রূ পকথাপ্রেমীদের জন্য সুসংবাদ। একবিংশ শতাব্দীর প্রথম ‘গল্প হলেও সত্যি’ উপাখ্যান লেখা হচ্ছে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে। ওয়াশিংটন এখনও দূর অস্ত, তাতেই যা রিয়েলিটি শো দেখা যাচ্ছে, শীলা-কি-জওয়ানির সরু ক্যাটরিনা কিংবা রাশিয়ান সার্কাসের মেম ব্যালেরিনা, তার তুলনা কোনও দিন জানবে না। সব মিলিয়ে সে এক অলীক কাণ্ড। এক দিকে সম্ভাব্য প্রেসিডেন্টদের লাইনের একদম দক্ষিণ থেকে শিল্পপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘আমি তো এমনি এমনি খাই’ স্টাইলে যা খুশি তা-ই বলে চলেছেন। মেক্সিকান অভিবাসীদের খুনে এবং ধর্ষক বলা দিয়ে শুরু, তার পর সম্পূর্ণ ফ্রি-স্টাইল কুস্তি। এই কৃষ্ণাঙ্গদের ‘কুঁড়ে’ বলছেন তো পর দিনই মহিলা টিভি হোস্টকে ‘কুৎসিত’। তাঁর কাছে জানা যাচ্ছে: দুনিয়ায় ব্যবসাই একমাত্র মোক্ষ; গ্লোবাল ওয়ার্মিং আসলে চিনেদের স্বার্থরক্ষায় তৈরি একটি গুল; মুুসলমানদের আপাতত আমেরিকায় ঢোকা বন্ধ করে দেওয়াই নাকি ‘সহি রাস্তা’। উলটো দিকে যা ঘটছে সে আরও অদ্ভুতুড়ে। একদম ‘তোমারে বধিবে যে/ সেনেটে বাড়িছে সে’ স্টাইলে চূড়ান্ত বাম দিক থেকে উলটো তোপ দাগছেন আরও এক নির্বাচনী প্রার্থী, সেনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। ‘শিল্পপতিরাই দেশ চালাচ্ছে’ বলে তামাম ওয়াল স্ট্রিটের উপর চটে কাঁই হচ্ছেন, কলেজ-শিক্ষা এবং হেল্থ-কেয়ার বিলকুল ফ্রি করে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। খোদ আমেরিকায় বসে নিজেকে সোশালিস্ট দাবি করে টিভির সরাসরি সম্প্রচারে প্রায় বিপ্লবেরই ডাক দিয়ে দিচ্ছেন দেশ জুড়ে। অভাবনীয় হলেও সত্যি, এ যেন আমেরিকান স্টাইলে গর্বাচেভ রেসিপির রান্না চলছে মার্কিন রান্নাঘরে।
এবং এ যদি অভাবনীয় হয়, তবে অত্যাশ্চর্য ব্যাপার এই, যে, খেলার এই পর্যায়ে বাকিদের ফেলে এই দুজনেরই জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। রিপাবলিকান শিবিরে ট্রাম্প প্রথম থেকেই সবার আগে। আর উলটো দিকে স্যান্ডার্স জোর ফাইট দিচ্ছেন হেভিওয়েট হিলারি ক্লিন্টনকে। জল এখনও অনেক গড়াবে, কিন্তু এই দুই চরম বিপরীত পক্ষের উত্তুঙ্গ জনপ্রিয়তা থেকে একটা কথা বোধহয় পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে: অন্তত রাজনীতির ক্ষেত্রে ‘যা বলিব সত্য বলিব কেবল অপ্রিয়টি বাদে’ জাতীয় চালবাজি পাবলিক আর নিতে রাজি নয়। ‘জল উঁচু বললেও চলে বা নিচু’ জাতীয় ঘ্যানঘেনে সব-দিক-বাঁচানো পলিটিকাল কারেক্টনেস, হিতোপদেশের গপ্পসুলভ অকাতর জ্ঞান বিতরণ, ‘কঠিন সময় আসছে বেল্ট শক্ত করে বাঁধুন’ জাতীয় বড় বড় ওপরচালাকি বা কবিতার মতো ধোঁয়াটে প্রতিশ্রুতি, কোনওটাই জনতা আর খাচ্ছে না। এখন দাবি একটাই, আপনি কাকে তোল্লাই দেবেন আর কোন ব্যাটাকে বাঁশ, স্পষ্ট করে বলুন। সামনে আসুন খুল্লমখুল্লা, তবেই আপনার পিছনে দৌড়ব। না পারলে ফুটুন। নেতারা অবশ্য এখনও খেলাটা পুরোটা ধরতে পারেননি, এমনকী ট্রাম্প আর স্যান্ডার্সেরও ফ্রিডম্যান কিংবা মার্ক্সের নাম নিতে স্লাইট আমতা-আমতা আছে। কিন্তু আশা করা যাচ্ছে, পাবলিক ক’দিনেই তা ঘুচিয়ে ছাড়বে। নইলে আর একবিংশ শতাব্দীর রূপকথা কীসে?
bsaikat@gmail.com