Advertisement
E-Paper

পরিযায়ীদের গল্প

প্রতি বছরই শীত বহু অতিথি-পাখিকে আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসে আমাদের রাজ্যে। আবার তার চলে যাওয়ার সময় হলেই অতিথিরাও যে যার দেশে ফিরে যায়। এদের ‘পরিযায়ী পাখি’ বলে চিনি। কিন্তু শুধু পাখিই নয়। বহু প্রাণীর মধ্যেই এই পরিযায়ী স্বভাব দেখা যায়। সেই রকম কিছু প্রাণীর কথা।প্রতি বছরই শীত বহু অতিথি-পাখিকে আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসে আমাদের রাজ্যে। আবার তার চলে যাওয়ার সময় হলেই অতিথিরাও যে যার দেশে ফিরে যায়। এদের ‘পরিযায়ী পাখি’ বলে চিনি। কিন্তু শুধু পাখিই নয়। বহু প্রাণীর মধ্যেই এই পরিযায়ী স্বভাব দেখা যায়। সেই রকম কিছু প্রাণীর কথা।

সুদীপ্ত চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৬ ০০:০০

হাম্পব্যাক তিমি

পৃথিবীর সমস্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে হাম্পব্যাক তিমি পরিযায়ী স্বভাবের জন্য সবচেয়ে বেশি পথ অতিক্রম করে। বিজ্ঞানীরা হিসেব করে দেখেছেন, বার্ষিক মাইগ্রেশনের সময় এরা প্রায় ২৫ হাজার কিলোমিটার পর্যন্তও পথ পাড়ি দেয়! এই তিমিদের পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি সমুদ্রেই পাওয়া যায়। শীতের সময় এরা বাচ্চা দেওয়ার জন্য অপেক্ষাকৃত গরম জলের সমুদ্রের দিকে যাত্রা করে। এর পর আবার খাদ্যের সন্ধানে তারা ফিরে আসে সুমেরু বা কুমেরু সাগরে।

মনার্ক বাটারফ্লাই

এরা প্রায় ৭ হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে। মজার কথা, এই মাইগ্রেশন এক জন্মে সম্পূর্ণ হয় না, ৩-৪টি প্রজন্ম লাগে। কারণ, মাইগ্রেশনে এতটাই সময় লাগে, যা একটি প্রজাপতির জীবনের থেকে অনেকটাই বেশি। প্রসঙ্গত, এই প্রজাপতিরা ঘণ্টায় ১৯-৪০ কিমি গতিতে উড়তে এবং দিনে ৮০-১৬০ কিমি যেতে পারে। পৃথিবীর সবথেকে সুন্দরতম প্রজাপতি হিসেবে মনার্ক বাটারফ্লাই স্বীকৃত। মাইগ্রেশনের সময় পথের কোনও একটি গাছে লক্ষ লক্ষ প্রজাপতি একসঙ্গে যখন বিশ্রাম নেয়, অপূর্ব সেই সৌন্দর্য!

রেড ক্র্যাব

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিসমাস আইল্যান্ডে দেখা যায় রেড ক্র্যাব। আমাদের সমুদ্রসৈকতের লাল কাঁকড়ার সঙ্গে এদের পার্থক্য, ওদের পরিযায়ী স্বভাব। অস্ট্রেলিয়ার শুকনো আবহাওয়ায় এরা গর্তে থাকে, সেই গর্ত খুঁড়ে সমুদ্রের পাড় থেকে জঙ্গলে পৌঁছে যায়। সেখানে গাছের পাতা, ফুল খায়। বর্ষা শুরু হলে সমুদ্রের দিকে ফিরতে শুরু করে, তবে গর্ত খুঁড়ে খুঁড়ে নয়। লক্ষ লক্ষ কাঁকড়া শহরের রাস্তা, বাড়ি পেরিয়ে সমুদ্রসৈকতে পৌঁছয়। কাঁকড়ারা রাস্তা পেরোবে, তাই কিছু রাস্তায় গাড়ি চলাচলও নিয়ন্ত্রিত করা হয়!

স্যামন মাছ

স্যামনের বাস উত্তর আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরে। কিন্তু মজা এই, বেশির ভাগ প্রজাতির স্যামন মাছই নদীতে জন্মায়, পরে সমুদ্রে যায়। নদী থেকে সমুদ্রে পৌঁছলে এরা হাজার হাজার কিমি পথ অতিক্রম করে খাদ্যের সন্ধানে। উপকথায় আছে, অনেকটা সময় সমুদ্রে কাটিয়ে এরা ফিরে আসে নদীতে, যেখানে তাদের জন্ম হয়েছিল। ওই নদীর তলাতেই তারা ডিম পাড়ে। ডিম পাড়াকে বলা হয় স্পনিং (Spawning)। ডিম পাড়ার পরে ৯৫% মাছই মরে যায়। যারা বেঁচে থাকে, আবার ফিরে চলে সমুদ্রে।

অ্যাডেলি পেঙ্গুইন

আন্টার্কটিকার সৈকত বরাবর অ্যাডেলি পেঙ্গুইনের বাস। এরা আকারে ছোট, মোটাসোটা। এরা খুবই সামাজিক, বিশাল কলোনি তৈরি করে বাস করে। সমস্ত ধরনের পেঙ্গুইনদের মধ্যে অ্যাডেলি পেঙ্গুইনই সবথেকে বেশি দূরত্ব ‘মাইগ্রেট’ করে, প্রায় ১৭-১৮ হাজার কিলোমিটার! শীতের সময় এরা বরফের উপরেই থাকে। কিন্তু আন্টার্কটিকার গরমে (নভেম্বর-ডিসেম্বর) এরা ডিম পাড়ার জন্য ‘মাইগ্রেট’ করা শুরু করে। সরে যায় সেখানে, যেখানে বরফ নেই, শুধু নুড়ি-পাথর। ডিম পাড়তেই এদের মাইগ্রেশন।

ওয়াইল্ডবিস্ট

দারুণ সুন্দর ওয়াইল্ডবিস্টদের মাইগ্রেশন। মার্চ-শেষে আফ্রিকার সেরেঙ্গেটি অরণ্যের দক্ষিণে সমস্ত ঘাসজমি শুকিয়ে যায়, তখন পশ্চিমের জঙ্গলের দিকে যাত্রা শুরু করে এরা। দীর্ঘ ১৬০০ কিমি পথে ওদের সঙ্গী হয় ২ লক্ষ জেব্রা, ৫ লক্ষ হরিণও। পথে পড়ে কুমিরে ভরা নদী, হিংস্র সিংহ। কিন্তু কোনও কিছুই আটকাতে পারে না ওদের চলাকে। টিভির পরদায় দেখতে দুর্দান্ত লাগে!

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy