Advertisement
E-Paper

‘কাল রাতে তোরা কী করছিলি?’

দীর্ঘ ন’বছরের টক-ঝাল-মিষ্টি প্রেম পর্বের পর আমাদের বিয়ে। বিয়ের আগে সব সময় ও বলত, ‘মায়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক একদম ভাল না। বাড়ি থেকে আমি পালাতে পারলে বাঁচি।’ শ্বশুরবাড়ি প্রথম দিকে এ বিয়েতে রাজি ছিল না।

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৬ ০০:০০

দীর্ঘ ন’বছরের টক-ঝাল-মিষ্টি প্রেম পর্বের পর আমাদের বিয়ে। বিয়ের আগে সব সময় ও বলত, ‘মায়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক একদম ভাল না। বাড়ি থেকে আমি পালাতে পারলে বাঁচি।’ শ্বশুরবাড়ি প্রথম দিকে এ বিয়েতে রাজি ছিল না। অনেকটা অনিচ্ছা নিয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আমাদের রেজিস্ট্রি-তে রাজি হয়। তার পর অবশ্য বিয়েটা হয়ে যায় ভাল ভাবেই।

বরাবরই গিফ‌্ট প্যাক খুলতে ভীষণ ভাল লাগে আমার। কিন্তু বউভাতে কী গিফ‌্ট পেয়েছিলাম, সেটা প্রথম জানতে পারে আমার শাশুড়ি ও তাঁর বোনেরা। আমাকে তখন দেখতে দেওয়া হয়নি। পিঠ-কোমর ব্যথা করে নিজে হাতে সাজিয়েছিলাম বউভাতের তত্ত্ব। তাদের অপটু হাতে এলোপাথাড়ি ছেঁড়াছিড়ির পর পুড্লসগুলো উড়ে বেড়াচ্ছিল আমার বেডরুমে। একটা নমস্কারী শাড়িও নাকি যাঁর নামে পাঠানো, তাঁকে দেওয়ার মতো নয়। এই সব যখন টানা বলাবলি হচ্ছিল আমার সামনেই, এবং অনেকটা শুনিয়ে শুনিয়েই, চোখে জল এসে যাচ্ছিল বার বার, কিন্তু পাশে পাইনি স্বামীকে। পরে ওকে বলতে উত্তর পেলাম, আমি নাকি ভীষণ স্টেডি, তাই নিজেই নিজের মনখারাপগুলো কাটিয়ে উঠব, এ বিষয়ে ও নিশ্চিত ছিল।

সেই অর্থে, বিবাহিত জীবনটা শুরুই হয়নি আমার। দোতলায় আমাদের দুজনের থাকার কথা। কিন্তু কোনও এক অলিখিত নিয়মে, স্বামীর কোনও জিনিস দোতলায় আনা বারণ ছিল। ও আমার সঙ্গে সময় কাটাতে গেলেই সারা ক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকত। প্রায় রোজই শাশুড়িমা আমায় দুটো কথা বলতেন, ‘কাল রাতে তোরা কী করছিলি?’ আর ‘আজ রাতে দরজাটা বন্ধ করে শুতে হবে না।’ আবার, ওদের ছাদে আমার কাপড়-জামা মেলা বারণ ছিল।

ডাক্তারের কথা অনুযায়ী আমি তাড়াতাড়ি সন্তান চাইলেও, আমার স্বামী রাতের পর রাত মুখ ফিরিয়ে ছিল। এক রকম অশান্তির মধ্যেই যখন আমি কনসিভ করি, তখন আমার বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের মধ্যে ওর কৃত্রিম উচ্ছ্বাসটা কাঁটার মতোই খচখচ করছিল। দূরত্ব বাড়তে বাড়তে, ঝগড়া হতে হতে, যখন মেয়ের দেড় মাস বয়স, তখন থেকে ও যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় ওর মায়ের ইমোশনাল ব্ল্যাকমেলিংয়ের চাপে। মেয়ের যখন ন’মাস বয়স, তখন শাশুড়ির মোবাইল থেকে ভুল করে একটা ফোন চলে আসে আমার বাপের বাড়ির ল্যান্ডলাইনে। শুনতে পাই, উনি ওঁর এক বান্ধবীকে বলছেন, ‘আমি তো ছেলেকে পইপই করে বলেছিলাম, একদম বউয়ের সঙ্গে মিলন করবি না, তা হলে এত তাড়াতাড়ি বাচ্চা হয় কী করে? তোকে পুরো ফাঁসিয়ে দিল ওই মেয়ে। ওর বাবা তো দানের বাসন দিলেন না, একটা সোনা দিলেন না। শুধু ইমিটেশন পরিয়ে মেয়েকে পার করিয়ে দিলেন...’ আরও শুনলাম, আমার স্বামী নাকি কান্নাকাটি করে বলেছে, ‘আমি চাইনি মা, ও জোর করে এ সব করেছে। আমাকে তুমি ওর হাত থেকে বাঁচাও।’ পর দিন স্টেশনে স্বামীর সঙ্গে দেখা করে জানলাম, এ সব ডাহা মিথ্যেগুলো ও-ই মা’কে বলেছে। ও নাকি এই সন্তান চায়নি, বিয়েটাই নাকি চায়নি। ঠিক করলাম, যে আমার এত আদরের সন্তানকে চায় না, তাকে আমিও চাই না।

এখন মেয়ের দু’বছর বয়স। খবর পাই, ওরা রাজস্থান, হরিদ্বার প্রায়ই বেড়াতে যায়। আমি মেয়েকে একাই বড় করছি। ভরসা আমার সরকারি চাকরি, আর অবশ্যই বাবা-মায়ের সাপোর্ট।

রাজেশ্বরী গঙ্গোপাধ্যায়, নবগ্রাম, কোন্নগর

আপনার শ্বশুরবাড়ি ভাল? খারাপ? ভাল-খারাপ মিশিয়ে?
শ্বশুরবাড়ির টকঝালমিষ্টি ঘটনা লিখে পাঠান ৪০০ শব্দে।
ঠিকানা: শ্বশুরবাড়ি, রবিবাসরীয়, আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০০১।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy