Advertisement
E-Paper

এভারেস্টে ট্র্যাফিক জ্যাম

কারণ পিলপিলিয়ে লোকে পাহাড়ে চড়ছে। টাকা ফেললেই হল, এজেন্সি সমস্ত ‘মেড ইজি’ ব্যবস্থা করে দেবে। আনাড়ি লোককে ‘সামিট করিয়ে’, তার সংবর্ধনার বন্দোবস্তও পাকা।কোনও লাভ নেই, কিচ্ছুটি পাওয়ার নেই। হয়তো বেশি উচ্চতায় মানুষের শরীর কী ভাবে কাজ করে তা সম্পর্কে একটু জ্ঞান লাভ হয়, যেটা চিকিৎসাবিজ্ঞানে গবেষণার কাজে লাগতে পারে। ব্যস এটুকুই... সোনা-রুপো দূরের কথা, এক টুকরো লোহা বা কয়লাও মেলে না।...ওপরে, আরও ওপরে ওঠার চ্যালেঞ্জটা যে মুহূর্তে অনুভব করা যায়, তখন আর কারণ খুঁজতে মন চায় না।...আমরা টাকা রোজগারের জন্য বাঁচি না, বাঁচার জন্য টাকা রোজগার করি।’ ১৯২৪ সালে জীবনের শেষ অভিযানে বেরনোর আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের এই উত্তরই দিয়েছিলেন ব্রিটিশ পর্বতারোহী জর্জ ম্যালরি। প্রশ্নটা ছিল চিরন্তন।

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৪ ০০:০৫
ছবি: সুমন চৌধুরী।

ছবি: সুমন চৌধুরী।

কোনও লাভ নেই, কিচ্ছুটি পাওয়ার নেই। হয়তো বেশি উচ্চতায় মানুষের শরীর কী ভাবে কাজ করে তা সম্পর্কে একটু জ্ঞান লাভ হয়, যেটা চিকিৎসাবিজ্ঞানে গবেষণার কাজে লাগতে পারে। ব্যস এটুকুই... সোনা-রুপো দূরের কথা, এক টুকরো লোহা বা কয়লাও মেলে না।...ওপরে, আরও ওপরে ওঠার চ্যালেঞ্জটা যে মুহূর্তে অনুভব করা যায়, তখন আর কারণ খুঁজতে মন চায় না।...আমরা টাকা রোজগারের জন্য বাঁচি না, বাঁচার জন্য টাকা রোজগার করি।’ ১৯২৪ সালে জীবনের শেষ অভিযানে বেরনোর আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের এই উত্তরই দিয়েছিলেন ব্রিটিশ পর্বতারোহী জর্জ ম্যালরি। প্রশ্নটা ছিল চিরন্তন। কেন? কীসের টানে বারবার পাহাড়? ম্যালরির এই উত্তরই পর্বতারোহণের শেষ কথা হয়ে থেকে গিয়েছে আজও।

পোশাকি ভাষায় নাম, ‘কিং অব স্পোর্টস’। মহত্ত্বে, বিশালতায়, ঝুঁকিতে— সব দিক থেকেই সব খেলাকে হার মানায়! আর কষ্টও তো কম নয়। পাহাড়ে অভিযান করতে গিয়ে খাওয়াদাওয়াই জোটে না। বরফ গলিয়ে তবে পাওয়া যায় তৃষ্ণার জলটুকু। এমনকী নিশ্বাস নেওয়ার অক্সিজেনও পয়সা দিয়ে কিনতে হয়! সব কিছুর পরে হাতে থাকে শুধু ধারদেনা। না হয় কোনও রোজগার, না মেলে চাকরি।

কিন্তু এই যুগের লক্ষণ মেনেই, এই ‘খেলার রাজা’র সভায় ক্রমাগত ঢুকে পড়ছে টাকার খেলা। এখন, মোটা অঙ্কের টাকা জোগাড় করে ফেলতে পারলেই যেন হয়ে যায় অভিযান। অভিযাত্রী হয়ে ওঠার জন্য আর কিছুই প্রয়োজন নেই। হ্যাংলা মিডিয়া ও মিডিয়া-হ্যাংলা মানুষের সমীকরণ মেনে, বরফ-রোদের ঝলসানিতে পুড়ে যাওয়া চামড়ার কালচে দাগ মেলানোর আগেই অভিযাত্রীরা পৌঁছে যান রকমারি টিভি চ্যানেলের স্টুডিয়োয়। অভিযানের গল্পের সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাখ্যা করতে থাকেন সহ-অভিযাত্রীদের হাজারো দোষ-গুণ। এমনকী সেই অভিযাত্রী যদি বেঁচে না ফেরেন, তবুও!

অথচ বছর তিরিশ আগেও অভিযানের সংজ্ঞাটা একদম আলাদা ছিল। টাকা জোগাড়ের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল আরোহীর মানসিকতা। খ্যাতির হিসেব কষে পাহাড়ে যেতেন না অভিযাত্রীরা। পাহাড় ছোঁয়ার আনন্দ পেতেই যেতেন। হিসেবটা উলটে গেল খুব তাড়াতাড়ি। কয়েক বছরের মধ্যেই বেশ কিছু আট-হাজারি শৃঙ্গ, বিশেষ করে এভারেস্টকে কেন্দ্র করে একটা উন্মাদনা শুরু হল। অভিযানের নেশায় নয়, জয়ের মোহে হিমালয়ে পাড়ি জমাতে শুরু করলেন দেশ-বিদেশের আরোহীরা। আর সেই সুযোগেই পর্বতারোহণ জগতে জায়গা করে নিল এজেন্সি-কেন্দ্রিক অভিযান। পথ দেখালেন অবশ্য দুই বিদেশি। ১৯৯২ সালে আমেরিকার রব হল ও নিউজিল্যান্ডের স্কট ফিশার এভারেস্টের প্রতি মানুষের প্রবল মোহকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা জমিয়ে বসলেন।

শেরপাদের মাসোহারার ভিত্তিতে কাজে লাগাতে শুরু করলেন তাঁরা। শেরপাদের সাহায্যেই এভারেস্টের যাত্রাপথ আগাগোড়া সুন্দর নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হল। তৈরি করা হল একাধিক সাজানো-গোছানো শিবির। শেরপারা তৈরি হলেন দড়ি লাগিয়ে চড়ার পথ সহজ করে দিতে, এমনকী আরোহীদের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার বয়ে দিতেও। একাধিক দেশের কয়েক জন পর্যটক, থুড়ি, পর্বতারোহী জোগাড় হলেই একটা করে ‘আন্তর্জাতিক অভিযান’-এর আয়োজন করতে লাগল রব ও স্কটের এজেন্সি। ডলারের আগমনে তাদের তহবিলের পাশাপাশি ফুলে ফেঁপে উঠতে শুরু করল নিয়ামক দেশের কোষাগারও।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সহজ হয় সব খেলা, উন্নত হয় উপকরণ। ব্যতিক্রম হল না পর্বতারোহণও। আধুনিক পদ্ধতিতে, নতুন সরঞ্জাম ব্যবহার করে, কম পরিশ্রমে যদি পাহাড়টাকেও আয়ত্ত করে ফেলা যায়, তবে সে পথে পা বাড়ানোটাকে অন্যায় বলা যায় না কিছুতেই। কিন্তু এই সহজলভ্যতা কেমন যেন বদলে দিল পর্বতারোহণের পুরো গঠনটাই। চট করে শৃঙ্গ ছুঁতে উদ্গ্রীব মানুষ, আর সাহায্য করতে তৈরি হাজারটা এজেন্সি— এরা মিলে, একটা মহৎ ব্যাপারকে খেলো করে ফেলল।

আবহাওয়ার আগাম পূর্বাভাস দেখে আগে থেকেই ঠিক করে নেওয়া যায় অভিযানের সময়। সেই সময়মত টাকাটা নিয়ে শুধু পৌঁছতে হবে এজেন্সির দুয়ারে। শৃঙ্গের অনুমতি, তাঁবু, খাবার, অক্সিজেন, জ্বালানি, শেরপা, বরফে হাঁটার জুতো, মায় জয় করে ফিরে আসার পরবর্তী সংবর্ধনা, সব কিছুরই দায়িত্ব তাদের। যোগ্যতার মাপকাঠিটাও কেমন যেন বেঁকেচুরে ছোট হয়ে গেল। শুধু চড়ার ইচ্ছেটাই যথেষ্ট। আর সেই সঙ্গে অবশ্যই হৃষ্টপুষ্ট একটি পকেট। প্রতিযোগিতা বাড়ল এজেন্সিগুলোর মধ্যেও। কোন এজেন্সি কতগুলো সামিট ‘করালো’, তা দিয়েই বিচার হবে সেই এজেন্সির ‘বাজারদর’। বাড়বে পরের বছর তার খদ্দেরের সংখ্যা। এই ছকে সাফল্য দেখাতে ঢুকে পড়ল মিথ্যার বেসাতিও। আরোহণ না হলেও, ‘আরোহণ হয়েছে’ এমন শংসাপত্রের ঢালাও সরবরাহ শুরু করল এজেন্সিগুলোই।

পরিসংখ্যান বলছে, পঞ্চাশের দশকে এভারেস্ট ছুঁয়েছিলেন সারা পৃথিবীর মোট ছ’জন আরোহী। ষাট, সত্তর ও আশির দশকে সেই সংখ্যা পৌঁছয় যথাক্রমে ১৮, ৭৮ ও ১৮৩ জনে। নব্বইয়ের দশকে এটা এক ধাক্কায় বেড়ে দাঁড়ায় ৮৮৩-তে। আর ২০০০ থেকে ২০১৩ সালে এভারেস্ট সামিট করেছেন মোট ৪০৪২ জন। তবে মাশুলও দিতে হয় বইকী! ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে যে ছ’জন আরোহী এভারেস্ট অভিযানের পথে মারা গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে চার জনের মৃত্যুর কারণ ‘ট্র্যাফিক জ্যাম’! কঠিন হিলারি স্টেপ পেরনোর সময় শ’দুয়েক অভিযাত্রীর লাইনের গতি শ্লথ হয়ে যায়। ফলে অনেক বেশি ক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় আরোহীদের। সাড়ে আট হাজার মিটারেরও বেশি উচ্চতায় ওই অঞ্চল আক্ষরিক অর্থেই ‘ডেথ জোন’। পেছনেও লম্বা লাইন, তাই উলটো পথে নামতে শুরু করাও মুশকিল। এই অবস্থাই এভারেস্টের ‘ট্র্যাফিক জ্যাম’ নামে পরিচিত। মূলত অক্সিজেনের অভাব এবং শারীরিক অবসন্নতাই মৃত্যুর কারণ হয়ে ওঠে এই সময়।

এমনিতে অবশ্য অধিকাংশ মুশকিল আসান হাতের কাছেই রয়েছে। উচ্চতার সঙ্গে খাপ খাচ্ছে না শরীর? বেসক্যাম্প থেকেই লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে অক্সিজেন মুখোশ। হাত-পায়ের গঠন তেমন শক্ত নয়? দুর্লঙ্ঘ্য খাড়া নীলচে বরফের দেওয়ালে আগে থেকেই লাগানো রয়েছে মই। বরফে আইস-অ্যাক্স গেঁথে পাহাড় চড়ার পদ্ধতি এখন শুধুই খাতায় কলমে। পিছল, আলগা বরফে শেরপারা আগে আগে এগিয়ে তাঁদের ভারী পায়ের ছাপে সিঁড়ি তৈরি করে দিচ্ছেন। পায়ের ছাপে পা রেখে রেখে এগোতে হবে শুধু। আর আরোহণের নতুন পথ খুঁজে দড়ি লাগানো? সেটা যে আরোহণের একটা অংশ, তা বোধ হয় ভুলতেই বসেছেন আরোহীরা। পয়সা দিয়ে শেরপাদের সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া কেন তা হলে! ওরাই তো করবে ও-সব। আরোহীর কাজ তো শুধু চড়া।

আর তার পরেও একান্তই না পারলে? সম্প্রতি একটা নতুন লব্জ চালু হয়েছে পর্বতারোহণ মহলে। ‘জ্যাকেট ক্লাইম্বিং’। আরোহীর জ্যাকেট পরে শৃঙ্গ ছুঁয়ে আসছেন শেরপা। অক্সিজেন মাস্ক আর ঠান্ডার পোশাকের বাহুল্যে ঢেকে যাচ্ছে চেহারা। ফিরে এসে এজেন্সির কাছে ছবি দেখালেই মিলছে আরোহণের শংসাপত্র। কৃতিত্ব অবশ্য তাতে কম হয় না কিছুই। এই স্পোর্টসের যে কোনও দর্শক নেই। কোনও রেফারিও নেই।

আর এ সব মিলিয়ে ধুম পড়ে গিয়েছে রেকর্ড গড়ার। ২০০১ সালে দৃষ্টিহীন মানুষ হিসেবে প্রথম এভারেস্ট জয় করেন আমেরিকার এরিক ওয়েনমেয়ার। ২০০৫ সালে এভারেস্ট শিখরে বসে বিয়েটাই সেরে ফেলেন নেপালের মোনা মুলেপতি এবং পেম দোরজি শেরপা। ২০১০-এ মাত্র ১৩ বছর বয়সে এভারেস্ট আরোহণ করে আমেরিকার জর্ডন রোমেরো। ২০১৩ সালে ৮০ বছর বয়সে প্রবীণতম ব্যক্তি হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন জাপানের উইচিরো মিউরা। ১৯৯৯ থেকে ২০১৩-র মধ্যে মোট ২১ বার এভারেস্ট ছুঁয়ে তাক লাগিয়ে দেন নেপালের পূর্বা তাশি।

এ ভাবেই খ্যাতির লোভে আর রেকর্ডের তাড়ায় চাপা পড়ে যাচ্ছে দুর্বারের প্রতি চিরকালীন আকর্ষণ, পাহাড়চুড়ো ছুঁয়ে দেখার অনন্য তাগিদ। এই তাগিদ থেকেই তো ম্যালরি বলতেন, ‘বিকজ ইটস দেয়ার।’ পাহাড়ে কেন যাও? কারণ ওখানে পাহাড় আছে। পর্বতারোহণের কিংবদন্তি ম্যালরিকে শেষ দেখা গিয়েছিল এভারেস্টের উত্তর-পূর্ব ঢালে শৃঙ্গ থেকে মাত্র আটশো ফুট নীচে, ১৯২৪ সালে। অনেকেই মনে করেন, তিনিই প্রথম ছুঁয়েছিলেন বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। কারণ ১৯৯৯ সালে ম্যালরির দেহ পাওয়ার পর জানা যায়, তাঁর সঙ্গে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ছিল। আটশো ফুট ওঠার মতো দড়িও ছিল। চূড়ান্ত আরোহণের সময় যে ক’টি জিনিস ম্যালরি সঙ্গে নিয়েছিলেন, তাতে ছিল তাঁর স্ত্রী রুথের একটি ছবি। ম্যালরি বলেছিলেন, সফল হলে এভারেস্টের চুড়োয় রেখে আসবেন সে ছবি। তাঁর দেহ উদ্ধারের পর সঙ্গের সব জিনিস পাওয়া গেলেও, মেলেনি সেই ছবিটি। তবে সত্যিই কি তিনি এভারেস্ট ছুঁয়ে নেমে আসার পথে দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিলেন?

এই কোটি টাকার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারত ম্যালরির সঙ্গী অ্যান্ড্রু আরভিনের ক্যামেরাটি। কিন্তু আরভিনের সঙ্গেই নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল সেই ক্যামেরা। তাই প্রমাণের অভাবে মেলেনি স্বীকৃতি। কিন্তু তাতে কী? প্রকৃত অভিযান অপেক্ষা রাখে না কোনও স্বীকৃতির। দৈহিক মৃত্যু ম্যালরিকে অমরত্বই দিয়েছে শুধু। এ যেন মৃত্যু নয়, অসম্ভবের পথে সাহস দেখানোর স্পর্ধা! যা যুগে যুগে অসংখ্য পর্বতারোহীর অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে বেঁচে আছে, থাকবে।

সেই অনুপ্রেরণা থেকেই ১৯৭০ সালে বিশ্বের অন্যতম দুর্গম পথ রুপাল ফেস দিয়ে নাঙ্গা পর্বতের শৃঙ্গ ছুঁয়েছিলেন মেসনার ভাইরা। অভিযানে কোনও দড়ি ব্যবহার করেননি তাঁরা। একটি অসম্ভব আরোহণের উদাহরণ তৈরি করেছিলেন। শৃঙ্গ ছুঁয়ে ফেরার পথে তুষার-ধসে হারিয়ে গিয়েছিলেন রেনহোল্ড মেসনারের ছোট ভাই গানথার মেসনার। ১৯৭৮ সালে রেনহোল্ড মেসনার আর পিটার হ্যাবলার পা রাখেন এভারেস্টের চুড়োয়। অভিযানে ব্যবহার করেননি অক্সিজেন সিলিন্ডার। ১৯৮০ সালে ফের এভারেস্টে চড়েন মেসনার। অক্সিজেন ছাড়াই। এ বার একা। আজ হারিয়ে গিয়েছে সেই সব অতুলনীয় অভিযানের গল্প। বছর বছর হাজারও এভারেস্ট অভিযানের ভিড়ে ক্রমশ চাপা পড়ে গিয়েছে তারা।

তথ্য বলে, ভারতের আরোহণ-ইতিহাসে সব চেয়ে বেশি নাম করেছেন বাঙালিরা। বছর চার-পাঁচ আগে থেকে একটা ধারণা কী করে যেন জায়গা করে নিল বাংলার পর্বতারোহণ মহলে। চটপট দু-একটা আট-হাজারি শৃঙ্গ, বিশেষ করে এভারেস্ট চড়ে ফেলতে না পারলে কল্কে মিলবে না আরোহণ জগতে। তাই এই এজেন্সি-নির্ভর আরোহণের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে একাধিক বাঙালির নামও।

খারাপ লাগে, যখন আমরা ভুলে যাই নব্বইয়ের দশকে বাংলার অভিযানগুলোর কথা। ১৯৯১ সালে প্রাণেশ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে চিনের পথে অসামরিক উদ্যোগে এভারেস্ট অভিযান করেছিলেন অপূর্ব ভট্টাচার্য, গৌতম দত্ত, বিভুজিৎ মুখটির মতো বাঙালিরা। অভিযানে কোনও শেরপার সাহায্য নেননি তাঁরা। ন’হাজার ফুটের বরফ দেওয়াল ‘গ্রেট কুলোয়া’-য় নিজের হাতে রুট ওপেন করেছিলেন সেই দলেরই সদস্য গৌতম দত্ত।

১৯৯১-এর অভিযান সফল না হওয়ার পরে ফের চেষ্টা ১৯৯৩ সালে। এ বার দলনেতা অমূল্য সেন। কিন্তু সফল হয়নি সেই চেষ্টাও। পরপর দুটি অভিযানের ব্যর্থতার কারণ নিয়ে আলোচনা কম হয়নি। কিন্তু শুধু ব্যর্থতাটুকুই শেষ কথা হয়ে ওঠেনি। অসংখ্য প্রতিকূলতা জয় করে, প্রকৃত অভিযাত্রীর মানসিকতায় ভর করে অভিযানের এক নতুন সংজ্ঞা তৈরি করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু দুঃখের বিষয়, মানুষের মনে তো দূরের কথা, উইকিপিডিয়াতেও ঠাঁই পায়নি সে সব অভিযান। শুধু এভারেস্ট নয়, একাধিক ভার্জিন শৃঙ্গে বাঙালির প্রথম পা রাখার ইতিহাসও গড়ে উঠেছিল সেই সময়েই।

সে সব কিছু ভুলে গিয়ে, এজেন্সি-নির্ভর ক্লাইম্বিং-এর ধারাটাকেই মেনে নিয়েছি আমরা। ভুলে যাওয়াটাই যে আমাদের চিরন্তন অভ্যাস। যে শেরপাদের ছাড়া অভিযানের পরিকল্পনাই করে ওঠা যায় না, তাঁদের কথাও ভুলে যাওয়া যায় সমতলে ফিরেই। তাই তাঁদের জোটে না পুরস্কার, মেলে না সম্মান। শৃঙ্গ জয়ের খাতায় নামটুকুও ওঠে স্রেফ শেরপা হিসেবেই। আরোহী হিসেবে নয়। তাঁরা তো চড়তে নয়, কেবল চড়াতে যান!

tiyashmukhopadhyay@gmail.com

tiyash mukhopadhyay mount everest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy