটেজে।

কাজের টোপ দিয়ে নাকি সেই মহিলাদের নিয়ে আসা হয়েছিল, বলা হয়েছিল রাজ্যপালকে ‘খুশি’ করতে। নিন্দুকেরা এ অভিযোগও তুলল, এমন সুযোগসন্ধানীর ভূমিকা নিয়ে তিনি নাকি প্রায়ই নানা মহিলার সঙ্গে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলে থাকেন; এ বারে টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা সে ছবি তুলে ফেলেছে মাত্র। এন ডি তিওয়ারি অবশ্যই যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করলেন, ছবিতে কারচুপি করে তাঁকে ফাঁসানোর অপচেষ্টা হয়েছে বলে তোপ দাগলেন। কিন্তু দলের এক সিনিয়র নেতার একেবারে নারায়ণ থেকে সটান কলির কেষ্ট অবতারে অবতীর্ণ হওয়া, বার্ধক্যের বারাণসীকে বৃন্দাবনের লীলাক্ষেত্র করে তোলা— তত ক্ষণে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছিল দিল্লির হাইকম্যান্ডকে। অগত্যা ইস্তফা দেওয়া ছাড়া আর উপায় ছিল না তিওয়ারিজির।

কিন্তু কলঙ্কের আঁচড় তখন তাঁকে তাড়া করে ফিরছে। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার বছর খানেক আগেই তিওয়ারির বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে আরেকটি মামলা। আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন রোহিত শেখর নামের বছর উনত্রিশের এক যুবক। তাঁর চাই পিতৃত্বের পরিচয়ের স্বীকৃতি। নারায়ণ দত্ত তিওয়ারি নাকি তাঁর বাবা! প্রথমে বিশেষ পাত্তা দেননি তিওয়ারি। কিন্তু আজন্ম বঞ্চনার হিল্লে করতে, আশৈশব সমাজে অপমানিত হওয়ার জ্বালা মেটাতে, দাঁতে-দাঁত চেপে লড়ে যান রোহিত। দাবি করেন, সেই সত্তর দশক থেকে তাঁর মা উজ্জ্বলা শর্মার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তিওয়ারির, কিন্তু হাই-প্রোফাইল তিওয়ারির দেহরক্ষীরা তাঁদের আর তাঁর ধারেকাছে ঘেঁষতে দেয় না। রোহিতের সমস্ত দাবিই বার বার উড়িয়ে দিয়েছেন তিওয়ারি। কিন্তু পালাবার আর পথ থাকল না, আদালত যখন ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দিল।

পরীক্ষার রিপোর্ট গোপন রাখার অনুরোধ করে মুখরক্ষার শেষ চেষ্টা করেছিলেন তিওয়ারি। লাভ হয়নি। ডাব্‌ল হেলিক্সের সিঁড়ি বেয়ে সন্তান হিসেবে ন্যায্য স্বীকৃতি আদায়ে সফল হন রোহিত শেখর তিওয়ারি। আদালত জানিয়ে দেয়, নারায়ণই তাঁর বাবা। হাওয়া গড়বড় বুঝে, ঢোক গেলেন তিওয়ারি। স্ত্রী-পুত্রকে মেনে নিতে বাধ্য হন। শুধু তাই নয়, ২০১৪-য়, সত্তর ছুঁই-ছুঁই উজ্জ্বলাকে পাশে নিয়ে ছাঁদনাতলায় সেরে নিলেন অগ্নি সাক্ষী রাখা সাত-সাতটি চক্কর!

কলঙ্ক মোছার আন্তরিক প্রয়াস, না অগ্নিশুদ্ধি করে খানিক পবিত্র হয়ে ওঠার অভিনয়? বলা মুশকিল। কে জানে, এক কালে যাঁর চালু স্লোগান ছিল ‘না নর হুঁ, না নারী হুঁ / ম্যায় নারায়ণ দত্ তিওয়ারি হুঁ’, নর-নারীর কামনা ও সম্পর্ক নিয়ে তাঁর আরও কোনও ভেলকি বাকি আছে কি না!

narayan dutt tiwari susnato choudhury
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy