Advertisement
E-Paper

একটা ভয় [কষ্ট়] লজ্জা

মাঝরাত। গরমের দিন। ঘুমের মধ্যেও মাঝে মাঝেই গলা ঘেমে ওঠে। অতএব ঘুমের দফারফা। আর কিছুতেই ঘুম আসতে চায় না। উঠে জল খেয়ে ঘুরে আসি এক চক্কর। গরমকালের মাঝরাতের হাওয়ার বেশ একটা গন্ধ আছে। সে দিনও বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। তখন বোধহয় রাত্তির বারোটা মতো হবে। রাজপথ শুনশান। জোরসে বাইক, ঢিমে গাড়ি। হঠাৎই দেখি জিন্‌স পরা সাজুগুজু করা একটা মেয়ে, সঙ্গে এক জন মাঝবয়সি মহিলা। ভাবলাম, কোথাও হয়তো গিয়েছিল, ফিরতে রাত হয়েছে, কিছু পাচ্ছে না।

সঞ্চারী মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:৩০

মাঝরাত। গরমের দিন। ঘুমের মধ্যেও মাঝে মাঝেই গলা ঘেমে ওঠে। অতএব ঘুমের দফারফা। আর কিছুতেই ঘুম আসতে চায় না। উঠে জল খেয়ে ঘুরে আসি এক চক্কর। গরমকালের মাঝরাতের হাওয়ার বেশ একটা গন্ধ আছে।

সে দিনও বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। তখন বোধহয় রাত্তির বারোটা মতো হবে। রাজপথ শুনশান। জোরসে বাইক, ঢিমে গাড়ি। হঠাৎই দেখি জিন্‌স পরা সাজুগুজু করা একটা মেয়ে, সঙ্গে এক জন মাঝবয়সি মহিলা। ভাবলাম, কোথাও হয়তো গিয়েছিল, ফিরতে রাত হয়েছে, কিছু পাচ্ছে না। কিন্তু কিছু ক্ষণ পর ব্যাপারখানা মালুম হল। এরা তো ঠিক চলে যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে নেই। মাঝে মধ্যে গাড়ি ধীরে হচ্ছে, দাঁড়াচ্ছে। মেয়ে আর মা এগিয়ে গিয়ে কথা বলছে, ফের গাড়ি বা বাইক পেরিয়ে যাচ্ছে।

সাধারণত, এ রকম ব্যাপার আমি ইন্টারেস্ট নিয়ে দেখি না। কিন্তু সে দিন কী হল কে জানে, দাঁড়িয়ে রইলাম বারান্দায়। আর আমাদের বাড়ির সামনে এ রকমটা কখনও হতে দেখিনি বলেই বোধ হয় দাঁড়িয়ে গেলাম। আসলে বাজারের হাত আইনের চেয়েও লম্বা, কোথায় ওত পেতে থাকে বোঝা মুশকিল। একটু খেয়াল করতেই দেখলাম, মধ্যবয়সি মহিলা, সম্ভবত মেয়েটির মা, বেশ রাগারাগি করছেন। কেন ঠিক বুঝলাম না। মেয়েটাও গোঁয়ার মতো। ঠেলে ঠেলে তাকে গাড়ি বা বাইকের কাছে পাঠাতে হচ্ছে। একটুতেই মেজাজ চড়ে যাচ্ছে তার। ভেতরটা কেমন মুচড়ে উঠল। কতই বা বয়স, আঠারো কি কুড়ি! বেশ মিষ্টি মতো মুখটা। অন্তত আলো-আঁধারিতে বেশ মিষ্টিই দেখাচ্ছিল।

আরও কয়েক জন সম্ভাব্য ‘খদ্দের’ কথা বলল বটে, কিন্তু কেউ নিল না। এ বার মা গিয়ে ধপ করে বসে পড়লেন গাছের একটা গুঁড়িতে। মা মেয়ে দুজনেই চুপ। আর তার পরেই মা একেবারে খেপে গিয়ে গলা চড়ালেন, ‘তোকে বলেছি না এই সব জিন্‌স-টিন্‌স পরলে কেউ কাস্টমার পায় না? দেখলি তো। আর এ সব কী শখের সাজগোজ? কত বার বলেছি একটু লাল লিপস্টিক লাগা। না, উনি স্টাইল মারবেন।’ এ বার ক্রুদ্ধ মেয়ের উত্তর, ‘বেশ করব পরব। এটা কি তোমাদের জমানা? চুমকির শাড়ি আর লাল লিপস্টিক দেখলেই তুলে নিয়ে যাবে?’ ফের মায়ের গর্জন, ‘ওই করেই তো তোদের পেট চালিয়েছি রে! কোথায় ছিল এত দিন ফটরফটর কথা!’

আমি এ বার থতমত। চলে যাব কি না ভাবছি। আবার মেয়ের গলা কানে এল, ‘বেশ করেছি। এতেই কেউ নিতে হলে নেবে, না হলে বাড়ি গিয়ে ঘুম মারব।’ ‘ওইই হবে। বাড়ি গিয়ে ঘুম মারলে পেটে ভাত জুটবে না। গতর না খাটালে আমাদের কিস্যু নাই। প্যান্ট পরে একটাও জোটাতে পেরেছিলি বিকেল থেকে? সেই তো আমায় আসতে হল। আবার রেট নিয়ে গলাবাজি!’ মা-মেয়ে যে ঠিক এই ভাষায় কথা বলছিল তা নয়। যে ভাষা ব্যবহার করছিল, সেটা বোধ হয় ‘লাইনের’ ভাষা।

মা-মেয়ের তর্জনগর্জনে আশেপাশের বাড়ির আলো জ্বলে উঠল। একটা চেঁচানিও এল, ‘এটা ভদ্রলোকের পাড়া। এখানে এ সব কী হচ্ছে! যাও এখান থেকে।’ দুজনে ঝগড়া করতে করতে চলে গেল। পিঠে দু-চার থাপ্পড় পড়লও মেয়েটার। হয়তো মায়ের হতাশা, কষ্ট, দুশ্চিন্তার মিক্সচারের রেজাল্ট।

আমি কেবল থ হয়ে দাঁড়িয়েই রইলাম। এত যন্ত্রণাও মানুষের এমন আটপৌরে হয়ে যেতে পারে?

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy